লবণ = সমুদ্র + কান্না
প্রেমেপড়া মাত্র আমরা ক্রমশ
লবণ-রহস্যের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করেছি।
লবণ হলো সেই রহস্য, যা আমাদের একই সাথে
সমুদ্রের বিশালতা ও চোখের জলের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তোমার জিভ আমার জিভের সাথে স্পর্শ করা মাত্র
আমি লবণের স্বাদ পেলাম। পক্ষান্তরে পেলাম সমুদ্র ও কান্না।
ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত: এক
তখন ঢেউ মৃদু। এক টুকরো বাউল কচুরিপানা ভাসছে। ভরসা ডানা থেকে ডানায়। পাখিকে ভ্রমণ বলি। বলি ইহকাল। যে ট্রেনখানা এইমাত্র স্টেশন ছাড়লো সেটি মূলত গন্তব্যপাগল। ট্রেন এবং পাখি হাত ধরাধরি করে উড়ছে। স্থির হয়ে বসো। বাতাসে মৃদু ঢেউ। ট্রেন, পাখি, প্রাণ, কোনোটিই যথেষ্ট নয়। মাইক্রোলেন্সের নিচে বিন্দু বিন্দু রক্ত পরস্পর পরস্পরের নিকটে আসার উত্তেজনায় কাঁপছে। দৌড়ে যাই ট্রেনের দিকে। থমকে যাই পাখির দিকে। কচুরিপানার নিচে জল কাঁপছে। কেউ কারও কাছে আসতে পারছে না: না রক্ত না প্রাণ। ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে ট্রেন ও পাখি। তখনো কচুরিপানার নিচে ঈষৎ কম্পনশীল: মায়ের পেটের ভেতর প্রথম ট্রেন জার্নি করেছিলাম আমি।
ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত: দুই
দুইটা শরীর দুইটারে লাগাচ্ছে। চূড়ান্তে। চিৎকারে খামচে ধরছে। ঝরে পড়লো অক্সিটোসিন হরমোন। ফিলিংস। এইভাবে শরীর কেবলা হয় ফিলিংস: আমি বলি ভ্রমণ। মৃত্যু থেকে পৃথক। মেগাডেথ থেকে দূরে।
মেডিটেশন থেকে সমুদ্র উঠে এলে তুমি পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। ঠোঁট থেকে চুম্বন তুলে নিয়ে উড়ছে সমুদ্রচাতক। গাঙচিলগুলো পোড়াচ্ছে ক্যালোরি। ঠোঁটের ডগায় কোলেস্টেরেলগুচ্ছ ফুটিয়ে তুলেছে যৌন ইশারা। ইশারা গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে এগিয়ে আসছে চোখ। চোখ ও ঠোঁটের যৌথ প্রযোজনায় ঝরে পড়ছে অক্সিটোসিন। তাহলে এইটাকে বেঁচে থাকা বলে।
ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত: নয়
ব্যাঙগুলান লাফায়। হুদাই লাফায়। ইসরাত জাহান নিজের ঠোঁট থেকে একছটাক শরৎ খুঁটে নিয়ে ফেলে দিলো ড্রেনের ভেতর। ব্লাউজ থেকে এইমাত্র একটা ক্ষুধা ফুল খসে পড়লো। দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করার পর ওরহান পামুক তাঁর ‘স্নো’ উপন্যাসের ভিত্রে লিখলেন, কোনো সাংবাদিকের মুখের কথায় বিশ্বাস করবেন না।
ড্রেনের ভিত্রে তখনো ব্যাঙগুলান লাফায়। তখনো ব্লাউজ খসা ফুল, ক্যামেরার ভিত্রে প্রিন্টমিডিয়ার অপেক্ষায় হাসতেছে। দ্য বুক অব ইসরাত। ব্লাইন্ড। ড্রেনের গোয়া দিয়া ক্ষুধা হাইটা যাইতাছে।
বৃষ্টিরা সাত বোন
জাফলঙে রাত নামে ধীরে; পাথর প্রপাত। পাহাড়ের খাঁড়ি ভেঙে হেঁটে আসছে সাত বোন চাকমা নারী। বোনেদের চোখে ভাসে পাথর আকাশ, পাহাড়ি পাখিকথা, বনকাতর মায়া, রূপকথা জাদু, পাহাড়ের রানি, রঙের উৎসব, টোটেম সকাল। ট্যাবু হৃদকথা গাথা হলে হৃদে, ও মেয়ে, যিশুর চোখের মতো মায়া ভেসে ওঠে দিগন্তে দিগন্তে। আমি দিগন্ত বরাবর হাঁটতে হাঁটতে চলে যাবো একদিন গৌতম পাহাড়; পাহাড়ের সবুজে গৌতমকথা শরীরী ভাষা হৃদবিশ্বাস চাকমা মেয়ের মন। আয় পাখি, নগরের হৃদ ছিঁড়ে চলে আয় আজ; পাহাড়ের বৃক্ষ হই অথবা আকাশ। আকাশের মেঘ হই অথবা আবেগ। পাহাড়ের গাঁয়ে-গাঁয়ে সবুজ বিকেল, রাখাইন পল্লী।
নদী: তিন
তুমি ভুলে গিয়েছ; তোমাকে প্রশ্নক রেছিলাম, ‘কোন ক্লাসে পড়ছো?’ অহঙ্কারী ঠোঁট উলটিয়ে বলেছিলে, ‘নদী’ ক্লাসে। আমি সেই থেকে তোমার ঠোঁটে উচ্চারিত নদীটিকে খুঁজছি। শিশুদের জন্য স্কুল খুলে পাঁচটি ক্লাস সাজিয়েছি; প্রথমটির নাম রেখেছি ‘ফুল’ পরেরটি ‘পাখি’ তারপর ‘রঙধনু’ ও ‘কুয়াশা’; শেষেরটি শুধু তোমার জন্য ‘নদী’। নদীশ্রেণির দায়িত্ব গোপনে রেখেছি নিজের করে; অপেক্ষায় আছি; নদীশ্রেণিতে খুঁজে পাচ্ছি না তোমাকে। অথচ জীবনে কতবার সাঁতারু পোশাকে স্বপ্রতিভ দাঁড়িয়েছি নদীর সামনে।
হাঁসজন্ম
হাঁসজন্ম ফিরে পেতে পত্র লিখেছি তাকে
মমি করে রেখে দাও হাঁসপত্র।
শার্টের বুক থেকে খসে গেছে গোপন বোতাম
বোতামবিহীন সুতোতে ঝুলে আছি আমি
গূঢ়তম বেদনার প্রাত্যহিক উৎসব।
গন্তব্য
জুতোর ভেতর জমাট অন্ধকার
অন্ধকারের ভেতর গলিয়ে দিয়ে ছিপা
অন্ধকার ভর্তি জুতো
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে!
শূন্য
শূন্য একটি ধারণার নাম। এর কোনো অর্থ নেই। শূন্যের আশেপাশে কিছু থাকতে হয়। গণিতের নিয়মে তুমি যদি নিজেকে শূন্য ধরে নাও, তাহলে তোমার পাশে আমি অথবা আর কেউ না থাকলে শেষাবধি তুমি শূন্যই থেকে যাবে।
আকাশশূন্য। আকাশশূন্যতা ভালোবাসে না; খুঁজে নেয় পাখি, মেঘ অথবা পতনশীল বৃষ্টি ও বরফ।
আমি খুব কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখেছি; মৃত্যুর মতো আর কোনো শূন্য সংখ্যা আছে বলে জানা নেই আমার। শূন্য নিজেকে প্রকাশ করার জন্য সব সময় একটি সংখ্যা খুঁজছে; পক্ষান্তরে খুঁজছে আমাকে।
জীবকোষ:কুড়ি
আমাকে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে; টেনে বের করা হচ্ছে জরায়ু থেকে। আমি জন্ম নিতে শুরু করেছি। জন্মের পর আমি এই প্রথম পাথরের স্বপ্ন দেখলাম; আমার জানা ছিল না পাথর নিজে কখনো স্বপ্ন দেখতে পারে না। শুনলাম কারাগার থেকে সব পাখি চলে গেছে অতীতের দিকে। আলোর আঘাতে সমুদ্র গান গাইছে।
আমার কপালের ভেতর দিয়ে সূর্য উঠতে শুরু করেছে। জৈবনিদ্রা ভেঙে যাচ্ছে। মহাকাশ সমান পরিধি নিয়ে পৃথিবী ঘুরছে। চোখের সামনে ভেসে উঠলো দিগন্তবিহীন আকাশ। যেখানে একটিও পাখি নেই। শুধু বৃত্ত আর বৃত্ত।