অসম্পূর্ণ হালখাতা
এখনো চৌদিকে ছড়ানো ছিটানো প্রেম
এখনো ইশারা চোখে পড়া কোনো চোখ
এখনো রয়েছে ইনজিনে অকটেন
এখনো নদীতে জাগেনি চরের শোক।
এখনো বিকেল অর্ধ-রোমান্টিক
এখনো সন্ধ্যা মিলনাত্মক মোড়
এখনো রাত্রি দু’কাঁটাতে টিকটিক
এখনো আসক্তি নতুন দিনের ভোর।
এখনো কবিতা রাতজাগা অজুহাত
এখনো আকাশ হাজারো চিত্রকল্প
এখনো হঠাৎ হাত ছুঁয়ে কোনো হাত
এখনো জীবন সহসায় কোনো গল্প।
এখনো পারি রাঙাতে নারাজ মন
এখনো পারি টানিতে দোদুল ভোট
একচুমুতেই ফ্লাশব্যাক যৌবন
যে চায়নি কাল, সেও পেতে দেয় ঠোঁট।
এখনো তুলনা ছুঁয়ে যায় ফলাফল
এখনো ঈর্ষা ছুঁয়ে যায় এই নাম
এখনো ভূমিকা ফুটে ওঠা শতদল
এখনো স্বপন জানায় ওয়েলকাম।
এখনো স্বভাব খেয়ালের ঘোড়দৌড়
এখনো মনটা লোভের বাতাসে দোল
এখনো মধুর খুঁজিছে মধুর ওড়
এখনো তোমাকে ভালোবেসে উতরোল।
অভিবাসী ভালোবাসা
কালো কি-বোর্ডে শাদা বিশ্বাসের আঙুল রেখে
একদিন লিখেছিলাম
‘আমি ফি দিতে পারি বা না পারি, হে মিষ্টিভাষী ফোন,
বন্ধ করো না থেরাপি,
ভালোবাসার সেবাই তোমার ধর্ম হউক! ’
তুমিও ধারণ করেছিলে সেই মেঘছোঁয়া উচ্চারণ
প্রায়ই শুনতাম তোমার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ আর
প্রতিবারই ফিরে আসতো—
মটরীবুবুর কোরান তেলওয়াত শুনতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা
আমার সরল বাল্যকাল।
সেটা এই তো সেদিন যা এখনো যায়নি
রিসাইকেল বিনের বাড়ি,
যাকে ছোঁয়া যায় আজও
এতটুকু বাড়িয়ে টাটকা স্মৃতির মাউস!
এরই মধ্যে কী এমন ঘটেছে সোনার রেণুর ঢেউশাসিত
দুনিয়ায় যে আমার রিংটোন বেজে ওঠে না
সেই সুরেলা উচ্চারণে?
ওবামার স্থানে ট্রাম্প, এর বেশি তো নয়!
হে উদ্ভাসিতা, তবে কি প্ররোচিত তুমি ঘর থেকে
বিদায় দিতে চাও ভালোবাসাকে—
যেভাবে বের করে দিচ্ছে ট্রাম্প
আমেরিকাকে গড়ে তোলা আমেরিকাপ্রেমী অভিবাসীদের?
দুঃসময়ের ডানা
পুরনো বাগানঘেঁষে মউ মউ করছে
সুদখোর দুপুরের রোদ আর
তার ছোঁয়া লেগে
ফারাক্কা-প্রযোজিত চৈতী-পদ্মা ডালে বাঁধা ছায়া
এসব দেখে-শুনে এক সবুজ তাড়নায়
তোমার কাছে এসেছি;
আমি জানি—এই অজগর সময়ে তুমি কোনো
ওয়েলফেয়ার স্টেট নও
তবু শ্যামল-উঠোনের ঐতিহ্যসূত্রে
প্রত্যাশা এই যে—
বোশেখী বাগানের এক বিকেল ছায়া বাড়িয়ে
কাছে নেবে তুমি;
আমার চেতনায় স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে দেখো—
হাঙরের অনিদ্রার মতো
সময়ের অভিশাপ জেগে আছে সারাক্ষণ—
ছোটো—ছোটো—ছোটো…
আমি বসে থাকতে গেলে
ডানাগুলো ভাঁজ হতে চায় না;
তো শুয়ে থেকেই কাটিয়ে দাও না ভাই!
শুয়ে থাকতে গেলেও যে—
ভূমিকম্পের দুলুনি লাগে পিঠে!
তো বুঝতেই পারো—
এই ঝুলন্ত নিয়তি নিয়েই তোমার কাছে এসেছি
একবার আন্তঃমহাদেশীয় ফ্লাইটের মতো রিফুয়েলিং করে নিতে চাই।
একটি সম্পর্কের খসড়া
আমি আসছি সুমনা; না আর গেরুয়া রঙ নয়,
ও রঙে এখন মিশে আছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস;
রক্তিম রঙে রাঙিয়ে অস্তিত্ব, আমি আসছি!
আমার কলারে তোমার লিপিস্টিক লাগলে
যাকে চোখে পড়বে, সেও তো লাল।
তারচেয়েও সত্য, তোমার আমার মাঝে
কমিউনিজম রচতে পারে যে, সেও শুধু লাল।
সে লাল আমার শার্টের আড়ালে
সে লাল তোমার ব্লাউজের নিচে
অতএব—
মুখস্ত করে নাও এই লালরঙের নামতা!
পতাকায় এঁকে নাও এই লাল বিজ্ঞাপন!
সেদিনের ভাসিটি জীবনের ব্যর্থ স্লোগান
আজ ঠাঁই খুঁজে পাক—অন্য এক মোহনায়!
লোরিয়েল শাসিত তোমার দুনিয়ায় কার্লমার্ক্স আসেনি,
কিন্তু আমি আসছি
শোণিতে ও শরীরে লাল রঙ নিয়ে,
আমি আসছি।
বিশ্বাসে ও যাপনে সাম্য নিয়ে আমি আসছি
তুমি আমি সমান হলে সেটাই হবে শুদ্ধ সাম্যবাদ
আর অন্তরঙ্গ ক্যালেন্ডারে নতুন একটি রেড লেটার ডে!
আমি আসছি—আমি আসছি—
লাল উত্তেজনায় জড়িয়ে আমি আসছি
হে মহিয়সী, আমাকে বরণ করে নিতে—
এয়ারপোর্টে দাঁড়ানো ভিআইপি সারির মতো
লোমকূপের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখো
আবেগ-অনুভূতি-রোমাঞ্চদের
অস্তিত্বের সবখানিজুড়ে সাজিয়ে রাখো লাল অভ্যর্থনা।
অস্বীকৃতির আগুন
সম্মিলিত হাতে গড়ে ওঠা যে উঠোন,
দ্যাখো, বিভক্তির হাত
সোনালি সেই উঠোন থেকে সরিয়ে নেয়
ইশকের শরাবে মাতাল
গালিবের গজলের বাণী,
তানসেনের মেঘমল্লারে মন্দ্র
মহামতির উদার আকাশ
দিলরুবা-রাবাবের গানে
জড়িয়ে মুখর প্রিয়তম নাম ;
বিশ্বকবি যার নাম দিয়েছেন
সম্রাট-কবি,
সেই কবির যমুনাছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা
বিশ্বজয়ী প্রেম—
কেঁপে ওঠে থেকে থেকে;
কেঁপে ওঠে
আনারকলির ডালিমদানা অধর;
চেয়ে আছে চাঁদ
জীবন্ত ইতিহাসের চিতায়
জোছনার শরীরে আঁচ লাগিয়ে যা
বাড়িয়ে চলেছে
হিংস্র সাফল্যের শিখা;
আজ আমিও একটি অস্বীকৃত নাম,
রাগে এবং অনুরাগে,
যৌথতায় ও একাকিত্বে
ভালোবাসার উঠোন রচে,
আমিও পুড়ছি সবখানি
পুড়ছে—
ইথারে ঢেউ জাগানো দরদি শব্দ
চুম্বন, আবৃত্তি, সুর
পুড়ছে—
প্রসঙ্গ অনুষঙ্গ উপসংহার;
একদিন আমার কোমর জড়িয়ে ধরেছিলে,
তোমার সেই হাতে আজ
অদ্ভুত আগুনছোঁয়া উসকানি।
যৌথদৃশ্যে হতভম্ব—
আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে থাকা নিঃসঙ্গ মহাকাল।
রাজাময়
রাজপ্রাসাদ নেই, নেই রাজমুকুটও
অথচ যেখানেই হাত দেই,
সেখানেই রাজার শরীর;
আলো ছেড়ে অন্ধকারে যাই
চাররঙা আঁধারের যেখানেই
হাত পড়ে—ডানে কিংবা বামে,
সেখানেই হাতে ঠেকে
মাননীয় নিতম্বের ছোঁয়া!
পাখি দেখায় অভ্যস্ত চোখ বুজে আসে দ্রুত—
যেন আমি রোহিঙ্গা শিশু
মুখটা ঘুরিয়ে—
সহসায় দেখে ফেলি
পাখির বদলে গেরুয়া আগুনপরা বার্মিজ ভিক্ষুর দল!
জোছনারাতেও ভয় আমার
মন বাড়িয়ে চাঁদ দেখতে গিয়ে—
চাঁদ নয়, প্রেয়সীকেও নয়,
দেখি ফেলি—রাজার ট্রাম্প-ট্রাম্প মুখ!
হে রাজামশাই, ওগো মহামাননীয়,
আমার ভালোবাসার উঠোন থেকে
কবে যে সরাবে তোমাদের বীভৎস নিতম্ব!
ভালোবাসার উপনিবেশ
মিনা ও মাধুরী, সীমা ও শেফালী—এমন অনেক কসমেটিক
কোম্পানিকে না করে দিয়ে সেই তখন থেকে
তোমার নামে ভালোবাসার খুতবা পড়ে এসেছি—
তুমিই আমার সুপার পাওয়ার অব লাভ।
স্ট্যাচু অব লিবার্টি ছুঁয়ে উড়ে আসে যে হাওয়া,
সে-হাওয়ায় ভাসে মেঘভেজা চুলের ঘ্রাণ;
জোরে শ্বাস নেই।
গুয়ান্তোনামো বন্দিদের সচকিত করে গাওয়া
নাবিকের গান:
‘এক তুহি ধনওয়ান হে গোরী—বাকি সব কাঙ্গাল’
ঘোর রচে জলছোঁয়া গাঙচিলের ডানায়।
যারা একবার দেখেছে—তোমার মেঘছোঁয়া চুল,
চাঁদছোঁয়া ঠোঁট,
কিংবা যারা দেখেছে তোমার প্রভাতী চোখ
অথবা গোধূলি অধর,
তারা জানে—ঐশ্বর্যের কোনো অভাব নেই;
অথচ এতটুকু হাসি দিয়েই কেন যে
কেড়ে নিতে চাও সুদেমূলে প্রণয়ের পুঁজি,
ছোট এ হৃদয়ের যাবতীয় খনি,
তা নিয়ে ভাবতে গেলে বিস্ময় জাগে।
আর যদি শেষাবধি তা-ই ঘটে—তুমিই বলো,
তখন শূন্য হৃদয়ে বাঁচবো কী করে!
আবার আমি না থাকলে সে-ক্ষতিটাও যে তোমারই—
একথা রটিয়ে রাখো—অনুগত বাতাসে।
তাই বুঝি আমার অনুপস্থিতির বিপক্ষে তুমি
যেমন শোষিত শ্রমিকের ধ্বসের বিপক্ষে শোষক মালিক।
আহা ভালোবাসা,
আর কতদিন আমাকে বানিয়ে রাখবে অন্তরঙ্গ উপনিবেশ?
নাফ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে
নদীর ওপারে—যেখানে প্রবেশ নিষেধ—এমনকি বিবিসি—
সিএনএন-আল জাজিরার সচিত্রসন্ধানী সাংবাদিকের,
যেখানে যেতে মানা তেরেসা-হৃদয় মানবাধিকার কর্মীরও,
দ্যাখো সেখানে আকাশে উড়ছে গ্রামপোড়ানো ধোঁয়ার কুণ্ডুলী
আর গুলির শব্দ থেকে থেকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, ওখানে
যেখানে একদা রোসাঙ্গ রাজদরবার, মহাকবি আলাওল
প্রেমিককণ্ঠে পাঠ করে শোনাতেন ‘পদ্মাবতী’, সেখানে আজ
‘অহিংসা’ প্রযোজিত গণহত্যা, গণহত্যার বলি কবির অসহায়
উত্তরকুল; আগুনের শিখা, রাইফেলের গুলি আর ছোরার
হিস্ হিস্ রচনা করেছে যে গেরুয়া জাহান্নাম, তাকে
প্রাইভেট পড়ায় গাজায় গর্জনশীল ইসরাইলি অত্যাচার।
সীমান্তঘেঁষা বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা আমার
পা ছুঁয়ে বয়ে যায় নাফ; সেই স্রোত, সেই ঢেউ; তবে
ঢেউয়ের যে-গর্জন শুনে অভ্যস্ত তীরবর্তী বৃক্ষের কান,
সোঁ সোঁ ছলাৎ ছলাৎ
এ তেমনটি নয়
ঢেউয়ের শব্দে মিশে আছে অসহায় কান্নার শব্দ;
যে-স্রোতে ভেসে যেতে অভ্যস্ত ট্যুরিস্টের প্রমোদতরী
দিনে কিংবা রাতে
এ তেমনটি নয়,
স্রোতে মিশে আছে চোখের জলের লবণ;
কোরালমাছের আঁশটে গন্ধ নয়,
কোনো দারুচিনি দ্বীপের সুবাসও নয়,
কুমিরের নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে সামুদ্রিক হাওয়ায়
ঘুরপাক খায় অগণিত লাশের গন্ধ!
আগুন! আগুন! আগুন! কোথাও নেই বিদ্ধ হাতে
ব্যান্ডেজ নেওয়ার আড়াল! পালাও! পালাও! পালাও!
দ্যাখো, স্বজনের লাশ সরিয়ে নদী পার হয়ে আসে
টাটমাডো-উইরাথুর সম্মিলিত হিংস্রতা থেকে
বেঁচে যাওয়া নারী ও শিশু,
কাঁধে বৃদ্ধ দুই একজন কিশোরও।
তাদের চোখেমুখে আজরাইল-দেখা আতঙ্ক!
হায়, এই আধুনিক বর্বরতা থামানোর নেই কোনো জোট
নেই কোনো সম্মেলন প্রতিরোধ ঘোষণার
জাতিসংঘ—সমকামিতায় আসক্ত হয়ে ভুগছে ধাতুদুর্বলতায়!
একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতা জোটবদ্ধ মাৎস্যন্যায়
কিসের আলোকায়ন! কিসের মানবাধিকার!
আজ দাঁতের সাফল্যই বৈধতার একমাত্র ফর্মুলা।
আমার হাতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নেই, জেনোসাইডে আক্রান্ত
মানুষের পক্ষে আমি এক কবি—
জোটহীন-ভোটহীন,
নাফের জলে ভাসমান ধর্ষিতা নারী ও শিশুর লাশ ছুঁয়ে,
কাতর বৃদ্ধের অসহায়ত্ব স্পর্শ করে,
আর হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা কিশোরের
শুষ্ক হাহাকারে আমার অশ্রু মিশিয়ে,
হে হিংস্র সভ্যতা,
আমি তোমার বিনাশ কামনা করছি—
তুমি নিপাত যাও!
সভ্যতার পুনর্নিমাণে তোমার ধ্বংস আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
অসংজ্ঞায়িত সম্পর্কের সিঁড়িতে
ভাগ্যিস, আমার এহেন অবস্থায় অভ্যস্ত—
সরকারি বিরহের দিন,
বেসরকারি মিলনের রাত—
যেভাবে মৃগীরোগীর মূর্ছা বিষয়ে
অভ্যস্ত হয়ে যায়
পরিবারপরিজন, পাড়াপ্রতিবেশী!
অন্ধসত্য এই যে—চোখ বুজলেও
চোখে ভেসে ওঠে
আহ্নিকগতির ঢেউ ঢেউ রেখা!
অথচ প্রবল রোদের রিংটোন-
বেজে বেজে
থেমে যায়
দ্বিধাগ্রস্ত সাঁঝের সীমানায়।
তুমিই বলেছিলে—কবি, সকল সংজ্ঞার উর্ধ্বে
আমাদের এই সম্পর্ক;
অতএব আমরা একে অন্যকে
কী বলে সম্বোধন করবো, তা নিয়ে
প্রয়োজন নেই কিছু ভাবার।
ভাবছি না আমি; ভাবে না অন্য কেউই
শুধু একটি অসংজ্ঞায়িত দুপুর
শ্রেষ্ঠতম সংজ্ঞার চোখে চোখ রেখে
হাঁপাচ্ছে—
চুম্বনে শিহরিত সময়ের সিঁড়িতে।
আমি এই সম্পর্কটির সংজ্ঞা জানি না,
তবু উপভোগ করি—
যেভাবে বিদেশি পর্যটক
জিহ্বায় তুলে নেয়—
নাম-না-জানা সুস্বাদু বিদেশি খাবারের স্বাদ।
বাংলাদেশ
ডারউইনের দুনিয়ায় এমনকি যারা হরিণচোখের অনুলিপি নিয়ে
বসাতে চায় নিজ প্রেয়সীর চোখে, তারাও চান্স পেলে দাঁত দেয়
নিরীহ সুন্দরের মাংসে, আহা কী টেস্ট! অথচ বাঘের থাবা নিয়ে
যতই জমে উঠুক ভারত-পাকিস্তান গালমন্দ, কেউই মাড়াতে যায় না
ডোরাকাটা ছায়া। দ্যাখো—রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিডিয়ার স্ক্রিনে
কূটনীতিপরিচালিত রহস্যসিনেমা, যত পরিচালক, তত ফিল্ম,
আর আলোছায়াময় সত্য দেখে হুজুগের তরিকায় জমে উঠছে
হাততালি, অথচ সূর্যসত্য এই যে, রোহিঙ্গারা দুর্বল বলেই
তাদের জন্য রচিত হয়েছে অহিংসা প্রযোজিত গেরুয়া জাহান্নাম;
তার চেয়েও বড় সত্য, হে বাংলাদেশ, ন্যায্য প্রতিরোধটুকুও
গড়ে তুলতে পারোনি তুমি; প্রশ্নের তাওয়ায় ফুটছে সন্দেহের খৈ!
আর এও তো অজানা নয়—যে ঘরে পরমাণু বোমার পাহারা,
সে-ঘরের দাওয়া ছুঁতে যায় না কোনো অভিসারী লোভ!
কিন্তু আমি তো জানি, যদি তোমার ধানের গোলা ছুঁয়ে দুচারটি
আণবিক বোমার গোলা থাকতো, তবে রোহিঙ্গারাও বেঁচে যেতো
যেভাবে একদিন বেঁচে গেছে রাবণের দেশের তামিল বিদ্রোহীরা
এবং তোমার ঘাড়ে এসে পড়তো না অসহায়দের অসহনীয় ভার।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়; এটা বহুমুখি রক্তাক্ত নাটকের উদ্বোধন
মাত্র। বারুদসভ্যতার আধুনিক জঙ্গলে—তোমাকে হরিণ রেখে,
বাঘ বাঘ খেলে যেতে চায় যারা, রোমান্টিক সম্বোধনের কসমেটিক
আড়ালে তারা লুকিয়ে রেখেছে লোভ ও লিপ্সা, থাবা ও নখর।
হে বাংলাদেশ, হে আমার জননী—জন্মভূমি, তুমি তোমার সামুদ্রিক
পৈথানে বিছানো সুন্দরবনে তাকালেই দেখতে পাবে, ঘ্রাণতফাতে
বাস করেও, এমনকি কোনোদিন কোনো রোমান্টিক ভুলেও,
হরিণে-শার্দুলে বন্ধুত্ব হয় না; হরিণে হরিণে হয়; হয় বাঘে বাঘে।
আমি জানি, তোমার আণবিক বোমা নেই, নেই পৃত্থী কিংবা ঘোরী;
কিন্তু হে বাংলাদেশ, তুমি তো একাই বত্রিশ কোটি হাত, ষোল
কোটি মেধা! এইসব হাত আর মেধা ঐক্যবদ্ধ হলে তুমি হয়ে
উঠবে ডোরাকাটা সার্বভৌমত্বের উৎপ্রেক্ষা । আর চারপাশ বন্ধুময়!
হে জননী, কবে?