তারাদের ব্যালকনি
মনে রোদ উঠলে
মেঘ ওড়ে শরীরে…
তারাদের ব্যালকনি ঝোলে
দিনে রাতে; রকম একই
দিনে মন দ্যাখে, রাতে চোখ ছোঁয়।
রোদে মন মাখলে
বুকে সুখ উঠবে…
সুখ বইলে শরীরে,
তারে সেতার বাজবে
বাজাও দরদ দিয়ে
বর্ণিল বনজ ঋতু
তোমার সম্ভার খুলে
মেলে ছেয়ে পুষ্পবীথি
তাতে তারা সাজাও
শুভ্র মেঘ ছোঁয়াও
মন বনে জাগাও
আসছে ঐ প্রিয় তিথি
তনুর দুয়ার খোলো
রোদ উঠলেই
মেঘ দোলাবে দুয়ারে
শীত শীত ছায়া…
তুলসীগঙ্গা
নিমগ্ন হাওয়া উড়লো সুহাসে
সুচিন্ত চয়ন তাম্রলিপিকায় খুঁজি;
সেই নাম।লিখে গেছি কোনো এক
পূর্বজন্মে। বাগদত্তা আঙুলের ভাঁজ
সহস্র বয়সী বাসনায় জপে তার নাম…
রেখে গেছো চুমু আর চপলের দাগ!
নীল নীল অভ্রজ্বলে সুখ পূর্ণিমার রাতে…
এসো জনমের স্বাদ মিটাবার তাড়নায়
জলাধারে তুলসী গঙ্গাতটে।
ঘোলা তরঙ্গের খুদেপানা
ফুল প্রসবের সুবাসিত সুরে
ডাকে শুধুই তোমাকে…
উজ্জীবন
জল পতনের শব্দে
চোখ খুলে যায় ঘুমের
ছুঁয়ে যায় অতপর…ঘোরগ্রস্ত ঘ্রাণের একটা জীবন
প্রথম প্রেমের মতো অশরীরী স্পর্শ
বুকের ডান-বাম করে নেমে যায় জলে
তখন কালবৈশাখীর মোহ পাকা ধানের পতনে ব্যস্ত
অথচ গভীর স্নেহে কৃষক এক-একটি পূর্ণিমার মৃত্যু দেখেছে;
গুনেছে অমাবস্যার অন্ধপাত।
তারপরও বুকের আশা লুট হয়ে যায় এভাবেই…
বেহায়া বাতাসে।
আম্র কাননে মুকুল ফোটে; নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও
শিউলি জ্যোৎস্নায় স্নান করে;
ভেঙে যাবে ঘুম
জেনেও চোখে এসো,
আমরা ঘুমাবো উজ্জীবনের ঘুম…
বাতাস
চাই আর না-চাই
কিভাবে হুড়-হুড় করে
ঢুকে পড়ে বাতাস ঘরের ভেতরে!
কেমন অবাক লাগে!
অবাকলাগে, নির্লিপ্ত ছোঁয়া;
যখন আমের পাতার ফাঁকে ঝাঁক বেঁধে লুকিয়ে থাকে
ফাঁদ পাতার গভীর উচ্ছ্বাসে ঘুরে ঘুরে আসে
বন্ধ জানালার কার্নিশে তখন আমার আত্মায় সুর ওঠে
লুলুলু
শাওরারের নিচে একা হয়ে গেলে নিঃস্ব হয়ে গেলে
জলের উত্তাপ মাপি আর জানালা খোলার অপেক্ষায়
খুঁজি বিকেল; তখন মন…মনে করিয়ে দেয়
গ্রাম্য বিকেলি গান…পুপুপু
চাওয়া অথচ পাওয়ার দূরত্ব জানালার পর্দা;
সরে গেলে বেতাল বাতাস: আমার অন্তরীক্ষের পর্দা
নড়ে না; আমি চেয়ে থাকি ঠাঁই, দাঁড়িয়ে যাই সিলিং ফ্যানে
আমার পাখা গজায়, পঙ্খি হই
উড়ে যাই তোমাতে…
তুমি চাও আর নাই-চাও
আমি ঢুকে পড়ি ধীরে ধীরে
পালক নাড়াতে নাড়াতে
যাই, ছুটে যাই-বাতাসে-বাতাসে…
রেশমি জরির ফড়িং
কোথায় যে মেঘ জমেছে!
দমকা হাওয়া, বিপদ সংকেতে
আকাশে পাতালে নাকি মাংস-মজ্জার জাদুর বাক্সে
বলে যাবে কে?
এ তল্লাটে কোনো তান্ত্রিক বাস করে না।
তন্ত্র ছাড়া জানা যায় কিছু!
নীলগিরি নীলাচলের পথে ফড়িং ছিল
তারা তরতর করে ওড়ে আর হাসে, তাদের পুচ্ছ কেশে
রকমারি সাজ, পাঁজরে রেশমি কাপড়ের কুচি
দোলানো মোহন সুখ আর সুখ!
ভেবেছি একটা মনে জমে যাওয়া সব মেঘ ওড়াবো
বনে বাদাড়ে ফেলবো তলানির যত অনুভূতি
যতবার উঁকি দেবে রোদ্দুর ততবার স্নানে শুকাবো
কলিজা;
আরও ভেবেছি, একটা জীবন ঘোরাবো রেশমি জরির
ফড়িংয়ের পিছু পিছু…