উপত্যকায় সংলাপ
এক.
পৃথিবীর মানচিত্রে কাশ্মিরটা কোথায়?
আমি যতবার প্রশ্ন করেছি,
আমাকে সবাই দেখিয়েছে একটি হৃৎপিণ্ড
আমিও লক্ষ করেছি ওটা বর্তুল আকৃতির কিছু
আর শীর্ষবিন্দুতে রক্তের সূর্য-আঁকা।
দুই.
প্রথম প্রথম আমাদের পূর্বপুরুষেরা শুনতে পেতো
অবিরাম গুলির শব্দ;
আতঙ্কে রাতে তাদের ঘুম আসতো না
তারপর দিনের বেলাও গুলির আওয়াজ
তারপর একদিন গ্রামের দিকে
শুরু হলো অবিরাম গুলিবর্ষণ।
তিন.
একদিন সত্যি সত্যি ওরা ট্রাক নিয়ে গ্রামে এলো
বেধড়ক পেটালো নিরীহ গ্রামবাসীকে
যাবার সময় তুলে নিয়ে গেলো যুবকদের
ট্রাকভরতি করে
বললো, ওদের নামে হুলিয়া আছে।
চার.
প্রথমে ওদের লোভ ছিল
আমাদের জমিজমার প্রতি
তারপর ভাবল, ফরসা আর লম্বা
মেয়েদের ওপর তো তাদের অধিকারও আছে!
তারপর থেকে আমাদের মেয়েরা অরক্ষিত
হয়ে আছে নিজঘরেই।
পাঁচ.
আমাদের পশুগুলো আমাদেরই প্রতিনিধি
এই যেমন পনি,
হাড় জিরজিরে দেহ নিয়ে
ওই যে পাহাড়ে ওঠে পর্যটকদের নিয়ে
আমরাও সমানভাবে সাম্রাজ্যের ভার বহন করি।
ছয়.
পশুর লোম দিয়ে যে-উল হয়
তার উত্তম শিল্পী আমাদের মেয়েরা
আমাদের মেয়েগুলো মিষ্টিস্বভাবের
উলের শালে নানারঙের চিত্র বোনে
আর দিন গোনে প্রেমিকের প্রতীক্ষায়।
সাত.
আর ছেলেগুলো?
এক-একটা তাজা টিউলিপ তাদের কম্পমান হৃদয়!
প্রেমিকার মুখ স্মরণে নিয়ে
বেরিয়ে পড়ে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করতে
তারা অকাতরে ঝরে পড়ে।
আট.
বিশ্বাস হয় আমরা মানুষ?
শ্রীনগরের রাস্তায় একটা পাগল-কিসিমের লোক
আমাদের পথরোধ করে।
কী যে বলবো? আমি এর জবাব খুঁজে পাই না।
লোকটি পথ ছেড়ে দেয়
আমার স্ত্রীর দিকে কটমট চোখে তাকায়
মানুষ নই মানুষ নই, আমরা পোকা, পোকা, হাহাহা
নয়.
ওই যে উঁচু পাহাড়গুলো দেখছেন
ওগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের স্পর্ধা
আর ওই শুভ্র তুষার বেয়ে নামছে সানুদেশে
তা আমাদের পূর্বনারীদের স্তন্যধারা
সুতরাং আমরা আজও কাপুরুষ হয়ে যাইনি।