সু-শাসক
ঝুলে থাকে, সেনোরা—
জিনগাছের চারার পায়ে পায়ে ঝুলন্ত সারি…
শুষে নেয়, সেনোরা—
সমস্ত ক্ষতের ধারা, রিউমার ও নখ-মঞ্জরি
শির ও জিনগাছ—একই বংশধর—কওমের পাপ নিয়ে
ক্রুশবিদ্ধ হতে জানে, জানে হাঁটতে যিশুর সমান্তরালে…
শুষে নেয়, জিনগাছ—উর্বর নালার শাল্মলিলাল…
শুষে নেয়, সেনোরা—রাষ্ট্রের অমৌসুমি ঋতুকাল…
বাড়ি
মেয়ে থাকা বাড়ি—যেন নগরীর সজ্জিত কোনো শপিং মল…আর
মেকাপসাজা নারী যেন বালির আলপনায় ফোটা মমের ননি—
শরীল জেগেছে তার—আলগা পাতার শতদল…ঠিক যেন শপিং মল!
মেয়েশূন্য বাড়ি—ঠিক যেন এলোমেলো বাবরি চুলের স্নাতক-বাসা…
ঠিক যেন শিল্পীর বেশ, বটের আলুথালু ঝুরি…দুলে ওঠে দু-দুল দুল…
তবু এই সব ধুলামলিন বালুচিকিচক বাড়িও হারিয়ে দিয়েছি একদিন
বিপুল ধান্দায়—পম্পেই নগর—হারিয়েছে ভিসুভিয়াসের লাভায়…
তবু সেই সভ্যতার স্বাক্ষর জড়িয়ে আজও ছিলাম পাহাড় অভিশপ্ত
ঠায় দাঁড়িয়ে, এভাবেই হয়তো স্নাতক-বাসার ন্যায় কারো-বা মৃত প্রেম,
প্রিয়জনের শেষ ছাইটুকু নিয়ে জেগে থাকে অশ্রুহীন পাথরের চোখ…
ইতিহাস বলে—জেগে থাকতে হয়…হয়তো তোমার শেষটুকু নিয়েই
আমাকেও থাকতে হবে জেগে, হয়তো, মানুষের পাশে—পৃথিবীময়…
পরাশ্রয়ী
আপাত অর্থহীনও অর্থযুক্ত হয়ে যায়, যেতে পারে চাকার ঘূর্ণনে ঘূর্ণনে
আমাদের সৌর-সংসারের সমুদ্রপৃষ্ঠে, ভূ-রুহের অন্ধ ঘ্রাণ-ফাঁকায়…
পরাশ্রয়ী—সে তো এক বড় চাকা—পরার্থপর—অনেকটা চাঁদসদৃশ…
নিজের বুকে আলো ঠেকিয়ে বাঁকিয়ে দেয়, ফাঁসিয়ে দেয় সমস্ত
পৃথিবীর বক্রপিঠে ছায়ার গোলক জীবনের মুখে মুখে নির্দ্বিধায়…
পরাশ্রয়ী—সে তো এক বড় অর্থকর—অনেকটা শূন্যের পিতাশূন্য
কিংবা আমার বাংলা অনুস্বার—যিনি অন্যের পাশে বসে
অন্যকে অর্থ দান করে দাতা বনে যান, আর বাড়িয়ে দেয়
ক্রমশ আশ্রয়দাতার মাথার মূল্য দিন দিন…
পরাশ্রয়ী—সে তো এক মস্ত প্রেমিক—অনেকটা যেন ভূমিশূন্য কৃষক—
যিনি ঘাম, শ্রম, রক্ত…সবটা দিয়েই জমির মর্যাদা বাড়িয়ে তোলেন ক্রমশ
ভূস্বামীর মেদ ও ভুঁড়ি, জুতা ও মুখের চকচক, আরোহণ ও পতন…
পরাশ্রয়ী—সে যেন এক পরম শক্তি—যেন আশ্রিত জীব ও মানুষ—
টিকিয়ে রেখেছে অর্থময় ও পরাক্রমশালী অধিভূরে, আর
নিজেদের ঝুড়িতেও তুলে রাখছে সূর্য ও শ্রী, বিপুল জান্নাত…
আপাত অর্থশূন্যও অর্থাবদ্ধ হয়ে যায়, যেতে কি পারে না কালান্তরে?
বিড়ালের চোখ
বিড়ালের চোখ—ঠিক যেন হঠাৎ জ্বলে ওঠা কারো মন…
যেন হঠাৎ ফুটে ওঠা কারো হৃদয়ে চাঁদের ঝালর…
কখনো কখনো ওই চোখ এমনভাবে ফুটিয়ে তোলো
যেন আঁধারের মাঝে হঠাৎ জ্বলে ওঠা বিড়ালের চোখ
আমায় বিদ্ধ করে প্রবল দীপ্তিতে যেন আমি কারো
কোনো-বা আরশের আকাশের হুরের পিউপিল—প্রিজম…
বিড়ালের চোখ—যেন হাশরের আকাশে ফুটে থাকা
এক জোড়া বিপুল উজ্জ্বল তারা—চকমকে পাথর
সাইনিং ছড়ায় যেন জোড়া জোড়া জুতার কিরণ…
বিড়ালের চোখ—যেন কোনো এক আউলিয়ার আত্মা
জঠরকালো সমুদ্রে যিনি প্রখর মশাল জ্বালান তেমনি
যেমনি দু’পাতার নদীতে চকচক করে বিন্দু বিন্দু মুক্তা…
জন্মদিন
পাখিরা
বয়সের দিকে তাকায় না
তাকায়
ডানার সক্ষমতার দিকে
ডানাই তার—আয়ু…
আর মানুষ
হায়ারোগ্লিফিকলিপির দিনেও
আয়ু মেপেছে
জন্মের মাপকাঠিতে…
জন্মদিন দিয়েই
মাপে মহান
জীবন ও জীবনের অর্জন
আয়ুর প্রমাণ…
বয়সের মৃণালে
রাসুল চড়ে
ঘষে ঘষে জন্মরে করে
তারামালার জ্যোতি…
আর কবি
বেঁচে থাকে কোরকে
বিপুল অরণ্যসৌকর্যে
আকাশ, বাতাস আর
সাগরের উদারের নিচে
কবি বেঁচে থাকে…