ইস্টিশনের বৃষ্টি
আমরা পার করছি আর্দ্র সময়—
বিশাল হাতির মতো ট্রেন আসে ধীরে মুষলবৃষ্টিতে,
জীবন ফিরে পায় স্টেশন; তুমুল হর্ষ তুলে মালগাড়ি
থেমে পড়ে লৌহকংক্রিটে।
তুমি আমি দর্শকবিন্দুতে বসে দেখছি
ত্রিশ মে’র বৃষ্টিরাশি পড়ছে অতিকায় ট্রেনে;
ধাতব শব্দে মুখরিত হয় স্টেশান, স্মৃতিকাতর দ্বৈত আচরণ
আর—
বিপুল ধ্বনিধর্ষণ করে চলে গেলে ট্রেইন
বিমর্ষ পেয়ালারা পিরিচের ওপর ঢলাঢলি করে।
দর্শকবিন্দুতে আমরা—
আমি তিরিশ বছর পুরনো জন্মকল্পের দিকে ফিরে যাই
তোমার দেহপায়রার ওপর অবিরল ঝরে চলে বৃষ্টির পয়ার
বৃষ্টি-বিষয়ক সিজোফ্রেনিয়া
প্রচণ্ড ঝড়োতায় তোমার দেহপায়রা উড়ে গিয়ে
বসে শেষ কম্পার্টমেন্টে। বৃষ্টি-বিষয়ক সিজোফ্রেনিয়া
স্টেশনে স্থির বসে থাকে। তুমি চলে যাও অঝোর
মালগাড়ির তীব্র আলোর দৃশ্যান্তরে;
হারানো বিজ্ঞপ্তি সাঁটা আছে দেয়ালে দেয়ালে
হারবাল কোম্পানির সমস্ত স্টিকারে-হ্যান্ডবিলে
রঙিন পোস্টারের মৌনযৌন আর্দ্রতায়—
ঝরছে সোনার মতো তোমার অবিনশ্বর চুলের সাপ
ইস্পাতে পিষ্ট রোদের গোপন জটিল ব্যাধি;
স্টেশন রোডের হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে মেঘের ক্ষয়রোগ
খয়েরি টিনের শব্দমাতাল বিস্ময়, টিকিটের ধূধূ হাহাকার
চলে যাও সমান্তরাল বৈকুণ্ঠের তরলে—
স্থিরতা জানে, কুয়াশায় ঢেকে যাবে তোমার গমনপথ
স্টেশানের সবগুলো বেঞ্চি গভীর কোনো অভিঘাতে একদিন
বৃষ্টি
সারা দুপুর এখানে ঝিঁঝি ডাকছে। আমরা ঘুমিয়ে পড়েছি স্বপ্নে
শাদা হাওয়া এসে নিভিয়ে দিয়েছে রোরে ঝাঁঝ—ছায়া হয়ে
আছে আমাদের মুগ্ধ বিবশতা। হা! গাছেরা জড়াজড়ি করে
দুলছে, লতায় লতায় প্রণয় প্রস্তুতি। এ মৃত্তিকা, এ ধুলোজুড়ে
আমি পেয়ে গেছি স্বদেশের ডাক, প্রিয় ভোর; তুমি হয়ে গেছ
জন্মপ্রগাঢ়—কিশোরি সাজ। কোথায় পুকুর বিমর্ষ হয়ে আছে
কোথায় মাঠ জুড়ে খরার আচ্ছাদন—দেখাও আমাদের—
আমরা দু’জন চলো বৃষ্টি হয়ে ঝরি—অবিরাম অবিরাম