কষ্টপ্রদীপ
যাওয়ার জন্যেই তো তৈরি হচ্ছি
তুই কেন দাঁড়ালি বাধা হয়ে
তোর চঞ্চল ফ্রকের নিচে এমন একটা
মমতার সরোবর লুকিয়েছিল তা আমি
বুঝতে পারিনি কোনোদিন; অথচ কতকাল কাছাকাছি আছি
আমাকে ক্ষমা করিস
বিশ্বাসের ঘরে যারা সিঁধ কাটে তাদের রাজত্বে বসবাস
একজন কবির পক্ষে সম্ভব নয়; কিছুতেই
আমি চলে যাবো
যেতে আমাকে হবেই
এমনকি তুই যদি বাধা দিস, তাও নয়
মমতার সরোবরে স্নান সবার ভাগ্যে জোটে না দুর্ভাগ্য আমার;
কবিদের ইতিহাস বোধহয় এমন কালিতেই লেখা হয় চিরকাল,
যেখানে অপ্রাপ্তির পাশাপাশি আঁকা থাকে অশ্রুও
আমি চলে যাচ্ছি
লেটুস পাতার কচি বুকে জ্বলজ্বল করছে ভোরের শিশিরকণা;
ওটাকে আমার কষ্টপ্রদীপ ভাবলেও ভেবে নিতে পারিস
ট্রেনের হুইসেল বাজছে
পা বাড়াতে হচ্ছে আমাকে
এই যে কুমড়ার ফুল, কুয়াশাভেজা বকুলের বিষণ্ন ঝরাপাতা
এগুলোর জন্য আমার দীর্ঘশ্বাস উচ্চারিত হবে আজীবন
আমি নেই তাতে কী
আমার স্মৃতিরা তো থাকবে সবখানে;
নিকানো দাওয়ায়, ধান শুকানোর ছলে
গোবর-উঠোনে, তুলসীতলায়
ডালিমের রক্তলাল ফুলে, দেবদারু পাতার
আড়ালে লুকানো মুনিয়ার অদ্ভুত রঙা পালকে
সন্ধ্যার ধূসরে প্রত্যুষের আজানে, অনন্ত বর্ষায় টগর ফুলের বুকে
নিশুতি ডাহুক হয়ে বেঁচে থাকবো আমি
তোর বুক-সরোবরে শ্রাবণইলিশ হয়ে ভেসে থাকাই তো নিয়তি আমার;
আমি চলে যাচ্ছি
আমার অন্ধকারে তুই জেগে থাক শরৎনক্ষত্র হয়ে আর বিষণ্ন আলো
ঢালতে থাক নির্ঘুম চরাচরে একান্ত একাগ্রতায় যেন এক
শরবিদ্ধ হরিণরমণী।
আকাশে রেখেছি পা
আকাশে রেখেছি পা
মাটির অজগর তুমি কিছুতেই পাবে না নাগাল
যত ভাবো এইসব পুষ্প-জল-পাখিয়াল-রব
সকলই তোমার
তবে ভুল, বড় ভুল ভাবনা তোমার
ফাঁদ পেতে ধরা যায় হনুমান শিয়াল শকুন
আলোর শালিক স্পর্শ ভীষণ কঠিন
মানুষের দেহগুলো বধ্য যদিও
আত্মা তার অবিনাশী অনল অধরা
আর সেইসব আদর্শ আর চেতনার বীণা
নক্ষত্র-নীরবে জ্বলে; নেভে না কখনো
আকাশে আমার পা
মাটির দানব যারা জমিনের ত্রাস
কিছুতেই পারবে না রুখে দিতে সত্য-অভিলাষ।
মন খুলেছি মন
মন খুলেছি মন
বন্ধ করে দুয়ার কপাট এবং শিমুল বন
বুকের আলে জমাট বরফ বড্ড কঠিন শিলা
প্রেম দেবতার লীলা
আমার নীলে ভরলে আঁচল আকাশ হবে তুমি
নাচবে দুচোখ কাঁপবে হৃদয়ভূমি
জুঁই করবী রক্তজবা এবং কদম কেয়া
বর্ষা রাতে আকুল হবে জমবে নেওয়াদেওয়া
অধরজুড়ে চুমুর বকুল ছুটবে কামের ঘ্রাণ
ব্যাকুল শ্যামের প্রাণ
মন ছিড়েছি মন
দেহের ভিতর শাওনতৃষা, উড়াল চাঁদের ক্ষণ।
২৯.০৬.২০১৮