বেদনা
ওরা হেঁটে যায় যে যার বেদনা নিয়ে!
আড়ালে দাঁড়িয়ে কাক ডানা ছড়ায়
খুঁটে খায় ওই দূর ছায়ার আকাশ
এ দৃশ্য দেখে দেখে বড় হয়েছে যে শিশুটি
সেও জানে
খননে ইচ্ছার ঢেউ তলিয়ে গেলেও বেদনা ভেসে থাকে
নিশ্চুপ শ্যাওলা তলে
বিল, খাল, নদী তেপান্তর পেরিয়েও
কার্নিশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে বেদনা লটকে থাকে
সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির ফ্রেমে।
জমে জমে বেদনাও ধারালো ক্রুশ, বিষাক্ত বিষ
ঈগলস্বভাবে রক্তাক্ত করে সাজানো সমুদ্র ঘোর
খিড়কি দরোজা খুলে দাও—
তাকে রেখে আসি শূন্য ইমারতে কিংবা পানাম নগরে।
বাবুই পাখির বিলাপ ও অন্যান্য
ফোরজির আকাশে ওড়ে বাবুই পাখির বিলাপ
তাদের স্বপ্ন বুনন পুড়ে গেছে অমবস্যার আগুনে
সে আগুন এখন তারাদের রক্তেভেজা চোখের কোটরে;
একদিন রক্ত শুকিয়ে কাঠ—
কাঠ থেকে তৈরি যে ইজিচেয়ার
তার ঠিক মধ্যিখানে কোমল শীতের রোদ
সূর্যের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে
ধীরে ধীরে তার শরীর ঢেকে যাচ্ছে বাজপাখির ডানার ছায়ায়,
একদিন সে ছায়া নিংড়ে ভেসে আসে বৈশাখের উল্কারথ
আমাদের নিয়ে যায় নির্লিপ্ত বাসনার কেন্দ্রঝড়ে
সে ঝড়ের দুপুরে চোখের গভীর থেকে উঠে আসে পেঁচানো ক্রোধের স্রোতে
তাতে ঠাঁই নেয় বাবুই পাখির বিলাপের ঢঙ।
আরও একদিন ফোরজি’র আকাশ ভেঙে বর্ষা নামে
তুমুল তীব্রতায় ঝড়ে পড়ে সঙ্গমাসক্ত দুই নর-নারীর পিঠের ভাঁজে
যেখানে আগে থেকেই নিদ্রিত ছিল আমার কিংবা আমাদের
ছোট্ট বেলায় হারিয়ে ফেলা তুলতুলে এক বিড়ালের লোম।
ঈর্ষা
আমি কি সরে যাচ্ছি?
খুঁজে ফিরছি শৈশবেই হারিয়ে ফেলা সেই সুর ভাঙা ঘোর?
দক্ষিণমুখী পড়ন্ত বিকেলের দিকে মুখ ফেরানো একজোড়া শালিকের পাশে জীবন বদলানো বিমূর্ত সময় ধীরে ধীরে সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে গেলে দিগন্তজোড়া দৃশ্যের ভাঁজে যে অপার্থিবতা মুখ লুকায়; পদ্মায় গতায়ু সূর্যের ঝিল্লিতে যে নৌকাটি বৃত্তবন্দি হয়ে দূরবর্তী চিহ্নের মতো ডানে-বাঁয়ে দুলতে দুলতে স্থবির হয়ে পড়ে, তার ঠিক পাশে জনবিরোধে অংশ নেওয়া কতিপয় ঢেউয়ের সংরাগে যখন ঈগলঘুড়ির ছায়া ওড়ে ঠিক তখন বেদনারা স্তম্ভ সাজিয়ে আকুল ডাকে দুই হাতে, আয়! আয়!
পদ্মাপাড়ে নারী পুরুষের ত্রিফলা আসর। ওপরে শোঁ-শোঁ হাওয়ার আকাশ। কাদাপানিতে হাঁটুগেড়ে প্রার্থনারত এই আমি সবুজের অরণ্যমিছিল ছেড়ে উড়ে আসা একটি ঝরাপাতার কোলে আশ্রয় নেওয়া ছোট্ট পিঁপড়ের গল্প বলার ঢঙে চমকে উঠি! কী দক্ষ আর মসৃণ ভাবনায় সে তার আঁতুড় ঘরের গল্প শোনায়। হাওয়া আর ঝড়ের ঝাপটায় দুলে ওঠা সংসারের কোণায় কোণায় কোথায় তার আকাঙ্ক্ষার চিত্রগুলো কখএনা বর্ণিল আবার কখনো অনুজ্জ্বল, কিভাবে উৎপীড়নের রক্তিম যতি চিহ্নগুলো পৌষের কোমল আলোর আভায় ছড়িয়ে ছড়িয়ে যায়…এসব ক্রমাগত সে আওড়ায়…
প্রার্থনারত এই আমি অদেখা বুনোফুলের ঘ্রাণ বুকে নিয়ে বিক্ষুব্ধতার বিস্তার রোধে ক্রমে বৈঠা চালাই।
দ্রুত, খুব দ্রুত!