জগতের সকল বৃক্ষ সুখী হোক। জগতের সকল নদী
মঙ্গল লাভ করুক। এবং যে চাঁদ ঠিক আমার
মাথার উপর,আমাকে পাহারা দেবার জন্যেই দাঁড়িয়ে
আছে-; তার জন্য বরাদ্দ হোক একগুচ্ছ গোলাপ।
জমা থাক কয়েকটি আলোকজ্জ্বল শাদা পাথর।
প্রার্থনাটুকু সেরে নিতে নিতে আমি গুহাটির
প্রবেশদ্বারে এসে দাঁড়ালাম। একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি
আমাকে নতজানু হয়ে সম্ভাষণ জানালো। একটি প্রজাপতি—
আমার কর্ণযুগলের পাশে দিয়ে উড়ে যেতে যেতে
দেখালো তার রঙিন পাখনা।
আমি বরাবর রঙের আরাধনা করে আসা ব্রহ্মচারী।
ভ্রাম্যমাণ কুয়াশা আমার আঁকার তুলি,
আর পৌষের পিঠ আমার কালিক ক্যানভাস।
আমি সেই ক্যানভাসে ঋতুগুলোর নাম লিখে রাখতে
চাইলাম। চাইলাম,এঁকে রাখতে
. জলফড়িঙের যৌবনের ছবি।
একটি কাঠটোকরা বৃক্ষটির ডালে বসে আপনমনে
গাইছে গান। কুঠার হাতে গাছের নিচে বসেই
হুকুমের অপেক্ষা করছে একজন কাঠুরিয়া।
শাদা একটি খরগোশছানা’কে সেই বৃক্ষতলে দাঁড়িয়েই
খাবার খাওয়াচ্ছে তার মা।
জোয়ারবিহীন পৌষে নদী থির দাঁড়িয়ে আছে।
এই বৃক্ষটি কিছুক্ষণ পরই নিহত হবে। এর ঠিক
কিছুক্ষণ পরই দখল হয়ে যাবে এই নদীচর।
আমি সে’সব দৃশ্য আঁকার জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি—
তখনই জন লেননের কথা আমার মনে পড়ে যায়।
জন লেনন মানুষের হাতেই নিহত হয়েছিলেন।
মানুষের হাতেই নিহত হয়েছিলেন,
মহাত্মা গান্ধী, আব্রাহাম লিংকন, জন এফ কেনেডি,
এমনকি শেখ মুজিবও। মহামতি ইন্দিরা গান্ধীর
রক্তাক্ত শবদেহ দেখে কেঁদেছিল পৃথিবীর তাবৎ বনাঞ্চল।
তবে কি মানুষই মানুষের হত্যাকারী! মানুষই-
একা দাঁড়ায় সকল ধ্বংসের মুখোমুখি!
বিশ্বের প্রতিটি দূতাবাসের দেয়ালে লেগে আছে
যে জামাল খাশোগি’র রক্তের ফোঁটা—
তিনিও তো এই পৃথিবীর কাছেই চেয়েছিলেন
তার ভালোবাসার ছাড়পত্র।
হায়! খুনি দূতাবাস !
তুমিও কি তাহলে ভিসার বদলে মাঝে মাঝে
ইস্যু করো খুনিদের জন্য সীমান্ত পারাপারের দলিল!
না—আপাতত সেই মানুষগুলোর জন্য আমার
কোনো প্রার্থনা নেই।
বরং সবুজে আচ্ছাদিত হয়ে যে বন দাঁড়িয়ে আছে
আমার প্রতিবেশে;
. আমার সকল প্রার্থনা শুধুই তাদের জন্য।
অথবা এই যে উতল হাওয়ার স্পর্শ আমাকে
ক্রমশ হিম করে দিচ্ছে—
. আমার প্রার্থনা তার জন্য।
প্রার্থনা এমন কোনো বৈভব নয়, যা দখল করা যায়।
অথবা বিশ্বাস;
. যেভাবে চিরকালই অনাবিষ্কৃতই থেকে যায়
. এক-একটি সমাধির বিষণ্ন চত্বরে ।