আকাশের বিশ্বাস কম তাই ফুটফুটে জ্যোৎস্নার
আলোতেও খুলে রাখে হরিতকি চোখ
তবু রোদের পকেট থেকে অনায়াসে চুরি হয়ে যায়
ঝকঝকে বেড়ালের অসম বয়স;
গর্ত থেকে সাপ আর গুহা থেকে বেরোয় যখন সিংহ
জানোয়ারের দিক থেকে দুটোই বেশ তেজদীপ্ত, বিষধর ও হিংস্র
অন্ধ অজগরের তেমন কোন সাড়া শব্দ থাকে না
আলো ঝলমল করা নিস্তব্ধ রাতের শহরে;
কোনো এককালে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে
উঁইয়ের ঢিবির ওপর দাঁড়িয়েছিল লাল পিঁপড়া মহাশয়
তারপর থেকেই মানুষের পর্বতারোহণ শুরু
এ মত অযৌক্তিক যুক্তিতে সেইসব মানুষ আজ
পশু প্রকৃতির মত হিংস্র হয়ে উঠেছে—এ কথা প্রভু
নিজেও জানেন।
প্রগাঢ় শীতের রাতে, মানুষের হাতে হরিণ শিকারে
প্রতিনিয়ত ব্যস্ত যে বল্লম, তারও আছে অতিশয় সংশয়
আর ঝিনঝিন শব্দ করে বাজতে থাকা করাত কলের ভয়
রোজনামচায় যদিও হত্যাকারীর তালিকায় তার নাম নেই
তথাপিও রাষ্ট্রের মানবিক স্পর্ধায় প্রত্যহ করে যায় সে খুন
অমানবিকতা—ক্রসফায়ার এখন কোনো এক ধূর্ত শেয়ালের
নাম;
আর যখন সমস্ত রাত্রির আঁধার চিরে বেরিয়ে আসে
নপুংসক মানুষ, যখন অস্থিত্বহীনতার সংকটে ভোগে
ঘরহীন, দিকশূন্য, নিরন্ন পায়রার ঝাঁক;
তখন বাতাসের গলা দড়ি দিয়ে মানুষ সিংহের মতো
অন্য কোনো এক রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে যায়, অথচ
আমি সন্তানের জন্মদিনে মাথার ওপর কালো যমটুপির
মতো এক ধরনের মৃত্যুপরোয়ানা নিয়ে একটি কেকের জন্য
নো ম্যান্স ল্যান্ড ধরে নগ্ন পায়ে হাঁটি;
স্টিভেন স্পিলবার্গ বলেছিলেন: ‘সারাজীবন আমি যা
করেছি, সত্যিই তা রোজকারের জন্যই করেছি।’
আমিও তো তাই। কিন্ত একটি মানুষের জন্য
কমপক্ষে দুটি কর্মপদ্ধতি জানা থাকা উচিত
একটিতে খারাপ করলে অন্যটি দিয়ে যেন জীবন
পরিচালনা করা যায়। আমার সেটা নেই। তাই আমার
শরীর থেকে বুঝি দুঃখরা যায় না। দুঃখরা বাড়ি ভাড়া করে
থেকে যায় পাশের বাড়ির মালেকার ভাতের পাতিলে।
তথাপি অতিশয় সংশয় নিয়ে যে চোখ হাজারো দুঃস্বপ্নের
অন্ধ স্বাক্ষী হয়, তার ভেতরে বিকেলের পাহাড়ি ফর্সা মেয়েরা
যখন সমুদ্রস্নানে নামে, তখন বেলোয়ারি বাতাস এসে খুলে
দেয় বুকের সমস্ত কাঁচুলি, আচমকা ঢেউ এসে ছুঁয়ে দেয়
সফেদ নাভীমূল, নরম স্তনযুগল খেলা করতে থাকে
বিহঙ্গ জলের সাথে আর তাদের নিতম্বের সুঘ্রাণ সময়ের স্রোতে
ভেসে যায় এক মহাকালের গর্ভ থেকে আরেক মহাকালে।
ঠিক এভাবেই বুকের ভেতর একদিন তৈরি হয় সমস্ত
কোলাহল, ভাঙচুর আর অজানুলম্বিত নৈঃশব্দ্য।
কিছুই যখন ভালোলাগে না, তখন তোমাকে বেচে দিয়ে
আসি একটি অতি প্রাচীন নগরের চৌরাস্তার মোড়ে।
প্রকৃত পক্ষে জীবন কত অভিমানী, অসাড় আর ভণ্ডুল
তোমার যে একেবারেই কোনো দায়বদ্ধতা নেই, তা যেমন
শিল্পেরও ভাষা আছে, আছে মানুষের মত নষ্ট এক ধরনের
কালো মুখোশ যেমন বুঝি আমি, তেমনি সন্ধ্যের মুখে
যারা চলন্ত গাড়িতে ছুঁড়ে দেয় হিংসার আগুন, তাদের
মানচিত্রে বুঝি আর কোনো দেশ নেই, আর কোনো ভাষা
নেই এ কথাটা কেন তুমি বোঝো না?
তবু তোমাকে করেছি ঈশ্বর, তোমাকেই করেছি প্রিয়তমা দেবী
নিজের ব্যথাকে দূরে ঠেলে আপন করেছি তোমার সবই
এই একটাই ক্ষুদ্র জীবনে হয়তো মিটবে না তোমাকে কাছে
পাওয়ার সাধ, কথায় কথায় বেলা বাড়ে, বাড়ে শুধুই নির্লজ্জের
মতো মিথ্যে অপবাদ!
কতটা পথ ভুলে তুমি এসেছো এ দূর্গম পথে
তোমাকে তো ফেলে এসেছি নির্জন বৃক্ষের
আঁচলে বাঁধা গিঁটের ভেতর সেই কবেই—
শীতের উষ্ণতা ভরা দগদগে হৃদয়ের ক্ষত আর
মৌলিক মুখোশের ভেতর গড়াগড়ি খাওয়া বাল্যকাল
হৃদ্যতা বোঝে না শুধু অপরাপর ঝকঝকে
চশমার ফ্রেমে বন্দী হয়ে ঝুলে থাকে অতিশয়
সদ্য শরৎকাল।
একমাত্র ভালোবাসার প্রতারণায় এনকাউন্টার নেই
বলেই হয়তো প্রাণে বেঁচে গেছি। সে জন্যই তুমি
ইচ্ছে করলেই জীবনটাকে সাজিয়ে দিতে পারো রঙিন
ফুলে ফুলে অথবা মিথ্যে অভিযোগে ঠেলে দিতে পারো
কঠিন মৃত্যুর দুয়ারে।
একবার রোদ এসে ফিরে গেছে যে উঠোন থেকে
তাকে আর কখনো ফিরে পাবো না জানি;
তোমার না থাকাতে জীবনে লেগে আছে শুধুই টানাটানি
অনেক কষ্ট করে হলেও তোমাকে নিয়েই বেঁচে থাকতে
চাই, বুকে নিয়ে যতসব গ্লানি।
অথচ আমার নিজের কোন আশ্রয়স্থল নেই বলে
লখিন্দরের ভেলায় পেতেছি ফুলশয্যা
যদিও পূর্ণিমা রাত, তবু তোমার কষ্টটা আমি বুঝে নিতে পারি।
ধাতব্য চিকিৎসালয় সম্পর্কে নিরক্ষর হতে পারি
তবে রাষ্ট্রজ্ঞানের তুলনায় ভাষাজ্ঞান মাত্রাতিরিক্ত
কারণ, এটাই কবির একমাত্র সম্বল।
উত্তপ্ত গরমে প্রতীক্ষায় থাকি একফোটা বৃষ্টির
প্রেমিকার চুম্বনের মতো বৈধব্য—উষ্ণ-শীতল আর ফোটা ফোটা বৃষ্টি
বৃষ্টিরা আসে না, সফেদ আর ধবল মেঘের পালকি চড়ে শুধুই
প্রেমিকার ঠোটেরা আসে
অভিমানের এত-এত খড়্গ আমি কোন হৃদয়ে রাখি!
আমি তোমার জন্য খুলে রেখেছি নির্মল এক আকাশ
প্রপঞ্চনার মেঘ এসে ভরে দিয়ে গেছে সকল ব্যথার
ভাড়। ইচ্ছের ইচ্ছেতেও নেই কোনো সারমেয় সুর।
পানের অতিথীশালায় অর্ধবসনা নর্তকীর মুদ্রাহীন নাচ
দেখে ভিমরুলেরা উড়ে যায় পুরনো ঠিকানায়।
এ আকাশ ঠিক কতখানি নীল, আমি জানি—আমার বুকের
চাইতেও নিশ্চই খুব বেশি নয়। পানশালার আয়োজন দেখে
মুগ্ধতায় ভারী হয়ে ওঠে বেদনা বৃত্তের নীল চূড়া!
আমাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দাও তোমার খণ্ডিত দ্রোহের প্রেমে
আমার শরীরে নরকের তপ্ত আগুন জ্বেলে দাও
দুঃসহ নরকের রক্তিম আগুন
আমার বিশ্বাস ভেঙে দাও অঝর বৃষ্টির ভাষায়
দেহকে প্রশ্ন করি, এতো প্রেম কোথায় ছিল তোমার?
এত মমতা কোথায় ছিল তোমার?
কোন সে আদর্শ নারীর জঠরে আমার জন্ম হয়েছিল?
কোন সে সুপুরুষ অতি সোহাগে যত্ন করে আমাকে ঢেলে
দিয়ে গেল অন্য নারীর মায়াবী গোপন কুঠুরিতে?
তাই বুঝি এত প্রেম, এত ভালোবাসা, এত হাহাকার
আমার বুকের ভেতর? তবে কি আমার জন্মদাতাগণ খুব
বেশি প্রেমময় ছিল? আজ এই নিষাদ নগরে আমি কার উদ্দেশে
ছুঁড়ে দেব এসব গোপন দ্বিরুক্তবদাভাস?
পৃথিবীর সমস্ত নারী ভাতের কষ্ট সহ্য কতে পারে
কিন্তু ভাতারের কষ্ট সহ্য করতে পারে না।
একটা অলিখিত জীবনের যৌবনের সিঁড়িতে পা রেখে জেনেছি
কোন সে হারামজাদা আজ তুলে দিল আমার ঘাড়ে সংসারের
জোয়াল, সেই সংসারের ঘানি টানতে টানতে ভীষণভাবে শক্ত হয়ে
আসছে আমার চোয়াল। আর
ছেঁড়া শার্টের বোতামে ঝুলে আছে অন্ধ রাত্তিরে তোমার
আমার দু’জনার বুকের যত মিশ্রিত হাহাকার!