এটির উৎপত্তি এখানেই—কোড়ে কোড়ে বাড়ে এর
অবলম্বী রেখা কিংবা উত্তরাধিকার।
জাতপাতের প্রসঙ্গ তুলেই
ইদানীং এর চাহিদা বাজারে বেশ, কঞ্চিসহ
এক.
কৃষিজাত কাজে, দৈনিক নিয়মে সে শৈল্পিক, ওতপ্রোত,
যেমন, মা সন্তানে দরদ—মাচা হয়ে, বেড়া হয়ে
শস্য, ফলমূল বা ফসলের পাহারায় দেখবে একে অবিকল ।
আলো-বাতাস গ্রহণে লকলকে ডগাকে সে-ই আগবাড়িয়ে উঁকি দিতে বলে,
চোখে চোখে রাখে যেগুলো অবুঝ, ঝুলে পড়ে যেতে যায় নিচে।
গরু, পাতা-ছাগলের বিধি না মেনে ঢোকার
চিরায়ত বেহায়া বাতিক বা তালে বে-তালে থাকা
নিশাচর উপদ্রবে অতন্দ্র প্রহরীরূপে সে ঠাঁই দাঁড়িয়ে—
ফটকের জ্বরে, কম্পনে সে থাকে বড়ির সমান।
বিপদে আপদে বেঁকে গেলে দেহ, মন কিংবা ইচ্ছে
সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সহজ শিক্ষাও
পয়সা বিনে পায় লোকালয়।
ফসলের চর পড়া কণ্ঠকে তিতিয়ে দিতে সেচের দুনিকে
উঠানামা করতে বুককে করেছে ধনুক সমান, টান টান;
নিজে খণ্ড হয়ে ডুবো জলে নামে মাছেদের বাসা বিনির্মাণে।
আকৃতি প্রকৃতি চিরে-মেলে ধান শুকানোয় দেয় উষ্ণ সঙ্গ, দাঁড়ি নামে।
পর্দা প্রথা আর সতর্ক ব্যবস্থা যথাযথ রাখতে
দহলিজে নির্ঘুম দু’পায়ে থাকে দাঁড়—
শৈশবের ঘুড়িতেও উড়ে উড়ে আনন্দ জোগায়
অশীতিপরের হাতে হয় শক্তির পা।
দা-কুড়াল মেরে নিঃসংকোচে ঝাঁটাঝাড়ু বনে যাওয়ার সৌজন্যে
পরিষ্কার জামা পরে ভোরের উঠোন।
জোয়াল তকমায় গরুকে খাটায় ক্ষেতে,
যষ্টিতে শাসায় বশ না মানা কর্ষণে।
গরু বা মোষের গাড়ি, পালকির সুখেও ছিলো তার
নজর কাড়ার মতো অংশীদার।
পলো, ঠুলি, কুলো, টুকরি, ঝুড়ি, খাঁচি, দাইড়া, আঁকশি, মই—
তাঁতীর বয়নে, আরো কতো দিকে—কোথায় সে নেই,
কুঁড়েঘর, জলটুঙ্গিতে, গৃহস্থালি জুড়ে
এর প্রাধান্যই চোখে পড়ে, তুলি টানে।
আবার দু’পাড়ের দুর্ভোগ সামলাতেও
বুক পেতে শুয়ে পড়ে খালের ওপর।
এলিজাভেত বা ইংলাদের শখের তুলার মূল্য দিতে
খাপে খাপ লেগে যায় গোলপাতার ছাউনিতে শোভিত কুঁড়ে ঘরে।
ধাঁধায় সাঁতরায় দৃষ্টি, এ থেকেই তৈরি মণ্ড—যা থেকে কাগজ
বেরিয়ে ধারণ করে অক্ষরের অনির্বাণ দ্যুতি;
এখানেই হাতে পায় চকমকি, দুর্লভ ‘মাস্টার কি’
যা দিয়ে খোলার প্রতিশ্রুতি স্থিত কিংবা আবর্তের অজানাকে।
কখনোবা টানে লেঠেলির সে শৈশবে।
মনে পড়ে, অনেকের হাতে হাতে কঞ্চি-শব্দে পড়তো
পণ্ডিত স্যারের আশীর্বাদ।
তার অঙ্গ-প্রতঙ্গেই বে-নজির ঐক্যের দৃষ্টান্ত।
অন্যদিকে, এ উদ্ভিদ নিজেই মিটারে, কিলো মিটারে ‘ইয়েস স্যার’ না বললেও
এর বাঁকা ধর্ম গজে গজে রেখে যাচ্ছে চিতি, চিহ্ন— যা লোকের
প্রত্যেকের চোখে দিচ্ছে কাঁটা।
যে কোনো দখল প্রশ্নে ইটালিক বর্ণে
বা বাঘের হা-মুখ অক্ষরে এর অবস্থান করে থাকে ভয়ানক স্পষ্ট।
দণ্ড বিধিকে সমীহে, হালকা বাঁকাকে সোজায় ‘উত্তম মধ্যম’ বলে খ্যাত
তার প্রাথমিক তদ্বির, চিকিত্সা ভারী ফলপ্রদ,
আইনী বৈধতাও এর সঙ্গে একীভূত, দৃঢ় পায়ে—
আবার গুলআলু তরকারির শিষ্টাচার মেনে ঢুকে যেতে অনুমতি পায়
রান্নাঘর থেকে কান্না জড়ানোর সকল কাজেই।
যেহেতু, বে-হাত বাঁশে বে-জায়গায় আগুন ছড়িয়ে রাখে লাগাতার।
দুই.
রাজনীতির খোলা বা খেলার মাঠে
এ খেলা সবাই খেলে, উঠেপড়ে—
কারো খেলায় সমূহ দৃষ্টি আটা লাগা হয়ে থাকে,
আর কারো পর্ব ভাঙা বাজারের ন্যায়।
বিদ্যুতের বাড়তি টান থাকে কারো পায়ে,
আর কারো হাতে থাকে ভন্ডামির বাঁশ।
সুদীর্ঘ চেনাকে মনে হয় কতোই অচেনা,
অচেনাকে কোথাও আবার পিঠাপিঠি ভাই বোন।
বর্ণচোরা বৈচিত্যেও নাকি এর নাম ইদানীং
রং ভোলা রূপ দেখে
কখন কে যে কিভাবে ধরা খায়—বুঝে ওঠা দায়!
সব ইস্যুতেই নাকি আজ বাঁশ, আসলেই বাঁশ।
বিচিত্র নমূনা খাড়া করে নেমে পড়ে
ঐক্যে ফাটল ধরায়, সম্পর্ককে ওপরে উঠিয়ে
সজোরে আছাড় মেরে চিৎপটাং ফেলে রাখে বালু ভাজা রোদে।
পরস্পর ভাব বিনিময় আটকে যায় বানরের কথিত সে বে-কায়দায়,
মুখ দেখাদেখি রূপ নেয় নিমের জারকে—মোড় নেয় রক্তপাতে।
ঘুমের শয্যায় থাকবে তরঙ্গের ভীতি মাঝরাতেও।
হয়তো তোমরা বলবে, প্রজাদের দু’আঙুল কপালে এমনি ছিলো লেখা।
এর সঙ্গে যদি যোগ হয় তেলের শাস্ত্রীয় সমর্থন তাহলে কি পোয়াবারো ?
তিন.
নীড় থেকে নীরবে পালিয়ে গেলে অধিবাসী
তৃণ মরা হয়ে যায় ধৈর্য, প্রেম–নিশি হলে নাকি
ডোরাকাটা ডোরাকাটা ঠেকে প্রতিটি পলক, পল অনুপল—
তা থেকেও ইতিতে এগোতে
চিরনিদ্রার নিষ্ঠুর সমাপনীতেও
এই বাঁশই বুক পেতে শুয়ে থাকে শব সুরক্ষায়।
বাঁশ, কেবলই যে নয় বাঁশ
মোড়ে, তে-মাথায় পরম্পরা করবে এই তথ্য ফাঁস।