কাঠবিড়ালির আমন্ত্রণ
শেষ রাতের ট্রেনটিতেই ঠিক ফিরবো আমি।
কোনো অপেক্ষায় থেকো না। কারণ অপেক্ষার প্রহরের
রিক্ততা আমি বেশ ভালোভাবেই জানি। আমন্ত্রণটি
ছিল বসন্তের কাঠবিড়ালির, সখ্যতায় ছিল তার
ঝাড় লেজ আর অভ্যর্থনার বাধায় ছিল পৌষের হিমশীত।
স্টেশনটি শীত চাদরে ঢাকা কুয়াশাময় আর
অনেকটাই রহস্যময়। ঠিক যেন এক নেভাডার মরুভূমি!
যেন প্রতিচ্ছবির ফ্ল্যাশব্যাক। সাথে জুড়ে আছে নিসর্গ শোভার
ডানা কাটা পাইন মাঝে জড়োয়া সাজে তুমি।
যদিও নও অপেক্ষায় তবুও আশা এসে ভিড় করে,
হয়তো বা তুমি অপেক্ষায়। শেষ রাতের ট্রেন, বড্ড ধীর,
টেনে টেনে চলা, হুইসেলের শব্দ পু-ঝিক-ঝিক!
আপন মনেই বলা তবুও ফিরবো জেনো ঠিক।
আমার নিচে ক্রমেই বিস্তৃত হয় অনন্ততার হাট।
ফিরতে দেয় না আমায় পিছু হলুদ ফুলের মাঠ;
ডুবি আমি ডুবে চলি ক্রমাগত ঘাট থেকে ঘাট
অন্তর্মুখী খাদে নিমজ্জিত আমার ঊষাকালের পাট।
নীরব পৃথিবীতে পারিনি ফিরতে ক্ষমা করে দিও,
হে প্রিয়, প্রিয় কাঠবিড়ালি, পরবর্তী ট্রেন সময়সূচি
তুমি ঠিকঠাক জেনে নিও।
পালকি
ইদানীং প্রায়ই দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায়।
অবচতেনে কাছে চলে আসে শূন্য পালকি
কেবলি তাড়িয়ে নিতে চায় দূর-দুরান্তরে
মুখচ্ছবিটা সেই পুরোনো নেশা জাগিয়ে তোলে
ক্রোধান্বিত মাতাল হয়ে লেগে থাকে ঠিক পেছনে।
উঁকি দেওয়া মুখের কৌতূহলটি খুঁজে ফিরি;
অস্পষ্টতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় রত হই
বেয়ারাদের সাথে সুর মিলাই,
হুন-হুনা-হুন, হুন-হুনা-হুন, হুন-হুনা-হুন
মোহাবিষ্ট ভাবনার কয়েকগুণ বর্ধিত হয়ে
স্বপ্নগুলো হোঁচট খায়।
আমি শুকনো ধুলার সাথেই কথা কই;
সখ্য গড়ে তুলি চোরকাঁটার সাথে
আবেগগুলো সব দলা পাকিয়ে মোচড় দেয়
ভাবনার ডালপালারা বিস্তার লাভে
নিজ নিজ প্রাপ্যতা বুঝে নেয়।
আমি আবারো ঘুমে তলিয়ে যাই।
মোহাচ্ছন্ন হতে থাকি নতুন বাঁকে,
ভাবি বেয়ারাগুলো বোধ হয় পালালো এবার
পেছনে রসালো মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ করে দিয়ে গেল
আমার স্বপ্নাচ্ছন্ন জীবনটাকে।
অবশেষে আচ্ছন্নতা টুটে যায়;
মেঠোপথে পালকি হারায় দূরের গাঁয়
অপক্ষোরত পালকি দরজা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।
জারণকাল
ছুঁয়ে দিয়ে শুরু না ছোঁয়াতেই শেষ
অতৃপ্ততায় আমি রইলে তুমি বেশ।
তুলে দিয়ে ঝড় হও ভাবলেশহীন
আচ্ছন্নতায় মুগ্ধ কার মনগহীন?
মুক্তো হাসি ঝড়াও অন্য-বাহুতল
আমার রোদন-ধ্বনি বন্য ঘোলাজল।
পারোও তুমি বড্ড মন-মনান্তরে
খেলতে ইচিং-বিচিং জন জনান্তরে।
কেন্দ্রে থেকে তুমি করলে কেন্দ্র পার
ব্যাস-ব্যাসার্ধের কোণ বদল বারবার।
জারক রসে আমি জারণরত কাল
তোমার হেমন্ত-ফাগুন বলো আর কতকাল?
মধু ঘ্রাণে মৌচাকময় কত্ত মৌমাছি
এমনতর আমি যেন পরজনমে আছি।
সত্যিই যেন শত-শত আলোকবর্ষ দূরে
ভালবাসার নীহারিকা জ্বলে-পুড়ে-মরে।