শিরদাঁড়া
তুমি ভাবছ আমি স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারি না
কেবল নুয়ে থাকি
একা একাই নুয়ে থাকি
বুঁদ হয়ে থাকি শুধু
কিংবা ঘরকুনো ব্যাঙ;
শিরদাঁড়া নত করে বাঁচতেই জন্মেছি আমি…
তোমার ভুলগুলো মিলিয়ে নাও এবার
সহ্য ক্ষমতার শেষ আছে জেনে নাও সংগ্রামে;
রাজপথের এই সাহসী হাত দেখো—
দেখো—আমিও মুষ্টিবদ্ধ হাত নিয়ে সত্যের পক্ষে স্লোগান দিতে পারি
মায়ের জন্য খোলাবুকে বুলেট নিতে পারি
রক্তমাখা জামা নিয়ে ভাইয়ের জন্য
বোনের জন্য উচ্চস্বরে আওয়াজ দিতে জানি।
এই সহজ বুকে অস্ত্র তাক করো
আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো
সমস্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার
কোনো রক্তের ঢেউ থামাতে পারবে না আমাকে
আমি বৈষম্য ও অনিয়মের দেশে বলে যেতে চাই
এই রক্তের স্রোত একদিন ভাসিয়ে নেবে তোমাদের…
একটি উচ্চারণ
অকালপ্রয়াত স্বপনগুলোর জন্য বড় কষ্ট হয়
খুব উতালা করে দেয় শান্তি ছুঁয়ে আসা স্নিগ্ধ হাওয়া
দীর্ঘশ্বাসে—দীর্ঘশ্বাসে অন্ধকার হয়ে আছে
সাজানো উপত্যকা—
হিংস্রতা আর লাজহীন নৃত্যে কোথায় হাঁটছি আমরা?
রক্তের হলি খেলা বন্ধে—
এই সময় একটি উচ্চারণ—একটি মাত্র শক্ত উচ্চারণ—
একটি মাত্র তেজস্বী উচ্চারণ দরকার।
এই কবিতা মানুষের আদলে—মানুষ খেকো পশুর জন্য নয়
এই কবিতা স্বাধীন উচ্চারণে টুঁটি চেপেধরার জন্য নয়
এই কবিতা দেশ-জনতার মুমূর্ষু চিৎকারে
যারা তৃষ্ণা মেটায় তাদের জন্য নয়,
এই কবিতা লাশের মিছিলেও যারা ভুলে যায় মানবতার কথা তাদের
জন্য নয়। দেশপ্রেমহীন মসনদ দখলে উন্মুলদের জন্য নয়—
এই কবিতা একজন মানুষের জন্য
একটি প্রাণের জন্য
পচে যাওয়া সভ্যতার জন্য
গলির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ভাঁপা পিঠে বিক্রেতার জন্য
কিংবা বৃদ্ধ ভিখারীর জন্য
এই কবিতা একজন সত্য উচ্চারণকারীর জন্য
একটি স্বপ্নমুখর জাতির জন্য।
গুম হওয়ার আগে
আমরা লাল ভাস্কর্যের চেয়ে কৃষকের ঘাম জড়ানো বুকে
চুমু দিতে পছন্দ করি।
আমারা সফেদ পাঞ্জাবির অভিজাত্যের চেয়ে
পোশাক বালিকাদের স্বপ্নময় চোখ পছন্দ করি।
আমরা চিৎকারে চিৎকারে বলতে চাই—
বিচার বহির্ভূত হত্যা আমরা পছন্দ করি না
আমরা গুম পছন্দ করি না—
আমরা সস্তা ভাষণ আর পছন্দ করি না।
আর মুখে তালা নয় এবার চিৎকার দেওয়ার স্বাধীনতা চাই:
বন্ধ করো পাগলের বৈঠকী—
যেখানে নির্যাতিতের কান্না পৌঁছতে পারে না
বন্ধ করো সেই দোকান!
গুম হওয়ার আগে অন্তত একবার উচ্চারণ করতে চাই:
আমরা আমজনতা—আমরা কান্নার স্বাধীনতা চাই।