সেই জয়কে
খবর এলো ওই আকাশে কোটি সোনার খনি
যে যাবে তা পেয়েই হবে দু’মিনিটে ধনী।
বার্তা শুনে সন্ধানীরা ওঠে নড়েচড়ে,
খোকন সোনাও গবেষণায় যুক্ত হয়ে পড়ে।
নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে চায় রহস্য খুলতে,
তাই তো দেখি ছাদে একাই ভীষণ চিন্তায় দুলতে।
কখনোবা চাঁদকে ডাকে করতে পরামর্শ,
কী করলে কী হবে দ্রুত করতে ঊর্ধ্ব স্পর্শ।
যাবে গ্রহে, গ্রহাণুতে ইচ্ছে প্রায় একগুচ্ছ,
খুঁজবে সবই কোনো কিছুই ভাববে না তিল তুচ্ছ।
পেতে পারে যা অজানা–সোনার চেয়েও দামি
যা সর্বদা পেতে বেহুঁশ মানব মুক্তিকামী।
এ-কলকাঠি ও-কলকাঠি নাড়তে করে শুরু,
মাঝে মাঝে বুকটা যদিও করে দুরু দুরু;
হার না মানা প্রতিজ্ঞাতে তবু আছে অটল
এলিয়েনরা যতই বলুক তুলবে অকাল পটল।
তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এসব শতো ভয়কে
পেড়ে আনবে খোকন সোনা অচিরেই সেই জয়কে।
সৃষ্টি
যা জানো বা দেখো-শোনো,
কেন সে সব তুচ্ছ গোনো?
বরং তাতে রঙ মিশিয়ে, রস মাখিয়ে
ছড়িয়ে দাও লোকের মাঝে,
বিন্দু-কথার সিন্ধু হয়ে
লাগবে কাজে।
ভেবো না ভাব ধরতে হবে,
কেশকে বড় করতে হবে,
নদীর পাড়ে বা জানালায় একলা বসে
আঁকতে হবে ইচ্ছেগুলো,
দেখতে হবে পেঁজা পেঁজা
মেঘের তুলো;
বরং দেখলেই আলোর কণা,
দেখিয়ে যাবে সম্ভাবনা,
দুঃখগুলোর ঠাঁই-ঠিকানা খেলনা যেন–
তা দেখাবে চিত্র এঁকে,
সৃষ্টি কী তা–বুঝবে সবাই
একে একে।
ল্যাং
আষাঢ় এলেই ব্যাঙ
আনন্দে লাফিয়ে উঠে
সাপকে মারে ল্যাং।
সেই আঘাতে সাপ
উঠতে বসতে এক শ’ একবার
ডাকে, বাপ রে বাপ!
বার্তা শোনে বোয়াল
দাঁড়ি নাড়ায় ঘড়ি-ঘড়ি
ভাসিয়ে তার চোয়াল।
লেজে, জলে আঘাত করে
রাগের জানান দেয়,
এদিক সেদিক ঘুরে-ফিরে
তথ্যও কিছু নেয়।
এ সব জেনে ব্যাঙ
শপথ করে, মারতে ওকেও
পাঁচ কুড়ি এক ল্যাং।
রানী এলেন
শেওড়া গাছে ভুতের বাসা
দাদু থেকে জানি,
পড়শী বলে, ওতেই নাকি
আসে ওদের রানী।
ফড়িং হয়ে লাফিয়ে ওঠে
রানি দেখার ইচ্ছা
কখন আসে, সত্যি কি না–
না কি কেবল কিচ্ছা।
ঠিক দুপুরে সবাই ঘরে
গল্পে ছিল মত্ত,
এমন সময় পরখে যাই
ওর কথা কি সত্য?
পাখি দেখার ছলে ছলে
পুরোটা গাছ দেখি,
বুকে, ভয়ে মারতেছিল
যদিও দু’চার ঢেঁকি।
ও মা শুনি, অভয় বাণী
মিষ্টি হাসির ঢেউ,
বুঝতে পারি, আমার পাশে
দাঁড়িয়ে আছে কেউ।
বোলে রসমালাই ঢেলে
হাত বুলাচ্ছে গায়ে,
এমন সময় রানী এলেন
ময়ূরপঙ্খী নায়ে।
রানি নেমেই তোতা পাখির
কণ্ঠ করে ধারণ
বলে দিলেন, আজ এখানে
আমার আসার কারণ।
অবাক চোখে যেই আমি সেই
পাঁজাকোলে তুলে
এগিয়ে গেলেন, বরণ হলাম
হর্ষধ্বনি, ফুলে।
ঢুকে পড়ি এক নিমিষেই
অচেনা আনন্দে,
কোথায় এলাম–ভুগতে থাকি
পাহাড় সমান দ্বন্দ্বে।
ভয় লাফিয়ে সামনে হঠাৎ
বুকটা দুরু দুরু,
পায়ে কাঁপন, ঝড়ো শব্দে
কান্না করি শুরু।
আর জানি না, এর পরে কী–
ঘণ্টা দু’য়েক পরে,
মাকে দেখি রোদন রত
খুকিও ভীষণ ডরে!
বুঝতে পারি, মায়ের কথা
না মানাটাই ভুল,
যে কারণে দিতে হলো
আজকে এ মাশুল।