তৃষ্ণায়, বিদীর্ণ বুকে
কোনো চিহ্ন রাখবে না বলে
কিছু আগে উড়ে গেছে এক পাখি
সোনার পালক তার দেখেছিলাম, লাল ঠোঁটও
এখনো দাঁড়িয়ে বিহ্বল আমি, যেন
একাকি কতকাল বিফল নিঃসর্গের আলো-আঁধারী।
আমারই মতো উপসংহারে
জীবনের ইজেলটা অপেক্ষায় ছিল
কতনা রঙের তৃষ্ণায়…বিদীর্ণ বুকে
বড় সাধ ছিল তার—আমারই তুলিতে পাবে
সোনার পালক, প্রিয় লালঠোঁট মোনালিসা হাসি।
ইজেলে জমেছে আজ ধুলোর মরু,
শিল্পের আবাসে দেখি শিল্পবোনে ভয়ের মাকড়সারা।
এখন কী মাস যায় বৃক্ষের পাতায়?
দেখি জোড়ায় জোড়ায় ভাসে বাতাস মন্থনে
রেখে গেছে চিহ্ন তারা শাখার বন্ধনে
আমার যে পাখি উড়ে গেছে বিদীর্ণ বুকে
দৃশ্যে অদৃশ্যে রাখেনি সে চিহ্ন কোনো,
রাখবারও কথা নয় যেন—অথচ,
এরই মাঝে দেখি, বদলেছে কতবার বাতাসের গতি
কতবার এসেছিল সস্নেহে সহোদরা কালো মেঘবতী।
জীবন এক আশাবরী সুর
ভালোবাসাকে সে দেখেছিল জীবনের উর্ধ্বে
এ পৃথিবীর ভেসে থাকা পাপ-তাপ চতুরঙ্গের
অগ্নিশাসন মানেনি তা কোনোদিন। অবশেষে
জীবন আর প্রেমের দ্বন্দ্বে, জীবনকেই উৎসর্গ করলে
চিরকালীন শান্ত মাটির মায়া তাকে গ্রহণ করেছিল সাদরে।
একদিন তার পায়ের দিক থেকে একটা বৃক্ষ জেগে উঠলো,
কেউ কেউ বলেছিল এটা ভালো নয়, অভিশাপ।
অভিশাপের পরিমাণ জানতে বৃক্ষটা কাটতে দেইনি আমি।
বৃক্ষটা বড় হয়, ডালপালা মেলে নিজেকে ধরা দেয়
অবিকল সেই প্রেমময় মায়ার আদলে।
আমি তার নাম রাখি আশাবরী।
সুর, প্রেম, আর বাতাস মন্থনে সংগোপনে বেড়ে ওঠে আশাবরী।
এখন সে যেন এক জ্যোতির্ময়ী কোনো,
নিজেকে সাজিয়েছে ফুল আর ফুলে।
কেউ কেউ তাকে রাধাচূড়া বলে,
আমি বলি, প্রেমচূড়া—আশাবরী।
পায়ের দিক থেকে জন্ম নেওয়ায় একদিন যারা তাকে
অভিশাপ বলেছিল, তারাও ভুলে গেছে তার উপপ্রেমে।
প্রেমে মগ্ন হলে কেউ বলে পাগল,
আমি বলি, জীবন—আশাবরী সুর।
বৃক্ষ-ফুল আর সুরের প্রেম, অভিশাপ হয়নি কখনো—বৃত্তে বা প্রান্তে
বলো, শাপ তাড়াতে কেউ কি রেখেছ বেঁধে চোখ, রাধাচূড়ায় অজান্তে?
বৃক্ষরা আদি, মানুষ পরম্পরায়
প্রথম সঙ্গীত আসর বসেছিল বৃক্ষ শাখায়
মানুষ কি তখন শুনেছিল সেই সুর?
মানুষ কি এসেছিল বৃক্ষেরও আগে?
আসেনি। বৃক্ষরা আদি, মানুষ পরম্পরায়
তারও আগে আদি ছিল অনল আগুন।
একদিন আগুনকে পরাজিত করে বৃক্ষরা
জেগে ওঠে সুরের মায়ায়। কথা আর সুর নিয়ে
পাখিরাও এসেছিল মানুষের আগে।
মানুষ শিখেছিল প্রেম, প্রেমের কথন—
আগুনও জেনেছিল সে জন্মের পরম্পরায়।
আমি কেন সুদীর্ঘ ছায়াপথে বারবার ফিরে যাই,
আমি কেন প্রসারিত মায়াময় রথে চড়ে
বারবার বৃক্ষ হতে চাই? কেন এত বিদ্রোহ
আগুনরূপে প্রেমের খেলায়?
আমি কি বৃক্ষের, না কি অনলের সন্তান?
বৃক্ষ মাতা হলে অনল কি পিতা?
এমনই প্রশ্নে দেখি, মানবেরা কখনোই
বৃক্ষ প্রেমিক হতে পারে না।