অশোক বাবু যে এত ভালো বক্তৃতা দেবেন পাড়ার কেউ ভাবতেই পারেনি। ঝেড়ে দেড় ঘণ্টার বক্তৃতায় চারাদিকে হাততালির বন্যা বয়ে গেল। পাড়ার সবাই অশোক বাবুর জ্বালাময় ভাষণের গুণগান করতে লাগল। সদা হাস্যময় অবিবাহিত অশোক বাবু সাদা ধবধবে কোঁচান ধুতিতে সেজে মোটামুটি এলাকার সব অনুষ্ঠানেই হাজির ।
সভা শেষে দুপুর দুটোয় ঘেমে নেয়ে অশোক বাবু বাড়ি এসে ডোরবেল টিপলেন। এক বার, দু বার তিন বার। উদ্যোক্তারা এক কাপ চায়েই কাজ সেরেছে, ফলে আকাশের গনগনে সূর্য কেমন করে যেন পেটে সেঁধিয়ে পড়েছে। ধৈর্যহারা অশোক বাবু দরজায় লাথি সহযোগে চিৎকার করলেন, ‘এই শালা ছোটলোকের ছা, করছিস কী? খোল দরজা।’ তাও দরজা খুলল না। অশোক বাবু রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে পেছন দিকের ভেজানো দরজা দিয়ে ঢুকে দেখেন মেঝেয় পাতা ময়লা কাঁথায় বছর বারোর খাওয়াপরা কাজের ছেলে সত্য ঘুমুচ্ছে। অকথ্য শব্দ যোগে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে লাথি কষাতে থাকলেন যতক্ষণ না সে উঠে বসে ।
মাইকে তখনো অশোক বাবুর জ্বালাময় বক্তৃতার রেকর্ড বাজছে ‘বন্ধুগণ শিশুশ্রম সমাজের কলঙ্ক , আসুন হাত বাড়িয়ে দিই, ওই সব অমূল্য প্রাণে, তাদের সুস্থ শৈশব ফিরিয়ে দিতে হবে। শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসতে হবে, ভালোবাসতে হবে। এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’