বুধবারের ডায়েরি
একটা মাধবী পাতার আড়ালে মুখ লুকিয়ে বেঁচেবর্তে আছি; চুলবন্যায় ভাসছে ঘর, বিছানা-বালিশ থৈ থৈ। মা‘র কাচের বয়াম ভেঙে বেরিয়ে গেছিল যে চিরনদী, প্রতি বুধবার আমাকে সে ভয় দেখাতে আসে। আজ বলে গেল, আসন্ন জহরবৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবার জন্য কেবল গোলাপি টগর ফুলই আমাকে সাহায্য করতে পারে।
দূর-রূপকআশ্রিত গ্রহে আমি রৌদ্রালোক পান করে থাকছি, বায়ুনির্মিত গৃহে রাতযাপন করছি, শ্বাস নিচ্ছি ছোটবোন টিংটুং-এর ‘তোর ঘুম দেখতে আসি‘র হাহাকারে। টগরফুল আমি পাবো কোথায়? কতক নিরাকার গোলাপগাছ পুতেছিলাম, বন্ধুরা বলছে এদের অপুষ্পক হবার ঘোরতর সম্ভাবনা আছে। অদৃশ্য মাধবীপাতার পেছনে কত আর মুখ ঢেকে থাকি?
পুতুলঘর
এবার মাঠে ও রাস্তায় কত যে ডিম পড়ে আছে; ইস্পাতের ডানাঅলা পাখিদের, পঙ্খিরাজ ঘোড়াদের—এর বেশি তুমি কখনো ছিলে না আমার, এ দাহ্য ও দগ্ধ দিনে আমি নিশ্চিন্ত পড়ে যাচ্ছি হেনরিক ইবসেন—আর তোমার স্বর্ণখচিত ঘুম—এ পুতুল-সংসারে।
ডিম থেকে স্রোতের মতো বেরিয়ে পড়ছে মানুষ-পাখি-ঘোড়া-মন্ত্র-তন্ত্র ও যন্ত্র—এর বেশি তোমাকে চাই নি আর; এর পরে তুমি হয়ত পাখিহননের শিল্প ও সুষমা নিয়ে কথা তুলবে, ঘোড়াদের প্রজনন ও বিবাহবার্ষিকী বিষয়ে দীর্ঘ নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ শুরু করবে—আমি তো অনেকটাই সামলে নিয়েছি মার্কার কলমের যান্ত্রিক বিভ্রম, প্রজনন-প্রতিষ্ঠানের নৈতিক বিবেচনা আর যাবতীয় গুরু ও লঘু অনাচার; বরং, চলো আমরা দাঁড়িয়ে থাকা গাছেদের সাথে কিছু মতবিনিময় করি, জেনে নিই অস্থিরতার গোপন গল্প, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার যুগান্তকারী সাধনা আর এ ডিমবন্যায় রচিত পুতুলের বিবাহবাসর বিষয়ে নিদারুণ কোনো অভিব্যক্তি—এর বেশি কত দূর যেতে পারি আর?
তোমার গভীর ঘুম থেকে সোনার নূপুর ছুটে আসে—আর পাখিদের ঘুঙুর, ঘোড়াদের হ্রেষা; নোরা, মানুষ এখন গভীর সংকটে আছে—আকাশ থেকে ডিম পড়ছে—ডিম ফাটছে, ডিম ফুটছে ডিমের উপর; আর বিপুল বিস্ফোরণে জন্ম নিচ্ছে এক অনাবিল পুতুলসমাজ— স্বর্ণমন্দিরের ঘন্টাধ্বনি শুনে আমি ঘুমোতে পারি না আর, অথচ পুতুলের অধিক তুমি তো কখনো ছিলে না আমার!
সোনালু ফুলের স্মৃতি
সবটা আলো ঘুচিয়ে দিলেই ভালো তবে, দেয়ালে
ছড়িয়ে আছে অনন্ত সবুজের দাগ- একদিন
সবকিছু বিভীষিকা হবে; কী অলৌকিক খেয়ালে
মানুষের বেঁচে থাকা, সহজ বন্ধুতা; কত ঋণ
হয়ে গেছে, সত্য সম্পর্কের কাছে মিথ্যে কত ছায়া
হারানোর ভাবনা আনে, অথচ সবটাই মায়া
কোনো তার দায় নেই, কেবলই অক্ষমতা আছে
আর প্রতীক্ষায় রাতভোর, এমন দূরে ও কাছে
থাকা, এমন মৃত্যুঘোর, স্বপ্নের রং হয় নীল
তবু বেঁচে থাকা হলুদ ফুলের মতো সাবলীল
ইশারায় ঝুলে থাকে সেই সোনালু গাছের ডালে
কত চলে গেছে আরো কত যাবে, তবু এ সকালে
নিরুপম সূর্যের ছায়াটুকু নাও, আমি সাদাকালো
প্রাচীন জীবন নেব, তুমি নাও বৃক্ষ-ফুল-আলো।