উনিশ শতকের কলকাতা ও মফস্বলের জীবনের বিন্যাস, সে বিন্যাসের ওপর নানা আলোছায়ার বুনুনি সমাজতাত্ত্বিকের কাছে কৌতূহলোদ্দীপক। কিন্তু সাহিত্য-জিজ্ঞাসুর কাছেও সে সময়ের তীব্র টানাপড়েন কম চিত্তাকর্ষক নয়। কেননা এই টানাপড়েনের গণতান্ত্রিক আকর্ষণে জন্ম লাভ করেছে উপন্যাসে। যদিও ভাবা হয়ে থাকে ইংল্যান্ডে আঠারো শতকে উপন্যাসের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তার খানিকটা প্রভাব বাংলা সাহিত্যেও পড়েছিল। উপন্যাসের রীতিতে আমাদের সাহিত্যে বেশ কিছু গদ্য সৃষ্টি হলেও প্রথম বাংলা উপন্যাসের মর্যাদা লাভ করে প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ (১৮৫৮)। হ্যানা ক্যাথরিন ম্যুলেন্স-এর ‘ফুলমণি ও করুণার বিবরণ’ (১৮৫২) এ দাবির পর্যায়ে পড়ে বলে মনে করেন অনেকেই। এ দাবির আর এক অংশীদার কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ‘বিজয়বসন্ত’।
উপন্যাসের নানাদিক বিবেচনায় গ্রাহ্য করে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাসের মর্যাদা ‘আলালের ঘরের দুলাল’কেই পরানো হয়েছে। যদিও উপন্যাস হিসেবে এ গ্রন্থটির প্রচুর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও বাংলা উপন্যাসের সফলযাত্রা মূলত এখান থেকেই শুরু। এরপর বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র বাংলা উপন্যাসকে নিয়ে গেছেন ভিন্ন মাত্রায়। আর সময়ের সিঁড়ি ধরে উপন্যাসেও নানা বাঁক পরিবর্তন ঘটেছে।
বিষয়বস্তু থেকে শুরু করে নানাক্ষেত্রে এসেছে নান্দনিক পরিবর্তন। টানাপড়েনের যে অমোঘ আকর্ষণ উপন্যাসের জন্মের মূলসূত্র, সময়ের স্রোতে উপন্যাস সেখান থেকে বেরিয়ে ইতিহাস, সমাজ-সমকাল, রাজনীতি, প্রেম, নিষিদ্ধ প্রণয়, মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, বিপ্লবচেতনা, শাহরিক ও গ্রামীণজীবন; নানামাত্রিক রূপ গ্রহণ করেছে। এ ধারাতে যুক্ত হয়েছে নদীকেন্দ্রিক আঞ্চলিক উপন্যাস। যা বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যে উজ্জ্বতর এক যোজনা। বিদেশি সাহিত্যেও আঞ্চলিকতা-নির্ভর উপন্যাস রচিত হয়েছে। সে সব উপন্যাসও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। বাংলা সাহিত্যের নদী ও নদীকেন্দ্রিক উপন্যাস কম লেখা হয় নি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘ইছামতী’, আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ প্রভৃতি নদীভিত্তিক উপন্যাস। নদী ও মানুষের জীবন যে এই সূত্রে আবদ্ধ, সে-সত্যতা ধারণ করেই বিভিন্ন মাত্রিকে নির্মিতি পেয়েছে উপন্যাস। যা উপন্যাস সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য এক প্রবাহধারা। এ ধারার পাশ্চাত্য লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মারিয়া এজওয়াথ, টমাস হার্ডি, আর্নল বোনেট, উইলিয়াম ফকনার, মিখাইল শলোকভ, এমিলিয়া পারডো বাজান, গ্রাজিয়া ডেলেহডা, ইভান সাংকার, জিন গিয়োনো প্রমুখ।
সামগ্রিক মূল্যায়নে না গিয়ে আমরা দেখতে চেষ্টা করবো এ উপন্যাসে শেকড়ের গান বা লোক-উপাদান কীভাবে বা কতোটা সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। একই সাথে চরিত্রনির্মাণে অদ্বৈত-এর মুন্সিয়ানা কতোটা-তাও নানামাত্রিকভাবেই দেখার একটি প্রয়াস এখানে থাকবে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী আর মানুষের জীবন এদেশে যেন একই সূত্রবদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে সেকারণে নদী অপরিহার্য। এদেশে নদীকে ঘিরেই নদীকেন্দ্রিক মানুষের অর্থনৈতিক জীবন আবর্তিত। ‘আবহমানকাল ধরে বাংলা সাহিত্যে শ্রমজীবী মানুষের প্রসঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ নদীকে ঘিরেই নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের জীবন, নদীর কূলেই গড়ে ওঠে মানবসভ্যতার ঐশ্বর্য। আবার নদীকেন্দ্রিক মানবসভ্যতা ও ঐশ্বর্য ধ্বংসও হয়েছে নদীর বুকেই। নদীর রয়েছে নিজস্ব এক অদ্ভুত রহস্যময়ী রূপ। যেখানে সে মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা যেমন, তেমনি ধ্বংসের রাহুগ্রাসীর মতো ভয়ংকরও। নদীভিত্তিক উপন্যাসগুলোতে এ সত্য যেমন ধরা পড়েছে, তেমনি এ ধারার উপন্যাস প্রতিষ্ঠা পেয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদায়। যা বাংলা সাহিত্যে নদীভিত্তিক আঞ্চলিক উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। ‘অঞ্চলিক’ শব্দটি এখানে যুক্ত থাকলেও এ সব উপন্যাস সার্বজনীনতায় ব্যাপৃত। পূর্ণাঙ্গ জীবনকে ধারণ করে মহত্ত¡ম শিল্প হিসেবে এ ধারার অনেক উপন্যাস কালোত্তীর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। বাংলা সাহিত্যে নদীভিত্তিক আঞ্চলিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬)-এর ‘পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৩৬), অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪-১৯৫১)-এর ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৫৬), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৭১)-এর হাঁসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৪৭), হুমায়ুন কবীর (১৯০৬-১৯৬৯)-এর ‘নদী ও নারী’, সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮)-এর ‘গঙ্গা’ (১৯৫৫), আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩)-এর ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ (১৯৮৬), আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২-২০১০)-এর ‘কর্ণফুলী’ (১৯৬২), শহীদুল্লা কায়সার (১৯২৭-১৯৭১)-এর ‘সারেং বৌ’ (১৯৬২) প্রভৃতি।
২.
কোনো বাঙালি উপন্যাস লিখেছেন কিন্তু নদীকে স্পর্শ করেন নি এমন দৃষ্টান্ত বিরল। যদিও সাহিত্যের প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা সাহিত্যে নদী একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে আছে। সাহিত্যের প্রত্যেকটি শাখাতে তার গুরুতপূর্ণ উপস্থিতি বা ভূমিকা স্পষ্ট। নদীবিহীন জীবন যেমন বাঙালির কাছে অকল্পনীয়, সাহিত্যেও নদীর ভূমিকা যেন একই সত্য ধারণ করে। ‘চর্যাপদ’, ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’, ‘মহাভারত’, ‘মনসামঙ্গল কাব্য’, ‘চণ্ডীমণ্ডল কাব্য’, ‘অন্নদামঙ্গল কাব্য’, ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’, ‘মেঘনাদবধকাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গনা’, ‘চতুর্দশপদী কবিতা প্রভৃতি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ সব সাহিত্যে নদী এসেছে নানা ভাবে, বিচিত্র রূপে। পরবর্তীতে উপন্যাসের যাত্রা শুরু হলে সেখানে নদী এসেছে অপরিহার্যতার অংশ হিসেবে। কখনো নদীকে ঘিরেই উপন্যাস নির্মিত হয়েছে। আবার নদীকে ঘিরে পুরো উপন্যাস নির্মিত না হলেও উপন্যাস বা উপন্যাসের জীবনের প্রয়োজনে নদী এক প্রধান শক্তি হয়ে উঠেছে। উপন্যাসে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। আধুনিক বাংলা উপন্যাসের প্রথম সার্থক শিল্পী বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসেও নদীর কথা আছে। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ (১৮৭৮) এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত। ‘দুর্গেশনন্দিনী’তেও নদীর প্রসঙ্গ আছে। তবে বঙ্কিমচন্দ্র নদীকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ‘চন্দ্রশেখর’ উপন্যাসে। রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য কবিতা ও উপন্যাসে নদীর অপরিহার্যতা উজ্জ্বল। ‘নৌকাডুবি’তে নদীকেন্দ্রিক জেলে-মাঝিদের জীবনচিত্র আছে। ‘গোরা’তেও নদী আছে জীবনের গভীর উপলব্ধিতে। শরৎচন্দ্রের ‘রড় দিদি’ উপন্যাসে নদীর ছবি আছে, যে নদীকে ঘিরে আছে সাধারণ মানুষের জীবনকথা। ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে জেলেদের জীবনচিত্র উঠে এসেছে আরো ব্যাপকভাবে। ‘শুভদা’ও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বিভূতিভূষণ ‘পথের পাঁচালী’র জন্যে বাংলা সাহিত্যে অমরত্ব লাভ করেছেন। কিন্তু নদীকেন্দ্রিক উপন্যাসও তিনি লিখেছেন। সরাসরি নদীকেই উপন্যাসের বিষয় ও নামকরণ করেছেন।
নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাসে তাঁর ‘ইছামতী’ উল্লেখযোগ্য সংযোজন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কালিন্দী’ ও ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসে কালিন্দী ও কোপাই নদী মানুষ ও সমাজের জীবনে কীভাবে ভূমিকা রেখেছে তার অসাধারণ শিল্পবুনন লক্ষণীয়। তবে এ উপন্যাসের বিশেষ দিক ভৌগোলিক ও সামাজিক বিবর্তনে কোপাই যে ভূমিকা রেখেছে তা এ-নদীকেন্দ্রিক মানুষেরা নিজেদেরকে ঋণাবদ্ধে বন্দি মনে করে। দক্ষিণবঙ্গের নদী, নদীর কূলবর্তী মানুষ ও সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে মনোজ বসু লিখেছেন ‘জল জঙ্গল’। ময়ূরাক্ষী নদীকে নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘ময়ূরাক্ষী’ উপন্যাস। এ উপন্যাসে নদী ও বিনোদিনী যেন একাত্ম হয়ে গেছে। নদীর ভেতরই বিনোদিনী নিজেকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করেছে। নদীর নিঃশব্দ বয়ে চলার ভেতরই নিজের জীবনকেই যেন দেখতে পায় বিনোদিনী। পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে অমরেন্দ্র ঘোষ লিখেছেন ‘চরকাশেম’ উপন্যাস। নদীভিত্তিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে এ উপন্যাসটি সেভাবে আলোচিত নয়। ‘অথচ নদী ও চরজীবনকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটি যথেষ্ট ব্যতিক্রম’। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ বাংলা সাহিত্যে একটি বিখ্যাত উপন্যাস। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসামান্য সৃষ্টি।
জেলেপাড়ার মানুষের কাছে পদ্মা তাদের মায়ের মতো। পদ্মাকে ঘিরেই তাদের জীবন-স্বপ্ন-বেঁচে থাকা। পদ্মা আর জেলেপাড়ার মানুষ যেন অভিন্ন এক সত্তা। ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ কমলকুমার মজুমদারের বিখ্যাত সৃষ্টি। নদীভিত্তিক অন্যান্য উপন্যাস থেকে এটি আলাদা। গঙ্গা নদীকে কেন্দ্র করে ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ নির্মিত হয়েছে। কাহিনীর সর্বপর্যায়ে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে গঙ্গা কর্তৃক। এ উপন্যাসের শুরু গঙ্গাতে, শেষও হয়েছে গঙ্গাতেই। ‘মহানন্দা’ উপন্যাসের রচয়িতা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। মহানন্দা নদীকে ঘিরেই এ উপন্যাসের বিষয়আশয়। অমিয়ভূষণ মজুমদার-এর উপন্যাস ‘গড় শ্রীখণ্ড’। উপন্যাসে নদীকেন্দ্রিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘গড় শ্রীখণ্ডে’ পদ্মা নদীর কথা বলা হয়েছে। ‘অন্তর্মুখী জীবন জিজ্ঞাসা আর বস্তুময় জীবন-সত্যের সমাহার দিয়ে পদ্মাতীরবর্তী পাবনার সেই অঞ্চল যা ফরিদপুর-নদীয়া ঘেঁষা, আর চিকন্দি, বুধেডাঙা, চরণকাশি, মানিকদিয়ার গ্রাম ও বন্দর দিঘাকে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে ‘গড় শ্রীখণ্ড।’ অমিয়ভূষণ মজুমদারের অন্য বিখ্যাত উপন্যাস ‘মধু সাধুখাঁ’। নদীর প্রবাহের মতোই যে মানুষের জীবন-নদীর মতোই নানা বাঁক-খাওয়া, সে সত্যই এ-উপন্যাসে প্রতিষ্ঠিত।
৩.
বাংলা উপন্যাসে নদী নিজেই যেন এক স্বতন্ত্র শাখা হয়ে উঠেছে। মানুষের জীবনে নদী কতোভাবে ভূমিকা রাখে, নদী কতোভাবে মানবজীবনে প্রভাবিত, মানুষও কতোভাবে নদীর উপর নির্ভরশীল-আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন জাগানিয়া ও স্বপ্নভঙ্গেরও কারণ হয়ে ওঠে- আবার কখনো এ-নদীই মানবজীবনে ভয়ংকর সর্বনাশের কারণ। নদীকে ঘিরেই যেমন গড়ে ওঠে মানবসভ্যতার ঐশ্বর্য, তেমনি নদীর বুকেই আবার একদিন তা বিলীনও হয়ে যায়। মানুষের জীবনে নদী যেমন বিচিত্ররূপে আবির্ভূত, উপন্যাসেও ঠিক সে-রকম বিচিত্ররূপেই নদী চিত্রিত হয়েছে। নদীভিত্তিক এ সব উপন্যাস জীবনধর্মী সাহিত্যে অসাধারণ ও অসামান্য স্বর্ণফসল হয়ে উঠেছে। এ প্রবন্ধে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করার প্রয়াস রয়েছে। এটির কারণও সুনির্দিষ্ট। নদীভিত্তিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে কালোত্তীর্ণ ও শিল্পমান সম্পন্ন বেশ কিছু উপন্যাস রয়েছে। তিতাস এ সারির উপন্যাসের ধারায় উজ্জ্বলতর সংযোজন এবং তিতাসের মর্যাদা নদীভিত্তিক উপন্যাসে ভিন্ন। এ উপন্যাসে ‘অদ্বৈত মল্লবর্মণ তার আশৈশব অর্জিত অভিজ্ঞতারই বাণীরূপ দিয়েছেন। যে জীবন পরিবেশে তিনি লালিত-পালিত ও বর্ধিত হয়েছেন। সে জীবনকেই তিনি মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনায় এ-উপন্যাসের বিশাল ব্যানভাসে অঙ্কন করেছেন।’
তিতাস বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ। উপন্যাসটির লোক-উপাদান, উপন্যাসটির গঠন, শৈলি নির্মাণ, ভাষা, চারিত্র্যবিচার, মনস্তাত্ত্বিকতা-এসব বিষয় বিচার্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অদ্বৈত-এর সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে যেমন আলোচনা হতে পারে, একইভাবে এ সব বিচারে উপন্যাসটির সামগ্রিক মূল্যায়নেরও একটি ব্যাপার চলে আসে। সামগ্রিক মূল্যায়নে না গিয়ে আমরা দেখতে চেষ্টা করবো এ উপন্যাসে শেকড়ের গান বা লোক-উপাদান কীভাবে বা কতোটা সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। একই সাথে চরিত্রনির্মাণে অদ্বৈত-এর মুন্সিয়ানা কতোটা-তাও নানামাত্রিকভাবেই দেখার একটি প্রয়াস এখানে থাকবে।
শরীরবৃত্তীয় ব্যাপারটির চেয়ে মন যে বড়- প্রেমে শরীরের চেয়ে মন যে গুরুত্বপূর্ণ- সত্যিকার প্রেম যে দেহকেন্দ্রিক নয়, মনকেন্দ্রিক; যৌবন থাকুক না-থাকুক তাতে কোন যায় আসে না। মনে যদি প্রেম থাকে শুকনা নদীতেও নৌকা চলে। অর্থাৎ মনে যদি প্রেম থাকে যৌবনা-শরীর ব্যাপারটি সেখানে নগণ্য।
‘তিতাসে’ মালোদের জীবনের কতোরকম যে ছবি আছে-সেসব ছবি তিতাসের বুকভরা জলের মতো কখনো, কখনো আবার নদীর শুকনো বুকে ফসলের ক্ষেত, বিদেশি সংস্কৃতির দাপটে নিজেদের সংস্কৃতির ভেঙে পড়া, জীবন বদলের নানামাত্রিক ছবি এ উপন্যাসের পরতে পরতে সাজানো। যা কখনো আনন্দের, কখনো সর্বস্ব হারানো বুকভাঙা কান্না-আর্তনাদ-আহজারি। গ্রাম-বাংলার জীবনে চির পরিচিত এক উৎসব নৌকা বাইচ। এ ছবিও উপন্যাসে আছে। নৌকা-প্রতিযোগীদের উৎসাহ দেবার জন্যে নানাধরনের গান গাওয়া হয়। এর বাইরেও বিভিন্ন ধরণের গান এ উপন্যাসে ব্যবহৃত হয়েছে। মুর্শিদা গান, বাউল গান, মারফতী গান, পদ্মাপুরাণ গান, পুঁথি পড়া এসব আছে। এ উপন্যাসে গানে গানেই যেন তিতাসের স্রোতের মতো জীবনপ্রবাহ প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে কী শুধুই প্রবাহিত হয়ে গেছে, একদিন তারপর হারিয়ে গেছে এমনতো নয়। তিতাসের ইতিহাস আছে। তিতাসের ইতিহাস তো ‘সত্যের মতো গোপন হইয়াও বাতাসের মতো স্পর্শপ্রবণ’। যে ইতিহাসে যুক্ত হয়ে আছে তিতাসের পাড়ের মালোদের জীবনের আনন্দ-বেদনার নানা ঢেউখেলা- জীবন-উৎসবের অপরিহার্য অনুষঙ্গ ধাঁধাঁ, লৌকিক ক্রীড়া, আনন্দ-অনুষ্ঠান, রূপকথা, গল্প বলা- এসব লোক-সংস্কৃতি উপন্যাসটির গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রকৃতির রঙও তিনি ধরেছেন অসামান্য দক্ষতায়।
বাংলার বারো মাসের স্বভাব-চিত্র ছবির মতো করে এঁকেছেন তিনি। যেন প্রকৃতিকে স্পর্শ করা যায়, তার ঘ্রাণটাও অনুভব করা যায়। প্রকৃতির সাথে একাত্ম হলেই কেবল এ ধরণের চিত্র আঁকা সম্ভব। যেটি কবি জীবনানন্দের কবিতাতে আমরা পাই। তিতাসে মালোদের নিজস্ব সংস্কৃতির ব্যাপারটি খুব পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। যে সংস্কৃতি ‘মালোরা প্রাণের সঙ্গে মিশাইয়া লইয়াছিল’। এ-সংস্কৃতি ভেঙে পড়ার যন্ত্রণা যেমন আছে, তেমনি শাহরিক নতুন সংস্কৃতিও যে মালোদের জীবনে যুক্ত হয়েছে অপরিহার্যভাবেই- নতুন জীবনের এক মুগ্ধ ঘ্রাণে যেন মালোরাও একসময় আপন সংস্কৃতি ভুলে-বসে।নৌকা-দৌড় খেলা তো মালোদের জীবনেরই এক অপরিহার্য জীবনখণ্ড। নৌকা-দৌড় বা নৌকা বাইচ ঘিরে তাদের আবেগ ও আয়োজন জীবন-উৎসবের রূপ নেয়, যেন আনন্দে জেগে ওঠে গোটা মালো সম্প্রদায়। যে-স্থানে নৌকা-দৌড় হতো সে-দিক লক্ষ করে ছোট বড় নানা আকারের পালের নৌকা ছুটে আসতো। নৌকাতে পুরুষের চেয়ে স্ত্রীলোকই বেশি থাকতো। এদিন তিতাসের দুপাড় যেন আরো মোটা হয়ে উঠতো। দুপাড় ঘেঁষে হাজার হাজার ছোট বড় ছইওয়ালা নৌকা খুঁটে পুঁততো। কোথাও আবার বড় বড় নৌকা গেরাপি দিতো। আর গেরাপি দেয়া এসব এক একটা নৌকাকে ঘিরে দশ বিশটা ছোট নৌকা আশ্রয় নিতো। অদ্বৈত-এর ভাষায় ‘এইভাবে যত দূর চোখ মেলা যায় কেবল নৌকা আর নৌকা, আর তাতে মানুষের বোঝাই। নদীর মাঝখান দিয়া দৌড়ের নৌকার প্রতিযোগিতার পথ।’ বিভিন্ন নৌকা থেকে নানারকমের গান ভেসে আসছে। মন খুলে উৎসবে মেতে সবাই গান গাইছে। প্রাণের ঢেউয়ে যেন তিতাসের স্রোত বয়ে চলেছে, আর তাতে মিশে গেছে কতো রকমের যে সুর। সবকিছু মিলে প্রাণের সুরে মেতে ওঠা উৎসবে পরিণত হয় নৌকা-দৌড়।
নৌকা প্রতিযোগিদের উৎসাহ প্রদান এবং নৌকা-দৌড় দেখতে আসা নারীপুরুষদের আনন্দ দেয়ার ব্যাপারটি লোকগানে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এ সব গানে ফুটে উঠেছে প্রেমের আকুতি। কাল্পনিক একটি চিত্রও গানে লক্ষণীয়-ঢাকায় গিয়ে বন্ধু নদীর পারে রান্না করে খায়। রান্নার আসবাবপত্র জোয়ারা ভেসে যাওয়ার কথাও গানে আছে- যা কল্পনাপ্রসূত। আবার গানে ব্যক্তি-চরিত্রও ব্যবহৃত হয়েছে। ‘উদয়তারা’ নাম ব্যবহার করে গানকে বাস্তবের কাছাকাছি করে ছোঁয়ার চেষ্টা আছে। নৌকা-দৌড়ের সময় বেশকিছু গানের ব্যবহার হয়েছে। এক একটি নৌকা থেকে ভেসে ওঠে এক এক ধরণের গান। গদ্যভাবের গানও শোনা যায়- ‘চাঁদমিয়ারে বলি দিল কে, দারোগা জিজ্ঞাসে, আরে চাঁদমিয়ারে বলি দিল কে।’ একটা গানের সংগে আর একটা গানের কোন মিল নেই। কথা সুর সব আলাদা-ভিন্ন ধাঁচের।
তিতাসে বর্ণিত সব গানেই নানাভাবে উঠে এসেছে প্রেম-প্রেমের বেদনা। বিশেষ করে বিরহ-জ্বালা এ সব গানের মূলভাবে স্থান করে নিয়েছে। জীবনের শেকড়ের গান হয়ে উঠেছে এসব গান। স্রোতবিহীন নদী যেমন মরা, তিতাসবিহীন জীবন যেমন মালোরা ভাবতে পারে না, এসব গানও যেন তিতাসের স্রোতের মতোই জেগে থাকে গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনে। প্রেম এখানে শরীরী প্রেম হয়ে ওঠে নি, রাধা-কৃষ্ণের প্রেম অপার্থিব এক শান্তি-বারতা তৈরি করে তিতাসকেন্দ্রি এসব সরল মানুষের মনে। এগানগুলোতে আদিরসের ঘ্রাণ থাকলেও, স্থান-কালের উল্লেখ থাকলেও- এসব ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে লৌকিক সংস্কৃতিবোধ। মুর্শিদা বাউল গান, পুঁথি, কেচ্ছা-এসবও ব্যবহৃত হয়েছে তিতাসে। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের নদী-বিহারীদের এসব নিজস্ব সম্পদ। বুকের গহিনে তারা এসব লালন করে :
এলাহির দরিয়ার মাঝে নিরাঞ্জনের খেলা,
শিল পাথর ভাসিয়া গেল শুকনায় ডুবল ভেলা।
জলের আসন বসন দেইখ্যা সারাসারি,
বালুচরে নাও ঠেকাইয়া পলাইল বেপারী।
নদী-বিহারীদের জীবনের শেকড়ের সাথে বাংলার মুর্শিদা বাউল গান, বারোমাসি গান, পুঁথি, রাধা-কৃষ্ণের প্রেম-লীলা এরকম নানামাত্রিক গান যুক্ত। এসব বাদ দিয়ে তাদের জীবন হয় না। তাদের আনন্দ-বেদনার সাথে এসব গান একাত্ম হয়ে মিশে থাকে। তাদের জীবনেরই যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এসব মরমী সংগীত।
গ্রাম-বাংলায় নদীভিত্তিক এলাকায় বেদেনীরা নৌকা-করে এসে নোঙর ফেলে। এর পর আশপাশ এলাকাতে তারা আয়না চিরুনি বঁড়শি, মাথার কাঁটা, কাঁচের চুড়ি, পুঁতির মালা বিক্রি করে বেড়ায়। আবার এদের সাথে সাপের ঝাঁপিও থাকে। সাপ খেলা দেখায়। শুকদেবপুরে কিশোর ও বেদেনীর পণ্য-বেসাতি-কেন্দ্র করে তাদের হৃদয়বৃত্তিক যে ব্যাপারটি উঠে এসেছে, তার গুররুত্ব অস্বীকার করা যায় না কিংবা তাকে সারসত্তাহীনও বলা যায় না। বেদেনীরও যে রূপ থাকে- সে-রূপে কিশোরেরও দিশেহারা অবস্থা তৈরি হয়। নিজের অজান্তে প্রেমের বেসাতিও যে হয়ে যায় কিশোর আর বেদেনীর-আবার এর ভেতর বিস্ময়করভাবে আছে সচেতনতা ও বাস্তবতা। তিতাসের ঢেউয়ের মতোই দুজনের বুকে প্রবল প্রেমার্ত একটা ঢেউ তৈরি হয়ে আবার বুকের ভেতরই মিলিয়ে গেছে অথবা বাস্তবতায় মিলিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। পণ্য-বেসাতি প্রথম উদ্দেশ্য থাকলেও, একটা পর্যায়ে তা হৃদয়-বেসাতিতেও রূপ নেয়- সমাজ-সংসারে তা যে গ্রহণযোগ্য হবে না এ সচেতনতা থেকে ব্যাপারটি বেশিদূর এগোয়নি। এক্ষেত্রে বেদেনীর ভেতরই সমাজ ও জীবন-বাস্তবতা প্রাচুর্য লক্ষণীয়। কেউ যেমন তা জানে না। জানে না বলেই কিশোর উজানিনগরের খলাতে এমনি এক প্রেমের ফাঁদে পড়ে।
পরবর্তী সময়ে যে কিশোরের স্ত্রী, অনন্তের মা। কিন্তু তার আগে বেদেনীর সাথে মনের গহিনে কিশোর কী একটুও এ ফাঁদে পড়ে নি! বেদেনীর বাস্তবতা-সচেতনতা-জ্ঞান প্রয়োগের কারণেই ফাঁদটা আর ফাঁদ হয়ে উঠতে পারে নি।গ্রাম-বাংলায় রঙ মাখামাখি উৎসব তো চিরায়ত। এ উৎসব ঘিরে নিজেদের নানারকম সাজানো গান করা নাচানাচি করে আনন্দ করা এসব তো নিজেদের আপন-সংস্কৃতি। এসব সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করেই গ্রাম-বাংলার মানুষেরা বড় হয়ে ওঠে। শুকদেবপুরেও আমরা সে-ছবি দেখি, ‘… মেয়েদের রঙ-মাখামাখির পালা চলিতেছে, এদিকে পুরুষদের হোলি-গান শুরু হইয়াছে। একজনকে সাজাইয়াছে হোলির রাজা। তার গলায় কলাগাছের খোলের মালা, মাথায় কলাপাতার টাপর, পরনে ছেঁড়া ধুতি, গায়ে ছেঁড়া ফতুয়া। মাঝে মাঝে উঠিয়া কোমর বাঁকাইয়া নাচে, আবার বসিয়া বিরাম নেয়।’
এসব উৎসবে গায়কেরা দুটো দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। রাধার দল আর কৃষ্ণের দল। একদল আগে গান শুরু করে, আরেক দল তার পরে-গানে প্রশ্ন থাকে, গানে গানেই জবাব। এভাবে পালাক্রমে গান হতে থাকে। এসব পালা গানে পরস্পরের প্রতি বাক-আক্রমণ থাকে যেমন, তেমনি রসালো প্রসঙ্গ থাকে-আদিরসই যেখানে নানামাত্রিকভাবে প্রসঙ্গ হয়ে ওঠে। একদল আরেক দলকে পরাস্ত করার জন্য নানাকৌশলে তীর্যক ও আদিঘ্রাণ যুক্ত শব্দের প্রয়োগ ঘটায়। এ ধরণের গানের প্রাণ মূলত আদিরস। নর-নারীর প্রেম-প্রণয়, বিরহ-বেদনা, কাম-বাসনা প্রধান বিষয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এসব পালা গানে আঞ্চলিক শব্দ উপমা অনুপ্রাস রূপকের শৈল্পিক প্রয়োগ ঘটে। তিতাসে যা শিল্প-প্রাণরূপ লাভ করেছে।
মালোদের নিজস্ব সংস্কৃতি যে ভেঙে পড়ছে, অধঃপতিত হচ্ছে। বাসন্তী তা মেনে নিতে পারে না। মালোকে নিজের করে ভাবা, নিজস্ব সংস্কৃতির অধঃপতনের যন্ত্রণা সে যেন একাই নিজের ভেতর ধারণ করে কষ্টে ক্ষোভে জ্বলে উঠেছে। শেকড় ধরে থাকার অদম্য দৃঢ়তা এবং শেকড় ছিঁড়ে পড়ার যে যন্ত্রণা বাসন্তী চরিত্রে তা অসাধারণ রূপলাভ করেছে। শেকড়ের অমর অমোঘ আর এক বাণীও তারই কণ্ঠে উচ্চারিত হতে দেখি-‘সংসারে কেবল মা-ই সত্য আর কিছু না।’ নদীর রূপ বদলায়-কতভাবে তার বাঁক খায়-মানুষের জীবনও তো নদীর মতোই। তিতাসের ‘কূলজোড়া জল, বুক ভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস’ ছিল। একদিন সেও ‘স্বপ্নের ছন্দে বহিয়া যায়।’ এই তিতাসেরই ‘কোথায় গেল এত জল, কোথায় গেল তার মাছে। তিতাসের কেবল দুই তীরের কাছে দুইটি খালের মত সরু জলরেখো প্রবাহিত রহিল, তিতাস যে এককালে একটা জলেভরা নদী ছিল তারই স্বাক্ষী হিসেবে।’ বাসন্তীও তো এই তিতাসেরই আর এক রূপ ‘বাসন্তী আছলাম ছোটবেলা, যখন মাঘ মাসে ভেউরা ভাসাইতুম। তার পরে হইলাম কার বউ, তার পরে হইলাম রাঁড়ি। মাঝখানে হইয়া গেছলাম অনন্তর মাসী। অখন আবার হইয়া গেলাম বাসন্তী।’ তিতাস আর বাসন্তী একের ভেতর অন্যের প্রকাশ যেন। তিতাসে শেকড়ের গান নদীর গভীর স্রোতের মতো নীরবে প্রবাহিত হয়েছে এবং সেটিও যে মরা নদীর মতো একসময় মরেও যায়, মরে গেছে- কিন্তু সেই শেকড়টি ধরে রাখার বা ধরে থাকার যে অদম্য মানসিক প্রত্যয়, শক্তি ও সংগ্রাম বাসন্তীর ভেতর দেখা যায় তা অতুলনীয়-বাংলা সাহিত্যে যা এক ব্যতিক্রমী সৃষ্টি।
আর একটি ব্যাপার হলো, নদীর সঙ্গে মানুষের জীবনের যেমন প্রকৃতিগতভাবেই অদ্ভুত মিল রয়েছে, তেমনি মানুষের যে প্রেম বিশেষ করে নর-নারীর যে শরীরবৃত্তীয় ও মনোবৃত্তীয়- এই প্রেমের নানামাত্রিক তুলনা নদীর সঙ্গে অভাবনীয়ভাবেই আদিকাল থেকেই অসাধারণ ব্যঞ্জনায় তুল্য হয়ে আসছে। নদীর সঙ্গে প্রেমের তুলনা প্রেমের উপমা যুগ যুগের। নদীর নানা রূপের সাথে প্রেমের নানা রূপের তুলনা-অসামান্য শৈল্পিকতায় ফুটে উঠেছে কবি-সাহিত্যিকের রচনায়। অদ্বৈতও এর ব্যতিক্রম নন। শুকনা তিতাসকে তিনি যৌবনহারা নারীর সাথে তুলনা করেছেন। নারী যখন যৌবনহারা হয়ে যায়, তার প্রতি পুরুষের যে আবেগ-আকর্ষণ থাকে না, মানবচরিত্রের চিরন্তন এক সত্যভাষণ এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। শুকনো নদী আর যৌবনহারা নারী এখানে একই অর্থ বহন করছে। নারী যেমন শুধু যৌবনেই আকর্ষণীয়া, নদীও তেমনই। নদীতে যদি জল না থাকে সে নদী মরা, অর্থহীন। যৌবনহারা নারীও শুকনো নদীর মতোই। আবার একথা যে সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয় তার জবাবও তিতাসে আছে। শরীরবৃত্তীয় ব্যাপারটির চেয়ে মন যে বড়- প্রেমে শরীরের চেয়ে মন যে গুরুত্বপূর্ণ- সত্যিকার প্রেম যে দেহকেন্দ্রিক নয়, মনকেন্দ্রিক; যৌবন থাকুক না-থাকুক তাতে কোন যায় আসে না। মনে যদি প্রেম থাকে শুকনা নদীতেও নৌকা চলে। অর্থাৎ মনে যদি প্রেম থাকে যৌবনা-শরীর ব্যাপারটি সেখানে নগণ্য।
নদীকে এড়িয়ে মানুষের জীবন গড়া ও সভ্যতার ঐশ্বর্য নির্মাণ অকল্পনীয়। নদীভিত্তিক আঞ্চলিক বিভিন্ন উপন্যাসে এ সত্য নানাভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। শিল্পে প্রকরণ-বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পাঠ যাচাই করা যায়। নদী-বিষয়ী উপন্যাসকারগণ কেমন রচনাকার, তার স্বাতন্ত্র্য কী, বিষয়-নির্বাচনে তার যৌক্তিকতার ইঙ্গিত কোন্ ধরনেরজ্জএ প্রশ্নগুলোতে সরল ভাষ্যে হয়তো যে কোন লেখককেই চিনে নেওয়া যায়।
নদীকেন্দ্রিক আঞ্চলিক উপন্যাস হিসেবে ‘তিতাস’ অসামান্য সফল একটি উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যে নদীভিত্তিক আঞ্চলিক সার্থক উপন্যাস আরো থাকলেও অদ্বৈত-এর ‘তিতাস’-এর মর্যাদা ভিন্ন। নানামাত্রিকভাবে মালোদের জীবনের শেকড় তিনি এমনভাবে খুঁটে খুঁটে তুলে ধরেছেন, শিল্পসম্মত করে এতো বাস্তব ও জীবন্ত করে এঁকেছেন যা একজন মহৎ শিল্পির পক্ষেই তা সম্ভব হতে পারে। এক্ষেত্রে আবু হেনা মোস্তফা কামালের বক্তব্য স্মরণযোগ্য: কেবল একটি উপন্যাস রচনা করেই শ্রী অদ্বৈত মল্লবর্মণ বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ব্রাম্ণবাড়িয়ার অন্তর্গত গোকর্ণ গ্রামের ধীবর সম্প্রদায়ের জীবনচর্যা তাঁর ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ গ্রন্থে যে-আন্তরিক মমতায় রূপায়িত হয়েছে তার তুলনা বাংলা কথা-সাহিত্যে খুব বেশি নেই।’
৪.
ঔপন্যাসিক আকবর হোসেনের বিখ্যাত উপন্যাস ‘অবাঞ্ছিত’তেও নদী আছে। নায়িকা রোকেয়া নিজের জন্মভিটা ত্যাগ করে দাদুর সঙ্গে রাতের আঁধারে নদী পাড়ি দিয়েই আজমীরে রওয়ানা দিয়েছিল। তাঁর ‘দুদিনের খেলাঘরে’ উপন্যাসেও গড়াই নদীর কথা আছে। উপন্যাসের শুরুই হয়েছে গড়াই নদীর বর্ণনা দিয়ে। আকবর হোসেনের নিজের বাড়িও ছিল গড়াই নদীর পাড়ঘেঁষে। ধলেশ্বরী চরের মানুষের জীবনের উত্থান পতনের কাহিনী নিয়ে কাজী আফসার উদ্দিন রচনা করেছেন ‘চর ভাঙা চর’। এটি পূর্ব-বাংলার প্রথম উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত প্রতিভা। তিনি ‘লাল সালু’ উপন্যাসের জন্যে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ‘লাল সালু’ বাংলা উপন্যাসে যুগান্তরী এক সৃষ্টি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ ‘লাল সালু’র মতো খ্যাতি অর্জিত উপন্যাস না হলেও সাহিত্যমূল্যে এর অবস্থান অনেক উচ্চে। নদীকে নামকরণে প্রধান করলেও এ উপন্যাসটি পুরোমাত্রায় নদীভিত্তিক নয়। নদীর অনুষঙ্গ আছে, আর সে-নদীটির নাম বাকাল নদী। গঙ্গা এবং জেলেদের জীবন যে একই বৃত্তে বন্দি সে-সত্য সবচেয়ে বেশি গভীর হয়ে উঠেছে সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’ উপন্যাসে। গঙ্গাকে ঘিরেই জেলেদের জীবন। গঙ্গাই যেন জেলেদের জীবনের নিয়ন্ত্রক। গঙ্গাকে ঘিরেই তাদের হাসি, তাদের কান্না। তাদের স্বপ্ন তৈরি এবং স্বপ্নভঙ্গের বেদনা-যন্ত্রণা সবই এই গঙ্গাকে ঘিরে। শামসুদ্দীন আবুল কালাম-এর নদীকেন্দ্রিক উপন্যাস ‘কাঞ্চনমালা’ ও ‘কাশবনের কন্যা’। ‘কাঞ্চনমালা’ উপন্যাসে পদ্মা এবং এর নানা শাখা-প্রশাখার কথা থাকলেও ‘কাশবনের কন্যা’ উপন্যাসে সুনির্দিষ্টভাবে কোন নদীর নাম উল্লেখ নেই। কালী নদীকে কেন্দ্র করে সত্যেন সেন লিখেছেন ‘একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে’।
‘পদ্মা প্রমত্তা নদী’র লেখক সুবোধ বসু। নদী যে মানুষের জীবনে কতোভাবে প্রভাব ফেলে অথবা নদী মানুষের জীবনকে কতোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তার দৃষ্টান্ত হতে পারে এ উপন্যাসটি। সারেংদের জীবন নিয়ে শহীদুল্লা কায়সার ‘সারেং বৌ’ রচনা করলেও, এ-উপন্যাসেও রয়েছে নদীর কথা। নদীটির নাম কয়াল। এ-নদীটি কদম ও নবিতুনের জীবনে মাতৃমমতায় বন্দি। কয়াল নদীটি এখানে শুধু নদী নয়- যেন মমতাময়ী এক মায়ের ছবি হয়ে ফুটে উঠেছে। ‘ধলেশ্বরী’ একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। প্রবোধবন্ধু অধিকারী ধলেশ্বরী নদী এর পার্শ্ববর্তী মানুষের জীবরনে কীভাবে প্রভাব ফেলেছে সে-ছবিিিট নিখুঁতভাবে এ উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন। আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘কর্ণফুলী’ গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। এ উপন্যাসে তিনি কর্ণফুলীর তীরে যে সব বিশেষ সম্প্রদায় বসবাস করে তাদের জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের সব নদীর বুকেই নৌকা শোভাবর্ধন করে। সে-সব নৌকো নানা ধরনের। নৌকাই যেন নদীর প্রধান অলংকার। কর্ণফুলী এ-ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তার বুকে শোভাবর্ধন করে সাম্পান। সাম্পান ছাড়া কর্ণফুলীকে কল্পনা করা যায় না। ঔপন্যাসিক এ-উপন্যাসে সে-ছবি সযতœভাবে এঁকেছেন। আবু বকর সিদ্দিক কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও উপন্যাস-রচনাতেও দক্ষতা দেখিয়েছেন। আবু ইসহাকের ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’ বত্রিশ খণ্ডের উপন্যাসের বিস্তৃতায়নে পদ্মার চরের জীবন ব্যবস্থাপনা, চর দখল-বেদখলের প্রক্রিয়া পদ্ধতি, চরের বসতির অনিশ্চিত-উদ্বিগ্ন ‘ব্যক্তি’ মানুষের চালচিত্র, শোষক শক্তি জঙ্গুরুল্লার জয়-পরাজয়ের কার্যকর কাহিনী এবং আরশাদ মোল্লার মেয়ে রূপজানের উত্থাপন প্রয়াসজ্জবস্তুত মূল কাহিনী। সাধারণত দুটো কাহিনীর একদিকে চর দখলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ঘটনা প্রবাহ অন্যদিকে রূপজান-জরিনা-ফজলকেন্দ্রীক প্রেম-অনুবর্তী আখ্যান। কিন্তু তা মোটেই সমান্তরাল নয়, বরং পরিপূরক বর্ণিত। উপন্যাসকারের লক্ষ্যবিন্দু শ্রেণীশোষণ কাঠামো নিরূপণ; স্থিরকৃত-পরাস্ত কোন জীবন নয়, যুদ্ধে জয়ী মানুষকে সমাজ বিবর্তনের পটে উন্মোচিত করা। তাই কেন্দ্রীয় চরিত্র ফজলের অতীত-বর্তমান ও তার আশ্রিত পেশা বা অবলম্বন বিচার করে লেখক কাহিনী শুরু করেন। মূলত ভেতরকাঠামোর-পট খুঁজে দ্বন্দ্বের সূত্রকে স্পষ্ট করতে চান লেখক। উপন্যাস আরম্ভে ফজলের মাছ ধরা, মাছ বিক্রি, সংসারের হিসেব-টানাপড়েন বলতে গিয়ে ফ্ল্যাশ ব্যাকে আসে এরফান মাতবরের বাড়ি; ভাঙন, ‘পাতনা’ দিয়ে দিনগুজরান এবং বর্তমানে বসতির প্রসঙ্গ। বর্ণনের এ পর্যায়ে লেখক ফজলের মাছ ধরা সম্পর্কে বলেন, ‘ফজল লুকিয়ে-চুরিয়ে মাছ বেচে। গেরস্থের ছেলের পক্ষে মাছ বেচা নিন্দার ব্যাপার। আত্মীয়-কুটুম্বরা জানতে পারলে ছি-ছি করবে। হাসাহাসি করবে গাঁয়ের লোক। দুষ্ট লোকের মুখে মুখে হয়তো একদিন মালো বা নিকারি খেতাব চালু হয়ে যাবে।’
বাস্তবতায় ফজল সমস্ত সংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠতে যেমন বাধ্য হয় এবং অন্যকেও তেমনি তার প্রয়োজন বোঝাতে সক্ষম হয়। উপন্যাসে খুনের চরের উদ্ভাবন, পুনরুদ্ধার, প্রত্যয়, মর্যাদা, বেদখলের কারণ, বড় ভাই রশীদের মৃত্যু, বৈষয়িক বুদ্ধিসম্পন্ন এরফান মাতবরের চর পুনর্দখলের প্রতিক্রিয়া এবং পরের অধ্যায়ে পদ্মার পলিদ্বীপের প্রতিরোধী যুদ্ধের ইঙ্গিত আচ্ছন্নতায় লটাবনিয়ার ইতিহাস, মাতবর আর সর্দারের দ্ব›দ্ব, রশীদের মৃত্যুর কারণ ও প্রতিক্রিয়া উচ্চারিত। আবুবকর সিদ্দিকের ‘জলরাক্ষস’ একটি বিশিষ্ট রচনা। এ উপন্যাসে সুনির্দিষ্টভাবে কোন নদীর পরিচয় না থাকলেও তিনি ‘খুলনা-বাগেরহাটের নিম্নভূমির সংস্পর্শে আসা নদীর জীবন্ত চিত্র উপস্থাপিত করেছেন।’ বিভিন্ন উপন্যাসে নদী ও মানুষ একে অপরের সম্পূরক হিসেবে উপস্থাপিত হলেও, এক্ষেত্রে ‘জলরাক্ষস’ ব্যতিক্রম। এ উপন্যাসে নদী সবসময়ই মানুষের জীবনে নীতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। বরং সে মানুষের জীবনে নির্মম নিষ্ঠুর প্রতিপক্ষ ও ভয়ার্তরূপে ধ্বংসকারী। প্রফুল্ল রায়ের নদীভিত্তিক উপন্যাস ‘কেয়াপাতার নৌকো’। এ উপন্যাসে মানুষ ও নদী যেন একে অপরের বন্ধু। অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’ শতিলক্ষ্যা নদী ও তার তীরবর্তী মানুষের সুখ-দুঃখের ছবি ফুটে উঠেছে। মেঘনা নদীও এ উপন্যাসে অনুষঙ্গ। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’তে নদীর ছবি আছে। সাধন চট্টোপাধ্যায়ের ‘গহিন গাঙ’ এবং তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদী মাটি অরণ্য’ নদীকেন্দ্রিক উপন্যাস। ‘নদী মাটি অরণ্য’ উপন্যাসে সুন্দরবন এলাকার মুড়িগাঙ, কালনাগিণী, ঘুঘুডাঙা, গোবাদিয়া, সপ্তমুখী প্রভৃতি নদীর কথা আছে। আছে পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী ও হুগলী নদী। শওকত ওসমানের ‘জলাংগী’ নদীভিত্তিক ভিন্নমাত্রার উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে সব উপন্যাস রচিত হয়েছে, সে-সব উপন্যাসেও নদী অপরিহার্য অনুষঙ্গ। ‘জলাংগী’ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সেলিনা হোসেনের নদীভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস ‘জলোচ্ছ্বাস’ ও ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’। ‘জলোচ্ছ্বাস’ উপন্যাসে আগুনমুখা নদী আছে বেশ জোরালোভাবে। আর ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ উপন্যাসের ‘কাহিনী নদীকেন্দ্রিক নয় সমুদ্রকেন্দ্রিক। কিন্তু যে-সমাজের জীবন জীবিকার সন্ধান মেলে, তাদের বসবাস আসলে সমুদ্র মোহনায় প্রবাহিত নাফ নদীর তীরে। উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীদের অন্নের সংস্থান হয়েছে সমুদ্রে। কিন্তু তাদের আশ্রয়স্থল হয়েছে নাফ নদীর তীরবর্তী অঞ্চল।’
৫.
বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যে নদীর বিষয়টি নানাভাবেই অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আকর্ষণ-বিপ্রকর্ষণে নদী প্রতিটি মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানুষের জীবনযাপন, সভ্যতা, ইতিহাস, আন্দোলন-সংগ্রাম-সবকিছুতেই নদী দৃঢ়তর ভূমিকা পালন করে। মানুষের জীবনে নদী কখনো বন্ধু, কখনো ভয়ংকর প্রতিপক্ষ ও ধ্বংসকারী। নদীকে এড়িয়ে মানুষের জীবন গড়া ও সভ্যতার ঐশ্বর্য নির্মাণ অকল্পনীয়। নদীভিত্তিক আঞ্চলিক বিভিন্ন উপন্যাসে এ সত্য নানাভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। শিল্পে প্রকরণ-বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পাঠ যাচাই করা যায়। নদী-বিষয়ী উপন্যাসকারগণ কেমন রচনাকার, তার স্বাতন্ত্র্য কি, বিষয়-নির্বাচনে তার যৌক্তিকতার ইঙ্গিত কোন্ ধরনেরজ্জএ প্রশ্নগুলোতে সরল ভাষ্যে হয়তো যে কোন লেখককেই চিনে নেওয়া যায়। কিন্তু লেখক বিশেষত এখানকার আলোচ্য বিষয়ক উপস্থাপনে চর-নদী-অঞ্চল জীবনাগ্রহজ্জতার নির্মাণ-প্রক্রিয়া, সংহার মূর্তির শৈলিজ্জভাষা-শিল্প হওয়ার প্রক্রিয়ায় পদ্ধতির ব্যবহার কিংবা আবহ রচনার সৃষ্টি-কৌশলে সামগ্রিকভাকে প্রয়োজনীয় দিকসঞ্চারী-যা উপর্যুক্ত আলোচনায় উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: আকবর হোসেনের অবাঞ্ছিত: সমাজের ক্ষতচিহ্ন ॥ রকিবুল হাসান