‘কবিতা প্রতিভা’ সবার থাকে না, কিন্তু শিল্পমনস্ক মানুষদের অনেকেই নিজের নামের আগে ‘কবি’ খেতাবটি শুনতে ভালোবাসে। আবার মঞ্চের কোনো সাধারণ বক্তাকেও যখন কেউ ‘কবি’ বলে ডাকে, তখন যেন তিনি সর্বান্তকরণে খুশি হয়ে ওঠেন। তবে ‘কবিতাবিরোধী’ মানুষও যে প্রচুর আছে, সেই বিষয়ে অনেকের সন্দেহ থাকলেও আমার নেই। যাই হোক, আমার আজকের আলোচনা ‘কবিতা প্রতিভা’ নিয়ে জন্ম নেওয়া একজনকে কবিকে নিয়ে।
সমকালের কবিদের মধ্যে তিনি আমার অধিক প্রিয়। প্রথমেই বলে রাখি, আমার এই প্রিয়তার কারণ তার কবিতা ও কবিতায় উপস্থিত ‘পোয়েটিক ডিকশন’, ‘বিপ্রতীপ দর্শন’ ও ‘মাল্টি ডাইমেনশন’। তিনি কবি সাজ্জাদ সাঈফ। যদিও আজ অব্দি তার সঙ্গে সরাসরি কোনোদিন দেখা হয়নি আমার। এমনকি, কোনো অনুষ্ঠানে উপবিষ্ট দর্শকের সারিতেও কোনোদিন একসঙ্গে বসিনি। এই যোগাযোগ হয়েছে কবিতায়, সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেন তার কবিতা ভালো লাগে, সে বিষয়ে একটু পরেই আসছি। শ্রীশচন্দ্র দাস তার ‘সাহিত্য সন্দর্শন’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘কবির বেদনাবিদ্ধ হৃদয়ই কবিতার জন্মভূমি। অর্থাৎ সময়বিশেষে কোন একটি বিশেষ সূত্রকে অবলম্বন করিয়া কবির আনন্দ-বেদনা যখন প্রকাশের পথ পায়, তখনই কবিতার জন্ম। কবি বেদনাকে আস্বাদ্যমান রস-মূর্তি দান করেন। ব্যক্তিগত বেদনার বিষপুষ্প হইতে কবি যখন কল্পনার সাহায্যে আনন্দমধু আস্বাদন করিতে পারেন, তখন বেদনা পর্যন্ত রূপান্তরিত ও সুন্দর হইয়া ওঠে। বেদনার যিনি ভোক্তা, তাঁহাকে উহার দ্রষ্টা না হইতে পারিলে তাঁহার দ্বারা কাব্যসৃষ্টি সম্ভব নহে। কবির বেদনা-অনুভূতির এই রূপান্তর-ক্রিয়া সম্বন্ধে ক্রোচে বলেন-Poetic idealisation is not a frivolous embellishment, but a profound penetration in virtue of which we pass from troublous emotion to the serenity of contemplation. আসল কথা এই যে, বাহিরের জগতের রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দ বা আপন মনের ভাবনা-বেদনা কল্পনাকে যে লেখক অনুভূতি-স্নিগ্ধ ছন্দোবদ্ধ তনুশ্রী দান করিতে পারেন, তাহাঁকেই আমরা কবি বিশেষিত করি।’
শ্রীশচন্দ্র দাসের মত বিবেচনা করলে, কবি সাজ্জাদ সাঈফ তেমনই বেদনাবিদ্ধ হৃদয় লাভ করেছেন জন্মের সঙ্গে-সঙ্গেই। আমার আজকের আলোচনা তার ‘কবিতা’ ও ‘কবিতাপ্রতিভা’ নিয়ে।
সাজ্জাদ সাঈফ বাংলা ভাষার কবি। চলমান শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বর। তার জীবনযাপন পুরোটাই কবিতাতাড়িত। খুব নিবিড় পর্যবেক্ষণে বুঝেছি, এই কবির পঠন-পাঠন আত্মবিশ্লেষণ আর উপস্থাপনের রীতিনীতি সমস্তই একজন নিবেদিতপ্রাণ কবিরই। বাংলা কবিতা যখন নতুন মিলেনিয়ামে প্রবেশ করেছিল এই কবি সে-ই সময়ের প্রতিনিধি। যতটুকু জেনেছি, ঢাকাস্থ বাড়ি-ফ্ল্যাট-চাকচিক্য ছেড়ে এসে সুদূর বগুড়ার সবুজে থিতু হয়েছেন দলনির্ভর সাহিত্যজট থেকে সরে নিরালা সাধনায় নিরবচ্ছিন্ন থাকার লক্ষ্যেই। এই কবি মেটাফোর নির্মাণে তার সময়ের অন্যদের চেয়ে সুদূর এগিয়ে, তার বক্তব্য সবারই যেন কথা, তিনি বিশ্বাস করেন ‘সাজ্জাদ সাঈফ বাংলা ভাষার মিস্ত্রি।’ এই মিস্ত্রী এই নির্মাণশ্রমিক প্রতিটি কবিতায় নির্মাণের সুচারু দক্ষতা প্রদর্শন করে আসছেন প্রায় দুই যুগ।
বিভিন্ন ফোরামে কবিতার নামে আজকাল অনেক অশ্রাব্য ও অকাব্য পাঠের ফলে ভবিষ্যৎ শ্রোতারা দিনে দিনে কবিতাবিরোধী হয়ে উঠছে বলে আমার মনে হয়। বিদগ্ধজনেরা এর ব্যতিক্রম ধারণা পোষণ করতে পারেন। তবে সাজ্জাদ সাঈফের কবিতা আমার কাছে বহমান নদীর শীতল জল। আঁজলা ভরে অন্তরে ঝাপটা দিলেই অদ্ভুত অনুভূতির মেঘে রংধনু খেলে যায়। সেসব কারণেই তার কবিতা ভালো লাগে। হয়তো, কবিতা আমার আজন্ম প্রেমের নাম বলেই এমন আকর্ষণ অনুভব করি।
সাজ্জাদ সাঈফের সাহিত্যে হাতেখড়ি স্কুল ম্যাগাজিন সম্পাদনা দিয়ে। তাও আবার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়। সেই থেকে লেখক ক্যারিয়ার শুরু, অদ্যাবধি নতুনই লিখছেন, মরমি প্রজ্ঞা ও চিত্রকল্পই এই কবির মহার্ঘ্য টুলস। ১৯৯৬ সালে শুরু করলেও তার ১ম বই আসে ২০১৭-তে, ‘কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা’, বইটি তরুণ ও প্রাজ্ঞ সাহিত্যজনের কাছে বিশেষ সমাদৃত হয়েছিল।
সেই সামগ্রিক বিড়ম্বনাকে পাশ কাটিয়ে কাব্যসুষমায় হৃদয় ভরিয়ে তুলতে চাইলে সাজ্জাদ সাঈফ পাঠ সর্বাঙ্গীনভাবে জরুরি।
ফরাসি শিল্পে প্রতীকবাদের রূপকার স্তেফান মালার্মে বলেছিলেন, Poetry is the language of a state of crisis! তারও পরে কবিতার ফর্ম ও বক্তব্য নিয়ে কয়েক দফা আধুনিক তত্ত্ব এসেছে, কিছু থেকে গেছে কিছু হারিয়ে গেছে, কিন্তু পরবর্তী প্রায় সব তত্ত্ব মালার্মের ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। আমরা সাজ্জাদ সাঈফের কবিতায় মালার্মের বক্তব্যের অনুগামী শিল্পকে অবলীলায় পেয়ে যাই, যেন এই কবি মানবিক অস্তিত্বের ঝুঁকি ও বাস্তবতাকে কখনোই এড়িয়ে যান না আবার নান্দনিক অনন্যতায় যেকোনো প্রকৃতি বা সৃষ্টির কুশলগ্রাহী কবিতাকে রাজনৈতিক করে তোলেন একেবারেই নিজস্ব কৌশলে যা তার ইমিডিয়েট আগে পরের সময়কালেই তার একান্ত কীর্তি বললেও ভুল হয় না। চারপাশে কাব্যপ্রেমী তেমন না থাকলেও কাব্যবিচারক (!) অনেক রয়েছে, নিজ নিজ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না হলে যারা একেকজন কবির কবিতার ষষ্ঠীপুজো করে ফেলে। সেই সামগ্রিক বিড়ম্বনাকে পাশ কাটিয়ে কাব্যসুষমায় হৃদয় ভরিয়ে তুলতে চাইলে সাজ্জাদ সাঈফ পাঠ সর্বাঙ্গীনভাবে জরুরি।
আবু সায়ীদ আইয়ুব বলেছিলেন, ‘কবিতার গভীর তলে যে অর্থ লুকানো থাকে তার সন্ধানে ডুব দিতেই আমরা অভ্যস্ত ছিলাম; আজ শুনছি তার উপরিতলে যে স্বর ও ব্যঞ্জন ধ্বনির মোহিনী মায়া বিস্তৃত সেখানেই কবিতার সারাৎসার খুঁজতে হবে, আমরা ভুলতে বসেছি যে অর্থের গরবেই কথা গরবিণী৷’
সাজ্জাদ সাঈফ কথার নতুনত্বকেই কবিতার নতুনত্ব মানেন। লিখতে গিয়ে নতুন কথার ওপরেই মনোনিবেশ করেন সর্বাগ্রে। আসুন পাঠ করি,
মেঘবর্তুল হতে কারো, ছিটকে পড়েছে অচিহ্নিত ঘুড়ি;
পায়ে পায়ে প্রবোধ অবধি এসে গেছে আত্মপ্রবঞ্চনা!’অথবা
গোধূলি চিহ্নিত করে রোগ-শোক-রক্তের দাগ আকাশও করে আছে অধিকার; যত প্রতিষেধকের কাছে অসহায় নুয়ে আছে লেবুফুল; প্রকৃতিও ওজনোস্তরে ভারী, ম্লান, ন্যুব্জপ্রায়!
(হস্তাক্ষর: কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা)
এছাড়াও
একটা পাথরখণ্ড পেয়ে হৃদয়ে বসেছে মেঘ-
শিমুল-ডালে আস্ত দুপুর, লাল রঙে তার ঢাকছে বিষাদ
অথবা
সুনীতির শাস খেয়ে গেছে চালাক বাদুড়ে, তবু দেখি তুমি
পৃথিবীকে ডাকো আনন্দ-নার্সারি
(বাদুড়: বহুদিন ব্যাকফুটে এসে)
কবিতা লেখা শুধু শব্দের পর শব্দের বিন্যাসে ভাবকল্পকে চিত্রিত করা নয় বরং এটি বিশেষ ধরণের মুন্সিয়ানা বা গুণ। এ প্রসঙ্গে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘কবিতা কী, এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তা হলে এখন আমরা বলতে পারি যে, কবিতা আসলে শব্দ নয়, বরং শব্দকে ব্যবহার করবার এক রকমের গুণপনা। ভাষার মধ্যে যা কিনা অন্যবিধ একটি দ্যোতনা এনে দেয়। অথবা বলতে পারি, কবিতা আসলে ভাষার একটি স্তর, কবিতা বলে গণ্য হতে হলে আমাদের ভাবনার শব্দ-রূপকে যে-স্তরে উত্তীর্ণ হতে হবেই; আবার, অন্যদিকে, গদ্যরচনাও যে-স্তরকে মাঝেমাঝে স্পর্শ করে যায়।’ (কবিতা কী ও কেন: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী)।
একটা লিনিয়ার ছাত্রজীবনকে আগুনে আগুনে সেকে প্রায় সেদ্ধই করেছেন যা তার ব্যক্তিজীবনকে করেছে ঘটনাবহুল এবং এর সবই শুধুমাত্র কবিতার জন্য।
সাজ্জাদ সাঈফের কবিতা পড়তে গেলে তার শব্দের ব্যবহার ও সূক্ষ্ম ভাবনার বিলাস যেকোনো পাঠককে নতুন ডাইমেনশনে ভাবতে বাধ্য করবে।
কাব্যযাত্রার শুরু হতেই প্রেম, মিথ, ধর্ম-অধর্ম, রাজনীতি ও চিরায়ত সামাজিক বৈষম্যের প্রতি কঠোর বিদ্রুপ মিলিয়ে একটা সংহত কাব্যাদর্শকে সামনে নিয়েই এগোতে দেখা গেছে সাজ্জাদ সাঈফকে।
প্যালেস্টাইন, উপদ্রুত নগরীর অরূপরতন- মানুষের স্বপ্ন হতে সব কোলাহল, সব খেঁজুর বাগান, সব নহরের জলধারার ওপর শ্বাপদনখরের দাগ পাঠ্যবইয়ের মলাটে বেঁধে দিচ্ছেন মায়েরা, এরই পাশে রাস্তার ধারে মাইন পুঁতে রেখে যায় জায়নবাদীরা, শিশুরা স্কুলে যাবে এই সেই পথ।
(প্যালেস্টাইন: কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা)।
এই কবি কথার নতুনত্ব নিয়ে কাজের ভিতরই ব্যাপ্ত রাখেন গ্লোবাল ভিলেজের আধুনিকতম আইডিয়া, যুদ্ধবিহীন মানবসমাজের স্পষ্ট স্বপ্নকে। এছাড়া এই কবি আপাদমস্তক বাঙালি এবং এতে তার কবিতার মতোই তিনি গর্বিত ও উচ্চারিত।
এদিকে হাওয়াই মিঠাই লাল, কোরা দিয়ে খুঁচিয়ে নারকেল তোলে গীন্নিরা
রসিভর্তি কলস কাঁধে দ্রুত নেমে আসে গাছি’
(ধমনী: কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা)।ধুলা গায়ে মানচিত্রে, গাছেরা অলীক হাসে
সবুজ-সুবোধ গাছ, যশোরের রোড বেয়ে’
(যশোরের রোড: প্রেমপত্রের মেঘ)
ওয়ার্ডসওয়ার্থের প্রবাদবাক্যটি সবাই প্রায় জানেন, সুন্দর অনুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ যেমন কবিতার একটা সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা তেমনি ‘সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি’ অথবা ‘শব্দই কবিতা’ অথবা ‘চিত্রকল্পই কবিতা’- শীর্ষক হাইপোথিসিসগুলোর সমান্তরালে এগিয়ে সাজ্জাদ সাঈফের কবিতাকে পাই সত্যানুসন্ধানে, যেন তপস্যার প্রক্রিয়া হয়ে কবিতা আবাস করেছে এই কবির ভেতর। বইগুলি থেকে অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া সম্ভব এই অনুসিদ্ধান্তের পক্ষে। একটা লিনিয়ার ছাত্রজীবনকে আগুনে আগুনে সেকে প্রায় সেদ্ধই করেছেন যা তার ব্যক্তিজীবনকে করেছে ঘটনাবহুল এবং এর সবই শুধুমাত্র কবিতার জন্য।
তার কবিতা অবয়বে, মননশীলতায়, আবেগে, নৈপুণ্যে অনন্য। কবি ও চিকিৎসক এই দুই সত্তা দুই মেরুর হলেও, এ কবি একবিন্দুতে এনেছেন। এটাও এক বিস্ময়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও পরাপাঠ্য ও সাহিত্যপাঠের যে ক্রেজ তিনি বহন করতেন শুরু হতেই মেডিকেল শিক্ষার্থীরা একে সহজভাবে নেননি, কবির অভিজ্ঞতা হিসেবে প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্লেজিং প্রায় নিয়মিতই ছিল ছাত্রজীবনের। এছাড়া, তিনি ফুটবলার ও ক্রিকেটার হিসেবেও ক্যাম্পাসে সমাদৃত হয়েছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে তাকে গ্রাস করে নেয় কবিতাই, মেডিকেল অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে পিয়ন অব্দি তার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রকাশ্যেই উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতেন। হোস্টেল থেকে দুই ট্রাঙ্কভর্তি আউটবুক ঢাকার নিবাসে নিয়ে গেছিলেন কবির মা। এরকম অসংখ্য অসহযোগী পরিবেশে থেকেই তিনি পাঠ-পরাপাঠ-লিখালিখি চালিয়ে গেছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে।
ইতিহাস-জাতীয়তাবোধ-ধর্ম-আচার-সংকৃতি ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি পরিজন ও অন্য স্বজনদের নিরিখে মানুষে মানুষে আন্তঃসম্পর্কের সচেতন লিখনচিত্র তুলে আনতে অদ্ভুত মুন্সিয়ানা লক্ষ করা যায় সাঈফের কবিতায়। গদ্য ফরম্যাট ছাড়াও, পয়ার-মহাপয়ার-স্বরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্ত-অক্ষরবৃত্তসহ সনেটও লিখেছেন বিচ্ছিন্নভাবে। এই কবিরআরেকটি বৈশিষ্ট্য তিনি একজন পরিশ্রমি ও সার্থক অনুবাদক। বাংলা সাহিত্যকে অনেককিছুই দেওয়ার আছে এই বিনয়ী-আত্মনির্বাসিত-অভিমানী কবির। এই পর্বে কবিকে আরও গভীর থেকে পাঠ করা যাক কী বলুন!
আমাকে ডেকেছে আজ নীরবতা-রাগ
পায়ে পায়ে মল বাজে এমন রাতের!
তবু তো অভ্যাসগুলো, মেলেছে পরাগ;
রাঙা মন, খুলি জুড়ে আঁচড় দাঁতের!’
(ধূলার খামার/কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা)
অথবা
চুপচাপ মেঘের সিঁথিতে মেঘ, নিরবতাকে পেরিয়ে এসেছে নদী;
দেখবে সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে খুব, মেঘ-নিরালায় তোমায় আঁকাই যদি!
(আমার আছে/বহুদিন ব্যাকফুটে এসে)
এছাড়াও
এই প্রেম তিরের ফলায় গাঁথা, কলিজার টুকরা কেমন
ছুঁই ছুঁই জ্যান্ত দেখায়, মহাসড়কের ধারে প্লাবন যেমন!
(আমরা ভিজুম: প্রেমপত্রের মেঘ)
এছাড়া
দেউরী ঘুমায়, হাস্নাহেনায়, হাওয়া সাথ দেয় বাবাকে
(আমাদের বাবা: প্রেমপত্রের মেঘ)
এছাড়া
সিঁথিতে গোধূলি নামে, তাতে এক জামবন আঁকো
সিঁথি বুঝি মাইগ্রেন পোষে? মাথা খোঁড়ে ব্যথার শাবল?
তুমি আছো তমসাপ্রবণ, মেঘ পেয়ে ভেসে যায় সাঁকো
দূরে চর, উষরতা জানে? প্রেম নাকি দূরত্বে উজ্জ্বল?
(ভাষার সি-বিচে: ২০১৯)
শেষ পর্যায়ে বলতে চাই, কল্পনাশক্তিই হলো কবির প্রধান শক্তি। সাজ্জাদ সাঈফ সেই শক্তিকে ভীষণভাবে বলিয়ান। তার কবিতা অবয়বে, মননশীলতায়, আবেগে, নৈপুণ্যে অনন্য। কবি ও চিকিৎসক এই দুই সত্তা দুই মেরুর হলেও, এ কবি একবিন্দুতে এনেছেন। এটাও এক বিস্ময়। প্রত্যাশা করি, তিনি মন্ময় ও তন্ময় এ দুই ধারায় কবিতা লিখে যাবেন আরও দীর্ঘকাল।
আরও পড়ুন: সাম্প্রতিক সাহিত্য