পর্ব-২৭
আপনারা কেমন আছেন? দাঁড়িয়ে কেন? বসুন। ওদের কাছে এগিয়ে এসে চেয়ার আর খাটের কিনার দেখায়, বসুন। তাকায় শিমুলের দিকে, শিমুল তোমার বন্ধুদের বসতে বলো।
হাসে শিমুল, বসবে, ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। তোমাকে দেখে ওদের ভিরমি খেয়েছে তো, ভিরমিটা কমলেই ওরা বসবে।
মানে কী? হাসে মিলি।
শোনো ওরা, আমার বন্ধুরা এতদিন ঢাকা শহরের নাম শুনেছে, সিনেমা দেখেছে মাঝে মধ্যে, দেখেছে ঢাকা শহরের মেয়েরা কত সুন্দর, স্মার্ট- সাবলীল। ওদের কল্পনার রাজকন্যা তুমি এই মুহূর্তে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে, একটু বিচলিত তো হবেই, সময় দাও। বসবে।
তুমি একটা ইডিয়ট! মিচকি হাসে মিলি, তাকায় এনামুলের দিকে, বসুন না ভাই।
এনামুল বসে। সঙ্গে সঙ্গে বসে মুজাহার, হানিফ, হরলাল। কিন্তু বাসুদেব রায় চট করে আনত হয়ে মিলির পা ছুঁয়ে প্রণাম করে। ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউ।
কী করছেন আপনি? এক ধরনের আর্তস্বরে পিছিয়ে যেতে থাকে মিলি মাহজাবীন। কিন্ত কাঠের চেয়ারের সঙ্গে আটকে যায়। প্রণাম জানিয়ে বসে মুজাহারের পাশের চেয়ারে। হো হো হাসে শিমুল। সংকুচিত মিলি ঘামতে থাকে। বিপন্ন পরিস্থিতিতে ওড়নার আঁচলে মুখ মোছে মিলি। পাশে এসে হাত ধরে বসায় শিমুল, নিজেও বসে, কী ভয় পেয়েছ? আরে ও আমার বন্ধু বাসুদেব রায়। রায় বংশের ছেলে, তোমাকে মায়ের সন্মান দিয়েছে। খুব ভালো ছেলে। এই অল্প বয়সে বাসুদেবের মতো একটা ছেলে পেলে।
সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে। হাসির মধ্যে তেলমাখানো মুড়ির গামলা নিয়ে ঢোকে তমাল। তমালের পেছনে পেছনে জগদীশ। জগদীশের হাতে টিনের ছোট ছোট থালা। নতুন ছাপা শাড়ি পরে ঢোকে রূপালী। জগদীশের হাত থেকে একটা থালা নেয়, তমালের হাতের গামলা থেকে মুড়ি ভরে এক একজনার হাতে দেয়। প্রত্যেকে মুড়ির থালা হাতে নিয়ে মুড়ি চিবাতে শুরু করে।
ভাবি, তুমি খাইবা? জিজ্ঞেস করে রূপালী।
খাবে না মানে? খাবে। আমাকে মুড়ি দে, হাত বাড়ায় শিমুল। রূপালী থালা ভরে শিমুলকে মুড়ি দিয়ে, দাঁড়ায় মিলির সামনে, তোমারে দিমু?
ঘাড় নাড়ে মিলি, দাও।
মিলিকে একথালা মুড়ি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় রূপালী, আপনেরা হোনেন, চা লইয়া আইতেছি। আর মায় কইচে দুপারে খাইয়া যাইতে।
কী দিয়া খাওয়াবি বুড়ি? মুড়ি চিবাতে চিবাতে প্রশ্ন করে মুহাজার।
ক্যান? তোমরা যে মাছ আনচো হেই মাছ দিয়া খাওয়ামু। আর ঘরে মুরগা আছে, জবাই দিমু, কাটা কাটা উত্তর দেয় রূপালী।
রূপালীর লগে কথায় পারবি না রে, ওর মুখ বড় ফাস্টো, বলে হানিফ।
মুচকি হেসে রূপালী চলে যায়। পেছনে পেছনে জগদীশ আর তমাল।
ভাবি, আমাগো গেরাম আপনার কেমন লাগচে? প্রশ্ন করে হরলাল।
ভালোই। মাত্র গতকাল এলাম আপনাদের গ্রামে, এখনো ভালো করে দেখা হয়নি। যেটুকু দেখেছি, ঘাড় দোলায় মিলি, খুব ভালো লাগছে। আরও ভালো লাগছে আপনারা এসেছেন, তাই।
আমরা গেরামের মানুষ ভাবি, অনেক ভুল অইবে কিছু মনে করবেন না, মুজাহার আলী।
মনে করবো কেন? গ্রাম হোক শহর হোক; বাংলাদেশের মানুষতো আমরা সবাই।
হেইডা ঠিকই কইছেন ভাবি। দ্যাশটা আমাগো হগলের। তয় আমার ধারণা ছিল, আপনে শহরের মেয়ে আমাগো লগে কতা কইবেন না, হাসে হানিফ মিয়া।
আর একটুও অহঙ্কার নাই। আমি তো ভাবছিলাম, আমাগো লগে কতাই কববে না। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল। ভাবি অনেক বালা মানুষ। যত্ন কইরা রাইখেন কাকা।
কেন কথা বলবো না? গ্রামের হোন আর শহরের হোন; বড় কথা আপনারা শিমুলের বন্ধু। শিমুল আমাকে কত গল্প করেছে আপনাদের নিয়ে।
হাঁচাই? গলা বাড়ায় মুজাহার আলী। কী কইচে আমাগো বিষায়।
বলেছি, তোরা এক একটা আমরা কাঠের ঢেঁকি আর শিয়ালর বাচ্চা! ফোড়ং কাটে শিমুল।
ভাবি সামনে নাইলে তোরে, তেঁতে ওঠে বাসুদেব।
হাসে মিলি, সত্যি বলছি ঢাকায় যখনই ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, গল্প হয়েছে-প্রসঙ্গ এলেই বলেছে আপনাদের গল্প। আপনারা রাত জেগে শিরনি খেয়েছেন, কচানদীতে মাছ ধরেছেন, ফুটবল খেলতে গেছেন অনেক দূরের গ্রামে, সেখানে মার খেয়েছেন।
বাহ, শিমুল তো অনেক গল্পই কইচে আপনার লগে।
বলছি তো, ঢাকায় পড়াশোনা করলেও মনে মনে সব সময়ে আপনাদের সঙ্গেই থাকে।
উ…হু। ভাবি!
দরজায় দাঁড়িয়ে চিৎকার দেয় রুপালী আখতার। ওর হাতে চায়ের গরম কেটলী। হাত পুড়ে যাচ্ছে গরমে। মিলি দৌড়ে যায় রূপালীর কাছে। ততক্ষণে রূপালী কেটলিটা রাখে খাটের ওপর। দু’পায়ে মাটি দাপায় রূপালী, মারে কইলাম একটা টিনের ওপর দাও। না মা দছমাইল দিয়ে কইলো, যা কিছু অইবে না। এহন দেখো ভাবি, আমার হাতটা পুড়লো!
কই দেখি, নিজেই হাতটা নেয় রূপালীর। একটু স্যাক লেগেছে, মলম আছে? তুমি ভেতরে গিয়ে পোড়া জায়গায় মলম লাগাও।
চা দেবে কে?
আমি দেবো। তুমি কাপ দিয়ে যাও। মিলির কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে হাতে টিনের থালার ওপর ছয়টা কাপ নিয়ে ঢোকে তমাল।
কাছে এসে শিমুল বলে, তুমি পারবে না মিলি। আমি তোমাকে হেল্প করি।
জি না, আপনাকে হেল্প করতে হবে না। দয়া করে বসুন, তোমাকেসহ আমি সবাইকে চা দিচ্ছি।
তুমি পারবে না!
পারবো, তুমি বসে বসে দেখো।
ঠিক আছে। শিমুল আগের জায়গায় বসে।
মিলি হাতা দিয়ে কেটলির ধরণী ধরে চায়ের কাপে চা ঢালে, একের পর এক। সবার চোখ মিলির ওপর। ওদের চোখে বিস্ময়, অপার কৌতূহল, ঢাকা শহরের মাইয়া এমন করে চা ঢালে? ওদের ভাবনার মধ্যে চা ঢালা শেষ করে বড় থালায় করে কাপগুলো একেক জনের সামনে নেয়, একেক জন একটা কাপ তুলে হাতে নেয়। এক কাপ দেয় শিমুলকেও।
চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে সুন্দর করে বলে শিমুল, থ্যাঙ্কস।
মোস্ট ওয়েলকাম, নিজের কাপটা নিয়ে বসে শিমুলের পাশে মিলি মাহজাবীন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তাকায় মিলি, এখন বলুন আপনারা কে কী করছেন?
ভাবি? উজানগাঁও বাজারে একটা ওষুধের দোকান আছে, এনামুল হক নিজের প্রসঙ্গে বলতে শুরু করে, আমি আর শিমুল একসঙ্গেই পড়তাম উজানগাঁও হাইস্কুলে। আমি মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো একটা রেজাল্টও করছিলাম কিন্তু।
কিন্তু কেন?
বুকের গভীর থেকে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে, আর বইলেন না। একটা সিদ্ধান্তে জীবনটাই আমার উল্টাইয়া গেলো।
হাসে শিমুল, আহারে দীর্ঘশ্বাস। মিলি, শোনো আমাদের মধ্যে এনামুলই ছিল মেধাবী আর হিসেবী। কিন্তু বেচারা একটা জালে জড়িয়ে যায়,
জালে জড়িয়ে যায়, মানে?
প্রেমের জালে জড়িয়ে যায় বেচারা, শিমুলের বলার সঙ্গে সঙ্গে রুমের সবাই হাসতে শুরু করে। হাসতে হাসতে চা পানের কারণে হরলালের নাকে চা ঢুকে গেলে হেঁচ্চো হেঁচ্চো শুরু করে। সবাই বিরক্ত। কিন্তু কয়েকটা হেঁচ্চে দিয়ে থেমে যায় হরলাল।
প্রেম করেছেন, ভুল সিদ্ধান্ত বলছেন কেন?
ভাবী, নিশ্চয়ই মানুষের জীবনে পেরম আসবে কিন্তু সমায় বোঝা উচিত। আমি বড় অসময়ে কাজটা করেছি।
মানে বিয়েও করেছেন?
মাথা নাড়ায় এনামুল হক, হয় ভাবি লাইলীরে বিয়াও করছি।
সুখে আছেন তো?
জে, সুখে আছি। বেশ সুখে আছি ভাবি।
তাহলে তো আপনার সিদ্ধান্ত তো ভুল না। মিলি চা খাওয়া শেষ করে টিনের থালার ওপর, মানুষ জীবনে যা কিছু করে, করে সুখের জন্য। সেই সুখ যদি আপনি বিয়ে করে পেয়ে থাকেন তাহলে সিদ্ধান্তটা ভুল নয়।
রুমের মধ্যে সবাই চুপ। চটপটে, সুন্দরী মিলি, ওদের বন্ধু শিমুলের স্ত্রী এত সুন্দরভাবে আলাপ করছে, হাসছে, নিজের হাতে পা দিয়েছে, গোটা ঘটনাই ওদের কাছে গল্পের মতো বকা পিরোজপুরে গিয়ে মাঝে মধ্যে দুই-একটা সিনেমা দেখার মতো মনে হচ্ছে।
ভাবি আপনে ঠিকই কইছেন, এনামুল হক একটু গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করে, উজানগাঁও গেরামে অনেক মানুষের মইধ্যে আমি ভালো আছি। আমাগো তিনটা ছেলে মেয়ে। ওষুধ বিক্রি আর গেরামের মানুষের চিকিৎসা কইরা আমার আয় রোজকার খারাপ অয় না। কিন্তু যহন শিমুলের দিকে তাকাই, তখন মনে অয়, আমার জীবনডা আরও ভালো অইতে পারতো।
তোমারা কিছু খাইচো? বাইরে থেকে দরজায় এসে দাঁড়ায় শামসুদ্দিন। দিচে তোমাগো চাচি কোনো খাওন?
সবাই দাঁড়ায়।
হ কাকা, সবার পক্ষ থেকে উত্তর দেয় হরলাল গাইন। কাকি মুড়ি আর চা খাওয়াইচে। আপনে আসেন।
না, তোমারা গল্প হর। আমি যাই।
হরলাল গাইন কোনোদিন স্কুলে যায়নি। কিন্তু এলাকা হাডুডু খেলায় চিরকাল চ্যাম্পিয়ন। তিন চার জনেও ওকে ধরে রাখতে পারে না, বিপক্ষ দলের কোর্টে হা ডু ডু ডু করতে গেলে। তিন চার জনে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়লেও কেমন করে শরীর মোচড় দিয়ে বের হয়ে নিজের কোর্টে চলে আসে, আজব এক রহস্য। হা ডু ডু খেলার কারণে এলাকার ছোট বড় সবার সঙ্গে খাতির। বাপ ছিল দরিদ্র চাষি কিন্তু হরলাল গাইন নিজের চেষ্টায় ভাগ্য অনেকটা ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে এসেছে। খুব হিসেবী মানুষ হরলাল, আবার দিলখোলাও।
গত পনেরো বছর ধরে উজানগাও, তেলিখালি, ইকড়ি, মাদার্শী বাজারে মাছ বিক্রি করে হরলাল গাইন। ওর শরীরটা বেজায় কালো। ঘাড়ের ওপর মোটা একটা মাথা। মাথায় কালো চুলের জঙ্গল। হাসে যখন, সব কটা ঝকঝকে দাঁত বেরিয়ে পরে, দারুণ সুন্দর লাগে তখন হরলালের হাসিটা। বন্ধুদের যেকোনো আমন্ত্রণে সব সময়ে থাকে। আজকের মাছ কেনার অর্ধেক টাকা হরলাল দিয়েছে। বাসুদেব টাকা দিতে পারে নাই। সেটাও দিয়েছে। মনের সঙ্গে বুকটাও অনেক বড় হরলাল গাইনের। মাছ বিক্রি করে নতুন বাড়ি করেছে। আধা বিঘা জমির কিনে মালিক হয়েছে। কিন্তু পরিশ্রম করতে একটুও পিছপা হয না। সেই সাত সকালে উঠে ছোট্ট নৌকা নিয়ে বের হয়ে যায় কচানদীতে। ইলিশের জেলেদের কাছ থেকে তরতাজা মাছ কিনে এনে বাজারে বাজারে বিক্রি করে। ইলিশ মাছ ছাড়া আর কোনো মাছ বিক্রি করে না হরলাল গাইন। শামসুদ্দিন খুব পছন্দ করেন হরলালকে।
বাবা!
একটা কুকুর ধীর পায়ে হেঁটে উঠোন অতিক্রম করছে। চোখে পানি এসে যায় শামসুদ্দিনের, তিনি চোখ মোছার ভান করে ডিমের ছোট পিরিচটা হাতে নেন।
শামসুদ্দিন যেতে যেতে ফিরে তাকান, কিছু কইবা মা?
দরজার কাছে যায় মিলি, আপনি ভেতরে এসে বসুন। মেহমানদের সঙ্গে গল্প করুন। আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসছি।
অসম্ভব সুন্দর হাসি ফোটে শামসুদ্দিনের মুখে, ঠিক আছে মা। তিনি ভেতরে ঢোকেন আর মিলি দ্রুত ঘরের ভেতরে চলে যায়। শিমুল ভেতরে ভেতরে রোমাঞ্চিত; মিলি! মিলি মাহজাবীন নিজেকে এতো দ্রুত পরিবর্তন করতে পারলো? কিভাবে সম্ভব? ও কী প্রতিজ্ঞা নিয়েছে, যেকোনোভাবেই হোক সবাইকে জয় করবে? আমাকে কারও কাছে ছোট হতে দেবে না? একটা মেয়ে, মাত্র চব্বিশ বছরের, বেড়ে ওঠা, জন্ম, সবটাই ঢাকা শহরে, সেই মেয়ে মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধানে, এমন আমূল পাল্টে ফেললো নিজেকে?
শিমুল? ওর ভাবনার মধ্যে ঢুকে পড়ে হানিফ। কী ভাবতেচ?
না কিছু না। তোরা আব্বার সঙ্গে গল্প করো, আমি আসতেছি।
শিমুল চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসুদের রায় এগিয়ে এসে বসে শামসুদ্দিনের পাশে, কাকা আপনে অনেক বড় জেতা জিচ্চেন।
কিভাবে জিৎলাম বাসু?
শিমুলের বৌ, খুব ভালো মাইয়া।
মাথা নাড়েন শামসুদ্দিন, হয় তুমি ঠিকই কইচো। যহন আমারে চিঠি দিয়া জানাইচে শিমুল, তহন আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। চিন্তায় ছিল তোমাগো চাচিও। শহরের মাইয়া, লেহাপড়া জানে, আমরা কবরলম, কী না অয়? আবার মাইয়ার বাপে গরমেন্টের বড় অফিসার। খুব ভয় আছিলাম বাবারা।
মাথা নাড়ায় মুজাহার আলী, না চাচা না। ভয়েব কোনো কারণ নাই, আপনার পুতের বৌ অনেক ভালো। অনেক লক্ষ্মী।
হ চাচা, চেয়ার ছেড়ে শামসুদ্দিনের কাছে আসে হানিফ, ফিসফিসিয়ে বলে, আপনের পুতের বৌ যেমন দেখতে সুন্দর, কতাও কয় মিঠা। আর একটুও অহঙ্কার নাই। আমি তো ভাবছিলাম, আমাগো লগে কতাই কববে না। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল। ভাবি অনেক বালা মানুষ। যত্ন কইরা রাইখেন কাকা।
হাসেন শামসুদ্দিন, তোমাগো কতায় মনডা আমার ভইরা গেলো। আর আমার যা আছে, সব দিয়াই মাইয়ার যত্ন করমু। কত দূরের মাইয়া, কত আদরের মাইয়া আমার পোলার হাত ধইরা গাঁও গেরামে আইচে, সব ছাইরা যত্ন তো নিতেই অইবে বাবা।
ঠিকই কইছেন, কাকা, বাসুদেব রায় বলে, আমার তো মনে অইচে সাক্ষাৎ পেরতিমা।
কাকা, খুক কেশে বলে এরামুল হক, আমাগো বাসুদেব তো প্রণাম করছে ভাবিরে।
আবার রুমের মধ্যে হালকা হাসির ঝলক ওঠে কিন্তু এবার ভড়কে যায় না বাসুদেব রায়। গলার ঝাঁজ বাড়িয়ে উত্তর দেয়, আরে ভাই আমার ভাবিরে দেইখা আমার পেরতিমা মনে অইচে। আমি পেরনাম করছি, তো কী অইচে? তোরা এত হাসতেছিস ক্যান?
দরজায় এসে দাঁড়ায় মিলি। হাতে টিনের বড় একটা থালা। থালার ওপর একটা পিরিচেএকটা ডিম ভাজি, চায়ের একটা কাপে এক কাপ চা, আর এক গ্লাস পানি। ওকে ঢুকতে দেখে সবাই থেমে যায়। মিলি থালাটা এনে রাখে শামসুদ্দিনের পাশে, মা বললো আপনি সকালে একটা ডিম খান। আমি নিয়ে এলাম। চা খাওয়ার আগে ডিমটা খেয়ে নিন।
শামসুদ্দিন অবাক চোখে তাকান মিলির দিকে। মিলি জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। উঠোনে কয়েকটা মুরগি আর মোরগ লড়াই করছে। একটা কুকুর ধীর পায়ে হেঁটে উঠোন অতিক্রম করছে। চোখে পানি এসে যায় শামসুদ্দিনের, তিনি চোখ মোছার ভান করে ডিমের ছোট পিরিচটা হাতে নেন।
চলবে…
মোকাম সদরঘাট-২৬॥ মনি হায়দার