(পর্ব-৯)
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলে কবি-সাহিত্যিকদের মাঝে তোড়জোড় লক্ষ করা যায়। বাংলা একাডেমির পদক ঘোষণার অপেক্ষায় থাকেন সবাই। কখনো কখনো আগেভাগেই অনুসারী-ভক্ত-সমর্থকরা সম্ভাব্য ব্যক্তিদের নামও আলোচনায় নিয়ে আসেন। এরপর পুরস্কার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। অমুকে পেয়েছেন তমুকে কেন পদক পেলেন না। কিংবা পদক যাকে দেওয়া হলো তিনি যোগ্য ব্যক্তি নন, তার চেয়ে অমুকে বেশি যোগ্য ছিলেন, তার প্রতি ভীষণ অন্যায় করা হয়েছে, ইত্যাদি। অবশ্য বাংলা একাডেমির পদক নিয়ে এই যে সমালোচনা, তা মোটেও অযৌক্তিক নয়। পদক প্রদানের নেপথ্যে নাকি অনেক ঘটনা ও রাজনীতি থাকে। যদিও বিষয়টি নতুন নয়, পদক কে পাবেন আর কে পাবেন না, তা নির্ধারণের সঙ্গে বরাবরই ক্ষমতার একটা সম্পর্ক থাকে। বর্তমানেও সেটাই ঘটছে, হয়তো আগের তুলনায় একটু নির্লজ্জভাবে, এই যা।
হুমায়ুন আজাদ ১৯৮১ সালে (২০ মার্চ প্রকাশিত) সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ‘কবির লড়াই’ নামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। তাতে তিনি বলেছেন, ‘‘কবিতা ও রাজনীতি এদেশে নতুন নয়, অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। রাজনীতির মূলে কেবল অবাস্তব খ্যাতিলিপ্সা নেই, আছে বাস্ত লোভ। আমাদের দেশে তরুণ কবিকে স্নেহমেশানো উপহাসের চোখে দেখা হয়, কিন্তু প্রতিষ্ঠার পরে তার বৈষয়িক উন্নতিও কম ঘটে না। ওই উন্নতির জন্যেই রাজনীতি, অমরতার জন্য রাজনীতির দরকার হয় না। খ্যাতি বাদে যা থাকে তা হচ্ছে পুরস্কার, অর্থ, উপাধি ইত্যাদি। যেমন, বাংলা একাডেমি পুরস্কারের রাজনীতিতে হেরে গিয়েছিলেন জসীম উদদীন, জিতেছিলেন ফররুখ আহমদ। তাই জসীম উদদীন আর বাংলা একাডেমির পুরস্কার পাননি।
আজাদ আরও বলেন, শিরোপার লড়াই নরক পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। আরিস্তোফানেসের ‘ব্যাঙ’ নামী প্রহসনে পাওয়া যায় নরকে কবিতা-যুদ্ধের বিবরণ। মৃত্যুর পরে প্রেতপুরীতে গিয়েও শিরোপার লড়াই থেকে নিস্তার পাননি এস্কিলাস ও ইউরিপিদিস। নিজেদের মধ্যে কে বড় তা নির্ণয়ের জন্যে নরকেই কবিতা-লড়াই শুরু করেন তারা। ইউরিপিদিস কোনো মন্ময় বিচারে বিশ্বাস করেন না, তিনি সবকিছু বস্তুগতভাবে মেপে দেখার পক্ষপাতি। তাই তিনি প্লুতোর চাকরদের আদেশ দেন দাঁড়িপাল্লা, রুলার ইত্যাদি নিয়ে আসতে, যেন বস্তুগতভাবে কবিতার মান মাপা যায়।
এই মিডিয়া বুমের তাৎপর্য এমনকি পুঁজিবাদের কট্টর অনুসারীর পক্ষেও ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তবে লেখক-কবিদের খাত বদল করেছে এর ফলে। তারা যতটা না লেখক-কবি, তার চাইতে বেশি এইসব মিডিয়ার পাতা ভরানোর ঠিকাদার; কলাম, নাটক, মেগা সিরিয়াল অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট ও গান, টকশো’র কনটেন্ট সাপ্লায়ার।
এই উপমহাদেশে কবির লড়াই বেশ পুরনো ব্যাপার। বিক্রমাদিত্য নাকি কালিদাস ও দণ্ডীর শক্তি পরীক্ষার জন্য একটি কাঠের টুকরা দেখিয়ে বস্তুটির বিবরণ দিতে বলেন। দণ্ডী উত্তরে রচনা করেন ‘শুষ্কং কাষ্ঠং তিষ্ঠত্যগ্রে’ পদ, আর কালিদাস রচনা করেন ‘নীরসঃ তরুবরঃ পুরতো ভাতি’। শিরোপা পেয়েছিলেন কালিদাস।
বাংলা ভাষায় শিরোপা কলহ চলছে যুগে যুগে। রবীন্দ্রনাথ যখন সর্বত্র নন্দিত হচ্ছেলেন, তখন দেখা দিয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো অনেক অশুভকামী। উনিশ শতকেই কালীপ্রসন্ন বিদ্যাবিনোদ রবীন্দ্রনাথের অভিধা দিয়েছিলেন ‘ঠাকুরবাড়ির পায়রা কবি’। নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে শনিবারের চিঠির আক্রমণ স্মরণীয়। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে যেতে অশুভকামীদের প্রচারে আত্মহত্যা করেছিলেন কবি মায়াকোভস্কি।
পঞ্চাশের দশকে এদেশে শিরোপার লড়াইয়ে ছিলেন জসীম উদদীন-ফররুখ আহমদ-সৈয়দ আলী আহসান-আহসান হাবীব। ষাটের দশকে মাথা তোলেন তরুণ কবি শামসুর রেহমান। প্রতিভা আছে তার, শিরোপাটি তার মাথায় স্থান নেয়। এরপর শুরু হয় ওটি নিয়ে টানটানি। তরুণেরা বড় শিরোপাটিকে লাভের জন্য ব্যগ্র হন, জন্মে কোন্দল। ষাটের দশকের শুরুর কবিরা শহীদ কাদরীকে নিয়ে প্রচারদক্ষ ইমেজ তৈরি করতে থাকেন আপ্রাণ। পরে শামসুর রেহমানকে হঠাতে ব্যর্থ হয়ে ষাটের শেষদিকের লড়াকু কবিরা দশকী শিরোনামের দিকে হাত দেন। ফলে অদৃশ্য রক্তারক্তি হয় প্রচুর। যারা শক্তিকেন্দ্রে অবস্থিত নন, অর্থাৎ পত্রপত্রিকা হাতে নেই যাদের, সংঘবদ্ধ দল নেই, তাদের মূর্তি ম্লান থেকে ম্লানতর হতে থাকে, যাদের আছে তারা হন উজ্জ্বলতর।’’ (সূত্র: আমার নতুন জন্ম: হুমায়ুন আজাদ, ২০০৫)
কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার জানাচ্ছেন, ‘খুব দ্রুত বারকয়েক খাত বদল করেছে আমাদের মূল ধারার সাহিত্য। ১৯৪৭ -এর ভারত বিভক্তির পরে পাক-আরবপন্থী লেখক-কবি-বুদ্ধিজীবীদের কোণঠাসা করতে পারা এবং মূলধারা থেকে দূর করে দিতে পারা ছিল সেক্যুলার সাহিত্যিকদের একটা বড় সফলতা। সৃজনপ্রতিভা অবশ্যই বড় ভূমিকা পালন করেছে এক্ষেত্রে, তবে তার সঙ্গে ছিল ভাষা আন্দোলনের মতো যুগান্তকারী ঘটনার সংযোগ। এছাড়া বিশ্ব-পরিস্থিতিও ছিল প্রগতিশীল আন্দোলনের অনুকূলে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ এবং সেই যুদ্ধে বিজয় অর্জন এই সাহিত্যে আরও গতি আনে।
নব্বইয়ের দশক শুরু হলো অধিকাংশেরই হতভম্ব হয়ে যাওযার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের কোনো বাম সংগঠন এবং তাত্ত্বিক আগেই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন যদিও, তবু সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপের পতনের পরে এই দেশে বামদলগুলোতে ভাঙনের যে হিড়িক পড়ে, সেই হিড়িকে কবি-সাহিত্যিকরা যোগ দিয়েছিলেন ব্যাপক সংখ্যায়। যেখানে প্রয়োজন ছিল ব্যাপক পর্যালোচনার, সেই সময়টাতে সবাই যেন আক্রান্ত হলেন নিষ্ক্রিয়তায়। দলে দলে কবি-সাহিত্যিকরা ভিড়ে গেলেন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বলয়ে। উৎপাদন করতে শুরু করলেন অভ্যাসজনিত গল্প-কবিতা-উপন্যাস, যা আসলে শিল্প বা সমাজ—কোনোটাকেই ধারণ করতে পারেনি। একইসঙ্গে ঘটলো মিডিয়া বুম। অসংখ্য পত্রিকা এবং অসংখ্য টেলিভিশন। এই মিডিয়া বুমের তাৎপর্য এমনকি পুঁজিবাদের কট্টর অনুসারীর পক্ষেও ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তবে লেখক-কবিদের খাত বদল করেছে এর ফলে। তারা যতটা না লেখক-কবি, তার চাইতে বেশি এইসব মিডিয়ার পাতা ভরানোর ঠিকাদার; কলাম, নাটক, মেগা সিরিয়াল অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট ও গান, টকশো’র কনটেন্ট সাপ্লায়ার।
এই লেখকরা দলীয় রাজনীতিবিদদের মতোই নিজেদের পোষক দলের চরম গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও মুখে-কলমে কুলপি এঁটে থাকতে বাধ্য। জাতির প্রয়োজনে কোনো আন্দোলনে যোগদান করা তো দূরের কথা, মৌখিক সহানুভূতি প্রকাশের সাহসও এঁরা রাখেন না।…মহৎ সাহিত্য তো দূরের কথা, এঁদের প্রতিটি রচনা এবং বক্তৃতা প্রমাণ করে যে, এঁরা ফুরিয়ে যাওয়া মানুষ, স্বেচ্ছায় পথ হারিয়ে ফেলা মানুষ, নিজেকে বিক্রি করে দেওয়া মানুষ।’ (সূত্র:‘রূপান্তরের সংস্কৃতি: আমাদের সাহিত্যিক প্রবণতাসমূহ’,নতুন দিগন্ত,২০১৪)
যদ্দুর জানা যায়, গুন্টার গ্রাস নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ ব্যয় করেছেন ‘সিন্টি’ ও ‘রম’ নামে জিপসি মানুষদের সেবায়। উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত এই ঔপন্যাসিক। সেই সময় তাকে ঢাকার সড়কে ঘুরতে দেখেছিলাম আমি, তা আরেক পর্বে বলা যাবে।
দেশ-বিদেশে কবি-সাহিত্যিকদের মাঝেও যে হিংসা-বিদ্বেষ লুকিয়ে থাকে এবং তা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তার বড় উদাহরণ নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গুন্টার গ্রাস। কাহিনিটা একটু বড় হতে পারে এবং ধৈর্যচ্যুতির কারণও হতে পারে, তবুও বলি—গুন্টার গ্রাসের জন্ম ১৯২৭ সালে পোল্যান্ডের বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী ডানজিগ শহরে। তার ভাষা জার্মান। ১৯৫৯ সালে জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘ডি ব্লেখট্রোমেল’ বা ‘দ্য টিন ড্রাম’। এর চল্লিশ বছর পর ১৯৯৯ সালে ‘দ্য টিন ড্রামের’ জন্য নোবেল পদক লাভ করেন গুন্টার গ্রাস। এক খ্যাতিমান সাহিত্য সমালোচকের হিংসার শিকার হয়েছিলেন তিনি।
ঢাকায় ‘দ্য টিন ড্রামের’ বাংলা অনুবাদ করেছেন প্রমিত হোসেন। আর প্রকাশ করেছে ‘অন্যধারা’ প্রকাশনীর মালিক স্নেহের মনির হোসেন পিন্টু। অনুবাদক বইটির শুরুতে একটি ভূমিকা লিখেছেন। সেখানে তিনি চমৎকার ভাষায় বর্ণনা করেছেন গুন্টার গ্রাসের দেরিতে নোবেল পদক পাওয়ার নেপথ্য কাহিনি। শুনুন প্রমিত হোসেনের কাছে, ‘মহাকাব্যিক এই উপন্যাসে যুদ্ধোত্তর জার্মানিকে ভাষিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের ভস্মস্তূপ থেকে নবজন্মের প্রেরণায় জেগে উঠতে উদ্ধুদ্ধ করে। গোটা জার্মান সাহিত্যের ভিত নাড়িয়ে দেয় উপন্যাসটি। এমনকি সমাজেরও। এই উপন্যাসের পরতে পরতে রয়েছে যুদ্ধপরবর্তী জার্মান সমাজের ভয়াবহ চিত্র। স্মৃতি কথাও তাতে দৃশ্য মান।’
‘‘…বাংলা ভাষায় একটি প্রবচণে বলা হয়—‘ভাগ্যে শিকে ছেঁড়া’। শেষ পর্যন্ত সেই ‘শিকে ছেঁড়ার’ ঘটনা ঘটলো গুন্টার গ্রাসের ভাগ্যে। শতাব্দীর শেষ নোবেল পুরস্কারের তিলকটি তার কপালে এঁকে দিলো সুইডিস অ্যাকাডেমি।…এর আগে সাত বার গ্রাসের এ পুরস্কারপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। গত সাত বছরে যে ক’জন সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কার পাবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল, গ্রাস ছিলেন তার মধ্যে প্রথম সারিতে। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা কোনোবারই পূরণ হয়নি।…অবশেষে গ্রাসের ভাগ্যে ‘শিকে ছিঁড়লো ১৯৯৯ সালে, যখন তার বয়স ৭২ বছর। গ্রাস হচ্ছেন জার্মান লেককদের মধ্যে সপ্তম ব্যক্তি, যিনি বিশ্ব সাহিত্যে সম্মানীয় এ পুরস্কারে ভূষিত হলেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এত চূড়ান্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও গুন্টার গ্রাসকে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো কেন?… মূলত এর পেছনে হাত ছিল জার্মানির সবচেয়ে প্রভাবশালী ‘লিটারারি প্রফেট’ হিসেবে খ্যাত, সাহিত্য সমালোচক এবং একদা গ্রাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মার্সেল রেইখ রানিস্কির।… এক সময় তাদের দু’জনের সম্পর্ক ছিল হরিহর আত্মার। উভয়ে মিলে ‘গ্রুপ ৪৭’ নামে একটি সাহিত্য সংঘ গড়ে তুলেছিলেন।’’
‘‘… রানিস্কি এবং গ্রাস দু’জনেই ছিলেন পোল্যান্ডের ডানজিগের বাসিন্দা। পরবর্তী সময়ে তারা জার্মান নাগরিক। তাদের মাতৃভাষা জার্মান। এই হরিহর আত্মার বন্ধুত্বে চির ধরে ষাটের দশকে। দুই বন্ধু পরিণত হন চরম শক্রুতে। এর পেছনে ঠিক কী কারণ ছিল তা জানা যায়নি। তবে রেইখ রানিস্কির আত্মপরায়নতার ব্যাপারটি যুক্ত থাকা স্বাভাবিক। গ্রাস শ্লাঘা করতে পারেন নিজের কাজ নিয়ে, যদিও তা করেন না, কিন্তু রেইখ রানিস্কির সে সুযোগ নেই। তথাপি তিনি জার্মানির সবচেয়ে প্রভাবশালী ‘লিটারারি প্রফেট’ হিসেবে খ্যাত। কয়েক বছর আগে রেইখ রানিস্কি টেলিভিশনে জনপ্রিয় সাহিত্য অনুষ্ঠানে একটি অদ্ভুত কাণ্ড ঘটান। গ্রাসের ‘Ein weites Feld বা ‘A Board Field’ নামের উপন্যাসটির মলাট ও পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন এই বলে যে, অপাঠ্য লেখকের অপাঠ্য বই টিভির এই অনুষ্ঠানে আলোচনারই যোগ্য নয়। বলা বাহুল্য, রানিস্কির এই অশোভন আচরণে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারটি প্রকটভাবে সর্বসাধারণের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে যায়। নোবেল পুরস্কার কমিটি স্বাভাবিক কারণেই বিব্রতকর অবস্থায় ছিল তাকে নিয়ে। রেইখ রানিস্কি নোবেল কমিটির স্থায়ী সদস্যের বাইরে থেকেও ছিলেন ‘পলিসি মেকার’। এটা সম্ভব হয়েছিল কমিটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সুবাদে। ওই বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা-সংকোচ করেননি তিনি। বিশেষ করে তা কাজে লাগিয়েছিলেন যাতে কোনোভাবেই গ্রাস নোবেল পুরস্কার না পান, সেই ব্যাপারে। কেবল গত বছর (১৯৯৯) অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।’’
‘… নোবেল পুরস্কার কমিটির নতুন প্রেসিডেন্ট ও নতুন সেক্রেটারি রেইখ রানিস্কির হস্তক্ষেপের বিষয়টি অনভিপ্রেত হিসেবে বিবেচনা করেন। এবার নোবেল সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের ব্যাপারে রানিস্কিকে নাক গলাতে দেননি তারা। এতদিন গ্রাসকে নোবেল পুরস্কার না দেওয়ায় নিজেদের লজ্জিত হওয়ার কথাও তারা স্বীকার করেছেন।’
যদ্দুর জানা যায়, গুন্টার গ্রাস নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ ব্যয় করেছেন ‘সিন্টি’ ও ‘রম’ নামে জিপসি মানুষদের সেবায়। উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন বিশ্বখ্যাত এই ঔপন্যাসিক। সেই সময় তাকে ঢাকার সড়কে ঘুরতে দেখেছিলাম আমি, তা আরেক পর্বে বলা যাবে।
বার্নার্ড শ নোবেল পদক পেয়েছিলেন ১৯২৫ সালে। দেখা গেলো, নোবেল প্রাপ্তির ঘোষণার পর প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক অর্থ সাহায্য চেয়ে তার কাছে চিঠি লিখেছেন। কিন্তু শ পুরস্কারের টাকা নিজে না নিয়ে তা দিয়ে ‘সুইডিস লিটারারি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনটি সুইডিস সাহিত্যের ক্ল্যাসিক বই ইংরেজিতে অনুবাদ করে। পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বার্নার্ড শ বলেছিলেন,‘খ্যাতি আর প্রতিভা আলাদা জিনিস। নোবেল পুরস্কার দিয়ে প্রতিভার সম্মান হয় না।’
(চলবে)