শুরুতেই লেখক-গবেষক আবদুশ শাকুরকে অনুসঙ্গী করেই আলোচনার সূত্রপাত করা যাক। সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’র ভূমিকাংশে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘একসময় ঠাট্টা করে বলা হতো, যে লেখা পড়লে কিছুই মানে বোঝা যায় না, তারই নাম আধুনিক কবিতা। সেই রকমই, একসময় এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল, যখন যে লেখা পড়তে ইচ্ছেই করে না তারই নাম প্রবন্ধ।’
ঠাট্টা করে বলা হলেও প্রবন্ধ সাহিত্য সম্পর্কে তার এমন তীর্যক মন্তব্যের পেছনের হেতুগুলোর এখনো খুব বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন যে ঘটেনি, তা হয়তো নিশ্চয় করে বলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে! তার কারণ বোধ হয় এই যে, প্রমাণ আমাদের হাতের নাগালেই! দৃষ্টি ফেরালেই লক্ষ লক্ষ ফিকশন পাঠক খুঁজে পাওয়া গেলেও ননফিকশন বিশেষত প্রবন্ধের পাঠক হাতেগোনা; নগণ্য। আর এর অন্যতম কারণ বোধ হয় এই যে, প্রবন্ধে লেখক রস নিংড়ানো এমন এক গদ্যভঙ্গি ব্যবহার করেন, যেখানে রস-সন্ধানী পাঠক শুরুতেই ভুলে যে আনন্দরস-সায়রে সাঁতার কাটবেন বলে আর্দ্র মানসিকতাকে সঙ্গী করে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন; গোড়ালি ভেজার আগেই তার বোঝার আর অন্ত থাকে না, এ যে মরীচিকা!
দূর ভুবনের মরুমায়াপথ মাড়িয়ে দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রা শেষে পাঠক যখন ভর অবহেলায় সুড়ঙ্গমুখে আলোর গুহাপথের সন্ধান পেয়ে ধীর পদবিক্ষেপে সরল সরণী ধরে মৃদু-মন্থর গতিতে এগিয়ে চলেন, তখন যেন ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’তে চোখে ধাঁধা ধরে যায়। আচম্বিতে ‘আলোকের ঝরনাধারায়’পাঠক সচকিত হয়ে ওঠেন। মন বলে, এমন তো আগে কখনো হয়নি। ফারুক সুমনের প্রবন্ধ ভুবন এমনই আনন্দলোকের বৌদ্ধিক-যৌক্তিক মুক্তধারা!
গবেষক ফারুক সুমন এক্ষেত্রে সব ভাবালুতার ঊর্ধ্বে উঠে সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে আল মাহমুদকে একজন কবি হিসেবে মূল্যায়নের জন্যে সংশ্লিষ্ট সবার উদার মনোভঙ্গি লালনের আহ্বান আছে তার ‘বিতর্কের বৃত্তে শামসুর রাহমান-আল মাহমুদ’ প্রবন্ধে।
ফারুক সুমনের প্রবন্ধ মানেই সহজ অথচ এক ঐন্দ্রজালিক ভাষিক অরণ্যে যেন মায়ামৃগের পিছু নেওয়া; যার পেছনে ছুটতে ছুটতে পাঠক কখন যে ক্লান্তির রেশ ফেলে আনন্দলোকে প্রবেশ করেন, টেরই পান না! এমনই ভাষিক বৈভবে নতুনতর গদ্যভঙ্গির বাচনিক ঐশ্বর্যমণ্ডিত তার প্রবন্ধজগত যা এতদিনকার সংস্কৃতবাহুল্যে ক্লিষে হয়ে আসা ক্লান্তিকর বৌদ্ধিক প্রহেলিকাময় ভুবন থেকে বের হয়ে এসে পাঠককে সানন্দে প্রবেশ করিয়ে নেয় সরল অথচ যুক্তির প্রকৃষ্ট বন্ধনে।
ফারুক সুমন একজন বহুমাত্রিক লেখক; কবি ও প্রাবন্ধিক। জন্ম ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের পহেলা তারিখ, চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষে এম.ফিল গবেষণা সম্পন্ন করেন ২০১৪ সালে। অ্যাকাডেমিক কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন ‘নিপ্পন ফাউন্ডেশন অব জাপান’ (২০০৬) শিক্ষাবৃত্তি। ২০১৯ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘সার্ক সাহিত্য সম্মেলন’ ও ‘নেপাল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন’-এ যোগ দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে ভূমিকা রেখেছেন। যৌথ সম্পাদনায় যুক্ত হয়েছেন লিটন ম্যাগাজিন ‘অক্ষৌহিণী’তে। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন অনলাইন বেইজড ‘পোয়েম ভেইন বাংলা’য়।
লেখালেখির স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ‘রউফিয়ান রিদম সাহিত্য সম্মাননা-২০০৬’, ‘উচ্ছ্বাস প্রহর সাহিত্য সম্মাননা-২০১৯’, ‘সমতটের কাগজ লেখক সমামাননা-২০২০’ ও ‘দোনাগাজী পদক-২০২১’।
প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গবেষণামূলক ‘শামসুর রাহমানের কবিতা: নগর চেতনা ও নাগরিক অনুসঙ্গ’, প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে ‘শিল্পের করতালি’, ‘শিল্পের সারগাম’, ‘শামসুর রাহমানের কাব্যস্বর‘ আর লিখেছেন ‘ভ্রমণে অবাক অবগাহন’ নামে ভ্রমণগদ্য। এছাড়া, কবিতায় নিজস্ব কণ্ঠস্বর শুনিয়ে বাঙালি পাঠককে করেছেন মোহিত। তার ছাপার অক্ষরে ‘অচঞ্চল জলের ভিতর নিরাকার বসে’ ও ‘আঙুলের ডগায় সূর্যোদয়’ কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও ব্যতিক্রমী প্রেয়াস হিসেবে ‘বিচঞ্চল বৃষ্টিবিহার’ নামে অডিও কাব্যগ্রন্থও প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে বর্তমানে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ’(রাইফেলস কলেজ, বিজিবি সদর, পিলখানা, ঢাকা)-এ বাংলাবিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন।
কবিতা, গল্পসহ সাহিত্যশিল্পের নানাবিধ শাখায় ফারুক সুমনের পদচারণা থাকলেও একজন প্রবন্ধশিল্পী হিসেবে পাদপ্রদীপের আলোয় তার মুখশ্রী প্রদর্শনই এ লেখার উদ্দিষ্ট লক্ষ্য। ‘শিল্পের করতালি’ ফারুক সুমনের প্রবন্ধের বই। সাকুল্যে দশটি প্রবন্ধ এ বইয়ে গ্রন্থভুক্ত হয়েছে।
আগেই বলেছি, প্রচলিত গদ্যরীতির বাইরে তিনি এ গ্রন্থে সহজ-সরল প্রাঞ্জল সাবলীল গদ্যরীতি অনুসরণ করেছেন, যা প্রবন্ধপাঠ সম্পর্কে পাঠকের ভীতিকর ধারণার অপনোদন করে। শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো যে, ‘শিল্পের করতালি’ প্রথাবদ্ধ কোনো প্রবন্ধের বই নয়, বিভিন্ন সময়ে লেখকের ব্যক্তিগত পাঠাভিজ্ঞাতার ভিত্তিতে তার একান্ত ব্যক্তিগত মূল্যায়ন এখানে তুলে ধরেছেন। তাই স্বাভাবিক কারণেই গ্রন্থটি গুরুগম্ভীর তত্ত্বের কচকচানি থেকে সমূহ দূরত্ব রক্ষা করে চলেছে।
অনেকটা সাহিত্য-সমালোচনার মতোই তার প্রবন্ধগুলো। ‘রবীন্দ্রনাথ: সমগ্রতাস্পর্শী শিল্পপ্রতিভা’এই গ্রন্থের প্রারম্ভিক প্রবন্ধ। বাংলা সাহিত্যের এ নক্ষত্রতুল্য প্রবাদপ্রতিম সব্যসাচী সাহিত্যপুরুষের সমগ্র সাহিত্যজীবনের পর্যালোচনা লেখক ফারুক সুমনের অভীষ্ট লক্ষ্য নয়, বরং প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের মানব ভাবনা বিশেষত বিশাল ভূভারতের প্রধান দুটি জাতি; হিন্দু ও মুসলিম সম্পর্কে কী ধারণা তিনি পোষণ করতেন, একজন জমিদার হিসেবে তার প্রজাদের প্রতিই বা কবি রবীন্দ্রনাথের কী ধরনের কল্যাণ তৎপরতা সক্রিয় ছিল; এমনতর গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে প্রাবন্ধিক তার সন্ধানী দৃষ্টিপ্রদীপের আলোকানুসন্ধানে কোন সত্যকে খুজে পেয়েছেন; সেসব কিরণমালার সঙ্গে পাঠককে পরিচিত করানোই লেখকের অন্বিষ্ট অভীপ্সা বলে মনে হয়েছে। পাঠকের কৌতূহলী তৃষ্ণা নিবারণে প্রয়োজন অনুযায়ী তুলে দিয়েছেন প্রাসঙ্গিক প্রামাণ্য রচনাংশ।
যেমন—‘লিয়েফ তলোস্তয়: মানব-দরদি মহত্তম শিল্পী’ প্রবন্ধে বক্তব্যের অনুকূলে প্রাবন্ধিক স্ত্রী সোনিয়াকে লেখা তলোস্তয়ের দুর্লভ পত্র সম্পর্কে আমাদেরকে জ্ঞাত করিয়ে অজানাকে জানার নির্মল আনন্দধারায় সিক্ত করেছেন। সদ্য প্রয়াত কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে আমাদের কৌতূহলের অন্ত নেই।এই কৌতূহল যত না ‘কবি আল মাহমুদ’ সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি ‘ব্যক্তি আল মাহমুদ’ সম্পর্কে। আরও আছে, শামসুর রাহমান বড় কবি, না আল মাহমুদ বড় কবি? এনিয়ে দুজন কবিরই ভক্তকুলের মধ্যে বিস্তর তর্কাতর্কি। গবেষক ফারুক সুমন এক্ষেত্রে সব ভাবালুতার ঊর্ধ্বে উঠে সম্পূর্ণ নির্মোহভাবে আল মাহমুদকে একজন কবি হিসেবে মূল্যায়নের জন্যে সংশ্লিষ্ট সবার উদার মনোভঙ্গি লালনের আহ্বান আছে তার ‘বিতর্কের বৃত্তে শামসুর রাহমান-আল মাহমুদ’ প্রবন্ধে।
‘দশক ধারণা ও শূন্য দশকের কবিতা’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিকের মূল আরাধ্য যে কবিতা, তা বুঝতে কষ্ট হয় না। কেননা এ প্রবন্ধে ফারুক সুমনকে সবচেয়ে বেশি সপ্রতিভ মনে হয়েছে। সে যাই হোক, শূন্য দশকের কবিতা সম্পর্কে না-ওয়াকিফ পাঠককুলের সামনে তিনি খুলে ধরেছেন নতুন কবিদের কাব্যের অন্তরজগত-বহির্জগত। শূন্য দশকের কবিতার গতি-প্রকৃতি যেমন সংক্ষিপ্তভাবে নির্ণিত হয়েছে তেমনি এ দশকের কবিদের আরাধ্য শিল্প প্রকরণকৌশল সম্পর্কেও কবি ফারুক সুমন পাঠককে সম্যক অবগত করেছেন।পাঠক জেনে ফেলে, Best words in the best order. কোলরিজের এই আপ্তবাক্যকে এ দশকের অনেক কবিই মান্য করেছেন। তাই তাদের কবিতা হয়ে উঠেছে অনেক সময় প্রথাবদ্ধ ছন্দাচ্ছুত!
সর্বত্রই মুগ্ধতার মায়াজাল বিস্তৃত করে জিজ্ঞাসু চিন্তনদক্ষতা ও ভাষাবৈভব। বাকচাতুর্য পাঠককে হয়তো সাময়িক বিভ্রান্ত করতে পারে; কিন্তু শাণিত যুক্তির ঐন্দ্রজালিক মায়া থেকে বুদ্ধিমান পাঠক কী করে মুক্ত হবেন?
শিল্পরসিক পাঠককুলের উদ্দেশে ‘শিল্পের করতালি’ গ্রন্থের অবগুন্ঠিত অঞ্চল কিঞ্চিৎ বিস্রস্ত হোক—‘জয়নুল আবেদীন: অমর চিত্রকর’ প্রবন্ধে যুগপৎ শিল্পী জয়নুল ও তার চিত্রকর্ম সম্পর্কে আলোচনার ধারাবাহিকতায় ‘মনপুরা ৭০’ চিত্রকর্ম বিশ্লেষণে ফারুক সুমনের গদ্যভাষা—‘সাদা ক্যানভাসে কালো ও মোমের আঁচড়ে চিত্রটি শৈল্পিক সীমানা ছুঁয়েছে। অগণিত লাশের সারি,বাঙালির পরাজয়ের অসহায় মুখ,মাটির সঙ্গে লীন হয়ে গেছে;কিন্তু ছবিটির শেষ প্রান্তে এসে জয়নুল স্থাপন করেছেন আশা ও স্বপ্নের প্রতীক এক বলবান পুরুষকে।’ প্রবন্ধের ভাষাও যে পাঠককে চুম্বকস্পর্শের মতো টেনে নিতে পারে এটা তার একটি নমুনামাত্র।
প্রবন্ধের প্রথম বই হিসেবে ‘শিল্পের করতালি’ সম্বন্ধে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না যে, ‘শিল্পের করতালি’ গ্রন্থটি সম্ভবত পণ্ডিতকুলের জন্যে রচিত হয়নি; বরং সাধারণ অনুসন্ধিৎসু পাঠককুলের জানার আগ্রহপালকে মৃদু শিহরণ জাগিয়ে ত্বরিত কৌতূহল নিবৃত্তি সড়কে তুলে দেওয়ায় প্রাবন্ধিকের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য!
লেখককের লেখকসত্তাও ক্রমশ বিকশিত হয় পর্যবেক্ষণশীল দৃষ্টির নিবিড়তায়, জীবন ও জগতকে পূর্বতন বীক্ষণদ্রষ্টার শ্রেয়তর পরিচর্যায়, পঠন-পাঠন-অধ্যয়ন-গবেষণায় অর্জিত অভিজ্ঞতার সমগ্রতাস্পর্শী বিশ্লেষণদক্ষতায়। তার সপ্রমাণ নজির ফারুক সুমনের অগ্রন্থিত প্রবন্ধমালা। ‘শিল্পের সারগাম’ নামে যে গ্রন্থটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশের অপেক্ষার প্রহর গুনছে সেখানে ফারুক সুমন যে পুরোদস্তুর একজন প্রবন্ধশিল্পী , তার সপ্রমাণ চিহ্নিত হয়ে আছে তার শৈল্পিক গদ্যভাষায়! চিন্তার গভীরতা, প্রকাশের সৌকর্য তাকে প্রবন্ধশিল্পী হিসেবে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
‘শিল্পদর্শন ও সমাজ: উপযোগিতার নিরিখে’ প্রবন্ধে বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের মীমাংসা করার প্রয়াস পেয়েছেন তিনি। শিল্প কেবল আনন্দনিরপেক্ষ না কি সমাজনিরপেক্ষ সেই বহুল বিতর্কিত বিষয়ে সাহিত্যে সৌন্দর্যবাদ ও সমাজ-মানুষ হিতৈষণা তত্ত্বের তার্কিক উপস্থাপনাগুণ পাঠককে চুম্বকস্পর্শের মতো ধরে রাখে! প্রবন্ধের শুরুর দিকে শিল্পদর্শন সম্পর্কিত লেখকের নিজস্ব মত ব্যক্ত করে বলেন, ‘কোনো লেখায় শিল্পীর ব্যক্তিগত বোধ ও বিশ্বাসের সম্মিলিত রূপই শিল্পদর্শন।’ এবং সেই ‘শিল্পদর্শন’ যে ‘কখনো কখনো শিল্পীর কাছে ধর্মদর্শনের মতোই নিবিড় এবং কট্টররূপে বিশ্বাসের জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয়’, সেই সত্য স্বীকার করে নিয়ে এবং শিল্পকলা সম্পর্কে ইতোপূর্বে তোলা রথী-মহারথীদের বিতর্কগুলো উপস্থাপনপূর্বক লেখক নিজের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে ভুলে যান না যে, ‘শিল্পে আনন্দ ও সৌন্দর্য আরাধনা মুখ্য’ উদ্দেশ্য হলেও ‘শিল্পদর্শন ও সমাজ উপযোগিতার নিরিখে কখনোই বিচ্ছিন্ন নয়’।
উইকিপিডিয়া থেকে শিল্পের সংজ্ঞার্থ নির্ণয়পূর্বক প্রাবন্ধিক আত্মজিজ্ঞাসাসূত্রে এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন যে, ‘একজন শিল্পী দৃশ্যমান প্রকৃতির অনুকরণে যে নন্দনভুবন উন্মোচন করেন,সেটা সমাজ কিংবা বহির্জগত থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হতে পারে কি না।’ এখানে এসেই লেখক মনে করেন শিল্পদর্শন ও সমাজ পরস্পর নিকটবর্তী হয়ে পড়ে এবং এভাবে প্রাবন্ধিক পুরনো বিতর্কবৃত্তে বার বার আবর্তন শেষে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তার সাফ জবাব বোধ হয় এরকম যে, সাহিত্যমাত্রই শিল্পানুবর্তী এবং মহৎ শিল্পমাত্রই সমাজানুবর্তী। অর্থাৎ, শিল্পদর্শন ও সমাজ পরিপূরক একটি ধারণা।
‘শিল্পবোধ ও শিল্পের শক্তি’, ‘দুঃখই তবে শিল্পোদয়ের দেশ’, ‘শিল্পমন ও শিল্পের সীমানা’- এসব প্রবন্ধ পাঠ করে ‘শিল্পানুভবের অন্দরমহল’ পরিভ্রমণ শেষে পাঠক সানন্দে বহন করতে রাজি হয়ে যান ‘শিল্পের অলৌকিক আনন্দভার’! সর্বত্রই মুগ্ধতার মায়াজাল বিস্তৃত করে জিজ্ঞাসু চিন্তনদক্ষতা ও ভাষাবৈভব। বাকচাতুর্য পাঠককে হয়তো সাময়িক বিভ্রান্ত করতে পারে; কিন্তু শাণিত যুক্তির ঐন্দ্রজালিক মায়া থেকে বুদ্ধিমান পাঠক কী করে মুক্ত হবেন?
ফারুক সুমনকে পাঠ করে তাই পাঠকের মনে হবে, সাহিত্যের মায়াকাননে তার প্রবন্ধাবলি কাব্যগন্ধী আনন্দফুল!
আরও পড়ুন:উপন্যাস: জনপ্রিয়তার গতি-প্রকৃতি ॥ রকিবুল হাসান