(পর্ব-১৩)
কালিম্পংয়ের পাইন ভিউ ক্যাকটাস নার্সারি
ত্রিবেণী থেকে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছিল না। বৃষ্টির কারণে থাকাও যাচ্ছিল না। মাথা ভিজে গিয়েছিল বৃষ্টির জলে। ঠাণ্ডাও ছিলো। ইচ্ছে ছিল এমন রোমান্টিক পয়েন্টে আরও কিছু সময় থাকি। কিন্তু কালিম্পং যেতে তখনো অনেকটা পথ বাকি।
মেঘমালা আমাদের চারপাশ ঘিরে ছিল। জানলা দিয়ে হাত বাড়াতেই নরম ভেজা মেঘ ভিজিয়ে দিচ্ছিল। বর্ষাকালে বান্দরবানের নীলগিরি গিয়ে একবার এ রকম মেঘ দেখেছিলাম। মেঘমালা দলবেঁধে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছিল। পাহাড়ের মাথায় নীলগিরি রেস্ট হাউজে যেতেই মেঘের দল এসে ঢেকে দিয়েছিল সবকিছু। আমার খুব প্রিয় একটা গান ‘মেঘ এসে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়..। গোলাম আলীর গাওয়া। লিখেছিলেন বাংলাদেশের গীতিকার আসাফউদ্দৌলা। ইচ্ছে ছিল ওই সময় গানটি শোনার।
তিস্তা আর রাঙগিতের স্রোত মনের নদে ধারণ করে বসলাম জিপে। ঢালু রাস্তা ধরে নিচের দিকে নামছিলাম। বাংলাদেশে বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে বগা লেক পর্যন্ত নতুন একটি রাস্তা হচ্ছিল। কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম সেখানে। কিন্তু রাস্তাগুলো একেবারেই অবৈজ্ঞানিক। প্রায় সব ছড়া বা খালে ছোট্ট একটা কালভার্ট। তার দুপাশে খাড়া পাহাড়। নামতে হলে অনেকটা উপুড় হয়ে নামতে হয়। উঠতে হতো চিৎ হয়ে। ওঠা-নামার সময় একটু এদিক সেদিক হলেই পগারপার। সঠিক প্রকৌশল বিদ্যার প্রয়োগ সেখানে নেই। অথচ কালিম্পংয়ে দেখছি এর ঠিক উল্টো। এমনকি দার্জিলিংয়ের চেয়েও অনেক বেশি পরিকল্পিত মনে হলো কালিম্পংকে। দার্জিলিংয়ের অনেক রাস্তা বিপজ্জনক খাড়া। যদিও তা বান্দরবানের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। আর কালিম্পং একেবারেই নিরাপদ। পাহাড়ি রাস্তা হলেও নেপালের পোখারা থেকে কাঠমান্ডু এই দীর্ঘ পথটিও অনেকটা নিরাপদ। এরকম নিরাপদ পথ তৈরি করতে পারলে আমাদের বান্দরবান অনেক বেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে পারবে।
নামছিলাম সুষম ঢাল বেয়ে। তিস্তার পশ্চিম পাড়ে পাহাড় থেকে নামার সময় একটা আন্ডারপাস পার হলাম। সেটি এত চমৎকারভাবে পাহাড়কে ঘিরে প্যাঁচ দিয়ে করা হয়েছে যে, ওপর থেকে নিচে নামতে কোনো সমস্যা হয়নি। বরং বাঁকটি দারুণ উপভোগ্য মনে হচ্ছিল। ব্রিজের ওপর দিয়ে তিস্তা পার হলাম। চলে এলাম পূর্ব পাড়ে। এই তিস্তা নদীই সিকিম এবং পশ্চিবঙ্গকে আলাদা করেছে। তিস্তার উৎপত্তি অবশ্য উত্তর সিকিমের সু লামো লেক থেকে। যদিও উৎসস্থলে জলের রঙ নীলাভ। আসলে শীতকালে সব পাহাড়ি নদীকেই নীলাভ মনে হয়। স্বচ্ছ জল এবং বনানীর নীল মিলেই এই প্রেমের রঙ।
এই অঞ্চলের পুরোটাই রেইন ফরেস্ট। রেইন ফরেস্ট শব্দটা প্রথম শুনেছিলাম জিম্বাবুয়ে গিয়ে। ভিক্টোরিয়া ফলস সংলগ্ন বনকে রেইন ফরেস্ট বলা হয়। তীব্র বেগে অনেক ওপর থেকে বিশাল জলরাশি আছড়ে পড়ছিল জাম্বেজি নদীতে। জলের চাপে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছিল। আর তা বৃষ্টি হয়ে অনবরত ঝরছিল সংলগ্ন বনভূমিতে। যে কারণে ওটাকে রেইন ফরেস্ট বলা হচ্ছিল। সাধারণ ফরেস্ট আর রেইন ফরেস্টের একটা মৌলিক পার্থক রয়েছে। রেইন ফরেস্টে প্রচুর বৃষ্টি হয়। ফলে গাছগুলো হয় অনেক বড়, উঁচু ও সতেজ পাতাবিশিষ্ট হয়। আর সাধারণ বনের গাছগুলো থাকে বেঁটে, চিকন ও পাতা বিবর্ণ।
রাঙগিত নদীর আরেকটি ধারা রাম্মান। রাম্মান নদীর উৎপত্তি দার্জিলিংয়ের সিঙ্ঘালিলা এলাকা থেকে। সব ধারা মিলিয়ে তিস্তা এগিয়ে গেছে প্রবল স্রোত নিয়ে। অনেকটা ভাটিতে বিশাল বিলের মতো জায়গা সেবক ভ্যালিতে পাহাড় ছেড়ে সমতলে মিশেছে তিস্তা।
তিস্তা পার হচ্ছিলাম। ব্রিজটির নামও তিস্তা ব্রিজ। সদ্য ঘোলা উতলা জল দেখে ভেতরটা কেমন আনচান করে উঠলো। ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামালাম ব্রিজের ওপর। দৃষ্টির আড়ালে বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে যৌবনা তিস্তা। হালকা বৃষ্টির ছাঁট মোহনীয় করে তুলেছিল মুহূর্তটি। সেলফি নিলাম। মনটা হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠলো। দুপাশে মাথার ওপরে পাহাড়, মেঘ। মাঝখানে মোহময়ী তিস্তা। গাড়িতে ওঠার তাড়া। মন বলছিল, দাঁড়া-একটু দাঁড়া। আবারও মনে পড়লো গোলাম আলীর সেই গান, ‘তোমার আমার দেখা কোনোদিন বৃষ্টিতে হবে না/ যদি হতো জ্বলে যেতো বৃষ্টিতে সবকিছু তখনি/ আগুনের ধোঁয়ায় ধোঁয়ায়? মেঘ এসে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়।’
নদী পার হয়ে হাইওয়েতে উঠলাম। এটি শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পংয়ের হাইওয়ে। গাইড পার্থ বাসনেত জানালেন, সেখান থেকে সিকিম হয়ে চায়না বর্ডার ৩০০ কিলোমিটার হবে। কালিম্পং থেকে সিকিম যাওয়ার রাস্তাটা পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিষয়। দু’পাশের সৌন্দর্য দেখতেই ব্যস্ত থাকতে হয় পর্যটকদের। সে সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না। অথবা চোখ ফেরানো গেলেও মন ফেরানো যায় না। সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হবে মনের খোলা আয়না।
দক্ষিণ-পশ্চিমে চলে গেছে কোলকাতার রাস্তা। দক্ষিন-পূবে শিলিগুড়ি। এই রাস্তা ধরেই যাওয়া যাবে সিকিম, ভুটান, মেঘালয়, আসামসহ ভারতের সেভেন সিস্টারখ্যাত সব রাজ্যে। এটি ভারতের ৩১ নম্বর হাইওয়ে।
নদীর পূর্ব পাড়ে গিয়ে কেবলি ওপরের দিকে উঠছিলাম। মনে মনে বলতে হচ্ছিল সেই একই কথা। কত উঁচু পাহাড়ে উঠছি, অথচ রাস্তাগুলো সুষম ঢালের। টিমের মুরব্বি জাহিদ হাসান বললেন, কত সুন্দর, চমৎকার রাস্তা। কোথাও কোনো ভাঙা নেই। বিপজ্জনক গর্ত নেই। তার মতে, এসব রাস্তার গার্জিয়ান আছে। তাই রেগুলার তত্ত্বাবধান করা হয়। আমাদের দেশের রাস্তার গার্জিয়ান নেই!
পাহাড়ি হাইওয়ে থেকে বাম দিকে বাঁক নিয়ে জিপ উঠতে লাগলো আরও উঁচুতে। সেটি ছিল সরু রাস্তা। পার্থ বললেন, এসে গেছি কালিম্পং। হোটেলে যেতে লাগবে মাত্র দশ মিনিট। তবে তার আগে আমরা যাব আরেকটি স্পটে। কী সেটি? ক্যাকটাস ফার্ম। ভারতজুড়ে খ্যাতি রয়েছে কালিম্পংয়ের এই ক্যাকটাস ফার্মের।
রাস্তার সঙ্গেই ওই ফার্ম। নাম ‘পাইন ভিউ নার্সারি’। এখানে পাইন কতটা জনপ্রিয় এবং সৌন্দর্যের প্রতীক যে, নার্সারির নামের সঙ্গেও পাইন জুড়ে রয়েছে। ধারণা ছিল, পাইন হচ্ছে ইউরোপের গাছ। কিন্তু ভারতে এত পাইন গাছ রয়েছে ভাবতে পারিনি। যাক, বলছিলাম ক্যাকটাস নার্সারির কথা। ক্যাকটাসতো অনেকেই চেনেন। এটি এক ধরনের উদ্ভিদ। নাম যেহেতু ক্যাকটাস, সহজেই অনুমান করা যায়, কাঁটার টাচ আছে। মানে এটি কাঁটা জাতীয় উদ্ভিদ। এর শরীরজুড়ে কেবল কাঁটা আর কাঁটা। ছোট-বড়, লম্বা-বেঁটে, চিকন-পেটুক নানা সাইজের, নানা জাতের ক্যাকটাস। জানা গেলো, বিশ্বে ১৭৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস আছে। তবে এদের জন্মস্থান হিসেবে আমেরিকাকে ধরা হয়। কানাডাতেও কিছু প্রজাতির আদি নিবাস। আফ্রিকা ও এশিয়ার শ্রীলঙ্কাতেও রয়েছে। বলতে গেলে সব দেশেই কম বেশি ক্যাকটাস মেলে।
আমার কাছে ক্যাকটাসকে আফ্রিকান উদ্ভিদ বলেই মনে হয়। কারণ চেহারা দেখেই ধারণা, এগুলো ঊষর মরু কিংবা শুষ্ক মাটির উদ্ভিদ। ও হ্যাঁ, মরুভূমির ক্যাকটাসে নাকি কাঁটা আরও ধারালো হয়। পাতাগুলো বেশি পুরু থাকে। অনেক ক্যাকটাসের বড় ফুলও হয়। এমনকি ফলও নাকি হয়! ক্যাকটাস ফল কারা খায় জানেন? কিছু খেতে পারে মানুষও! এছাড়া ছাগল, পিঁপড়া, ঈদুর, বাঁদুর এরাও ক্যাকটাস ফল খায়। এদের অভিযোজন ক্ষমতা খুব বেশি। যেকোনো পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে। এজন্য মরুভূমিতে ক্যাকটাস দিব্যি হেঁসে খেলে বেড়ে ওঠে।
ক্যাকটাস নামটি কোত্থেকে এলো জানেন? প্রাচীন গ্রিক শব্দ ককটক থেকে এর নামকরণ। ল্যাটিন শব্দ কাকটস। কুমিরের মতো দেখতে উদ্ভিদের এরকম নাম দেওয়া হয়। পরে কাঁটাজাতীয় উদ্ভিদগুলোও পেয়ে বসে নামটি। সংক্ষেপে এদের ক্যাকটি নামেও ডাকা হয়। এরা জল শোষণ করতে পারে অনেক বেশি। খুব ছোট মাছির মতো ক্যাকটাস যেমন রয়েছে; তেমনি ৬৩ ফুট উচ্চতার ক্যাকটাসও আছে!
নার্সারিটা খুব একটা বড় নয়। কিন্তু এর সংগ্রহ অবশ্যই বিশাল। মাঝখানে লম্বা লন। দুপাশে ক্যাকটাস বন! বামে গ্রিন হাউজ করা ছোট ছোট ছাউনি। ডানে বড় জায়গা নিয়ে বিশাল প্ল্যান্টেশন প্ল্যান্ট। অবশ্যই গ্রিন হাউজ ছাউনি দেওয়া।
টিমের সবাই ধাই ধাই করে সামনে চলে যাচ্ছিল। আমি সময় নিয়ে ধীরে ধীরে দেখছিলাম। এত সাইজের, এত রঙের, এত ধরনের ক্যাকটাস আছে, আমার ধারণা ছিল না। অনেকটা বিস্ময় নিয়ে দেখছিলাম! মোবাইলে ছবি তুলছিলাম। একই সময়ে কিছু ভারতীয় ট্যুরিস্ট ছিলেন কয়েকটি গ্রুপে। তারাও দেখে মজা পাচ্ছিলেন। ছবি তুলছিলেন। আমিও কম যাইনি কিছু। মোবাইলের স্পেসগুলো ভরে যাচ্ছিল।
অন্যরা চলে গেলেও জনি আর সাইফুল ছিলেন আমার সঙ্গে। জনিকে মোবাইল দিলাম আমার কিছু ছবি তুলতে। এরপর সাইফুলকে। এই সাইফুল ছেলেটাকে দেখলেই একটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে। হাজব্যান্ড দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন। উসকু খুশকু চুল, ভেঙে পড়া অবয়ব নিয়ে বেচারা ফিরে আসে বাসায়। করিংবেল টিপতেই দরজা খুলে দেয় বউ। লোকটি বলে, আমি সাইফুল, তোমার হাজব্যান্ড। কই একটু সহানুভূতি নিয়ে, আহারে উহুরে বলে স্বামীকে বরণ করবে; জিজ্ঞেস করবে এতদিন কোথায় ছিলে। তা না, সঙ্গে সঙ্গেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে বউ। নিমিষে শুনিয়ে দেয় একগাদা কথা। আমাদের কোনো খোঁজ খবর নাও না, কী খাই, না খাই। এতদিন পর আসছে আমি সাইফুল! যাও বাজার নিয়ে আসো! সে কি ঝাড়ি!
সাইফুল ছবি তুলছিলেন। আমি পেছাচ্ছিলাম। কোন পজিশনে বসলে ছবি ভালো হবে দেখছিলাম। এভাবে বসতে বসতে একবার বেখেয়ালে গোলাকার একটি ক্যাকাটাসের ওপর পশ্চাদদেশ পড়ে গেলো। আর কই যাই! বড় কয়েকটি কাঁটা ভেঙে গেলো। ছোটগুলো প্যান্ট ভেদ করে সূঁচের মতো আঘাত হানলো। ভাগ্য ভালো জিন্সের প্যান্ট পরা ছিলাম। না হলে হাসপাতালেও যেতে হতে পারতো। সাইফুল আর জনি এসে পেছন থেকে প্যান্টের কাঁটা ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। ছোট কাটাগুলো ছিল সত্যিই ব্যথাজাগানিয়া! একথা কারে কই, নীরবে সই।
চার-পাঁচটা গ্রিন হাউজ ভিজিট করলাম। একেকটাতে একেক রকম ক্যাকটাস। কালার, সাইজ, প্রজাতি ইত্যাদি নানা ভাগে ভাগ করা। চেষ্টা করলাম প্রধান প্রধানগুলোর ছবি নিতে। যারা ক্যাকটাস ভালোবাসেন, পছন্দ করেন তাদের জন্য জায়গাটি অসাধারণ। এখানে প্রবেশ করতে ২০ রুপির টিকিট লাগে। তবে আমরা প্যাকেজে গিয়েছিলাম বলে এ ধরনের স্বার্থ দেখছিলেন গাইড পার্থ। ১৫০ থেকে ৭৫০ রুপিতে ক্যাকটাস কেনার ব্যবস্থাও আছে। সত্যিকার অর্থে ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য সত্যিই একটি আনন্দদায়ক স্থান এটি। কাঁটা ভালো না বাসলেও এখানে এলে যে কেউ ক্যাকটাসের প্রেমে পড়ে যাবেন।
নার্সারির পেছন দিকটাতে কিছুটা খোলা যায়গা। গোলাকার একটা জায়গায় কিছু ফুল আর অর্কিড দেখা গেলো। ঝোপের মতো পাতাবাহারের সামনে বিশেষ করে কিছু নারীকে বেশ ভাব নিয়ে ছবি তুলতে দেখা গেলো।
সম্ভবত একটা ভোগেনবেলিয়ার কলম ছিল। চারা গাছ। কালো পলিথিনে মোড়া গোড়াটা। তার পাশে গিয়ে মিলটনকে বললাম ক্লোজ করে ছবি নিতে। ছোট জাহিদের (নারকেল) কিছু ছবি তুলে দিলাম। এবার কোচ জাহিদ ধরলেন তার ছবি তুলে দিতে। আমার হাতের ছবি নাকি ভালো আসে। দিলাম। আসলে ছবি শুধু তুললেই হয় না। লাইট জ্ঞান মাথায় নিতে হয়। ভাবতে হয় কম্পোজিশন। যেটা সবাই বোঝে না।
এরমধ্যে কয়েকপ্রস্ত মেঘের খেলা হচ্ছিলো। অনেক উঁচুতে ছিলাম আমরা। মেঘেরা আমাদের গা ছুঁয়ে চলে যাচ্ছিল। হাত দিয়ে ধরা যাচ্ছিল। এক পশলা চলে যেতেই আরেক পশলা আসছিল। আশে পাশেই দূরন্ত মেঘ ভাসছিল। আলভি আর সোহাগকে দেখা গেলো শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত। মোবাইলে স্লোমোশনে ভিডিও হচ্ছিল। কে জানে কার মাথা থেকে এলো ওই এক্সপিরিমেন্ট। ল্যাবে গিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্য ছবি হয়ে যেতে পারে। একটা বেঞ্চে দাঁড়িয়ে গ্রুপ ছবি তুললাম। এরপর গ্রুপ সেলফি।
ছবি তোলার উৎসব তখনো চলছিল। জনি আর মিজানকে নিয়ে গেলাম নার্সারির অন্য পাশে। ওদিকটায় কর্মকর্তাদের থাকার ব্যবস্থা দেখলাম। আসে একটি অফিসঘর। জাংলা বা মাঁচার মতো করে কিছু ক্যাকটাস ছোট টবে ঝুলছিল, দুলছিল। বড় গ্রিন হাউজটাতে গিয়ে দেখলাম, বিশাল একটা মাঠের মতো। সেখানে নানা জাতের ক্যাকটাসের চাষ। ব্রিডিং হচ্ছিল। এটিকেই ক্যাকটাস প্ল্যান্ট বলেছিলাম শুরুতে। দেখলাম এর পেছন দিকটায় মান কচু বা ফ্যান কচুর মতো বড় কিছু ক্যাকটাস।
কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম অন্য জগতে। ক্যাকটাস ফার্ম ছাড়তে মন চাইছিল না। কিন্তু কালিম্পংয়ের আসল সৌন্দর্য উপভোগ বাকি ছিল তখনো।
চলবে…
দার্জিলিঙে বৃষ্টি, কালিম্পঙে রোদ-১২॥ উদয় হাকিম