ভিডিওটি দেখে আঁতকে ওঠার বদলে অদ্ভুত এক উত্তেজনা হচ্ছে। অস্বস্তি নিয়েই উত্তেজনাকর মুহূর্তটি রীতিমতো উপভোগ করতে লাগলো পিউ। জানে, এটা ঠিক নয়। কিন্তু ও কিছুতে পারছে না এই চরম অবস্থা থেকে বের হতে। এ কেমন তাড়না! এত খারাপ কেন ও? হাঁপাতে লাগলো পিউ। অবশেষে যা হওয়ার তাই হলো। আহ! নির্ভার লাগছে কিছুটা! কুলকুল করে ঘামছে। ফ্যানের স্পিডটা বাড়িয়ে দিলো। চোখ বুজে এলো। এলিয়ে পড়লো বিছানায়।
করোনার মধ্যে বাসায় ফ্রেন্ডদের ডাকলে মা খুব রাগ করেন। কিন্তু পিউ তবু ডাকলো ওদের। অনন্যা, বুবলী আর অনুপম কিছুক্ষণের মধ্যেই হৈ হৈ করে ঘরে ঢুকলো। নাহ! মায়ের মুড আজ ভালো। হাসিমুখেই কথা বলছেন ওদের সঙ্গে। অনুপমের বাবার করোনা হয়েছিল। তার শরীরের খোঁজখবরও নিলেন। আসলে এমন মেঘলা দিনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে মন চায়। পিউ এসে ড্রয়িংরুম থেকে নিজের রুমে নিয়ে এলো ওদের। মায়ের দেওয়া সরিষার তেলে মুড়িমাখা খেতে খেতে আড্ডা জমে উঠতে সময় লাগলো না। আড্ডার টপিকের কোনো শেষ নেই। নেটফ্লিক্সে আসা নতুন মুভি থেকে শুরু করে সম্প্রতি কে কী বই পড়েছে, সবই ওদের আড্ডার বিষয়বস্তু। পড়ছে একই ভার্সিটি। আর ফ্রেন্ডশিপ সেই নবম শ্রেণী থেকে। মান-অভিমান, ঝগড়াঝাটি সবই আছে বন্ধুত্বে। কিন্তু দিনশেষে আবার সবাই এক।
গতকাল অনন্যাকে এক বদমাশ লোক বাজে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে ম্যাসেঞ্জারে। সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকে ব্লক করেছে। ম্যাসেজগুলো পড়তে পড়তে হাসাহাসি চললো কিছুক্ষণ। আজকাল আড্ডার বড় অংশজুড়ে থাকে ফেসবুকের আলোচনা। একথা-সেকথায় চলে এলো সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ঘটনাটি। টিকটক করে নাকি অনেক টাকা আয় করা যায়! টিকটক করতে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে এক মেয়ে। কয়েকজন ছেলে মিলে মেয়েটিকে যৌন নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি, ইন্টারনেটেও প্রচার করেছে। সেটাই এখন ফেসবুকে ভাইরাল।
-আগে বল, কে কে দেখছিস ভিডিওটা? পিউ বলে উঠলো।
-ওয়াক থুঃ বলে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশ রুমের দিকে দৌড় দিলো বুবলি।
বন্ধুদের মুখের দিকে তাকিয়ে সত্য অনুভূতিটা গোপন করে কপট কষ্টের ভণিতা করে বললো, সত্যিই রে, আমারও খুব কষ্ট হয়েছে। কী নোংরা আর বীভৎস ছিল ভিডিওটা!
-কেন রে! কী হলো? অনুপম মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
-খবরদার অনুপম, হাসবি না তুই। ভালো হবে না কিন্তু।
-জানিস পিউ, একটু দেখেই বন্ধ করে দিয়েছি। জঘন্য। অনন্যা ক্ষোভ প্রকাশ করলো।
-আমার তো গা-গুলিয়ে বমি এসেছিল দেখে, ওয়াশরুম থেকে ফিরতে ফিরতে বললো বুবলি।
-শোন, একহাতে তালি বাজে না, বুঝলি?
অনুপম সিরিয়াস হয়ে বললো। মেয়েটারও সাবধান হওয়া প্রয়োজন ছিল। স্বামী বিদেশে থাকে, সে গেছে বখাটে ছেলেদের সঙ্গে টিকটক করতে। এত লোভ হলে তো এই দশাই হবে। ছোটবেলায় পড়িসনি, ‘অতি লোভে তাঁতী নষ্ট’?
-তোরা ছেলেরা, নিজেদের সব অপরাধ জায়েজ করেই নিবি, তাই না? টিকটক করলেই কি তাকে সেক্সুয়ালি হ্যারাস করবে? কতটা নিম্ন মানসিকতার হলে এটা আবার অনলাইনে ছেড়ে দেয়।
-আসলে কী জানিস, দারিদ্র্য এক চরম অভিশাপ। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে দরিদ্র মেয়েরা নানা প্রলোভনে পড়ে।
-বাহ! ভালো বলেছিস, আমি প্রলোভন দেখালেই তুই প্রলোভিত হবি?
-দ্যাখ অনুপম, মেয়েটার সেই অর্থে পড়ালেখা বা শিক্ষার সুযোগ হয়নি।
-শোন, বুবলি, এইসব প্রলোভন থেকে দূরে থাকার জন্য পুঁথিগত নয় বরং পারিবারিক, সামাজিক শিক্ষা দরকার। স্বশিক্ষিত হলেই কেবল এরকম অবস্থা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
-তাই বুঝি? তাহলে, তনু, নুসরাত ওদের কী দোষ ছিল? ওরা তো পড়ালেখা করতো। ওরা টিকটকও করেনি।
-এরমধ্যে আবার ওদের প্রসঙ্গ কেন? এই ঘটনা ওগুলো থেকে আলাদা।
-কী রে! তোরা কী ঝগড়াই করবি শুধু? আমি জানতে চেয়েছি, কে কে দেখেছিস আর কার কেমন অনুভূতি!
বুবলির গা-গুলিয়ে বমি এসেছে। অনন্যার খুব কষ্ট হয়েছে, তাই পুরোটা দেখতেই পারেনি। আর অনুপম?
খুব একটা খারাপ লাগেনি আমার, মাথাটা হালকা চুলকে বললো অনুপম।
ওরে বদমাশ! অনন্যা মারলো একটা চাটি অনুপমের মাথায়।
বাহ রে! সত্যিটা না বলে যদি ন্যাকামি করে বলতাম, বমি এসেছে, ঘেন্না লেগেছে, তাহলে বুঝি খুশি হতিস? হাসতে হাসতে বললো অনুপম।
আসলেই খুব কষ্ট লাগার কথা, ঘেন্না হওয়ারই কথা, তাই না? পিউয়ের কথার উদাসীনতায় চমকে তাকালো সবাই!
মনের কথাটা মনেই চেপে রাখল পিউ। এটা কি কাউকে কখনো বলা যায় যে, ও খুব উত্তেজনা বোধ করেছে। শেষ পর্যন্ত স্বমেহন পর্যন্ত করতে বাধ্য হয়েছে! আচ্ছা, এটা কি অস্বাভাবিক? অসুস্থতা? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলো পিউ। ভয় আর বিব্রতকর অবস্থা মাখামাখি হয়ে গেলো মাথার ভেতর।
বন্ধুদের মুখের দিকে তাকিয়ে সত্য অনুভূতিটা গোপন করে কপট কষ্টের ভণিতা করে বললো, সত্যিই রে, আমারও খুব কষ্ট হয়েছে। কী নোংরা আর বীভৎস ছিল ভিডিওটা!