বকপাখিদের গ্রাম
আয়না অতীত, যায় না দেখা দূর বহু দূর, ওই দূরে
কত স্মৃতি ছডিয়ে আছে আমার প্রিয় কৈশোরে
কী যে সুন্দর দিন কাটাইতাম আরামে
বেড়ে ওঠা চরখার-চর প্রিয় গ্রামে
গ্রামটি ছিল বক পাখিদের বাড়ি,
তা ছেড়ে আজ বিদেশ দিলাম পাড়ি।
এই ছবিটি ঠিক যেন এক আমার গ্রামের অংশ বিশেষ,
জীবন থাকে যে সব স্মৃতি হয় না নিঃশেষ।
‘আমার পূর্ব বাংলা’ যেন আলী আহসানের কবিতা,
কত স্মৃতি সব বলে দেয়, ছবি তা।
ছয় ঋতুতে রঙিন আমার দিনগুলি
কেমনে ভুলি?
হাশেম খানের জল রঙেতে নীলাকাশটা আঁকা
মনের সুখে পাখিরা সব দেয় ছড়িয়ে পাখা।
এবং আরও মেঘপরীরা ভাসে,
রঙধনু আর রোদের আলো হাসে।
সকাল-দুপুর, সন্ধ্যা-বিকেল সূর্য যেন ঘড়ি,
রাতের বেলা পুকুর ঘাটে জোছনায় নামে পরী।
নকশি কাঁথা, আসমানি আর কত দৃশ্য, কত ছবি
এ সব নিয়ে লিখতে লিখতে জসীম হলেন পল্লীকবি
সবাই ছিল আপন-স্বজন-রাখাল-চাষি-কামার-কুমার, বদ্য।
মনে পড়ে পাঠ্য বইয়ের পদ্য:
‘আম গাছ, জাম গাছ, বাঁশ ঝাড় যেন,
মিলে মিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন’৷
ওদের কাছে শিখতে হবে, আছে অনেক ঋণ
ছনের ঘরেই পাশের বাড়ি ঢেউ খেলানো টিন।
মুক্ত বাতাস নাচতো যেনো তা তা ধিন ধিন তে
নুন-কেরোসিন, কাপড় ছাড়া হয়নি কিছু কিনতে!
সবাই ছিল স্বজন-স্বজন, পাড়া এবং পড়শি
এক পুকুরে মিলে মিশে সাঁতার কাটা এবং ফেলছি বড়শি
ঠিক পুকুর নয়; জলাশয়ে মাছের নিবাস, হাঁসের আসর
এবং ছিল বকের বাসর।
‘অই দেখা যায় তালগাছ, অই আমাদের গাঁ,
সেখানেতে বাস করে কানা বগির ছা’।
কিছু বকের আবাস ছিলো আমাদের এক আম গাছে,
এবং পাশের জাম গাছে।
গাছে গাছে বকের বাসা, বকের ছা-
লম্বা লম্বা তাদের পা!
ঝড়-বাদলে মা-পাখিরা যত্ন নিতো
বিল থেকে মাছ ঠোঁটে করে এনে তাদের খেতে দিতো।
বকের ছানার ঠোঁট থেকে মাছ পড়তো নিচে মাটিতে,
তা নিয়ে মা রান্না করে খেতে দিতো বাটিতে।
কানি বকের টেংরা-পুঁটি-চিংড়ি-টাকির কাকতলীয় ভাগ পেতাম,
কৈশোরের সেই দিনগুলোতে মজার করে মাগনা মাছে ভাত খেতাম।