লেখক হওয়ার গল্প বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, আমি চাপা স্বভাবের মানুষ। সব কথা বলতে পারি না, তাই লিখে প্রকাশ করি। ভালো লাগা থেকে শুরু হলেও এখন তা ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। আর ভালোবাসার প্রতি একটি দায়িত্ববোধ এসে যায়। মূলত আমি আশাবাদী ও স্বপ্নবিলাসী। তবে আমার কোনো উচ্চাশা নেই। আমার আশাবাদ ও স্বপ্নবিলাসই আমাকে লেখক হতে উৎসাহ জুগিয়েছে। লেখালেখির মাঠে আমি কচ্ছপগতির একজন প্রতিযোগী। অনেকের চেয়ে অনেক পেছনে। তাই বলে আমি থেমে নেই। লিখছি এবং লিখবো। এটাই আমার দৃঢ়প্রত্যয়।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি গল্প লিখেছিলাম। লিখে লুকিয়ে রেখিছিলাম। তবু তা পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের হাতে পৌঁছে গেলো। স্কুল থেকে ফিরে দেখি সবাই আমাকে দেখে মুচকি হাসছেন। মা জানালেন আসল ঘটনা। আমি বেশ লজ্জা পেলাম। কারও চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। তবে, ব্যাপারটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন আমার মরহুম নানাজান মাওলানা আফছার উদ্দিন আহমেদ। বলতে গেলে, আমার লেখালেখির পেছনে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ছিল তার। ছোটবেলায় নানার কাছে থাকতাম। নানা রাত জেগে জেগে অনেক বই পড়তেন। তার দেখাদেখি পাঠ্যবই বাদ দিয়ে আমিও পড়তে শুরু করি।
কবি-লেখকদের জীবনী আমাকে বেশি আকৃষ্ট করতো। তখন থেকেই নিজেও লিখতে চেষ্টা করি। সে সময়ের লেখাগুলো এখন আমার কাছে নেই। থাকলে হয়তো নিজেই লজ্জা পেতাম। এখনো খুব ভালো লিখি কি না, জানি না। তবে প্রতি সপ্তাহে দুই-একটা লেখা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, অনলাইনে বা ওয়েবম্যাগে ছাপা হয়। যা-ই হোক, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় পাঠ্যবইয়ের একটি কবিতাকে (শিরোনাম স্মরণ নেই) নকল করে পদ্য লিখেছিলাম। আমার মামা মরহুম মাওলানা মেছবাহ উদ্দিন ফয়েজী সেটি দেখে বললেন, ‘অন্যেরটা নকল করে কেন? নিজে লেখার চেষ্টা করো।’ ওই সময় তার কথায়ও উৎসাহ পেয়েছিলাম।
তখন থেকেই ছাপার অক্ষরে আমার লেখা দেখার সাধ জাগতে শুরু করে। পত্রিকার পাতা থেকে ঠিকানা নিয়ে অনেক পত্রিকায় লেখা পাঠিয়েছি। কিন্তু ছাপা হয়নি। মাঝে মাঝে মন খারাপ হতো। এই মন খারাপের বয়সে হৃদয় মাঝে হঠাৎ প্রেম উঁকি দেয়। বালিকার প্রেমে পড়ে ডজন ডজন প্রেমের কবিতা লিখতাম। বন্ধুরাও কবিতা ধার নিতো। কাউকে কাউকে আবার প্রেমপত্র লিখে দিতাম। বিনিময়ে তারা বনরুটি আর সবরি কলা খাওয়াতো। মূলত কবি বলেই ভেতরে একটা প্রেমিক প্রেমিক ভাব চলে আসে। এই ভাব থেকেই লেখক হওয়ার বাসনা আরও তীব্র হয়।
তবে এর বাইরেও একটা কারণ ছিল, অভাব। দাদার মৃত্যু ও নদীভাঙন আমাদের অভাবের মুখে ফেলে দেয়। বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমে টেনেটুনে সংসার চলছে। তাই কখনোই কোনো আবদার বাবা পূরণ করতে পারেননি। এই অভাবের কারণেই নানাবাড়ি থাকতে হয়েছে আমাকে। এককথায় বলতে গেলে, ভাব আর অভাবের সংমিশ্রণে হৃদয়ের ভেতরে ধীরে ধীরে কবিসত্তা জেগে উঠেছে।
এখনো ভাব আছে, অভাবও আছে। মাঝে মাঝে নিজেকে শূন্য মনে হয়। কখনোই মানুষের জীবনে পূর্ণতা আসে না। কিছু না কিছুর অভাব থেকে যায়। হয়তো লেখকের অন্তরে এই অভাব বোধ থাকতে হয়। তো যা বলছিলাম, এসএসসি পরীক্ষার আগমুহূর্তে লেখার ভাবটা তীব্র হয়ে ওঠে। আমার মেজভাই নুরুদ্দিন আহমেদ বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। রাতে ঘুমুতে গেলে তিনি বকতে থাকেন, ‘রবীন্দ্রনাথ-নজরুল অইবি? লেখাপড়া নাই। সারাদিন খালি কবিতা আর কবিতা’। আমি চুপ। কথার জবাব দিলেন বড়ভাই মোছলেহ উদ্দিন, ‘ল্যাখুক না। সমস্যা কী ল্যাখলে? রবীন্দ্রনাথ-নজরুল তো একদিনেই বিখ্যাত হয় নাই।’ আমি মনে মনে আন্দোলিত হই। উৎসাহ পাই। যাই হোক, অন্তত একজন আমার পাশে আছেন। এসএসসির কেন্দ্রীয় পরীক্ষার রাতেও কবিতা লিখেছি। অনেক টেনশন হলে কবিতা লিখতে ইচ্ছে হতো।
সেই সময়ে (২০১৬) হঠাৎ চিন্তাসূত্রের মেইলে একটা লেখা পাঠালাম। তখনো জানি না সম্পাদক কে? লেখাটি প্রকাশিত হলো। ফিরতি মেইলে লিংক পেলাম। সঙ্গে চিন্তাসূত্রের ফেসবুক লিংক। মাঝে মাঝে ইনবক্সে কথা হয়, লেখালেখির বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন। বিভিন্ন বিষয়ে লিখতে বলেন। এভাবেই যেন আস্তে আস্তে চোখ খুলে গেলো।
এইচএসসি পড়ার সময় একটা টানাপড়েনের মধ্যে পড়ে যাই। সবাই ধরে নিয়েছিলেন, আমার দ্বারা লেখাপড়া হবে না। অবস্থাটাও তেমন। ভর্তি হয়ে ক্লাসে যাই না। ঢাকা থেকে চলে যাই গ্রামের বাড়ি। উপন্যাস লিখতে শুরু করি। দু’তিনটা লিখেও ফেলি। কিভাবে ছাপানো যায়? চিন্তাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। উপায় খুঁজে পাই না। বাংলাবাজারের অনেক প্রকাশনীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাতে টাকার প্রয়োজন। ফিরে আসি। তবু থেমে নেই। লিখে যাই প্রতিনিয়ত। আমার কবিতার খাতার কিছু পাঠক তৈরি হয়। তারা পড়ে উৎসাহ দেন। ভালো লাগে। পোশাক-আশাক, চলা-ফেরায় পরিবর্তন আসে। চটের ব্যাগ কিনি। পাঞ্জাবি-পাজামা পরি। সবাই ‘কবি’ বলে ডাকে। শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু মনের মধ্যে একটা অপূর্ণতা থেকেই যায়। একটা লেখাও প্রকাশিত হলো না।
একটা সময় সে আশাও পূর্ণ হয়। আমার লেখা প্রথম প্রকাশ হয় জেলা শহর থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায়। ছাপার হরফে আমার কবিতা দেখে সেদিন যে আনন্দ পেয়েছিলাম, তা আজ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সম্মান শ্রেণিতে পড়তে এসে লেখালেখির তাড়নায় যুক্ত হয়ে যাই মফস্বল সাংবাদিকতায়। ছোট কাকা মো. খবির উদ্দিনের সহায়তায় দৈনিক দেশবাংলায় কালকিনি উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করি। কালকিনি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। বিশেষ করে শহীদ ভাই, খায়রুল ভাই, জাকির ভাই ও মিন্টু ভাইসহ অনেকেই নিউজ ও তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন। সংবাদের পাশাপাশি লেখালেখির একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যাই। কলেজের নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমে গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম গল্পেই বিশেষ পুরস্কার পেয়ে গেলাম। পুরস্কারের সুবাদে জেলা শহর থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বিশ্লেষণ’, ‘সাপ্তাহিক আনন্দবাংলা’ও ‘দৈনিক সুবর্ণগ্রামে’ লেখার জন্য অনুমতি পেলাম। ২০০৮ সালে দৈনিক দেশবাংলার সাহিত্য পাতায় তানভীর আলাদিনের সম্পাদনায় কবিতা ছাপা হলো। এরপর থেমে থাকতে হয়নি। জেলার গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় দৈনিকসহ সাহিত্যের ছোটকাগজে লেখালেখি শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লেখা আহ্বান করে। খুলনা, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, নীলফামারি, জামালপুর, হাতিয়া, আগৈলঝাড়াসহ বিভিন্ন শহর থেকে আমার লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। জাতীয় দৈনিকগুলোর পাঠক পাতায় লেখা প্রকাশ হতে থাকে। পাঠকদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাই। এছাড়া দেশের বাইরে কলকাতার ‘কারক’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকায় লেখা প্রকাশ হয়।
এভাবেই দিন দিন আগ্রহ বাড়তে থাকে। তাই তো লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নিতেই সাংবাদিকতাকে বেছে নেই। বলতে গেলে, মনের তাগিদেই লিখছি। লেখাটা একটা নেশায় পরিণত হয়েছে। মাঝে মাঝে মন থেকে যখন ভাব ও অভাব দূর হয়ে যায়; তখন কিছুই লিখতে পারি না। চেষ্টা করেও পারি না। সে সময় অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগি। মনে হয়, আমি আমার লেখক সত্তাকে হারিয়ে ফেলেছি। নিজেকে অসহায় মনে হয়। ভাবের জন্য বিরহের দরকার। অভাবের জন্য ঔদাসিন্য দরকার। তখন দু’টাকেই অর্জনের চেষ্টা করি।
যখন মফস্বলে থাকতাম। প্রতি শুক্রবার সাহিত্যপাতা উল্টালে কতজনের লেখা পড়তাম। ভাবতাম, সবাই ঢাকায় বসে লিখছেন। আমি লেখা পাঠাতে থাকি। কিন্তু ছাপা হয় না। চেষ্টা করতে করতে একসময় নিয়মিত ছাপা হতে শুরু করে। যায়যায়দিন, জনতায় নিয়মিত কলাম লিখি। কোনো কোনো পত্রিকায় ফিচার। কালের কণ্ঠ থেকে বারো শ টাকার চেক পেয়েছিলাম, যা আজও চেক হয়েই আছে। কারণ তখন আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল না। বলা যায়, মফস্বল শহরে থাকি বলে লেখার জন্য তেমন কোনো পারিশ্রমিক জোটে না। ফলে বাধ্য হয়ে অন্য কাজও করতে হয়। কিন্তু কোনো কাজই আমার জন্য স্থায়ী হয় না। তাই পরিবারের গঞ্জনা, প্রিয়জনের তিরস্কার অবধারিত। ‘কিছু একটা করো’র তাগাদা। আমি তো কিছু একটা করছি। কিন্তু তাতে অর্থ নেই। আর সবাই তো অর্থই চায়।
পরনে পাঞ্জাবি-পাজামা আর পায়ে চটি জুতোর সঙ্গে কাঁধে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। দুটি এনজিওর পথনাটক করি। কখনো কোচিং, কখনো কেজি স্কুল, কখনো বা কলেজে পড়াই। প্রথম দর্শনেই সবাই কবি বা লেখক বলেই ডাকেন। তাদের ভাবনাটা স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে মনে হয়, একসময় খালাতো ভাই মহিউদ্দিনের দেখাদেখিও লেখালেখি ও আবৃত্তির উৎসাহ পেয়েছিলাম। তার কণ্ঠে আবৃত্তি শুনতাম। সুনীলের ‘কেউ কথা রাখেনি’ বহুবার শুনেছি তার কণ্ঠে। তার লেখা একাধিক কবিতাও পড়েছি। তার স্টাইল আমাকে আকৃষ্ট করত। তাকেই অনুসরণ করেছি। এ নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের গালমন্দও শুনেছি। কিন্তু আজ তিনি লেখালেখির জগতে নেই। পারিবারিক বেড়াজালে বিপর্যস্ত এক দিকহারা নাবিক। জীবন-জীবিকার সন্ধানে তার কবি প্রতিভা আজ বিলুপ্ত এক ঐতিহ্য। আমি কিন্তু থেমে যাইনি। হেরে যেতে চাইনি বা হেরে যাইনি। আমি এর শেষ দেখবো বলেই আজও লিখছি। লেখক হওয়ার স্বপ্ন এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
২০১৪ সালে মফস্বলের সব ছেড়ে পাড়ি জমালাম ঢাকায় বন্ধু সাংবাদিক বাদল খানের সহায়তায় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করলাম। তখনো ঢাকার সাংবাদিকতা বা সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে কোনো আইডিয়া নেই। সেই আগের মতোই দিকনির্দেশনা ছাড়াই পথচলা। কী লিখবো, কেন লিখবো, কিভাবে লিখবো—বলার মতো কোনো অভিভাবক নেই। এভাবেই কেটে গেল দু’বছর। টিভি নাটকে অভিনয়ের জন্যও ছুটলাম বিভিন্ন থিয়েটার ও পরিচালকদের সান্নিধ্য পেতে। তাতেও সফল হতে পারিনি। একসময় অভিনয়, থিয়েটার ছেড়ে দিলাম। ভাবলাম, জীবিকার জন্য মন দিয়ে সাংবাদিকতাই করি। পাশাপাশি লেখালেখি। ব্রেকিং নিউজ ছেড়ে যোগ দিলাম জাগো নিউজে।
নিন্দুকের নিন্দা, মানুষের কটাক্ষ, সমাজের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করেই এ সাধনা চালিয়ে যেতে হবে। আমি ‘রামায়ণ’ না হোক অন্তত একটা নিটোল হাসির গল্প তো লিখে যেতে পারি। তা পড়ে যদি অন্তত একজনের মুখে হাসি ফোটে, তাতেই আমার সার্থকতা।
সেই সময়ে (২০১৬) হঠাৎ চিন্তাসূত্রের মেইলে একটা লেখা পাঠালাম। তখনো জানি না সম্পাদক কে? লেখাটি প্রকাশিত হলো। ফিরতি মেইলে লিংক পেলাম। সঙ্গে চিন্তাসূত্রের ফেসবুক লিংক। মাঝে মাঝে ইনবক্সে কথা হয়, লেখালেখির বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন। বিভিন্ন বিষয়ে লিখতে বলেন। এভাবেই যেন আস্তে আস্তে চোখ খুলে গেলো। লেখার বিস্তর আইডিয়া পেতে থাকলাম। তারপর থেকে নিয়মিত লিখেছি চিন্তাসূত্র ছাড়াও ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, মানবকণ্ঠ, যায়যায়দিনে। এখনো ডাক পেলে বিভিন্ন পত্রিকায় লিখি। বর্তমানে সময়ের আলোতে নিয়মিত লিখছি। চিন্তাসূত্র ও জাগো নিউজকে তো নিজের বলেই ভাবি।
এদিকে ২০১৭ সাল থেকে নিয়মিত বই প্রকাশ হতে থাকে। মফস্বলে থাকতে যে স্বপ্ন দেখতাম। তাও বাস্তবতায় রূপ নেয়। কবিবন্ধু পলিয়ার ওয়াহিদের সাহায্যে পরিচয় হয় দোয়েলের সঙ্গে। এরপর অনুবাদ, মাতৃভাষা, অন্যধারাও আমার বই প্রকাশ করে। এই পর্যন্ত আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলো যথাক্রমে—গল্পের বই ‘সার্কাসসুন্দরী’, ‘নিশিসুন্দরী’ ও ‘সুন্দরী সমগ্র’। কবিতার বই ‘মিথিলার জন্য কাব্য’ ও ‘তুমি চাইলে’। সাক্ষাৎকার সংকলন ‘আমার আমি’ ও সচেতনতামূলক বই ‘অগ্নিকাণ্ড সতর্কতা ও নির্বাপণ কৌশল’। আর প্রথম উপন্যাস ‘মমতা’। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছি সুনীল সাহিত্য পুরস্কার- ২০০৬, ২০১০ ও ২০১১, কালকিনি প্রেসক্লাব সম্মাননা, কালকিনি কলেজ বাংলা বিভাগ সম্মাননা, এসইএল লেখক সম্মাননা ২০১৬, লেখকবাড়ি পুরস্কার ২০১৭, রকমারি সংবাদ স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০১৮, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন লেখক সম্মাননা ২০১৮, আবুল মনসুর আহমদ প্রবন্ধ পুরস্কার ২০২০ ও সাহিত্য দিগন্ত লেখক পুরস্কার ২০২০।
তাই বলতে চাই, লেখক হতে গিয়ে অনেকের কটাক্ষ যেমন পেয়েছি, ভালোবাসাও কম পাইনি। বিশেষ করে আমার বাবা আমার একনিষ্ঠ পাঠক। তিনি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি আমাকে এখনো ব্যাপক উৎসাহ দেন। যদিও একসময় বিরোধিতা করতেন। কারণ তাকে বোঝানো হয়েছিল, ‘বাংলা সাহিত্য পড়ে ছেলেটা উচ্ছন্নে যাবে। চটের ব্যাগ নিয়ে ঘুরবে। দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করবে। ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করবে না।’ আজ আমি ভুলে গেছি সেসব কথা। বরং সেসব মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায়। কারণ তাদের তিরস্কারের কারণেই আজ আমি অনেক পুরস্কার পাচ্ছি। অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি। বিরোধিতা করা অনেকেই এখন আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। আমার স্ত্রীও উৎসাহ জোগান। বাবা-মা, ভাই-বোন, ভাবিরাও সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। জনপ্রিয় লেখক হতে না পারলেও তাদের আস্থাভাজন হতে পেরেছি।
আমার মনে হয়, লেখালেখিটা প্রধানত সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত এক ক্ষমতা। ইচ্ছে করলেই লেখক হওয়া যায় না। তার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য ও অধ্যবসায়। ত্যাগের মানসিকতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। সর্বোপরি লিখতে হলে পড়তে হবে। অনেকেই অনেক কবি-লেখক দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে লেখকের কল্পনা শক্তি হতে হবে প্রখর। লেখকের ‘তৃতীয় নয়ন’ বলে একটা বিষয় আছে। যা আর দশজন সাধারণ মানুষের নেই। কবি ও অকবিদের মধ্যে মূল পার্থক্য এখানেই। সাধারণ মানুষ যে জিনিসটি সাধারণভাবে দেখেন; একজন অসাধারাণ মানুষ সেটাকে অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখেন। একজন লেখকের দর্শন বা দৃষ্টিভঙ্গি সমাজের অন্যান্য মানুষের চেয়ে আলাদা হতে হয়।
জানি না, আমি তেমন হতে পেরেছি কি না। হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি যদি তেমন মাপের লেখক না-ও হতে পারি; তবু আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। নিন্দুকের নিন্দা, মানুষের কটাক্ষ, সমাজের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করেই এ সাধনা চালিয়ে যেতে হবে। আমি ‘রামায়ণ’ না হোক অন্তত একটা নিটোল হাসির গল্প তো লিখে যেতে পারি। তা পড়ে যদি অন্তত একজনের মুখে হাসি ফোটে, তাতেই আমার সার্থকতা। তাই আমার মতে, প্রত্যেকটি সমাজে অন্তত একজন করে লেখক থাকা দরকার।