পর্ব-৭
দার্জিলিংয়ের আইনক্স
দার্জিলিংয়ে নাকি সব সময় বৃষ্টি থাকে। ঢাকা থেকে শুনেছিলাম সে রকমই। অনেকটা ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার মতো। দুদিন হলো, বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশে অবশ্য অনেক মেঘ। কখনো তা ঢেকে দিচ্ছিল সূর্যকে। কিছুটা আলো কেড়ে নিচ্ছিল। কিন্তু বৃষ্টি নেই। দিনের বেলা অন্ধকার করা কালো মেঘও নেই।
রক গার্ডেন, জুলজিক্যাল পার্ক, হিমালয়ান মাউেন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, তেনজিং রক, সেন্ট জুসেফ স্কুল, চা বাগান দেখা হয়ে গেলো। আসা-যাওয়ার পথে দেখা হলো শহরটাও। এর মধ্যে বাগানের ধার থেকে চা কেনাটা ছিল আমার জন্য স্পেশাল। কেনা-কাটার আলাদা আনন্দ, সুখ আছে। সেটি পেয়েছিলাম শতভাগ। শুধু ভয়ঙ্কর খাড়া পথগুলো দেখে হয়েছিলাম হতবাক। কখনোই কল্পনা করিনি, দার্জিলিংয়ের পথ এতটা ভয়ঙ্কর। ধারণা ছিল এখানকার পথগুলো হবে ক্রমশ ঢালু। যা সাইকেল চালিয়ে যাওয়া আসার জন্য উপযুক্ত। বাস্তব ঠিক এর উল্টো। সাইকেল তো দূরের কথা, পাঁয়ে হেঁটে চলাচলও কষ্টসাধ্য। তবু এত দূর থেকে এসেছি বলে ওই পথেই চলতে বাধ্য। গ্রুপ ভ্রমণে এতগুলো টাকার শ্রাদ্ধ!
খাবারের পর দুপুর বেলাটা বিশ্রাম। ফ্রি এবং শপিং টাইম। টিমের সদস্যরা সবাই ছুটছিল শপিং সেন্টারগুলোতে। হোটেলে আসার পথে গাইড পার্থ বাসনেত দেখিয়েছিলেন শপিংসেন্টাগুলো। চক বাজার শহরের কিছুটা নিচের দিকে, ঢালুতে। এই অঞ্চলের বিভিন্ন শহরেই একটা করে চক বাজার আছে। কলকাতা, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কথা আমার জানা। ধারণা করছি আরও অনেক জায়গাইতেই চক বাজার আছে। বিগ বাজার দার্জিলিং শহরের মাঝখানে। এর আশে-পাশে রয়েছে সুপার মার্কেটসহ আমাদের বঙ্গবাজারের মতো কিছু মার্কেট। ফুটপাত ঘিরে খোলা বাজারও দেখছিলাম। তাতে বিক্রিও হচ্ছিল ভালো। বিশেষ করে শীতের পোশাক বেশি চলছিল।
হোটেল কক্ষে বন্দি আমরা দুজন। আমার সঙ্গে এসএম জাহিদ হাসান। তবে দুপুরের খাবারের সময় আলোচনা হচ্ছিল একটি বিষয় নিয়ে। সিনেমা দেখা। তাতে সবাই রাজি। দার্জিলিংয়ে এসে হলে গিয়ে সিনেমা দেখলে মন্দ হয় না। সেটা অবশ্য টিকিট পাওয়া সাপেক্ষে। দিনটা ছিল শনিবার। সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন। টার্গেট ছিল ইংরেজি ছবি অ্যাভেঞ্জার।
ফেসবুকে টিম ওয়ালটন নামে আমাদের একটি গ্রুপ আইডি রয়েছে। দার্জিলিংয়ে আমাদের টিম লিডার ফিরোজ আলম। আগেই বলেছিলেন, টিকিট পাওয়া গেলে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। জাহিদ হাসান বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমি ল্যাপটপে লিখছিলাম। এমন সময় গ্রুপে এসএমএস এলো। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় শো। সোয়া ৬ টার মধ্যে সবাইকে বিগ বাজারের সামনে থাকতে হবে। বিগ বাজার যে ভবনে সেটি একটি সুপার মার্কেট। দার্জিলিংয়ের সবচেয়ে বড় মার্কেট।
লেখা শেষ করে হোটেলের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ছিলাম ৩ তলায়। বারান্দা থেকে শহর খুব একটা দেখা যায় না। বা দিকে (উত্তরে) উঁচু পাহাড়। তার ঢালে বাড়িঘর। দেখা যাচ্ছিল দার্জিলিং শহরের একটা অংশ। সামনের দিকটায় (পূবে) গভীর খাদ। খাদের শেষে অনেক দূরে কালো পাহাড়। ভারী মেঘ উড়ে যাওয়ায় কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। কুয়াশার মতো মেঘগুলো আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছিল চারপাশটা। ডানে (দক্ষিণে) কিছু মধ্যবিত্ত ভবন ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। একেবারে সামনে কিছু নিচু ভবন। কোথাও টিনের চালা।
ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় মামুন মাহাদি তার মোবাইল সিম দিয়েছিলেন। দার্জিলিং পৌঁছেই সেটা রিচার্জ করেছি। একমাস আনলিমিটেড লোকাল কল। প্রতিদিন ১.২ জিবি ডাটা। তবে ডাটার কপালে ঠাঁটা। বাংলাদেশে যখন থ্রিজি আসে তখন একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম, ভীষণ সুন্দরী এক তরুণী নেট বেয়ে গ্রাহকের কাছে আসতে আসতে বুড়ি হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞাপনটা দার্জিলিংয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য। যদিও ফ্রি ছিল লোকাল কল, তাতে ছিল না কোনো ফল। যতবরাই কল করছিলাম ততবারই একই ভয়েস, আপনার কলটি গ্রহণ করার জন্য গ্রাহক প্রস্তুত নন। ভালোই ফন্দি। ভাবটা এমন যে গ্রাহক রেডি না। বুঝলাম রিচার্জ করতে হবে। গ্রাহকরা সবাই পাগলা কানাই, যাকে যেভাবে পারে, বুঝ মানায়।
অনেক চেষ্টা করে ফোনে ফিরোজ আলমকে পেলাম। জানালেন, অ্যাভেঞ্জারের টিকিট শেষ। হিন্দি একটা ছবির টিকিট পাওয়া গেছে। সিনেমার নাম রাজি। কী আর করা, আমরাও রাজি। তবু তো একসঙ্গে ১৫ জন সিনেমা দেখতে পারবো। অ্যাভেঞ্জার অবশ্য না দেখাই ভালো। মারামারি কাটাকাটি ছাড়া কিছুই নেই তাতে। নেই মাববিকতা মনুষত্ব।
আলিয়া হারালেন তার বাবা, স্বামী, সংসার সবকিছু। শুধু দেশের জন্য। মৃত্যুবরণ না করেও কিভাবে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা যায় সেটাই সিনেমার উপজীব্য।
মিল্টন কোথায়? প্রশ্ন করলাম। জানালেন, শপিংয়ে ব্যস্ত। হলটা কোথায়? হলের নাম কী? হলের নাম আইনক্স। এটা ভারতীয় চেইন। বিগ বাজারের সামনে আসলেই হবে। এখানে সবাই থাকবেন।
আগের দুদিনের চেয়ে বিকেলটা কিছুটা শীতল ছিলো। তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একটা মোটা সোয়েটারের ওপর সাদা রঙ্গের জ্যাকেট পরে বের হলাম। আমি আর জাহিদ হাসান। অন্যরা সবাই আগেই বেরিয়ে গেছিলেন। শপিংয়ে ব্যস্ত তারা।
সরু, ছোট ছোট রাস্তা। ৫০ থেকে ১০০ মিটার গিয়ে রাস্তা শেষ। বাঁক খেয়ে অন্যদিকে। তার মধ্যে যানবাহন অনেক।
মানুষের গাঘেঁষে চলে যাচ্ছিল গাড়িগুলো। ঢাকার মতোই অনেকটা। ঢাল বেয়ে নিচে নামছিলাম। একটা বাঁকে গিয়ে বুঝতে পারছিলাম না কোনদিকে যাবো। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে ১৫ মিনিটেই পৌঁছলাম বিগ বাজারে। ধীরে ধীরে সবাই চলে এলো। একজন ছাড়া, তিনি জাহিদুল ইসলাম। টিমের অনেকেই মজা করে তার নাম দিয়েছিল নারকেল জাহিদ। তার মাথার সাইজ নাকি নারকেলের মতো। সেভাবে ভাবলে, সবার মাথায়ই তো নারকেলের খোলের মতো। যাক, কারও দোষ খুঁজে পেলে তখন এসব বিশেষণ বড় হয়ে ওঠে। নুরুলকে হার মানিয়ে (কারণ নুরুল ছিলেন আশেপাশেই) নারকেল জাহিদ লাপাত্তা। এখানে নুরুল প্রসঙ্গ কেন? সবার পেছনেই থাকতেই তার পছন্দ। ফিরোজ আলম ভীষণ ক্ষ্যাপা নারকেল জাহিদের ওপর। টিমের রুল না মেনে এভাবে দেরি করে সবাইকে ভোগানোর কোনো মানে হয় না। হুম, কথা সত্য। সবাই সায় দিলাম।
অনেকেই দেখলাম সেফলি নিয়ে ব্যস্ত। ঘটনা কী? ঢাকা থেকেই দার্জিলিংয়ের একটি ছবি গ্রুপে শেয়ার করা হয়েছিল। ‘টেস্ট অব দার্জিলিং‘ লেখা একটি দোকানের সামনে সৌষ্ঠব এক তরুণী দাঁড়িয়ে। ‘কে কে খেতে চান, উদয় ভাই তো খায় না‘ একটা ক্যাপশন ছিল এরকম। সবাই নানান রকম মন্তব্য করেছিলেন। শেষে ফিরোজ আলম লিখেছিলেন, আমি তো চায়ের কথা বলেছি। কারণ উদয় ভাই চা খায় না। প্রসঙ্গক্রমে বলি, জাপানের কাহিনি। বাংলাদেশ থেকে এক মহিলা গেছেন জাপানে। একটি দোকানে গেছেন টি-শার্ট কিনতে। সেখানে একজন আর্টিস্ট ছিলেন। কাস্টমার যা লিখতে বলতেন টি-শার্টে তাই লিখে দিতেন। ভদ্রমহিলা টি-শার্ট কিনে একটি লেখা দেখিয়ে বলেছিলেন, ওই লেখাটা লিখে দেন। আর্টিস্ট শার্টের বুক বরাবর ওই লেখা এঁকে দিলেন। সেই টি-শার্ট পরে তিনি যেখানেই যান, লোকজন তার দিকে তাকিয়ে থাকেন, হাসেন। বিষয়টা তার সন্দেহ হলো। একজনকে বললেন বিষয়টা কী? জানা গেলো, তার টি-শার্টে লেখা ‘ইহা একটি উপাদেয় খাবার, পরীক্ষা প্রার্থনীয়’!
‘টেস্ট অব দার্জিলিং’ খাবারের দোকানের সামনে আমিও সেলফি নিলাম। গ্রুপ সেলফিও হলো। শেষ মুহূর্তে নারকেল জাহিদ এলেন। সবাই টিকিট বুঝে নিয়ে হলে ঢুকলাম। ছবিও শুরু হলো। বিশাল বড় হল। দর্শক হাতেগোনা। এত কম দর্শক কেন?
ছবির নাম রাজি। মানে ইয়েস। বাংলায় রাজি মানে সম্মতি। হিন্দিতেও তাই। আমি হিন্দিতে খুব দুর্বল। ছোটবেলা থেকেই হিন্দির প্রতি এক ধরনের অনীহা ছিল। হিন্দি আর শেখা হয়ে ওঠেনি। হিন্দি সিনেমা গানও সেভাবে দেখা বা শোনা হয়নি।
সিনেমার কাহিনি বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল। সংলাপ প্রধানকাহিনি। সংলাপ না বোঝায় আসল মজা মিস করছিলাম। মধ্য বিরতির সময় ফিরোজ আলমকে জিজ্ঞেস করলাম, কাহিনিটা বলেন তো। কিছুটা বুঝিয়ে দিলেন। বিরতির পর জাহিদ হাসান স্যার আর ফিরোজ আলমের মাঝখানে গিয়ে বসলাম। কোনো সংলাপ না বুঝলেই তাদের জিজ্ঞেস করছিলাম। তারা বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। নায়িকাটার নাম কী? আলেয়া ভাট। আর নায়ক? নাম জানি না, সেরকম পরিচিত কেউ নন। ও।
হিন্দি না বুঝলেও শুরু থেকেই কাহিনিটা আমাকে টানছিল। প্রেক্ষাপট ১৯৭১। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জয় পরাজয় ছিল না। কিন্তু অনেক ক্ষতি হয়েছিল ভারতের। তাছাড়া ভারত-পাকিস্তান রেষারেষির কথা সবাই জানি। যুদ্ধে ভারত ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। সে সময় কাশ্মিরের এক মুসলিম সেনা কর্মকর্তা গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতেন ভারতীয়দের। তার বন্ধু ছিলেন পাকিস্তানের উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা। পাকিস্তানি সেনার ছেলে আর কাশ্মিরি সেনার মেয়ের মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আলিয়া ভাটের বাবা গুরুতর অসুস্থ। মেয়েকে প্রস্তাব দেওয়া হয় ভারতীয় সেনা বাহিনীর পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করতে। দেশের প্রয়োজনে তিনি রাজি হয়েছিলেন। এই থেকেই সিনেমার নাম রাজি।
আলেয়া ভাটকে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের অধীনে সব বিষয়ে কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল। এরপর বিয়ে হলে তিনি স্বামীর ঘরে চলে যান পাকিস্তানে। তার স্বামীও পাকিস্তানের সেনা অফিসার।
শ্বশুর, স্বামী এবং ভাসুর; সবাই পাকিস্তানের সেনা বাহিনীতে। মাঝে মাঝেই তাদের বাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হচ্ছিল, আলোচনা হচ্ছিল। সেখান থেকে যুদ্ধের নানা দিক-নিদের্শনাও দেওয়া হচ্ছিল। আলিয়া গোপন মাইক্রোফোনে, রাতের আঁধারে, অথবা সবার অগোচরে তথ্য সংগ্রহ করতেন। গোপন তার বার্তায় আলেয়া সেগুলো সরবরাহ করতেন ভারতীয় গোয়েন্দাদের। এমনকি পাকিস্তানি সাবমেরিন হামলার তথ্যও জেনে গিয়েছিলেন আলেয়া।
এরমধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে ঘটে ভজঘট। বাড়ির কাজের লোক আব্দুলের কাছে ধরা খান আলিয়া। আব্দুল ভারতীয় হলেও তার মনিবের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। উপায়ান্তর না পেয়ে আলিয়া তাকে রাতের আঁধারে গাড়িচাপা দিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে আব্দুল কিছু একটা বলে গিয়েছিলেন ভাসুরকে। পরে আলিয়া কৌশলে ছাতির ডাটের সঙ্গে সায়নায়েড মিশিয়ে মেরে ফেলেছিলেন স্বামীর বড় ভাইকে।
গোয়েন্দা নজরদারিতে বেরিয়ে আসে ওই বাড়ি থেকে গোপনে তথ্য যাচ্ছিল ভারতে। এক পর্যায়ে স্বামীর কাছে ধরা পড়েছিলেন আলিয়া। স্বামীর দিকে পিস্তল তাক করে ধরছিলেন। শেষে এক শিশু এসে পড়ায় স্বামীকে গুলি করা হয়নি। কৌশলে বেরিয়ে পড়েছিলেন বাসা থেকে।
বিপদে পড়েছিলেন আলিয়া। একদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তার স্বামী, অন্যদিকে পাকিস্তানি ও ভারতীয় এজেন্সি সবাই তাকে খুঁজছিল। শেষে এক বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। মারা গিয়েছিল আলেয়ার স্বামী। কৌশলে বেঁচে গিয়েছিলেন আলেয়া। এমনকি দেশেও ফিরে আসতে পেরেছিলেন। কিন্তু আলিয়া নিজ দেহে বয়ে এনছিলেন স্বামীর শেষ চিহ্ন, সন্তান। সে সন্তান বড় হয়ে যোগ দেয় ভারতের সেনা বাহিনীতে।
আগেই মারা গিয়েছিলেন আলিয়ার বাবা। তার কারণে মারা গেলেন স্বামী। নিজ হাতে খুন করেছেন ভাসুর এবং কাজের লোক আব্দুলকে।
আলিয়া হারালেন তার বাবা, স্বামী, সংসার সবকিছু। শুধু দেশের জন্য। মৃত্যুবরণ না করেও কিভাবে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা যায় সেটাই সিনেমার উপজীব্য।
চলবে…