‘আদি এবং অন্তে সত্য ও সুন্দরে আছি’ এই স্লোগানে বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের নামে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি’। প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম পরিচালিত হয় চাঁদপুর থেকে। এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান। শিল্প-সাহিত্যে গোষ্ঠিপ্রীতি রোধ, শহর ও মফস্বলের বৈষম্য দূরত্ব করতে ২০১৯ সালের ১১ জুন এটি প্রতিষ্ঠা করেন কবি রফিকুজ্জামান রণি।
সাংগঠনিক কাঠামো
৩৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রধান হলেন মহাপরিচালক, প্রতিষ্ঠান প্রধান হলেন সভাপতি। প্রথম সভাপতি নূরুন্নাহার মুন্নী এবং প্রথম মহাপরিচালক রফিকুজ্জামান রণি। ২০টিরও বেশি বিভাগ চালু রয়েছে। প্রত্যেক বিভাগে অন্তত একজন করে পরিচালক বা উপ-পরিচালক দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নিয়ন্ত্রণ পরিষদ নামের একটি স্থায়ী উপ-কমিটি রয়েছে। তাতে একজন চেয়্যারম্যান ও একজন সচিব দায়িত্ব পালন করেন। পর্যবেক্ষক ও ন্যায়পাল পদেও একজনকে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
বই উপহার কর্মসূচি
চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমির নানাবিধ উদ্যোগের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত উদ্যোগ হলো ‘বই উপহার কর্মসূচি’। গ্রামে গ্রামে ঢুকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতে উপহার হিসেবে বই তুলে দেওয়া হয়। প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ জন শিক্ষার্থীকে গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-উপন্যাস-ছড়া ও ভ্রমণকাহিনির গ্রন্থ উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে অন্তত ৫/৬জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিত্তিকই এ কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নয়, একাডেমির প্রতিটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে বই উপহার দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেশেবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ, সুধিজন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের অনুষ্ঠানেও বই উপহার দেওয়া হয়। ‘ফেসবুক ও পাঠ্যসূচির গণ্ডিতে আর নই, চর্যাপদের সঙ্গে থেকে পড়বো সকল বই’, ‘ছড়িয়ে দিতে বই, পথের মানুষ হই’, ‘বই কখনও হয় না পর, বইয়ের সঙ্গে বাঁধবো ঘর’, ‘বইয়ের দিকে বাড়াও হাত, ঘুচে যাবে অন্ধরাত’ ইত্যাদি স্লোগানের মাধ্যমে এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
বই উপহার কর্মসূচির উদ্দেশ্য
ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে, প্রজন্মকে বইমুখী করতে, ফেসবুক আসক্তি হ্রাস করার পাশাপাশি মাদক, জঙ্গিবাদ ও বাল্যবিবাহর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে এ কর্মসূচি গ্রহণ হয়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড
পথশিশুদের খাবার ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, অসহায় পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান, রক্তদান কার্যক্রম। শীতকালীন গিটারসন্ধ্যার আয়োজন। গান ও কবিতাপাঠের আসর। সদস্যদের নিয়ে ‘ফ্যামিলি ডে’ পালন।
পুরস্কার/পদক
শিল্প-সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের প্রতি বছর দুই বার পুরস্কার দেওয়া হয়: ক) চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার; খ) চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি দোনাগাজী পদক (মধ্যযুগের কিংবদন্তি পুঁথিশিল্পী কবি দোনাগাজীর নামে প্রবর্তিত)। ২০১৯ সাল থেকে এই দুটি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার
২০১৯:
কবিতায় স্বপন রক্ষিত (মরণোত্তর),
কথাসাহিত্যে শামস সাইদ,
গবেষণা সাহিত্যে নূরুল ইসলাম ফরহাদ
লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনায় ম. নূরে আলম পাটওয়ারী।
২০২০
কবিতায় বীরেন মুখার্জী
কথাসাহিত্যে হামিদ কায়সার
সার্বিক সাহিত্যে কবি ও সম্পাদক জামসেদ ওয়াজেদ
গবেষণা সাহিত্যে জাহাঙ্গীর হোসেন
শিশুসাহিত্যে মকবুল হামিদ
সংগীতে আশিক কবির
শিক্ষায় আজমল হোসেন চৌধুরী
বাচিকশিল্পে তানজিনা তাবাচ্ছুম।
দোনাগাজী পদক
২০১৯
কথাসাহিত্যে মনি হায়দার
গবেষণা সাহিত্যে এ এস এম ইউনুছ
সার্বিক সাহিত্যে মোস্তফা হায়দার
কবিতায় অনু ইসলাম
লিটলম্যাগ সম্পাদনায় সুমন কুমার দত্ত
সংগীতে মোহাম্মদ ইউসুফ
বাচিকশিল্পে জেরিন সিঁথি
২০২০
কবিতায় আজিজ কাজল
প্রবন্ধে জোবায়ের মিলন
নাটকে প্রণব কুমার রায়
ফিচার-ভ্রমণ সাহিত্যে রিফাত কান্তি সেন
সংগঠনে নীহার রঞ্জন হালদার
বাচিকশিল্পে দীপান্বিতা দাস
২০২১
কবিতায় মোহাম্মদ নূরুল হক
কথাসাহিত্যে নিলুফা আক্তার
প্রবন্ধে ফারুক সুমন
অনুবাদে মামুন রশীদ
ফিচার ও ভ্রমণ সাহিত্যে আবু আফজাল সালেহ
লিটলম্যাগ সম্পাদনায় কবি প্রত্যয় হামিদ