(পর্ব-৭)
ড. ফারজানা ভাবলেন, আব্দুল করিম আপনার মনের ভেতর আমিও আগুন ধরিয়ে দেবো। ড. এলিনাকে দুদিন পেয়েই আমার প্রতি আকর্ষণে একটু ভাটা পড়া ভাব করছেন। ভাবছেন, আমার থেকে অনেক দামি কিছু পেয়ে গেছেন! আমিও নারী—আমার রূপও কম নেই! আপনাকে নিয়ে এবার আগুনের খেলাটা আমিও খেলবো! আপনার মনে যন্ত্রণা ঈর্ষার তীব্রতা বাড়িয়ে আপনাকে আছাড়িবিছাড়ি করাবো। শরীর আর রূপই যদি খেলার অস্ত্র হয়—সে খেলাতে আমিও কম যাবো না সিসি সাহেব! আপনিও কতটা খেলতে পারেন—তা এবার ষোলো আনা বুঝে নিতে একচুলও ছাড় দেবো না। ড. এলিনাকে এখানে পার্টটাইমার করেই এখানে আমি চরকির মতো ঘোরাবো—যত চেষ্টা করুন এর বেশি দূর আপনি তাকে নিতে পারবেন না। আপনাকে আমি আমার অনুগত করেই রাখবো। কিন্তু আপনি কিছুই বুঝতে পারবেন না—বোধহীন বলদ হয়ে নিজেকে শুধুই ক্ষমতাশীল ভেবেই যাবেন।
নতুন গাড়ি নিয়ে অফিসে গিয়ে ড. ফারজানা, গাড়িটা গেটের পাশে রেখেই আব্দুল করিমকে মোবাইল করলেন। স্যার, একটু নামুন না প্লিজ!
কেন বলুন তো?
স্যার, সারপ্রাইজ আছে।
আব্দুল করিম নিচে নেমে লাল প্রিমিও নতুন গাড়ি দেখে তো অবাক। বিস্ময়ে বললেন, আমার থেকেও তো অনেক দামি গাড়ি! দারুণ হয়েছে।
স্যার, বলেছিলাম না সারপ্রাইজ দেবো।
একদম সেই রকম সারপ্রাইজ। কল্পনারও বাইরে। চলুন, আমার রুমে। কফি খেয়ে তারপর ডিপার্টমেন্টে যাবেন।
অবশ্যই। মনে মনে ভাবলেন, আগে তো কখনো বলেননি, কফি খেয়ে ডিপার্টমেন্টে যওয়ার কথা! আগে তো ডিপার্টমেন্টে যেতেই দিতে চাইতেন না। কাছে বসিয়ে রাখতেন। তাহলে কি ড. এলিনা অসবেন! সেজন্য আমাকে দ্রুত বিদায় দিতে চাইছে। ভাবতে ভাবতে সিসির রুমে ঢুকেই বললেন, স্যার, এটা আপনার জন্য আমার ছোট্ট উপহার।
কী এটা?
ঘড়ি।
আব্দুল করিম খুশি হয়ে বললেন, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। ঘড়িটা প্যাকেট থেকে বের করে দেখেই যেন আঁতকে ওঠেন। বললেন, কী করেছেন আপনি?
কেন স্যার? কোনো অপরাধ হয়েছে স্যার? আমি গরিব মানুষ। সামান্য উপহার।
সামান্য উপহার? এটার দাম আমি জানি। ষাট হাজার টাকা। আমি পরি পনের হাজার টাকা দামের ঘড়ি।
স্যার, একটা ছোট্ট অনুরোধ করবো, রাখবেন?
আচ্ছা, আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো।
বলুন।
আপনি এই ঘড়িটা আমাকে যে দিলেন—এটা স্যারকে দিলেন না প্রেমিককে দিলেন?
কোনো দ্বিধা না করে সঙ্গে সঙ্গে ড. ফারজানা বললেন, আমার প্রেমিককে দিয়েছি—আমার প্রণয়ের পুরুষকে। সিসি স্যারকে নয়।
আমি অন্তর থেকে এই উত্তরটাই চাচ্ছিলাম। এবার বলুন তো কী অনুরোধ!
এখন থেকেই ঘড়িটা আপনি পরবেন। কিন্তু কাউকেই বলবেন না আমি দিয়েছি।
কেন বলবো না?
কারণ আমি তোমাকে—সরি, আমি আপনাকে ভালোবাসি।
তুমি করেও বলতে পারেন। তবে অফিস তো না বলাই ভালো। বাইরের কী মূল্য—অন্তরের আর মনের মূল্যই তো আসল।
ড. ফারজানা মনে মনে ভাবেন, মন আর অন্তর এসব চেনার ক্ষমতা আপনার নেই। ড. এলিনার অর্ধনগ্না বক্ষ দেখেই আপনি যা করেছেন সেদিন! মনের ভেতর তা চাপিয়ে রেখে খুশিকণ্ঠে বললেন, আমি চাই না আমার ভালোবাসার মানুষ আমার কারণে কোথাও বিড়ম্বনার শিকার হোক। এটা কেউ জানলে ভালোভাবে নেবে না।
বাসায় ফিরলে বউ তো দেখবে, তখন তো জানতে চাইবে!
বলবেন আপনি নিজে কিনেছেন। এটুকু বলতে পারবেন না? আর তাতেও যদি সমস্যা হয়, অন্য কারও নাম বলে দেবেন।
বউকে যদি বলি আমি নিজে আজ শখ করে ষাট হাজার টাকা দিয়ে ঘড়ি কিনেছি, বউ বিশ্বাস করবে? মরে গেলেও করবে না। আমার ঘর ছেড়েই চলে যাবে।
তাহলে একটা অন্য বুদ্ধি দেই। নেবেন?
বলেন তো।
ড. এলিনা রহমানের নাম বলে দেবেন। তাকে তো ম্যাডাম চেনেন না। আর অফিসে বলবেন, আপনার ওয়াইফ পছন্দ করে কিনে দিয়েছেন।
এই বুদ্ধিটা কিন্তু ভালো। কিন্তু একটা মজা হবে যে—যখন এখানে কাউকে বলবো আমার ওয়াইফ কিনে দিয়েছেন, তখন তো ওয়াইফের জায়গায় আমার মনে আপনার ছবিটাই ভেসে উঠবে!
তাতে তো কোনো সমস্যা নেই—কাগজকলমে না হলেও আপনার মনে তো আমি তাই-ই। কী ভুল বললাম?
না, একদম ঠিক।
স্যার, ঘড়িটা পরে ফেলুন—আমি চোখ ভরে একটু দেখি। আচ্ছা থাক। আমি নিজেই পরিয়ে দিচ্ছি। মুহূর্ত দেরি না করে আব্দুল করিমের হাতে ঘড়িটা পরিয়ে দেন ড. ফারজানা। বলেন, খুব মানিয়েছে কিন্তু! স্যার, এবার আমি যাই। ক্লাস আছে।
আরে বসুন তো। ক্লাস বাদ দেন। আরে শুনুন সব রিপোর্ট তো আমার হাতে। আমি যার নামে যে রিপোর্ট দেবো, সেটাই আসল। ফারজানা, আমি সত্যি অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু একটা ঝামেলা ঝামেলা মনে হচ্ছে! বাসায় বউ ব্যাপারটা যে কিভাবে নেয়!
স্যার, প্রেম করলে ঝামেলা থাকবেই। প্রেম করবেন, ঝামেলা পোহাবেন না, তা কোনোদিন হয়! পৃথিবীতে একটা প্রেমও খুঁজে পাবেন না, যেখানে ঝামেলা ছিল না। আরে স্যার, প্রেমের সৌন্দর্যই তো ঝামেলা। তারপর খুব আস্তে করে—ছোট্ট করে বললেন, এই করিম, তোমাকে খুব ভালো লাগছে!
সাবধানী চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন, আপনি একদম ডাকাত!
আপনি যতটুকু জানেন—আমি তার চেয়েও অনেক বড় ডাকাত। দেখবেন?
দেখতে পারলে, শোনে কোন বোকায়! আব্দুল করিম বলা মাত্রই ড. ফারজানা বিদ্যুৎগতিতে উঠে গিয়ে তার ঠোঁটে বড় করে একটা চুমু খেয়ে, বিদ্যুৎগতিতে আবার চেয়ারে এসে বসেন।
আব্দুল করিম থতমত খেয়ে কী করবেন, কী বলবেন, বুঝতে পারেন না। বোকা বনে যান। ড. ফারজানা বললেন, টিস্যু নিয়ে ঠোঁট মুছে ফেলেন। লিপস্টিক লেগে আছে।
আব্দুল করিম ঠোঁট মুছে বললেন, আপনি আসলেই বড় ডাকাত! আমি তো ভুলেও ভাবিনি আপনি এখানে এভাবে! আরও কত কত সারপ্রাইজ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, আপনি কল্পনার সাত আসমান পার করেও তা ভাবতে পারবেন না!
তা বুঝতে পারছি। আপনি সত্যি জীবনটা আরও সুন্দর করে দিচ্ছেন।
চেষ্টা করছি। স্যার, এখন উঠি। ক্লাস আছে।
বাদ দেন তো ক্লাস। ক্লাস নেওয়ার বহু সময় পড়ে আছে। পরে নেবেন। গাড়ি কিভাবে কিনলেন, তা তো বললেন না!
আপনাকে তো বলেছিলাম আমার একজন ধনী বন্ধু আছে। অনেক টাকার মালিক। ওকে বলছিলাম আমার কিছু টাকা প্রয়োজন। ও জানতে চাইলো, কত টাকা? বললাম, প্রিমিও একটা গাড়ি কিনতে যত টাকা লাগে!
সে একবারেই রাজি হয়ে বললো, তুমি পরশু বাড্ডা আমার বন্ধুর গাড়ির অটো কার সেন্টারে আসো। দুপুরের পরে। ঠিকানা দিলো। আমি গেলাম। ও আমার হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিলো। বেশ গাড়ি হয়ে গেলো। বলেই মনে মনে ভাবলো, সিসি সাহেব আপনার মনে এবার ঈর্ষার আগুন আরও তীব্র হয়ে জ্বলবে! মুহূর্তে ভাবনা থেকে সরে এসে হাসিমুখে বললেন, আপনি তো খুব করে চাইছিলেন, আমার একটা গাড়ি হোক। আপনার ইচ্ছেটা পূরণ করার জন্যই গাড়িটা নেওয়া।
আমার থেকেও কিছু টাকা নিতেন!
স্যার, আমি কিছুটা নেই না, যা নেই পুরোটাই নেই।
ড. ফারজানা কথাটা যে অর্থে খোঁচা দিয়ে আব্দুল করিমকে বললেন, তিনি তা অনুধাবন করতে পারলেন কি না, তাতে ফারজানার সন্দেহ রয়ে গেলো। তবে, কথাটা তার ভালোও লাগেনি। তবু খুশি ভাব করে বললেন, গাড়িটা আপনার স্ট্যাটাসের জন্য খুব দরকার ছিল। আপনার বন্ধুটা এককথায় অসাধারণ। এরকম বন্ধু কল্পনাও করা যায় না। যা হোক তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো।
আমি কিন্তু আমার বন্ধুকে বলেছি, তোমার টাকা কিন্তু আমি লোন নিচ্ছি। যখন পারবো দিয়ে দেবো। একবারে তো পারবো না। ভেঙে ভেঙে কয়েকবারে দিয়ে দেবো।
কী বললেন উনি?
বললেন, তোমার যেভাবে সুবিধে হয় দিও। না দিলেও আপত্তি নেই।
একেবারে সিনেমাটিক! কেউই বিশ্বাস করতে চাইবে না।
ঠিকই। মনে মনে ড. ফারজানা ভাবেন, ড. এলিনাকে নিয়ে সেদিন প্রথম দিনেই আপনি আমাকে যা দেখিয়েছেন, তা তো হিন্দি প্রেমের ছবিও হার মানবে! আমিও কতটা দেখাতে পারি—আপনিও এখন থেকে শুধু দেখতে থাকবেন।
আপনি মাঝে মাঝে কী যেন ভাবেন ড. ফারজানা!
ভাবি, সত্যি ভাবি। ঠিকই ধরেছেন।
এত কী ভাবেন, বলেন তো!
অনেক কিছু ভাবি। ভাবছিলাম, ও এত টাকার মালিক আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। দেখে বোঝা যায় না। একেবারে সাধারণের মতো থাকে। কিন্তু আমার মন সবসময় আপনার কাছে কী যেন খোঁজে—আপনার কাছেই পড়ে থাকে। কখনো কখনো ভাবি, এ জন্মে আপনি যদি শুধু আমার হয়ে জন্মাতেন!
আব্দুল করিমের কপালে একটু ভাঁজ পড়লো। ড. ফারজানা বললেন, কিছু ভাবছেন?
না। তেমন কিছু না। খুশি হওয়ার ভান করে বড় একটা হাসি দিয়ে বললেন, ম্যাডাম, পৃথিবীটা অদ্ভুত—সবকিছুই অঙ্কের মতো মেলে না। আপনারও যেমন মেলেনি। আমারও তেমনি মেলেনি। আবার ইচ্ছে করলে যে আপনার আমার অঙ্ক এখন মেলানো যাবে, তাও নয়। যা হোক, নতুন গাড়ি কেনার জন্য খাওয়াতে হবে কিন্তু।
অবশ্যই। কবে খাবেন বলুন। চলুন আজই হয়ে যাক।
না, আজ নয়। পরে একদিন খাবো। জানাবো। তবে না খেয়ে কিন্তু ছাড়ছি নে।
আমি একদম তৈরি আছি—যেদিন বলবেন, যখন বলবেন—তখুনি হবে। আপনাকে খাওয়াতে পারলে আপনার থেকে আমি নিজেই বেশি খুশি হবো।
আব্দুল করিম দুষ্টুমির একটু রস লাগিয়ে বললেন, আমার পছন্দের সব খাবার কিন্তু খাওয়াতে হবে।
ড. ফারজানা তা ভালো করেই বুঝলেন। উত্তরটাও সেভাবেই দিলেন, বললাম তো আমি খাওয়ানোর জন্য একপায়ে দাঁড়িয়ে আছি। আপনার যা যা পছন্দ—যখন খেতে চাইবেন—খাওয়াবো—একদম উজাড় করে খাওয়াবো। মায়াবী আকর্ষণীয়া হাসি ছড়িয়ে ড. ফারজানা উঠে দাঁড়ান।
আাব্দুল করিম বললেন, এখন তো মাত্র চারটে বাজে। বন্ধুকে নিয়ে নতুন গাড়িতে করে ঘুরবেন নাকি?
এ সময় হুট করেই আকস্মিকভাবে ড. এলিনা রহমান সিসির রুমে ঢুকলেন। সশব্দ হাসি ছড়িয়ে বললেন, কী চমৎকার! এখানকার পরিবেশটা দারুণ। করিম ভাই, কেমন আছেন?
বিরক্তভাব করলেন আব্দুল করিম। বললেন, ভালো আছি। ভাবী, আমি সরি, ড. ফারজানার সঙ্গে অফিসের একটু জরুরি কথা বলছি। আপনি পাঁচ মিনিট ওয়েটিং রুমে যদি বসেন!
আমিও সরি করিম ভাই। কোনো সমস্যা নেই। আপনারা কথা শেষ করেন। বলেই তিনি ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসেন।
দেখছেন, বলা নেই কওয়া নেই হুট করে রুমে ঢুকে পড়ে!
ড্রাইভার ভাবে, এত বড় শিক্ষিত মহিলা দিনদুপুরে এত এত মিথ্যা কথা কয়! কত পুরুষের সাথে যে তার কত রকম সম্পর্ক! ম্যাডাম পারেও বটে!
আপনার পরাণের ভাবীই তো ঢুকেছে, অন্য কেউ তো ঢুকেনি! আর ঢুকলেও সমস্যা কী? খোঁচা দিয়ে বললেন ড. ফারজানা। মনে মনে বললেন, মিস্টার করিম! কখন যে কোন বেলায় আপনার যে কী রূপ!
আব্দুল করিম বললেন, সিনিয়রদের ওয়াইফকে তো আমরা ভাবীই সম্বোধন করি।
আপনার ভাবীর কিন্তু দারুণ চেহারা! যেকোনো পুরুষই চোখ ফেরাতে পারবে না। রূপের আগুনে চোখ পুড়ে মনে ফোসকা পড়ে যাবে!
আপনিই কি কম! আপনি তো ফোসকা না পুড়িয়ে ঝামা বানিয়ে ফেলেন!
তাই নাকি! আগে তো কখনো বলেননি? আজ প্রথম শুনলাম। খুশি হলাম। শুনুন, আপনাকে একদিন আমার বন্ধুটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।
আমি দুপয়সা বেতনের চাকুরে! অত বড় ধনী লোকের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলে তো তিনি নিজেই লজ্জা পাবেন।
আপনি মন খারাপ করছেন? বুঝেছি, ঈর্ষা হচ্ছে! একটা কথা বলবো?
বলুন।
ভাবছি কথাটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয়ে যায় কি না! থাক, না বলি।
দেখুন, এটা খুব বাজে অভ্যাস—কোনো কিছু বলতে চেয়ে না বলা।
চা খাওয়াতে পারবেন?
এই কথা?
জি।
আব্দুল করিম পিয়নকে বললো, শোন সুন্দর করে দুকাপ চা দিবি।
পিয়ন রুম থেকে বেরুতেই ড. ফারজানা আব্দুল করিমের একটা হাত নিজের হাতে জড়িয়ে নিয়ে তার কাছে উঠে যায়। বললেন, কিছু বুঝতে পারছেন?
আব্দুল করিম উত্তরটা কী দেবে ভাবছিলেন! আব্দুল করিমের হাতের ওপর চুমু দিয়ে ড. ফারজানা বললেন, আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি। বলেই মুহূর্ত দেরি না করে রুম থেকে বের হয়ে ড. ফারজানা গাড়িতে উঠে মনে মনে বলে, মিস্টার করিম, তুমি যা খেতে চাও, আমি তা ভালো করেই বুঝি! আমিও তোমাকে সেটাই খাওয়ানোর চুম্বকে মুগ্ধ করে আঁচলে বন্দি করে রাখতে চাই! তবে তা আস্ত একটা বলদ বানিয়ে। এ সময় তুষার পারভেজের ফোন আসে, ফারজানা, কত দূর?
এই মাত্র ভার্সিটি থেকে বেরুলাম।
গুড। রেডিশনে আসো।
একটু অপেক্ষা করো, আসছি। ভালো করে এদিক-ওদিক দেখে নাও—ড. ছবি সায়ন্তি আবার কোথাও ওৎ পেতে আছে কি না! সে তো পারলে তোমাকে পাহারা দিয়ে রাখে!
এ সব হচ্ছে টাকার পাহারা—আমার টাকা আছে—বিশ্ববিদ্যালয় আছে—প্রেমের নাটক করে ঘুরঘুর করে! টাকা না থাকলে এদের হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অত সাধু সেজো না। হোটেল ডায়নায় তাকে নিয়ে কী করো, সব আমার জানা। ওর জন্য তুমি কেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার চাকরিটা পর্যন্ত খেয়েছ।
অন্যভাবে তোমাকে তো আমি পুষিয়ে দিচ্ছি। এমন তো নয়, ওর কারণে তোমাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি!
তা ফেলোনি ঠিক আছে। অন্যভাবে অনেক বেশি কিছু আমার জন্য করছ—সবই ঠিক আছে। কিন্তু ড. সায়ন্তিকে আমার একটুও সহ্য হয় না।
বাদ দাও। তুমি তো এখন আরও ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছ। বাঘা যতীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নাম আছে।
তা ঠিক। আচ্ছা শোনো, আমার বসের কাছে তোমার গল্প করেছি। তুমি গাড়ি কিনে দিয়েছ। সে তো শুনে মুখটা কালো মেঘের মতো করে থাকলো। কিন্তু ওপরে ওপরে রোদের মতো খুশির ঝিলিক মারার চেষ্টা করছিল।
আমার নাম বলে দাওনি তো?
নামটা জানতে চাচ্ছিল। বলিনি। তুমি অনেক বড় মানুষ—দেশের নামকরা ধনী ব্যবসায়ী। তুমি আমার ভালোবাসা—আমার জীবন তুমি—এটা আমার জন্য কত বড় গর্ব, তুষার তুমি নিজেও তো তা জানো।
তোমার বসকে আবার এসব বলোনি তো?
আমি ডক্টরেট একজন নারী। কোথায় কী বলতে হবে—কতটুকু বলতে হবে—আমি তা খুব ভালো করে জানি। বলেছি, শুধুই বন্ধু।
তুমি ডক্টরেট—এটা তো আমার জন্য বিরাট গর্ব।
সেটা তো তুমিই করিয়েছ। তুমি উৎসাহ প্রেরণা আর টাকা না দিলে তো হতো না। শোনো তুষার, আমি ঈশ্বর ভগবান এসব দেখিনি, আমার জীবনে তুমিই আমার ঈশ্বর—তুমিই আমার ভগবান। যাকে মন ভরে ভালোবাসা যায়—যাকে মন—আত্মা—দেহ নিবিড়ভাবে নিবেদন করা যায়, একজন নারীর কাছে তার চেয়ে বড় ভগবান আর কে বলো! তুমি তো আমার কাছে তাই।
এভাবে বলো না, জান। আসো। তোমার জন্য অনেক উপহার অপেক্ষা করছে।
তুমি নিজেই তো আমার জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার—এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হয়!
এ সময় ড. ফারজানার মোবাইলে আব্দুল করিমের কল ঢোকে। ড. ফারজানা বললেন, তুষার, তোমাকে আমি একটু পরে আবার কল দিচ্ছি। তুষারের কলটা কেটে দিয়ে আব্দুল করিমের কল রিসিভ করেন ড. ফারজানা।
ড. ফারজানা, আপনি কত দূর গেছেন?
রেডিশনের যাওয়ার কথা না বলে মিথ্যে করে ড. ফারজানা বললেন, আমি তো বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি, ডিয়ার।
কেন বলুন তো? বিশেষ কোনো প্রয়োজন?
না, ও রকম কিছু না। আপনি যাবার পর থেকে আপনাকে ভাবছিলাম। মনে হচ্ছিল কাছাকাছি থাকলে আপনাকে ফিরতে বলবো। কোথাও গিয়ে দুজনে একান্তে একটু সময় কাটাবো।
ইশ্! তখন বলবেন না! আমি তো ড. এলিনা রহমানকে দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠে এলাম। আমি থাকলে তিনি যদি বিরক্ত হন।
আপনি চলে যাবার পর তাকে ডেকে দুমিনিট কথা বলে ছেড়ে দিয়েছি। বলেছি, অফিসে জরুরি মিটিং আছে।
আশ্চর্য! তিনি কিছু মনে করবেন না তো!
করলে করবে! কিন্তু আমার তো এখন মন খারাপ হয়ে গেলো। ভেবেছিলাম, আজ আপনার সাথে সময় কাটাবো। কিন্তু হলো না।
আমি তো আপনার সাথে সময় কাটানোর জন্য চাতকিনী হয়ে অপেক্ষা করে থাকি। আগে থেকে যদি একটু ইঙ্গিত দিতেন! এখন তো আমারও খারাপ লাগছে।
মজার একটা কথা আছে। ড. এলিনা আমার হাতে ঘড়িটা দেখে খুব পছন্দ করেছেন। বললেন, কোথায় থেকে কিনলেন?
কী বললেন?
বললাম, কিনিনি। আমার ওয়াইফ আমাকে গিফটি দিয়েছে।
রিয়েলি ইউ আর গ্রেট। শোনেন, এখন বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করেন। কাল-পরশু কোনো একদিন সুদে-আসলে পুষিয়ে দেবো।
আব্দুল করিমের মাথায় ড. ফারজানা নদীর স্রোতের মতো ঘুরপাক খেতে থাকে। দুচোখে আইকা আঠার মতো যেন তার সাজগোজ করা সুশ্রী মুখটা লেগে থাকে।
রেডিশনে ঢুকেই গাড়ি থেকে ড. ফারজানা নামতেই তুষার এগিয়ে আসে। তুষারের মুখের সঙ্গে ড. ফারজানা মুখ লাগিয়ে আদরের ছোঁয়া দিয়ে বললো, খুব হ্যান্ডসাম লাগছে তোমাকে।
তুষার উত্তরে হাসি দিয়ে তাকে বাম হাতে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।
ড্রাইভার ভাবে, এত বড় শিক্ষিত মহিলা দিনদুপুরে এত এত মিথ্যা কথা কয়! কত পুরুষের সাথে যে তার কত রকম সম্পর্ক! ম্যাডাম পারেও বটে!
চলবে…