কবি হিসেবে চেনার আগে, তাকে জেনেছি একজন মেধাবী ছান্দসিক ও ছন্দের শিক্ষক হিসেবে। তার ‘ছন্দের বারান্দা’ বইখানি আমার হাতে প্রথম তুলে দিয়েছিলেন কবি রফিক আজাদ। এজন্যে কবির সঙ্গে এক রিকশায় চেপে যেতে হয়েছিল অনেকটা দূরের পথ, সেই স্টেডিয়ামের দোতলায় ম্যারিয়টা নামের বুক স্টলে। সেই সময়ে এ রকম ২-১টা দোকান ছাড়া কলকাতার কবি-সাহিত্যিকদের বই পাওয়া প্রায় যেতোই না বাংলাদেশে। একজন অগ্রজ কবি হিসেবে শিক্ষানবিস কবির জন্যে এটি ছিল কবি রফিক আজাদের দেওয়া কবিতার প্রাথমিক জ্ঞানের উপহার। এই ঘটনাটি ছিল ১৯৮০-৮১ সালের ঘটনা। কাব্যচর্চার দীর্ঘ পথের পরিব্রাজক হতে চাইলে যে দীক্ষাজ্ঞান অবশ্য কর্তব্য, এই গ্রন্থটি ছিল তারই গুরুদক্ষিণা। শ্রেণীকক্ষে ছন্দ সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানের বাইরে এই গ্রন্থটি পাঠ করে বুঝতে পেরেছিলাম, ছন্দকে আয়ত্ত ও আত্মস্থ করে, তবেই না তাকে ভেঙে-চুরে, মাড়িয়ে, গুঁড়িয়ে, ছড়িয়ে পুনরায় নবকিশলয়ের মতো নৃত্যপর ঘনসবুজ ও সজিব করে তুলতে হয় দূর দ্বীপবাসিনীর মতো এক অধরা কবিতালোক। যেখানে কবিতা ও ছন্দ হরিহর আত্মায় এক ও অভিন্ন হয়ে সৃষ্টি করে অলৌকিক এক মায়ার জগৎ। যে জগতে প্রণয়, প্রকৃতি, ভালোবাসা, দ্রোহ-বিদ্রোহ, এমনকি পরিশেষে প্রতিবাদও তিমির হননের গান হতে চায়।
কবি শঙ্খ ঘোষের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদও এভাবে গান হয়ে ওঠে তার ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’কাব্যগ্রন্থের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ শিরোনামের অতুলনীয় এই কবিতায়।
আমাদের ডান পাশে ধস
আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ
আমাদের মাথায় বোমারু
পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধআমাদের পথ নেই আর
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।
বলতে দ্বিধা নেই যে, তার ছন্দের বইটি সম্মুখভাবে পাঠের আগেও আমি কবি শঙ্খ ঘোষের কবিতা পাঠ করেছি, তবে তা ছিল খুব বিচ্ছিন্ন পাঠ। এরপরেই ১৯৮০ সালে প্রকাশিত তার কবিতা সংগ্রহ-১ অনেক কষ্টে সংগ্রহ করেছিলাম। এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত ‘মূর্খ বড় সামাজিক নয়’ (১৯৭৪) এবং ‘বাবরের প্রার্থনা’১৯৭৬) আলাদাভাবে সংগ্রহ করেছিলাম কলকাতায় বসবাসরত আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে।
‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটি সেই সময়ে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বেশ কিছু কবিতার অসংখ্য পঙ্ক্তি তরুণ কবিদের মুখে মুখে ফিরতো।
এরপর লক্ষ করি, ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে প্রকাশিত ৪টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে দুই বাংলায়ই সবচেয়ে বেশি ঝড় তুলেছিল ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’ (১৯৮৪) এবং ‘ধুম লেগেছে হৃদকমলে’ (১৯৮৪)। বিশেষভাবে ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’কবিতাগ্রন্থের এমন একটি প্রতীকী নাম হতে পারে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে এই ধারণাটির সূচনা করেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। তিনি জানেন, পুঁজিবাদের মূল লক্ষ্য, পণ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুঁজির প্রসার। পরিশেষে মানুষ, মানবিকতা, ব্যক্তিগত প্রেম, ভালোবাসা সবই পুঁজিপতিদের এই সমাজে পণ্যে পরিণত হয়ে যায়। বিজ্ঞাপনের রঙ বাহারে, জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে বারংবার।
মৃদুভাষী কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তীব্র রাজনৈতিক দর্শন সচেতন কবি বলেই তিনি হেরে যেতে যেতেও নাম কবিতায় ফিরে আসেন শব্দ-শক্তির সমূহ নিয়ে, ঘুরে দাঁড়ান প্রবলভাবে।
একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
তোমার জন্য গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।একটা দুটো সহজ কথা
বলব ভাবি চোখের আড়ে
জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে
বিজ্ঞাপনে, রংবাহারে।
পুঁজিবাদের দাপটে ক্রমান্বয়ে হেরে যায় মানবিকতা, প্রেম ও তার প্রত্যয়। তখন বড় বেদনায় মুখের কথা একলা হয়ে গলির কোণেই পড়ে থাকে। কবির ক্লান্ত মুখোশ যেন ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে। কী দুঃসহ, রক্তাক্ত বেদনার কবিতা এটি, ভাবা যায় না।
ভালো লাগার আবেশজুড়ে থাকে তার সাহিত্যবোধ ও বোধির মননজাত লাবণ্যময় কথার ধারাবাহিকতা। তখনই মনে হয় একজন সত্যিকারের ভাষাশিল্পীর প্রচণ্ড শক্তিমত্তা ও দক্ষতার প্রগাঢ় পরিচয় বোধ হয় এভাবেই উৎকীর্ণ হয়ে ওঠে তার সৃষ্টিকর্মের তুলিতে।
অমিত শক্তিধর ঘনশ্যাম বর্ণের এই কবিকে প্রথম দেখি ১৯৯৪ সালে। আবৃত্তিলোকের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কবি-সাহিত্যিকের মধ্যে শামসুর রাহমান, বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, ত্রিদিব দস্তিদার এবং দু’জন আবৃত্তি শিল্পী ক্যামেলিয়া মুস্তফা ও মারিয়াম মান্নান মিলে একটি দলীয় যাত্রার একজন কবি হিসেবে আমিও গিয়েছিলাম কলকাতায়। সাহিত্যানুষ্ঠানে। রবীন্দ্রসদনে কবিতা পাঠ করেছিলাম দ্বিতীয়বারের মতো। পশ্চিম বাংলার অংশে ছিলেন শঙ্খ ঘোষ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তারাপদ রায়, দিব্যন্দু পালিত, বিজয়া মুখোপাধ্যায়, শরৎমুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণা বসুর মতো গুরুত্বপূর্ণ কবি। একইমঞ্চে তারাও কবিতা পড়েছিলেন সেদিন। পরেরদিন তার আলয়ে ধুম আড্ডা হয়েছিল। বিশেষভাবে তিনি রফিক আজাদ ও বেলাল চৌধুরীকে যেতে বলেছিলেন বারবার। সেই সূত্রে বাংলাদেশের আরও ক’জন কবি সাহিত্যিক, আমি, সৌমিত্র মিত্রসহ অনেকটা সময় কাটিয়েছিলাম তার সঙ্গে। তার মতোই শান্তস্নিগ্ধ তার বাড়ি এবং বৈঠকখানাটিও। বারবার চা আসছিল। একসময় বৌদি এসে দেখা দিয়ে গেলেন। তার কবি স্বামীর দেশের কবি-সাহিত্যিক মানুষ আমরা—আমাদের প্রতি কেমন যেন একটা বিনয়ী, প্রীতিময় দৃষ্টি ছিল তার চোখেমুখেও। আপন আপন গন্ধের সুবাসে ভরে সেই দেখাটুকু।
আপাত শান্তশ্রী, নিরাভরণ এই মানুষটি কবিত্ব শক্তিতে এত বলিষ্ঠ যে, তার সম্পর্কে কবি আসাদ চৌধুরী ক’দিন আগেও আমাকে দেওয়া তার একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমাদের বাংলা ভাষার জীবিত কবিদের মধ্যে শঙ্খ ঘোষ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। বিপুল জনপ্রিয় একজন কবি এত নিরাভরণ, নিম্নকণ্ঠ, মৃদুভাষী হতে পারেন, তাকে দেখেই প্রথম এই অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলাম।
এই অভিজ্ঞতা আরও ব্যাপক ও ঋদ্ধ হয়েছিল দিগন্ত প্রসারী তার জ্ঞান ও বিষয় বৈচিত্র্যের মিশেলে রচিত শান্ত শ্যামল গদ্যগ্রন্থগুলোর পাঠ থেকে। শঙ্খ ঘোষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য তার সৃজনশীল গদ্যভঙ্গিমা, যা অনেকের মতো আমাকেও সম্মোহনের মতো টানে। মাঝে-মধ্যে মনে হয়, আমি হয়তো কবিতাই পড়ছি তার। প্রধানত একজন কবি হিসেবে তার অধিকাংশ প্রবন্ধে-নিবন্ধেই শুদ্ধ কাব্যশিল্প, কবি, কবিতার নানা অনুষঙ্গ, ছন্দপ্রকরণ, শব্দশৈলী এবং কবিতার নানা বিষয়-আশয় নিয়ে অসাধারণ যেসব আলোচনা আছে—যেকোনো তরুণ কবি গভীর মনোনিবেশে যদি তা পাঠ করে থাকেন, অবশ্যই প্রকৃত কবিতার পথটি তিনি চিনে নেবেন অনায়াসে। এসব ক্ষেত্রে তিনি কবিদের কবি।
এ জাতীয় তার অধিকাংশ বই রফিক আজাদের সংগ্রহে ছিল। কবিতাপাগল মানুষ রফিক আজাদও তো সারাজীবন বই ছাড়া হাতে তুলে আর কিছুই কেনেননি। ছোট্ট দু’কামরার ঘরের ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত কেবলই বুকসেলফ, বই আর বইয়ে ঠাসা দেয়াল। সেই রূপটি শঙ্খদার ঘরেও দেখেছি। এরমধ্যে নিচের এই গ্রন্থগুলো খুবই তরঙ্গ তুলেছিল আমার মধ্যে। বার বার পড়ি। প্রতিবারই নতুন মনে হয়। এই গদ্যে অদ্ভুত এক জাদুবাস্তবতা আছে বলেই ধারণা করি। বিশেষভাবে কবিতাসম্পর্কিত লেখাগুলোতে তার শব্দের ব্যবহার যেন মেপে মেপে তিনি খুব হিসেব করে বসিয়েছেন। প্রতিটি শব্দ যেন চন্দনের সুবাস বয়ে আনে।
শঙ্খ ঘোষের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দিগুলি রাতগুলি’ প্রকাশিত হয়েছে ১৯৫৬ সালে। আমার জন্মের এক বছরের মাথায়, আজ মনে হয়, সে বড় দীর্ঘ সময়। এর তিন বছর পরেই তিনি গদ্যে যাত্রা করেন। ইতোমধ্যে তার ‘এখন সময় নয়’(১৯৬৭) এবং ‘নিহিত পাতাল ছায়া’ (১৯৬৭) নামে আরও দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৬৯ সালে ‘কালের মাত্রা ও রবীন্দ্রনাটক’ প্রথম প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থ তার।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘সন্ধ্যানদীর জলে’পর্যন্ত মোট ৪৮টি মুক্তগদ্যের বই রয়েছে তার। এরমধ্যে ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’ তো আমাদের মাথা খারাপ করে দেয়। কতবার পড়েছি বলতে পারবো না। এছাড়া ‘নিঃশব্দের তর্জনী’ (১৯৭১), ‘এ আমির আবরণ’ (১৯৮০), ‘শব্দ আর সত্য’ (১৯৮২), ‘নির্মাণ আর সৃষ্টি’ (১৯৮২), ‘কল্পনার হিস্টোরিয়া’ (১৯৮৪), ‘জার্নাল’ (১৯৮৫), ‘ঘুমিয়ে পড়া এলবাম’ (১৯৮৬) ও ‘কবিতালেখা কবিতাপড়া (১৯৮৯) উল্লেখযোগ্য। আর ১৯৮৯ সালে প্রথম প্রকাশিত ‘কবিতালেখা কবিতাপড়া’গদ্যের বইটির পরবর্তী সংস্করণ ২০১৭ প্রকাশ করে সপ্তর্ষি প্রকাশনা।
বইটির সর্বশেষ সংস্করণ হাতে নিয়ে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছি। বৈশ্বিক এই করোক্রান্ত সময়ে যখনই কিছুই লিখতে বা পড়তে মনসায় দেয় না, কাকতাড়ুয়ার মতো কেমন যেন একটা ঘুলঘুলি সময় এসে হোঁচট খেয়ে পড়ে থাকে পায়ের কাছে, তনু-মনের চলাচল থেমে যায়—তখন অনুপ্রাণিত হতে আমি বইটি হাতে নেই। ৯৯ পৃষ্ঠার ছোট্ট এই বইয়ে ৭টি নিবন্ধ স্থান পেয়েছে। চাইলে ঘণ্টাখানেকে পড়ে শেষ করা যায়। কিন্তু শেষ হওয়ার পরে আবারও পলিমাটির কেমন যেন একটা টান অনুভূত হয়।
ভালো লাগার আবেশজুড়ে থাকে তার সাহিত্যবোধ ও বোধির মননজাত লাবণ্যময় কথার ধারাবাহিকতা। তখনই মনে হয় একজন সত্যিকারের ভাষাশিল্পীর প্রচণ্ড শক্তিমত্তা ও দক্ষতার প্রগাঢ় পরিচয় বোধ হয় এভাবেই উৎকীর্ণ হয়ে ওঠে তার সৃষ্টিকর্মের তুলিতে।
তার কালজয়ী পঙ্ক্তিমালায় তিনি বেঁচে থাকবেন, বাংলা সাহিত্য যতদিন আছে। আমার এই সামান্য লেখায়, তাকে ধারণ করার দুঃসাধ্য আমার নেই। এ শুধু আমার হৃদয়ের অর্ঘ্যকুসুম।
এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, শঙ্খ ঘোষের প্রবন্ধের ভাষায় ও পরিবেশনায় আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম সাহিত্যরুচির এক নির্জন, নিমগ্ন, নিবিড়তর পরিসংহত রূপ। বিচিত্র বিষয়ে বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনায় যেমন তিনি ক্লান্তিহীন, তেমনি বিভিন্ন বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি এত বিস্তৃত যে অপার বিস্ময়ে মাথা নত হয়ে আসে। পাশাপাশি সামাজিক অন্যায়, অনিয়ম ও রাজনৈতিক অবিচারেও তিনি ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছেন তার কলমের অস্ত্রে, কখনো বা প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন সশরীরে।
‘আমাদের কবিতাপড়া’প্রবন্ধটি শুরু করেছেন তিনি ‘প্রায় পঁচিশ বছর আগে, একালের এক বড়ো আমেরিকান কবি অ্যালেনগিনসবার্গ এসেছিলেন কলকাতায়’ বলে। কয়েকজন তরুণ কবির সঙ্গে অল্প সময়ের বৈঠকে প্রথমেই প্রশ্ন করেছিলেন তিনি, ‘কাল রাতে ঘুমোবার আগে কার কবিতা পড়েছো তোমরা?’
মূলত এই প্রশ্নটিকে ঘিরে তিনি অধরা কবিতা কী, কেন, কবিতা কেন পড়তে হবে; তারও অসাধারণ কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্বল্প পরিসরের এই রচনায়। অপূর্ব মনস্বিতায়, আন্তরিক উচ্চারণে তিনি এই প্রশ্নের মীমাংসা দিয়েছেন এভাবে, ‘কবিতা হলো তা-ই যার মধ্য দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকাকে গভীরতম আর ব্যাপকতমভাবে ছুঁয়ে থাকতে পারি আমরা। কবিতা হলো তা-ই, যা আমাদের অধিচেতনা আর অবচেতনার সঙ্গে কেবলই যুক্ত করে দেয় আমাদের সময়ের চেতনাকে। কবিতা হলো তা-ই, যা আমাদের অতীত আর ভবিষ্যৎকে বর্তমানের একটি বিন্দুতে এনে বাঁধে। কবিতা যিনি পড়বেন, তাকে এগেতে হয় এরই বিশ্বাস থেকে, এরই আগ্রহ থেকে।’
এই প্রসঙ্গে মনে করতে চাই, ব্রায়ান জিসিনের সেই কথাটি যিনি বলেছিলেন, ‘কবিদের কাজ হলো শব্দদের মুক্তি দেওয়া। কবিদের কাজ হলো শব্দদের বুকে যে গান ভরা আছে, সেগুলো তাদের গাইতে দেওয়া।’
কবি শঙ্খ ঘোষ একজন ভাষাশিল্পী হিসেবে সারাজীবন নিবেদিত ছিলেন, সেই একটি মাত্র তার কাজে। কবিতায় ও গদ্যে তার শব্দেরা সুদূরের পিয়াসী নয় শুধু, তারা নাচে, তারা গায়, তারা চন্দনের সুবাস ছড়ায়, পরিশেষে ভালোবাসে মানুষের বেদনা।
কবিতার গায়ে তাই তিনি তুলে দিতে পেরেছেন মানুষকে ভালোবাসার সেই উত্তরীয়, যেখানে পরিণামহীন জীবনের সব প্রশ্ন প্রচ্ছন্ন রেখেও প্রতিমুহূর্ত-যাপনের একটা রূপরেখা খুঁজে পাবে পাঠক অনায়াসে।
এরপর আর সত্যি বলার কিছু থাকে না। তিনি সেই কবি, সেই দ্রষ্টা, যিনি কখনো হারিয়ে যান না। চিরকাল বহমান তিনি মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে। অনন্তবাসের ঠিকানায় যিনি নাম লেখান, তার জন্য মর্তের ঠিকানা বাহুল্য মাত্র। তিনি আজ পৃথিবীর স্বজন ও বন্ধুজন। আমাদের প্রিয় কবি। তার কালজয়ী পঙ্ক্তিমালায় তিনি বেঁচে থাকবেন, বাংলা সাহিত্য যতদিন আছে। আমার এই সামান্য লেখায়, তাকে ধারণ করার দুঃসাধ্য আমার নেই। এ শুধু আমার হৃদয়ের অর্ঘ্যকুসুম।