প্রথম কালবৈশাখ
খোলা বারান্দার সাদা রঙের বিশাল একটা ঘর
দোতলায়।
পাশ ভরা গাছে।
কাঠাল,মেহগনি।
দূরে পুকুর।
বাড়ির সীমানা আকাশে আঁকছে,
ঝাক কবুতর।
ঘরভর্তি বই
একটা কাঠের টেবিল
আরাম কেদারা
ছোট্ট বেতের মোড়া।
দেয়ালে ঝুলছে তৈলচিত্র
কোন এক প্রভাবশালী পূর্বপুরুষ।
লণ্ঠন,
ছাদে, বৈদ্যুতিক পাখা।।
আর সে ঘরের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা
পদ্ম নামের
এক বাড়ন্ত বাগানবিলাস।
নতুন মলাটে ছোট্ট সুখী উপন্যাস।
লোহার গরাদে দেওয়া সে ঘরে চৈত্রের শেষ দ্বিপ্রহর
মোটা পাড়ে আটপৌরে
লম্বা আঁচলের কলাপাতা শাড়িতে পদ্মের
মন কেন্দ্রীভূত জীবনানন্দে।
আকাশের রঙ যেমন,
তেমনি।
নিস্তব্ধ চারদিক। এরই মাঝে
হঠাৎ দমকা হাওয়া
হাত থেকে ছুটে যাওয়া, কবিতা।
আকাশে ছুটোছুটি করা মেঘ আর
সাদা রঙের বিশাল ঘরে
বাগানবিলাসের।
ষোড়ষী কন্যার জীবনের প্রথম
ঝোড়ো হাওয়া।
উদ্ভ্রান্ত দ্বিপ্রহরে পদ্মের
মোটা পাড়ের কলাপাতা আঁচলের
আচমকা খসে যাওয়া।
দেয়াল থেকে চোখ পাকিয়ে
শাসাচ্ছে, প্রভাবশালী পূর্বপুরুষ।
বাক পেয়েছে, মেহগনি গাছ
ঝাক কবুতর
বেতের মোড়া, টেবিল এমনকি লণ্ঠনও।
দমকা হাওয়া কখনো সখনো
টানা বারান্দা গরাদের জানলা পেরিয়ে
ঘরেও প্রবেশ করে
পদ্ম,
মনের রাশ ধরো।।
বাড়ন্ত বাগানবিলাস তখন
হাওয়ায় গাইছে, উড়ছে
কলকল, পতপত।
বাড়ির সীমানা ধরে আকাশে ওড়া কবুতররাও
এমনকি ঠায় দাঁড়িয়ে দেখছে,
বিলাসী পদ্মের
সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া।
তারপর!
তারপর যা তাই।
দমকা হাওয়ার তেমনই হঠাৎ উধাও।
মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে জীবনানন্দের খোলাপাতা
কবিতা ‘সুদর্শনা’
‘এই পৃথিবীর ভালো পরিচিত রোদের মতন
তোমার শরীর; তুমি দান করোনি তো;
সময় তোমাকে সব দান করে মৃতদার বলে
সুদর্শনা, তুমি আজ মৃত।’
আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে ওড়া
উদ্ভ্রান্ত পদ্ম
দু’হাত দিয়ে ঘরের মেঝে আঁকড়ে
খসে পড়া কলাপাতা আঁচলের আড়ালে
নিজেকে বোধ করে,
মৃত।
লোহার গরাদে দেওয়া ঘরে চৈত্রের শেষ রাত্রি
খোলা বারান্দার সাদা রঙের বিশাল ঘর
ঘরভর্তি বই
একটা কাঠের টেবিল
আরাম কেদারা
ছোট্ট বেতের মোড়া।
সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা
পদ্ম নামের
এক মৃতপ্রায় বাগানবিলাস।
সব যা তাই আছে।
বাগানবিলাসের
সুখী উপন্যাসে শুধু নতুন জুটেছে।
প্রথম কালবৈশাখ।
অনাবৃতা
মায়া কান্নায় ভেসে যায়
হঠাৎ মাঝ রাত্তিরের
চুপ চাপ কুড়িয়ে পাওয়া আদর।
ভেসে যায়
ফুসে ওঠা লাল নাক
ফোলা ফোলা ঠোঁট
ভেজা চোখের ওপর
শক্ত করে আটকে রাখা,
রঙ মাখা সাহসী মুখোশ!
ক্রনিক পেইন
কতটাই আর গভীর হতে পারে
একটা রাত,
কতটাই বা বাড়ে আঁধার।
যতই জমুক উষ্ণতা দূরত্বের শীতলতায়
কষ্টরাত,
দীর্ঘ কোনো ব্যথার সমান তো আর নয়!