পর্ব-পাঁচ
ঘড়ির কাঁটা মেপেই যেনো সকাল ঠিক এগারটায় দিন ড. এলিনা রহমান আব্দুল করিমের রুমে ঢুকলেন। সময়ের যেন এক মিনিটও এদিক ওদিক নয়। আব্দুল করিম ভদ্রতা করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেই তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন ড. এলিনা রহমান। এ রকম অবস্থার মুখোমুখি তিনি এর আগে আর কখনো হননি। ফলে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি—কী করবেন! হাতটা একটু এগোয় আবার এগোয় না—এরকম অবস্থা। আবার প্রথম দর্শনেই ড. এলিনা রহমানের রূপে তিনি অবাক! এতো সুন্দরী মহিলা! ঈশ্বর যেন তার পুরো শরীরটা মেপে মেপে তৈরি করেছেন—কোথাও কোনো সৌন্দর্যের একটুও ঘাটতি নেই। একজন সুন্দরী নারী বলতে এতোদিন যে কল্পনা তার মনের ভেতর ছিল, ড. এলিনা যেন তাই। ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের পদ্মাবতী কিংবা ‘বিষাদ-সিন্ধু’র জয়নাবের রূপের যে ছবিটা তার মনের ভেতর এতকাল কল্পনায় ছিল, এলিনা রহমান যেন ঠিক তাই!
আব্দুল করিমের অন্যমনস্কতা লক্ষ করে ড. এলিনা রহমান বললেন, আপনি তো এখনো পুরনো কালের মানুষ হয়ে আছেন। আমি নিজে হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছি…
ড. এলিনার কথাটা শেষ না হতেই এবার আব্দুল করিমও তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, প্লিজ বসুন।
সেটাও তো অনেক দেরিতে বললেন। শুনুন, গতকাল যখন মোবাইলে আপনার সাথে কথা বললাম, কথা বলার পরই মনে হয়েছে, আপনি লোকটা ভদ্র—ভালো মানুষ।
তাই!
জি। আর শুনুন, আমি কিন্তু আপনার পরিবারের মানুষই—পরিচয় না থাকলেও, যখন আপনার কথা শুনেছি—আপনার সম্পর্কে জেনেছি—তখুনি আপনাকে আমার নিজের আপনজনের মতোই মনে হয়েছে।
তার আগে বলুন চা না কফি?
কফি।
ওকে। এবার বলুন। কার কাছে আমার কথা শুনলেন। আমার হাজবেন্ডের বন্ধু শাহিন পারভেজ—বিজনেস করেন। সেই আপনার কথা বলেছে।
শাহিন পারভেজ! হ্যাঁ, আমার বন্ধু—ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দাঁড়ান, ওকে একটা ফোন দিই।
এখন না। পরে দিয়েন। তো আমার হাজবেন্ড অবসরে যাবার পরে একটা বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করেন জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে। ওখানে শাহিন পারভেজের কী যেন একটা ব্যবসা আছে। আমি অতোটা জানি না। আমার হাজবেন্ডের সাথেও তার খুবই ভালো সম্পর্ক। হাজবেন্ডের অফিসেই একদিন তার সাথে আমার পরিচয়। আমি ডক্টরেট করেছি শুনে, উনি বললেন, বাঘা যতীন বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আমার বন্ধু মেজর করিম আছে। আপনি ওখানে যাবেন। যাবার আগে ফোন করে নেবেন। আমার হাজবেন্ডও আগ্রহ দেখালো। সে ও বললো, যাও— কথা বলে দেখো। আর আমাকেও ও চিনবে।যতটুকু মনে হয় আমার দুবছরের জুনিয়র হবে। সেকারণে আপনাকে গতকাল ফোন করেছিলাম।
ইতোমধ্যে পানি আর কফি দিয়ে যায় পিয়ন।
নেন ভাবি। আচ্ছা, আপনি কোন সাবজেক্টে পড়ালেখা করেছেন?
আমি আসলে সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিলাম। বিএসসি পাসকোর্সে ছিলাম। পরে ভাষাতত্ত্বে দুবছরের এম এ করেছি। তারপর কলকাতা থেকে আধুনিক কবিতায় পিএইচডি করেছি।
আমাদের এখানে তো বাংলা ডিপার্টমেন্ট আছে। আপনি এখানে ক্লাস নেবেন। এখন তো ফুলটাইম টিচার নেওয়া আপাতত বন্ধ আছে। আপাতত খণ্ডকালীন হিসেবে ঢোকেন। পরে যখন শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার হবে, তখন আপনি আবেদন করলে, আমি এক বব্যস্থা করে নিয়ে নেবো আপনাকে। এখানে অবশ্য বোর্ডের কড়াকড়ি একটু বেশি। আপনার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। আমি দেখবো।
অনেক ধন্যবাদ করিম ভাই। শোনেন, আমি কিন্তু আপনাকে স্যার ডাকতে পারবো না। আপনি তো আবার এখানে বিশাল চেয়ারে বসে আছেন। ভিসিরও ওপরে আপনার পাওয়ার। কিন্তু আমি আপনাকে আমার পরিবারেরই সদস্য মনে করি। পরিবারের সদস্যকে তো আর স্যার ডাকা যায় না।
আরে আপনি আমাকে স্যার ডাকবেন কেন? আমার সিনিয়র স্যারের ওয়াইফ আপনি। আচ্ছা ভাবি, এর আগে কি অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন?
পড়িয়েছি তো। গৌরী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাও আরও আগে। বছর দুয়েক কোথাও আর ঢুকিনি। বাচ্চাটাকে তো সময় দিতে হয়।
কয় বাচ্চা আপনার?
একটাই। ছেলে। চার বছর হলো। আচ্ছা, করিম ভাই, আপনার এখানে বাংলা বিভাগের প্রধান কে?
ড. ফারজানা। বেশ ভালো মেয়ে। একটু অপেক্ষা করুন, ডাকছি। আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। বলেই ড. ফারজানাকে ফোন করে আসতে বললেন।
ড. ফারজানা নামটা কিন্তু চেনা চেনা লাগছে! বললেন ড. এলিনা রহমান।
তাকে তো সবাই মোটামুটি চেনেন।
ড. এলিনা রহমানকেও কিন্তু কবি সাহিত্যিক সুশীল সমাজের সবাই চেনেন। বেশ অহমিকার সাথে বললেন নিজেই।
মানে! আপনি কবি!
আমার অনেকগুলো কবিতার বই বের হয়েছে। দৈনিক পত্রিকায় তো নিয়মিত আমার লেখা ছাপা হয়। ভারতেও বিভিন্ন পত্রিকায় আমার লেখা প্রকাশ হয়। বিভিন্ন চ্যানেলে টকশোতে আমি তো প্রায়ই যাই। আমাকে কোন চ্যানেলে কখনো দেখেননি আপনি?
হয়তো দেখেছি। ওভাবে খেয়াল করা হয়নি। আসলে সত্যি কথা কী টিভিই তো দেখা হয় না। বউ-বাচ্চা স্টার-জলসা ওসব নিয়েই থাকে। আমার আর দেশীয় কোনো চ্যানেল দেখা হয় না বললেই চলে।
আমাদের ঘরে ঘরে এখন এই একই সমস্যা। দেশীয় চ্যানেল কেউ দেখে না বললেই চলে। তারপরও মিডিয়াতে আমাকে কিন্তু মোটামুটি সবাই চেনে।
সুন্দর মুখের জয় তো সবখানেই ভাবি। আপনি যে সুন্দর!
জানেন যেখানে যাই—সবখানেই এই একই কথা—আপনি অনেক সুন্দর—বহুত সুন্দর—ইন্ডিয়ান নায়িকাদের মতো—কত কত কথা যে!
আপনি যে আরও আগে কেন আসেননি, তাহলে এখানে আপনাকে বাংলা বিভাগের চেয়ারপারসন করে নিতাম।
দিন তো শেষ হয়ে যায়নি। পরে নেবেন। উনি তো আর সারাজীবন চেয়ারপারসন থাকবেন না।
তা অবশ্য ঠিক বলেছেন।
এ সময় ড. ফারজানা আব্দুল করিমের রুমে ঢুকতেই তিনি অতি উৎসাহী হয়ে বললেন, ড. ফারজানা বসেন। তারপর ড. এলিনা রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখুন তো চিনতে পারেন কিনা! উনি কিন্তু মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। আবার কবিও। বলতে পারেন। উনি আমার পরিবারের সদস্যও। আমার ভাবি।
ড. ফারজানা কিছু বলতে যাচ্ছিল এ সময় আব্দুল করিম আবার বললেন, ড. ফারজানার হাজবেন্ডও কিন্তু কবি।
ড. এলিনা রহমান বললেন, কবি হলে তো আমি নিশ্চয় চিনবো। কী নাম উনার?
ড. এলিনা রহমানের আগবাড়িয়ে কথা বলাটা পছন্দ হলো না ড. ফারজানার। আব্দুল করিমও তার প্রতি বেশি আদিখ্যোতা দেখাচ্ছেন বলে তার প্রতিও কেমন যেন একটু বিরক্ত হলেন তিনি। মনে মনে ভাবলেন, পুরুষ মানুষ তো! নতুন জিনিস পেয়েছে তো! দেখতে শুনতেও কম নয়। শরীরের অর্ধেক তো খুলেই আছে। আবেগে উপচে পড়ছে! কিন্তু কিছুই বুঝতে না দিয়ে ড. ফারজানা বললেন, স্যার, আমার হাজবেন্ড ওরকম কোনো কবি নন, যে সবাই তাকে চিনবেন। বা উনি তাকে চিনতে পারবেন। আমিও কিন্তু স্যার কবি হিসেবে উনার নাম কখনো শুনিনি। আমার নাম শোনেননি আপনি? অথচ বাংলা সাহিত্য পড়ান আপনি! যা হোক সে ব্যর্থতা হয়তো আমারই। অতটা খ্যাতি হয়তো এখনো অর্জন করতে পারিনি। যা হোক আপনার হাজবেন্ডের নামটা বলেন তো চিনি কি না। ড. এলিনা রহমানের এ কথায় সচেতনভাবেই কোনো উত্তর না দিয়ে আব্দুল করিমকে বললেন, স্যার কি জন্য আমাকে ডেকেছেন? আমার ক্লাস আছে। ছেলেমেয়েরা বসে আছে।
ড. ফারজানা যে ড. এলিনার কথার উত্তর দেননি, তা ভালো করেই লক্ষ করেছেন তিনি। কথাটা সেখানেই ফিরিয়ে নিয়ে বললেন, ড. ফারজানা আপনার স্বামীর নামটা বললেন না যে!
আদিত্য রায়হান। কবি আদিত্য রায়হান। ড. ফারজানা অনেকটা গম্ভীর ও বিরক্তভাবে নামটা বললেন।
ভাবি, চিনতে পারেন? আব্দুল করিম বললেন।
নামটা ড. এলিনার চেনা। কিন্তু একদমই না চেনার ভান করে বললেন, না, আদিত্য রায়হান নামে তো কোনো কবি’র নাম শুনিনি। আমি তো বাংলাদেশের সব কবিরই নাম জানি। চিনিও।
আমার স্বামী দেশখ্যাত কোনো কবি নন যে আপনি তাকে চিনবেন! বা সবাইকেই চিনতে হবে! কথাটায় খানিকটা ঝাঁজ ঝরে পড়লো।
ড. শাহেদ জাহান মনে মনে খুশিই হলেন। তিনি জানতেন ড. ফারজানাকে সিসিও ভেতরে ভেতরে বাহুবন্দি খেলায় বেশ জোরেই এগুচ্ছিল।
আপনি বোধহয় আমার কথায় বিরক্ত হচ্ছেন! ড. এলিনা রহমান বললেন।
আব্দুল করিম বললেন, শোনেন, ড. ফারজানা, আপনাকে যে জন্য ডেকেছি—উনি বাংলায় ডক্টরেট করেছেন। আমাদের এখানে উনাকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ক্লাস দেবেন।
স্যার, এ সেমিস্টারের ক্লাস তো অফার হয়ে গেছে। এখন কিভাবে ক্লাস দেবো? বলেই ড. এলিনা রহমানের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে কী যেন পরখ করলেন। ড. এলিনার রহমানের কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগলো না। ড. ফারজানার এরকম তাকানো আব্দুল করিমের কাছেও ভালো লাগলো না। একটু অপমান-অপমান ঠেকলো। ড. ফারজানা মনে মনে ভাবলেন, আমি যে আব্দুল করিমকে চিনি, আজকে তো তাকে আমার সেই আব্দুল করিমই মনে হচ্ছে না!
ড. ফারজানার বারবার মনে হচ্ছিল ড. এলিনাকে তিনি কোথাও দেখেছেন—কোথাও কখনো তার সাথে কথা হয়েছে। হুট করেই মনে হলো— সম্ভবত কেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ড. ফারজানা ড. এলিনাকে বললেন, আচ্ছা, আপনার সাথে আমার কি কখনো কেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা হয়েছিল? আপনি কি কখনো ক্লাসের জন্য গিয়েছিলেন?
জি, গিয়েছিলাম তো।
আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি। আপনি তো বাংলায় অনার্স করেননি। সায়েন্সে পড়েছেন। ভাষাতত্ত্বে এম এ করেছেন। কলকাতা থেকে পিএইচডি করেছেন—এরকম কিছু কি?
ড. এলিনা রহমান কিছু বলার আগেই আব্দুল করিম খুশি হয়ে বললেন, হ্যাঁ, একদম ঠিকই বলেছেন। ভাবি তো একটু আগেই আমাকে তাই বললেন।
ড. এলিনা রহমানের এতক্ষণে আভা ছড়ানো উজ্জ্বল মুখটা কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে গেলো। অহংবোধ ছড়ানো কথাগুলোও কেমন যেন শুকিয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, ড. ফারজানা, তুমি এখানেও আমার পথের কাঁটা! শুরুতেই তোমার সাথে আমার খেলাটা শুরু হয়ে গেলো! আমিও তোমাকে চিনতে পেরেছি। কেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার জন্যই আমি ক্লাস পাইনি। এখানে তোমাকে আমি সেই জবাবটা দিয়ে দেবো। পথের কাঁটা এবার একদম উপড়ে ফেলবো। মুখে খুশির ভাব দেখিয়ে ড. ফারজানাকে বললেন, হ্যাঁ, আমি তো ওখানে ক্লাসের জন্য গিয়েছিলাম।
আমার কাছেই গিয়েছিলেন। বলেই আব্দুল করিমকে বললেন, স্যার, উনাকে তো আমরা এখন কেন—কখনোই ক্লাস দিতে পারবো না। উনার পড়ালেখার ডিসিপ্লিন ঠিক নেই। বাংলায় অনার্স, মাস্টার্স তো থাকতে হবে। পিএইচডি তো পরের কথা।
আব্দুল করিম মুহূর্তেই প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ড. ফারজানা, এসব নিয়মকানুনের কথা বলে ড. এলিনাকে আপনি ক্লাস দিতে চান না। বুঝতে পেরেছি আপনি এই একই কাজ কেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও করেছেন। আপনি তাকে ঈর্ষা করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন। কারণ উনি আপনার থেকে বেশি যোগ্য।
স্যার, আপনি অহেতুক আমাকে রাগ করছেন। আমি নিয়মের কথা বলছি। আপনি প্রয়োজনে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অন্যদের সাথেও আলোচনা করে দেখতে পারেন।
আপনি আমাকেও জ্ঞান দিচ্ছেন! ভালো। আপনি ডিপার্টমেন্টে যান এবং কাউকে বাদ দিয়ে হলেও এই সেমিস্টারেই ড. এলিনার ক্লাসের ব্যবস্থা করেন।
ড. ফারজানা কোনো উত্তর না দিয়ে আব্দুল করিমের রুম থেকে বের হয়ে সোজা ভিসির রুমে গেলেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, স্যার, কেউ যদি বাংলায় না পড়ে এসে বাংলায় ক্লাস নিতে চান, তাকে কি ক্লাস দেওয়া সম্ভব?
কী ওলোট পালোট বলছো? কী হয়েছে বলো তো?
ড. এলিনা রহমান নামে অর্ধনগ্না বক্ষের এক সুন্দরী মহিলা এসেছেন সিসি স্যারের কাছে। বিএসসি পাস করে পরে ভাষাতত্ত্বে এম এ করেছেন। কলকাতার কোথায় থেকে নাকি কী পিএইচডিও করেছেন, সিসি স্যার তাকে ক্লাস দেওয়ার হুকুম জারি করে দিয়েছেন। আমি রাজি হইনি বলে কী যে ব্যবহারটা আমার সাথে করলেন!
ড. শাহেদ জাহান কথাটা গভীরভাবে নিলেন। খুব গুরুত্ব দেওয়ার ভাব করলেন। বললেন, না, সিসি তো এটা বলতে পারে না। উনি কী অনার্স মাস্টার্স পড়েছেন? ইন্টামিডিয়েট পাম করে লেফট রাইট করে করে, এখন এসে ভিসির মাথার ওপরে চড়ে আছে। যত্ত সব! আচ্ছা তুমি ডিপার্টমেন্টে যাও। বিষয়টি আমি দেখবো। আবার বললেন, আমার কথা বলে দিও—আমার সাথে যেন কথা বলেন।
তারপর কী হবে? চেয়ারম্যানকে আমার নামে যা-তা বলে চাকরিটা তো খেয়ে ফেলবে!
না বললেও খাবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কিছু হিসাব করে চলতে হয়। পালস্ বুঝে চলতে হয়। চেয়ারম্যান তো ব্যবসা করা লোক। উনি কি তোমার আমার মতো ডক্টরেট করা লোক! উনি কি পড়ালেখার ডিসিপ্লিন বুঝবেন? বুঝবেন না। তাকে যা বোঝানো হবে, তাই বুঝবেন। তোমাকে যদি সিসি এ ব্যাপারে আবারও বলেন, বলবে, ভিসি স্যারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি, উনি বলেছেন, দেখছি কী করা যায়!
স্যার, আমি যখন কেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম, তখনো এই মহিলা ওখানে ক্লাসের জন্য গিয়েছিল। ওখানে পাত্তা পায়নি। কারণ ওখানে ডিন ম্যাডাম ছিলেন বাংলার। এ বিষয়গুলো তিনি ভালো জানতেন। আর তিনি ছিলেন খুব পাওয়ারফুল। এখানে তো স্যার এখন সমস্যা তৈরি হয়ে গেলো।
সমস্যা তো হবেই। সমাধানও আছে। এখন যাও। আর বুধবারের প্রোগ্রামটা কিন্তু ভেরি স্পেশাল হবে।
স্যার, তা তো হবেই। আপনি না বললেও তা হবে। কিন্তু এটাকে আপনি বিশেষভাবে না দেখলে আমার কিন্তু অনেক ঝামেলা হবে। আজকে সিসি স্যারের যে চেহারা দেখলাম! একই মুখে যে কত রকমের চেহারা হয়! মানুষের কত রূপ!
ঠিক আছে বলেছি তো, ব্যাপারটা আমি বিশেষভাবে দেখবো। তুমি ডিপার্টমেন্টে যাও। মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করো।
জি স্যার—বলেই ড. ফারজানা বের হয়ে যায়। কিন্তু মাথার ভেতর আব্দুল করিম আর ড. এলিনা রহমানের চেহারাটা অসহ্য রৌদ্রের ঢেউয়ের মতো ভেসে বেড়াতে থাকে।
ড. শাহেদ জাহান মনে মনে খুশিই হলেন। তিনি জানতেন ড. ফারজানাকে সিসিও ভেতরে ভেতরে বাহুবন্দি খেলায় বেশ জোরেই এগুচ্ছিল।
চলবে…