এক.
বাঘা যতীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চিফ কো-অর্ডিনেটর আব্দুল করিম হুট করেই বাংলা বিভাগের চেয়ারপারশন সুদর্শনা ড. ফারজানার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কে একটা দূরত্ব তৈরি করে ফেললো। ইচ্ছে করেই। ড. ফারজানা কিছুই বুঝতে পারলেন না আব্দুল করিমের সঙ্গে তার কী এমন হলো যে, তিনি একেবারে নীরবে নিজের মতো দূরে সরে গেলেন। এই পরিবর্তন কেন! এতটা ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর এটা কেমন আচরণ! এতদিনের এত কিছু একটু একটু করে এত ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক—সবই কি মিথ্যে! অভিনয়! লেনদেনের ছলচাতুরি! নাকি ড. ফারজানার সর্বস্ব পাওয়ার পর তার মোহ্ শেষ হয়ে গেছে—দুপুরের তাতানো রোদ্দুর সরে নিস্তেজ বিকেল নেমে এসেছে!
ড. ফারজানার মাথায় কিছুই ঢোকে না। ভাবে, চাকরিটা দাপটের সঙ্গে করার জন্য নিজের থেকেই তার সঙ্গে এত বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছি, তাকে আগ্রহী করে তুলতে নিজেকে সবসময় আকর্ষণীয় করে রেখেছি। তিনিও তো আমার মুগ্ধতায় অন্ধ হয়েছিলেন। কী এমন হলো যে, সবকিছু হঠাৎ ঝড়ের মতো তছনছ হয়ে গেলো! ড. ফারজানা ভাবনায় কোনো কূলকিনারা খুঁজে পায় না। কেমন যেন ভয় হয়—শেষপর্যন্ত আমার চাকরিটা থাকবে তো! চাকরিটা তো তার হাতে। তিনি বোর্ডকে যে রিপোর্ট দেবেন—সেটাই সব। আমার নামে যদি খারাপ কোন রিপোর্ট বোর্ডকে দেয়! এক নিমিষেই তো আমার সব শেষ হয়ে যাবে! চাকরিটার জন্য তার সঙ্গে কতভাবেই না কী করেছি! এখন যদি সেই চাকরিটাই না থাকে! কিছুই ভালো লাগে না ড. ফারজানার। আব্দুল করিমের সঙ্গে একান্তে কাটানো দিনগুলো ছবির মতো ভাসতে থাকে তার মনের সেলুলয়েড ফিতায়। নিজের মন শরীর সবকিছুই কেমন বিবর্ণ লাগে নিজের কাছেই।
ড. ফারজানার সঙ্গে আব্দুল করিম প্রাণবন্ত আবেগময় গল্প করতে ভালোবাসে। করেও। ড. ফারজানা সে গল্পে আবেগময় চমৎকার শব্দ ও বিশেষণ প্রয়োগ করে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রায় দিনই দুপুরে দুজনে একসঙ্গে খায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে কথাটা ভাসলেও, মুখ খুলে কেউ বলতে সাহস পায় না।
উপাচার্য ড. শাহেদ জাহানও ব্যাপারটি শুনেছেন। কিন্তু তিনি তা বিশ্বাস করেন না। কারণ ড. ফারজানা তার বিশেষ অনুগত। দুজনের অন্তরঙ্গ গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বাইরে কথাটা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, সেটা শুনতেও ভালো লাগছে না। কারণ ড. ফারজানা একজন শিক্ষিতা ও অপূর্ব সুন্দরী মহিলা। তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক। সে আবার কী করে বোর্ডের কেরানির সঙ্গে সম্পর্ক করে! ভিসি চিফ কো-অর্ডিনেটরকে মজা করে কখনো কখনো কেরানি সম্বোধন করেন। তবে তার সামনে নয়, পেছনে। শাহেদ জাহান ভাবছিলেন আজ বিকেলে ড. ফারজানাকে ডেকে এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলাই ভালো। যদি কিছু না থাকবে তাহলে তাদের নিয়ে এত বাজেকথা ছড়াচ্ছ কেন! হঠাৎ এসময় ড. ফারজানা ভিসির রুমে ঢোকেন। ভিসি অবাক হয়ে বললেন, তুমি এসেছ? ভালোই হলো। তোমাকেই ভাবছিলাম।
আমাকেই তো ভাববেন। আমি ছাড়া আরও কেউ আছে নাকি ভাবার? আজ তো স্যার আপনাকে একেবারে সেইরকম লাগছে!
তোমার পছন্দ করে কেনা শার্ট। সে কারণেই হয়তো। আচ্ছা শোনো, ফারজানা, কেরানিটাকে নিয়ে তো তোমার নামে অনেক বাজে কথা কানে আসছে। বোর্ডও শুনেছে কি না, জানি না। আমাকে এখনো কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
অন্যদের কথা বাদ দেন, স্যার। আপনি কি নিজে এসব বিশ্বাস করেন?
তা করি না। কিন্তু সবাই তো বলছে। সবার মুখ কিভাবে বন্ধ করবে?
শোনেন স্যার, আপনাকে আর আমাকে নিয়েও এরকম হাজারটা কথা দৈনিক হয়। আপনি তা জানেন?
কিছু তো জানিই। তোমাকে আর আমাকে নিয়ে যেসব কথা হয়, তা তো আর একদম মিথ্যে নয়। যে কারণে শুনেও না শুনে থাকি। তুমি তো প্রতিদিনই নাকি চিফ কো-অর্ডিনেটরের রুমে যাও! সারাদিন থাকো!একসঙ্গে খাও।
স্যার, একসঙ্গে কাজ করতে গেলে তো কমবেশি যেতেই হয়। না গেলে কাজ করবো কিভাবে? সব ফাইলই তো তার কাছে থাকে। আপনি তো সিগনেচার করার পরও তার কাছে যায়। সে পাস না করলে তো পাসই হয় না।
এটা একটা বড় সমস্যা। একটা বিশ্ববিদ্যালয়—সেখানে ভিসির কোনো ক্ষমতা নেই! বিদেশে পড়ালেখা করে, দামি-দামি ডিগ্রি নিয়ে, সারাজীবন শিক্ষকতায় কাটিয়ে, এখন ভিসি হয়ে তার ফাইল অনুমোদনের জন্য পড়ে থাকে অবসরপ্রাপ্ত এক মেজরের টেবিলে! ট্রাজেডি! আসলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির কোনো ক্ষমতা নেই। বোর্ডের কেরানির দামও আমার থেকে অনেক বেশি।
স্যার, আপনি মন খারাপ করছেন! আপনারও অনেক ক্ষমতা আছে। স্যার, আপনারও অনেক সম্মান আছে। আর আমাকে নিয়ে আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি আপনারই আছি। স্যার, একটা কথা বলবো?
বলো।
আমি কিন্তু প্রফেসর ড. শাহেদ জাহানকে ভালোবাসি। সেই আমি কি বোর্ডের কেরানিকে ভালোবাসবো? শুনুন স্যার, আমার প্রেম থানার দারোগার সাথে, কনস্টেবলের সাথে নয়।
খুব সুন্দর বলেছ। চোখকান খোলা রেখে একটু সাবধানে চলবে। করিম কেরানি হলেও বোর্ডের প্রতিনিধি কিন্তু। বিষধর কালসাপ। ছোবল মারলেই শেষ। ট্রাস্টির চেয়ারম্যানকে যা বোঝাবে, তাই বুঝবে। বোঝ না এরা তো ব্যবসা করে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তো সাত জনমে হতে পারবে না। মাথামোটা সব। যা শোনে তাই বিশ্বাস করে। তোমার কিন্তু পচা শামুকে পা কাটার মতো অবস্থা হবে। দেখা যাবে করিমের কথায় তোমার তো দূরে থাক, আমার চাকরিই চলে গেছে।
এও হয় স্যার?
হয় মানে! কী বলো! এর আগের ভিসি গেছে না এরকম। একঘণ্টার নোটিশে। বোর্ডকে কে বলেছিল সুন্দরী পিএসের সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক। কোনো বিচার বিবেচনা নেই—সাথে সাথে অ্যাকশন। কাট হয়ে গেলো।
ও মাই গড! বলেন কী স্যার!
হ্যাঁ। এ জন্য বলছি তুমিও আমার রুমে ঘন ঘন এসো না। আর আমরা তো হোটেল ব্লুবার্ডে মাঝেমধ্যে যাচ্ছিই। হোটেলটা অনেক সুন্দর তাই না?
আসলেই অনেক সুন্দর। ওখানে গেলে আমার তো মন ভরে যায়। স্যার, একটা কথা বলবো?
বলো।
স্যার, হোটেলের লোকগুলো কি জানে আমার আর আপনার সম্পর্ক?
না, জানে না। ম্যানেজমেন্টের লোকেরা জানে তাদের মালিকের বন্ধু আমি। ও তো আমেরিকাতেই অধিকাংশ সময় থাকে। ওর অনেক টাকা। ও একদিন গল্প করছিল, ঢাকায় গুলশানে ওর কয়েকটা থ্রিস্টার হোটেল আছে।
মজার তো। তারপর।
ওকে বললাম, ফ্রেন্ড, তাহলে তো তোমার হোটেলে আমি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে সময় কাটাতে পারি! ও তো প্রাণখুলে হাসি দিয়ে বললো, কেন নয়, ফ্রেন্ড! তুমি যখন ইচ্ছে তোমার র্গালফ্রেন্ড নিয়ে আমার ব্লুবার্ডে ইনজয় করবে। ওটা আমার সবচেয়ে সুন্দর হোটেল।
কত আগের কথা বলছেন?
তিন বছর হবে হয়তো।
আমি তো ওখানে আপনার সাথে বছরখানেক যাচ্ছি। তার আগে অন্য আরও কাউকে নিয়ে যেতেন নাকি?
কী যে বলো তুমি! তা কেন হবে! সম্পর্কটা কিভাবে কিভাবে যেন তোমার সাথেই গড়ে উঠলো! আমি তো ঘরকুনো মানুষ ছিলাম। বউ-বাচ্চার বাইরে তো কোনো জীবনই ছিল না। বাসা থেকে সোজা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোজা বাসা—এই ছকেই তো জীবনটা কেটে যাচ্ছিল। তুমি এসে বছরখানেক মতো হলো—সব এলোমেলো করে দিয়েছ।এর আগে এরকম জীবন আমার কল্পনাতেও ছিল না।
স্যার, আমি যে আপনার জীবনের ছকটা ভেঙে দিয়েছি, তাতে খুশি হননি?
আমি কি বলেছি অখুশি হয়েছি!
স্যার একটা কথা বলি, আপনার কথা কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়নি।
কোন কথাটা?
ঐ যে বললেন ছকে বাঁধা আপনার জীবন ছিল। আমার আগে আর কারো সাথে এ রকম সম্পর্ক ছিল না। আপনি ভিসি স্যার—কত ক্ষমতা আপনার—দেখতেও সুপুরুষ-নামের সাথে বিদেশি কতো বড় বড় ডিগ্রি। প্রতিদিনি কতো সুন্দরী ললনা আপনার সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে থাকে, চৌচির পাখির মতো!
তুমি আমাকে নিয়ে এসবই ভাবো!
না, ভাবি না। সত্যি সত্যি মনে করি। আপনি ভিসি স্যার হলেও তো পুরুষ মানুষ তো! আমার মতো কত ড. ফারজানা আপনার বাহুলগ্না হয়েছে কে জানে! পুরুষ মানুষে আমার বিশ্বাস নাই। আমার কথায় আবার মাইন্ড করেন না যেন। আপনাকে আমি দুষ্টুমি করে কতো কথাই তো বলতে পারি।
শাহেদ জাহান ড্রেসিংরুমে গিয়ে নিজের শার্টের কলার ঠিক করে। টাই ঠিক করতে করতে ভাবে, ফারজানা, সত্যি তুমি দারুণ! দিন যতো যাচ্ছে মুগ্ধতার আগুন ততোই বাড়িয়ে দিচ্ছ।
অবশ্যই পারো। সে অধিকার তুমি অর্জন করে নিতে পেরেছ। অফিসের নিয়মের ভেতরে আমি তোমার ভিসি—ব্লুবার্ডে যখন যাই তখন তো আর আমি তোমার ভিসি স্যার নই।
তখন আপনি আমার কী? বলুন না স্যার।
খুব দুষ্টুমি শিখে গেছো!
দুষ্টুমি না স্যার। সত্যি শুনতে ইচ্ছে করছে তখন আপনি আমার কী হন!
এখন তুমি যাও। বাইরে অনেক ভিজিটর।
তাহলে বলবেন না স্যার?
ব্লুবার্ডেই বলবো। এখন যাও।
ড. ফারজানা না উঠে কিছু একটা চিন্তা করে। টেবিলের ওপর আঙুলের নখ ঘোরাতে থাকে।
শাহেদ জাহানের মাথায় ড. ফারজানার কথা ঘুরপাক খেতে থাকে। তার আগেও আরও কোন সুন্দরী ললনা নিয়ে ব্লুবার্ডে গিয়েছে কিনা! ফারজানা হয়তো দুষ্টুমি করে কথাটা বলেছে, কিন্তু তা যে কত বড় সত্য, ড. ফারজানার জানার ভেতর তা হয়তো কোনোদিনই আসবে না। শাহেদ জাহানের মনের চোখে কত সুন্দর সুন্দর সুশ্রী নারীর চেহারা ভেসে ওঠে—ঢেউয়ের পরে ঢেউ এসে যেভাবে একটা ঢেউ ডুবে আর একটা ঢেউ জেগে ওঠে—সুশ্রী মুখগুলো তার মনের চোখে ঠিক সেরকম ঢেউখেলা হয়ে ওঠে। তাদের রূপশ্রী শরীরের আঁকাবাঁকা শৈল্পিক ঢেউ কতভাবে তার শরীরে লেগে আছে।
ড. ফারজানা নীরবতা ভেঙে বললো, স্যার, আমি আপনার সামনে যখন থাকবো, তখন অন্যসব ভাবনা বাদ। শুধু তখন আমি থাকবো—আমাকে দেখবেন—আমার সাথে কথা বলবেন। আচ্ছা, আপনাকে তো ব্লুবার্ডে অনেক পেমেন্ট দিতে হয় না স্যার? এই এক বছরে তো আপনাকে বহু লাখ টাকা নিশ্চয় দিতে হয়েছে?
ন। ওরা আমার কাছে থেকে ওরকম কোনো পেমেন্ট নেয় না। বললাম না ওটা আমার বন্ধুর হোটেল। ও মেনেজমেন্টকে বলে দিয়েছে। খুশি হয়ে কিছু দেই।
তাহলে তো দারুণ স্যার। আমিও ফ্রি, হোটেলও ফ্রি। আপনি সত্যি স্বর্গের রাজা!
প্রেমে আবার লেনদেন থাকে নাকি!
সে জন্যই তো কথাটা বললাম স্যার। আপনার সবই ফ্রি।
আজ সন্ধ্যায় যাবে নাকি? তোমাকেও আজ অন্যদিনের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।
তাই বুঝি, স্যার? অন্যদিন তাহলে কম লাগে?
তোমাকে বলি এক, বোঝ আর এক। সবসময়ই তুমি আকর্ষণীয়। এখনই পেতে ইচ্ছে করছে, আগুনের রশ্মিটা তাই চোখে বেশি ধরেছে। কী যাবে তো?
স্যার, আপনি বলা মানেই তো ওটা পাস। এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইল নয়, ভিসি স্যারের সিগনেচারের পরে আবার চীফ কোঅর্ডিনেটরের টেবিলে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে।
তুমি অনেক রস দিয়ে কথা বলতে পারো।
শুধু কথাতেই রস পান, আর কিছুতে পান না বুঝি! সব রকমের রসই আমি দিতে জানি। কী ভুল বললাম স্যার! কৃত্রিম অভিমান করে বললো ড. ফারজানা।
ড. শাহেদ জাহান কোন উত্তর না দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে এসে ড. ফারজানাকে জড়িয়ে ধরে।
স্যার, এখন পাগলামি করেন না! বাইরে আপনার অনেক ভিজিটরস অপেক্ষা করছেন। কেউ দেখে ফেললে আপনার আমার দুজনেরই ঝামেলা হবে। সন্ধ্যায় তো ব্লুবার্ডে যাচ্ছিই।
একদম ঠিক বলেছ। ড. শাহেদ জাহান নিজের চেয়ারে গিয়ে বসেন। বললেন, ফারজানা, তোমাকে জরুরি একথা কথা বলা দরকার, বোর্ড থেকে একটা নোটিশ এসেছে তোমার বাংলা বিভাগে ছাত্র ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে। সেখানে তোমার বিভাগে ভর্তি একেবারেই কম—প্রতি সেমিস্টারে দুজন তিনজন করে ভর্তি হয়। কোন সেমিস্টারে নীলও গেছে। এতে ডিপার্টমেন্টে বোর্ডকে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়। যদি ডিপার্টমেন্টে ছাত্র ভর্তি না বাড়ে—এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে বোর্ড ডিপার্টমেন্ট বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছে।
স্যার, এ তো দুঃসংবাদ। আমি এতো বুঝি না স্যার। কী করবেন না করবেন আপনি বুঝবেন। বোর্ডকে আপনি যেভাবে পারেন ম্যানেজ করবেন। বাংলায় কেউ পড়তে চায় না। যেভাবেই বলেন না কেন বাংলায় ছাত্র বাড়ানো কঠিন আছে। আমি পারবো না।
এটা নিয়ে তোমার সাথে পড়ে বিস্তারিত কথা বলবো। তোমার ডিপার্টমেন্টের সাথে আলাদা মিটিং করবো—কিছু প্ল্যান করে কাজ করতে হবে—ছাত্র বাড়াতেই হবে। না হলে সমস্যা হবে। তোমাকেও অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। পারবে না বললে তো চলবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় পদে চাকরি করতে গেলে মালিকপক্ষের পাল্স বুঝে চলতে হয়। আমি সেটা বুঝি। তুমি এখন যাও। আমি অফিসের কিছু জরুরি কাজ সেরে নিই। আর শোনো, আমি সাড়ে ছটা থেকে সাতটার মধ্যে ব্লুবার্ডে পৌছে যাবো।
আমিও চলে আসবো স্যার। ড. ফারজানা বেরুনোর জন্য উঠে দাঁড়াতেই ড. শাহেদ জাহানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো, স্যার, আপনার শার্টের ডান কলারে লাল টিপ লেগে আছে।
তাই নাকি! বিপদ তো।!
কোন বিপদ নেই স্যার। আমি আছি কেন! ড. ফারজানা শাহেদ জাহানের শার্টের কলার থেকে দ্রুত টিপটা নিয়ে নিজের কপালে লাগিয়ে বের হয়ে যায়।
শাহেদ জাহান ড্রেসিংরুমে গিয়ে নিজের শার্টের কলার ঠিক করে। টাই ঠিক করতে করতে ভাবে, ফারজানা, সত্যি তুমি দারুণ! দিন যতো যাচ্ছে মুগ্ধতার আগুন ততোই বাড়িয়ে দিচ্ছ।
ড. শাহেদ জাহান নিজেকে পুরো ঠিকঠাক করে নিয়ে একটু গম্ভীর গম্ভীর ভাব নিয়ে চেয়ারে বসে কলিংবেল টেপেন।
চলবে…