শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৭) ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন স্বল্পভাষী। অথচ তিনিই সম্ভবত বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশি কবিতা রচনা করেছেন। তার স্বল্পভাষিতার পেছনে রয়েছে ব্যক্তিগত স্বভাব। তার বক্তব্য ছিল অনেক। উপযুক্ত প্রকাশভঙ্গি ছাড়া আসলে তিনি মনের কথা বলতে চাইতেন না। এটা একজন উঁচু মানের শিল্পীর স্বভাব। কয়েকটি গল্প, চারটি উপন্যাস ও দুটি গদ্য গ্রন্থেও এই স্বভাবটি লক্ষ করা যায়।
শামসুর রাহমানের গদ্যের সংখ্যা একেবারে কম নয়। আমৃত্যু তাঁর জীবনানন্দ গ্রন্থে চারটি, শামসুর রাহমানের প্রবন্ধ (২০০১, শ্রাবণ প্রকাশনী) গ্রন্থে ছয়টি, একান্ত ভাবনা গ্রন্থে সাতান্নটি, কবিতা এক ধরনের আশ্রয় গ্রন্থে চব্বিশটি এবং কবে শেষ হবে কৃষ্ণপক্ষ ( ২০০৬, একুশে বাংলা) গ্রন্থে ষাটটি। কোনো কোনো রচনা একাধিক গ্রন্থভুক্ত হয়েছে। ছোটবড় মিলিয়ে সর্বমোট দেড় শয়ের মতো গদ্য স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে নজরুলকে নিয়ে লেখা একটি গদ্য দুটি গ্রন্থেই স্থান পেয়েছে। এ দুটি গ্রন্থের বাইরেও অনেক গদ্য রচনা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে পারে।
শামসুর রাহমান বিভিন্ন বিষয়ে রচনা করেছেন এইসব গদ্য। এসব রচনার ভেতর দিয়ে তার কাব্যচিন্তাসূত্রটি চিনে নেওয়ার চেষ্টা আমরা করতে পারি। কিন্তু গদ্যে শামসুর রাহমান তার ভেতরের কথা প্রকাশ করেছেন সামান্য। কবিতা নিয়ে আলোচনা করার চেয়ে তিনি কবিকে নিয়ে আলোচনা করতেই বেশি আগ্রহী বলে বোঝা যাচ্ছে। আর সে আলোচনা কবির জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, পরিচয় এবং কিছু স্মৃতিকথা।
শামসুর রাহমান অনেককে নিয়ে লিখেছেন। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছেন কয়েকটি গদ্য। আমার চৈতন্যে রবীন্দ্রনাথ, আজও প্রাসঙ্গিক রবীন্দ্রনাথ, কেন পড়ব রবীন্দ্র রচনাবলি, ও আমার আপন রবীন্দ্রনাথ। এসব গদ্যে রবীন্দ্রসাহিত্যের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নেই, আছে কীভাবে রবীন্দ্রসাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় হল সেসব স্মৃতিকথা। প্রতিটি গদ্যের নামকরণে বেশ আকর্ষণ আছে, কিন্তু পাঠক-চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তুর উপস্থিতি সামান্য।
প্রথমোক্ত গদ্যে শামসুর রাহমান জানিয়েছেন, রবীন্দ্রসাহিত্য কেমন করে তার কাছে তিরিশি কবিদের কাছে ক্রমাগতভাবে ম্লান হয়ে পড়েছে সে কথা। আধুনিক কবিদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পার্থক্য আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বারংবার সেই একজনের কথা বলেছেন নানা লেখায়, নানারূপে। … তাঁর বোধ আর অনুভবের ব্যাপ্তি এবং গভীরতা তাঁকে মাটির কাছাকাছি যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে, কিন্তু ঔপনিষদিক ভাববাদী জগতের স্মৃতি তাঁর মন থেকে মুছে যায়নি। যে আধ্যাত্মিক জগতে রবীন্দ্রনাথের ছিল স্বচ্ছন্দবিহার, সেই জগৎ থেকে, প্রশ্নশীল নাচিকেত চেতনায় ভাস্বর দ্বন্দ্ববিক্ষুব্ধ আধুনিক মানুষ। এখানেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আধুনিক মানুষের বিরোধের প্রশ্নটি বড়ো হয়ে দেখা দেয়। ‘
রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিরিশি আধুনিক কবিদের স্ববিরোধী কর্মকাণ্ডের কথাও বলেছেন শামসুর রাহমান। প্রসঙ্গক্রমে বুদ্ধদেব বসুর হাত দিয়ে বিদেশি কবিতার আধুনিকতার অবদানও স্বীকার করেছেন। তবে রবীন্দ্রনাথের বিশালতার কাছে বাঙালিমাত্রেরই মাথা নত করতে হয়। তিরিশি কবিরা করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন, এবং নিজেও তা না করে পারেননি। কেন পড়ব রবীন্দ্র রচনাবলি রচনায় লিখেছেন, ‘আমাদের আত্মবিকাশের জন্য, সাহিত্যের পথে নতুন সৃষ্টির প্রেরণার জন্য, নিজেদের মধ্যে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত রাখার জন্য রবীন্দ্রনাথের কাছে বার বার যেতে হবে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনিই আমাদের প্রধান সেনাপতি।’
নজরুলকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, উদার মানবতাবাদী এক কবি। এখানে তিনি নজরুল সাহিত্যের মূল্যায়ন করেছেন অল্পকথায়। বেশির ভাগ বাক্যই খরচ হয়েছে নজরুল সম্পর্কিত নানা তথ্যে। তাঁর অসাম্প্রদায়িকতা, বিদ্রোহী চেতনা এবং উদ্দীপনাকে শামসুর রাহমান বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। সবশেষে বলেছেন, ‘নজরুল অবশ্যই বড় কবি, তবে তাঁকে রবীন্দ্রনাথের সমপর্যায়ে তুলে আনা মূঢ়তা। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের কাছে সর্বহারাদের, নির্যাতিত মানবতার সংগ্রাম শান্তি ও প্রেমের কবি হিসেবে প্রিয় হয়ে থাকবেন।’
জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে একটি গদ্য আকাশের আড়ালে আকাশ। এ রচনায়ও শামসুর রাহমান কবিতা বিশ্লেষণ না করে কবিকে নিয়ে লিখেছেন বেশি। শামসুর রাহমান কেন জীবনানন্দ দাশের কবিতা ভালোবাসেন সে কথা নেই। তিনি কতখানি বড় কবি, কেন বড় কবি, কী কী তার কবিতার বৈশিষ্ট্য সেসব কথা অনুপস্থিত। পছন্দের কবিতার কিছু পংক্তি উদ্ধৃতও করেছেন কিন্তু ভালো লাগার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। তার পরেও কিছু বাক্য বিশেষভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে। যেমন, তিনি ঝরাপালক সম্পর্কে জানিয়েছেন এ কাব্যের ঐতিহাসিক মূল্য থাকলেও গুরুত্ব নেই। ধূসর পা-ুলিপির ক্ষীণ আভাস এ কাব্যে রয়ে গেছে।
শামসুর রাহমান মনের সব কথা কবিতার ভেতর দিয়েই বলতে আগ্রহী, তাই কবিতাই তার কলম থেকে নিঃসৃত হয়েছে সাবলীল এবং পরিমাণে বেশি।
জীবনানন্দ দাশের নামের সঙ্গে ‘নির্জনতম কবি’, ‘শুদ্ধতম কবি’ ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার না করার পক্ষপাতী শামসুর রাহমান। তিনি লেবেল আঁটানোতে বিশ্বাস করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন জীবনানন্দ কবিতায় যুগমানস ও ইতিহাস-চেতনা ধারণ করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার সবচেয়ে জটিল কবি। আপাত সহজ পংক্তির আড়ালে অর্থ প্রচ্ছন্ন থাকে যা সহজে পাঠকের কাছে ধরা পড়েনা। তবে তার কবিতা পড়ার জন্য বুক শেলফ থেকে অভিধান টেনে নামাতে হয় না। জীবনানন্দ অন্তপ্রেরণায় বিশ্বাসী ছিলেন বলে ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতায় কোনও আকর্ষণ বোধ করেননি। তবে তার কবিতায় ঐহিক আধ্যাত্মিকতা একেবারে খারিজ করে দেওয়া যায় না।
সমর সেন সম্পর্কে লেখা সমর সেন: সাহস ও সততার প্রতিকৃতি গদ্যে একটু ভিন্নভাবে আলোচনা করেছেন শামসুর রাহমান। এখানেও তিনি শুরু করেছেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে। বুদ্ধদেব বসুর বিখ্যাত গ্রন্থ কালের পুতুল-এর মাধ্যমে সমর সেনের সাহিত্যের পরিচয় বলে জানিয়েছেন। এরপরে সমর সেনের কবিতার ছন্দ নিয়ে লিখেছেন। গদ্যছন্দের অভিনবত্বের বিষয়টা তিনি বলেছেন এভাবে, ‘প্রকৃত গদ্যছন্দ সমর সেন ছাড়া আর কারও হাতেই তেমন খোলেনি।’
সমর সেন শুধু ছন্দই নয়, চিত্রকল্প, উপমা-উৎপ্রেক্ষা রচনায় দক্ষতা দেখিয়েছেন বলে জানান শামসুর রাহমান। বাংলা কাব্যের তপোবনে প্রবেশাধিকার ছিল না যে শব্দাবলির, তাদের কবিতায় ঠাঁই দেওয়ার প্রচেষ্টাতেও তিনি সাফল্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। শামসুর রাহমান জানান, বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে সমর সেনই প্রথম নাগরিক কবি।
সমর সেনের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কথাই বলেছেন শামসুর রাহমান। তিনি মার্কসের বাণী জীবনে ধারণ করেছিলেন। বুদ্ধদেব বসুর অনুরাগী ছিলেন। আবার সমালোচনা করতেও ছাড়েননি। যেমন, যে পুঁজিবাদী সংস্থাগুলোকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করতেন সমর সেন সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িতও হয়েছিলেন। প্রতিক্রিয়াশীল দৈনিক পত্রিকায় তিনি কাজও করেছেন পরিবার পালনের উদ্দেশ্যে। তবে সমর সেনের ত্যাগের কথাও স্বীকার করেছেন।
সুকুমার রায়কে নিয়ে লিখেছেন, কবি সুকুমার রায়। শামসুর রাহমান জানান, সুকুমার রায়ের কবিতায় রূপরসগন্ধ পাওয়া গেলেও সব গদ্যে কবিতার স্বাদ পাওয়া যায় না। এরপরেও সেসব গদ্যের ঔৎকর্ষ প্রশ্নাতীত। সুকুমার রায়ের লেখা পড়লে লুই ক্যারল এবং অ্যাডওয়ার্ড লিয়রের কথা পাঠকের মনে আসেই। তবে লিয়রের লিমেরিকে কবিতার স্বাদ গড়হাজির, যা সুকুমার রায়ের কিছু লেখায় সগৌরবে উপস্থিত।
বুদ্ধদেব বসুকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছেন, বুদ্ধদেব বসু তাঁর সৃষ্টির তীর্থে। এ গদ্যে কবিতা নিয়ে কিছু লেখা হয়নি। নানা ঘটনা আর স্মৃতিচারণ দিয়ে ভরা গদ্যটি।
অরুণ মিত্রকে নিয়ে লিখেছেন দুটি গদ্য, অন্য বাঁচার রোশনাইতে অরুণ মিত্র এবং বড় মাপের কবি অরুণ মিত্র। প্রথম রচনাটি মৃত্যুপরবর্তী স্মৃতিচারণমূলক। পরের রচনাটিও একই ধরনের। এখানে অরুণ মিত্রের জীবন পরিচয়, পেশা ইত্যাদির সঙ্গে স্মৃতিচারণমূলক কথা ব্যক্ত করেছেন। তবে এখানে দুয়েকটি বাক্য বলে অরুণ মিত্র উঁচুদরের কবিতা লিখেছেন। ফরাসি কবিতার অন্তরঙ্গতার ফলে তার কবিতার রূপ এবং চরিত্র বদলে গিয়েছিল। এ পরিবর্তন আধুনিক বাংলা কবিতায় শুধু নতুন ধরনই নয়, যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা এবং সমৃদ্ধি।
রবীন্দ্রনাথের পরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গদ্য লিখেছেন আহসান হাবীবকে নিয়ে। তিনটি গদ্য, একজন স্নিগ্ধ কবি, আহসান হাবীবের প্রোফাইল ও তিনি ছিলেন তরুণের প্রতিযোগী। প্রথমটিতে স্বভাবগতভাবে শামসুর রাহমান ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেছেন। দুজনে একই অফিসে দীর্ঘকাল চাকরি করেছেন স্মৃতির ভার অনেক। তবে কবিতা সম্পর্কে লিখেছেন কিছু সত্য কথা। জানিয়েছেন, রাত্রিশেষ তেমন আর আবেদন সৃষ্টি করে না। শুধু কাশ্মিরী মেয়েটি কবিতাটি উল্লেখযোগ্য। আরও বলেন, ‘আহসান হাবীবের স্বভাবে নম্রতা ছিল, কথা বলতেন অনুচ্চ স্বরে-স্বভাবের এই বৈশিষ্ট্য তাঁর কবিতাতেও প্রতিফলিত। যদিও রাত্রিশেষ-এ আমরা উদ্ধত মুঠি, ইস্পাত কঠিন, মশাল, প্রতিরোধ, সীমান্ত, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি যুগগন্ধী শব্দ পাই, তবু মনে হয় না, আহসান হাবীব চড়া গলার কবি।’
প্রসঙ্গক্রমে শামসুর রাহমান জানান, দু’হাতে দুই আদিম পাথরই আহসান হাবীবের শ্রেষ্ঠ কবিতার বই। এর পরের রচনাটিতে ভালোলাগা কবিতা কাশ্মিরী মেয়েটি পুরোটাই তুলে ধরেছেন। এখানেও দু’হাতে দুই আদিম পাথর কাব্যের প্রশংসা করেছেন। আহসান হাবীবের শেষ বয়সে এ গ্রন্থ প্রকাশিত হলেও তরুণ কবিদের মধ্যে অনুকূল সাড়া পড়ে গিয়েছিল, এতে বোঝা গিয়েছিল তিনি কবি হিসেবে তখনও সজীব। তাঁর কবিতা সহজ, সরল, এবং আবেদনময়। উপভোগ করতে হলে বেশি পড়াশোনা করতে হয় না। অভিধানের পাতা উল্টাতে হয় না। অধিকাংশ কবিতা তাঁর ব্যক্তিস্বরূপের মতোই শান্ত এবং স্নিগ্ধ। তাঁর কবিকণ্ঠ কখনও চড়ে না। এমনকী রাজনৈতিক কবিতায়ও। তৃতীয় গদ্যটি আহসান হাবীবের মৃত্যুতে লেখা স্মৃতিচারণমূলক রচনা, এখানে সাহিত্য নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।
শামসুর রাহমান সবচেয়ে উজ্জ্বল গদ্যটি লিখেছেন হুমায়ুন আজাদের কবিতা নিয়ে। হুমায়ুন আজাদ তাঁকে নিয়ে লিখেছেন নিঃসঙ্গ শেরপা নামের বিখ্যাত গবেষণা গ্রন্থটি। এরই প্রতিদান অথবা কৃতজ্ঞতা থেকেই শামসুর রাহমান লিখেছেন তিনি বেঁচে আছেন অন্যদের সময়ে। শুরুতেই লেখক জানান, হুমায়ুন আজাদের প্রথম কাব্য অলৌকিক ইস্টিমার প্রকাশিত হওয়ার পরেই ষাটের দশকের এই উজ্জ্বল কবির লেখায় যুগপৎ বুদ্ধিমত্তা এবং হৃদয়বত্তার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরের দুটি কাব্য জ্বলো চিতাবাঘ এবং সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে বাজারে আসার পরে হুমায়ুন আজাদকে একজন প্রধান কবি হিসেবে স্বীকার করতে আর বাধা ছিল না। এর পরের গ্রন্থ আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে নিয়ে লেখা হয়েছে গদ্যটি। এ কাব্যের প্রথম কবিতাই জোরে ধাক্কা দেয় পাঠককে। এ কবিতায়ই কবি কাব্যের মূল সুর বেঁধে দিয়েছেন। কারণ তাঁর কথা অনেকের মনের কথা হয়ে উঠেছে। শামসুর রাহমান এ গদ্যে হুমায়ুন আজাদের কবিতার শব্দ ব্যবহার, ছন্দ, অলঙ্কার এমনকী বানান নিয়েও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করেছেন। যারা মনে করেন হুমায়ুন আজাদের কবিতা প্রবন্ধগন্ধী তাদের মুখের ওপর মোক্ষম জবাব দিয়েছেন। অনেক উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। মন্তব্য করেছেন। আজাদের ব্যঙ্গধর্মী কবিতাগুলোর প্রশংসা করেছেন। যেমন রঙিন দারিদ্র্য, গোলামের গর্ভধারিণী ইত্যাদি।
প্রথমোক্ত কবিতা থেকে সাতটি পংক্তি উদ্ধৃতি দিয়েছেন। দ্বিতীয়টি পুরোটাই উদ্ধৃতিযোগ্য বলে মনে করেছেন, কিন্তু দীর্ঘতার কারণে সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় কবিতাটি একটি অমোঘ শব্দযুক্ত, উপমা ও চিত্রকল্পসমৃদ্ধ উৎকৃষ্ট ব্যঙ্গনিপুণ কবিতা হিসেবে দীর্ঘায়ু হবে বলে শামসুর রাহমানের বিশ্বাস। হুমায়ুন আজাদের ব্যঙ্গ কবিতার প্রশংসা করেই শামসুর রাহমান ক্ষান্ত হননি, প্রেমের কবিতারও বেশ প্রশংসা করেছেন।
এ ছাড়া শামসুর রাহমান সিকান্দার আবু জাফর, বিস্মৃত কবি চৌধুরী ওসমান, হাবীবুর রহমান, সিকদার আমিনুল হক, নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখের কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন তবে সেসব বৈচিত্র্যহীন বলেই মনে হবে পাঠকের কাছে। ওপরের আলোচনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে তার কাব্যচিন্তা কেমন, কতটুকু গদ্যে ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হয়। সব শেষে বলা যায়, শামসুর রাহমান মনের সব কথা কবিতার ভেতর দিয়েই বলতে আগ্রহী, তাই কবিতাই তার কলম থেকে নিঃসৃত হয়েছে সাবলীল এবং পরিমাণে বেশি।
আরও পড়ুন: