রাস্তায় যানজটের কথা আমরা সবাই জানি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর নগর-বন্দর ও মহাসড়কে যানজটের দুর্ভোগ সহ্য করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু সাহিত্য পুরস্কারে যখন জট বাঁধে, তখন সেটা লেখকদের জন্য শুধু মনোবেদনার নয়, গ্লানিরও।
বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার যেকোনোযোগ্য লেখকের জন্য সম্মান আর মর্যাদার বিষয়। কিন্তু সেই পুরস্কার না পেয়ে অনেক যোগ্য কথাসাহিত্যিক-কবির মৃত্যু হচ্ছে। কবি আবু কায়সার বা আবিদ আজাদের মতো লেখক সে পুরস্কার ৫৪ বছর বাঁচার পরও পেলেন না। আলম তালুকদারের মতো মুক্তিযোদ্ধা এবং ছড়াকার শিশুসাহিত্যে সেই পুরস্কার না পেয়ে মারা গেলেন ৬১ বছর বয়সে। খোন্দকার আশরাফ হোসেন ৫৭ বছর বয়সে মারা গেলেন পুরস্কার না পেয়েই। কথাশিল্পী কায়েস আহমেদ বা শহীদুল জহীরের কথা বাদই দিচ্ছি।
এ রকম আরও অনেক নাম বলা যাবে। আরও বলা যাবে পুরস্কার পাওয়া এমন কিছু নাম যারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, তারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় লিখেছেন। শুধু বিএনপি আমলে নয়, একেবারে সাম্প্রতিক। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী মহাপরিচালক হওয়ার আগ-পর্যন্ত এর দৃষ্টান্ত আছে।
যদিও ২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৭ সালে কবিতায় দুই জন করে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। বাংলা অ্যাকাডেমির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখতে পারে।
অথচ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী বহু প্রবীণ যোগ্য লেখক, অনেক প্রবীণ কবি সেই পুরস্কার পাচ্ছেন না। বিশেষ করে কথাসাহিত্য, শিশুসাহিত্য ও কবিতায় এখন কঠিন জট। এই শাখায় অনেকের বয়স ৭০-৮০ পেরিয়ে গেছে! এখনো পুরস্কার পাননি। কয়েক বছর দু’জন করে লেখককে পুরস্কার দিয়ে কবিতার ভিড় কিছুটা কমানো হয়েছিল। কিন্তু মাঝখানে হঠাৎ করে একজনের বেশি পুরস্কার দেওয়া যাবে না, এই নীতি চালু করলো নির্বাহী পরিষদ। কেন করলো? বোঝা মুশকিল। আইন তো বদলানো যায়।
বাস্তবতা চিন্তা করে অনেক কিছুই করা যায়। যোগ্যতার মানদণ্ডেই পুরস্কারটা দিতে হবে। সমযোগ্যতার একাধিক কবি আছেন। ধরুন, পাঁচ জনের নাম প্রস্তাবিত হলো। তারা পাঁচ জনই সমান মানের, সমান যোগ্য। সে ক্ষেত্রেও কি ভাববো না? এটা কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রেও সমপ্রোযোজ্য। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে ৩/৪ বছরের মধ্যে যোগ্যদের অনেককে সম্মান জানানো সম্ভব।
যদিও ২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৭ সালে কবিতায় দুই জন করে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। বাংলা অ্যাকাডেমির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখতে পারে।