শোকের পাথরে আঁকা ছবি
অবিরল আত্মত্যাগে ধন্য এদেশ।
মৃত্যুও নত হয়ে তাই
মুক্তির পথ বেঁধেছে শোকের পাথরে।
সন্ততির করতলে
স্বপ্নের আলপনা এঁকে
প্রভাতকে বলেছ তোমরা
দিনকে অবারিত করো
আলোয় পূর্ণ হোক শিশুদের চোখ!
জীবনের বিনিময়ে
অমরতা বিছিয়ে দিয়েছ
সবুজে সূর্য আঁকা স্বদেশের বিপুল আকাশে!
আমাদের হৃদয় ভরে ফোটে রোজ
আগুনের ফুল
প্রাণের বাগানে সুবাসিত স্বাধীন বকুল!
পিপাসিত ছায়া
কতকিছু গুছিয়ে নিয়ে বসেছিলাম।
যাদের আসার কথা ছিল তারা নয়
একটি ছায়ামুখ এসে দাঁড়ালো।
এই বৃষ্টিমুখর আতপ্ত তনুমন
সে নেবে না—তার শরীর নেই,
বয়ঃসন্ধির গলিতে এ মুখ হারিয়ে এসেছি
কবে! তবু কিভাবে খোঁজে খোঁজে
এত দূর এলো?
আজো কি স্মৃতিচিহ্ন বুকে ধরে আছে
ধূলির সংসার!
কার কাছে গচ্ছিত ছিল এই পিপাসিত ছায়া!
আলো আসুক
একবার অন্তত আলোয় বসতি হোক।
দিগন্তজুড়ে প্রেতের ছায়াবাজি মুছে যাক
অন্ধ সময় ভেদ করে
কৃপাণবিদ্ধ হৃদয়ে আসুক
শুশ্রূষার মত আলো।
চরাচর ভরে যাক পুনর্বার শস্যের শ্যামলীমায়।
জয়ের তিলক
জননী আমাদের জন্মান্তর হোক—
তোমার আঁচল ছায়ায় নবজন্ম।
আবারও মানুষের দিকে অভিযাত্রী
প্রাণ, স্বদেশকে বুকে নিয়ে
তোমার উঠানে এসে স্থিত হয়ে
শ্বাস নেবে সাহসে, সংগ্রামে, বোধনে।
মা, আমাদের আনত ললাটে
এঁকে দাও জয়ের তিলক।
কবির হৃদয়ে এখন জোসনার কাল
মৃত্যু কি নিয়ে যেতে পারে
কবির দুচোখ—অতলান্ত বেদনায়,
নদীর সংগোপন
অভিসারী চোখের তারায়
তবু আজ নিদ্রার ঘোর—
সে জেগে উঠবে বলেই
এমন প্রগাঢ় বিশ্রাম।
শরতের শিউলি ছোঁয়া ভোরে
কবি হেঁটেছেন—
নগরীর বিপন্ন সবুজে।
প্রায়শই তিনি পাখিদের
সাথে বসে পাখি পাখি প্রাণ
মানুষের গান ভাসিয়ে দিয়েছেন বাতাসে
ঝরা পাতার রুমালে তখন শিশিরের কারুকাজ।
জলের ধাঁধায় ঘোর লাগা
বাংলার পল্লিপথে এত যে মমতা
এতখানি দুধেভাতে
রাখে যে মায়ের হেঁসেল
সেখানেই ফিরবে বলে
দূরদেশ থেকে এসে কেবল নিয়েছে ঘুম
কবির হৃদয়ে এখন জোসনার কাল
যদিও অনেকবার এই দেশে
ধবল জোসনা চিরে ফিনকি দিয়ে
উঠেছে রক্তের ঝিলিক
মানুষ মানুষের বুকে বুক বেঁধে
তবুও ফিরিয়ে এনেছে শুভমতি দিন
আদিগন্ত স্বপ্নের কলরব!
পাখিদের কাকলী
মেঘেদের ছায়া মাখা
নদী ও আকাশ
একলা বটের ছায়ায়
অভিমানী রাখাল বালক
রাতের নিঃসঙ্গ পল্লিপথে
ভেসে যাওয়া মেঠো সুর
সব সাথে নিয়ে কবি বিশ্রামে রেখেছে শরীর
একদিন চৈত্রের বিধূর দুপুরে
ঘুঘু আর দোয়েলের কণ্ঠে
শোনা যাবে তার আশ্চর্য লিরিক।
কবি বাংলার ললাটে ছোঁয়াবে
তাঁর অলৌকিক করতল।