১৬
অবশেষে আমার সকল বেদনার মৃত্যু হলো
চারিদিকে কাফনের কাপড়ের মতো সুবাসিত হলো দক্ষিণা বাতাস
লেবুপাতার গন্ধে ভরে গেল মন-যেন তোমার অশ্রুভরা নয়ন।
কাঁধে আমার জননীর মৃতদেহ—তবুও নেই কোনো বেদনা
এ যেন কেভিন কার্টারের সেই ছবি : ‘দ্য ভালচার অ্যান্ড দ্য লিটল গার্ল’।
বেদনার মৃত্যু হলে-আনন্দে ভরে কি তোমার হৃদয়ের অন্ধকার
যেমন আমার জননীর মৃতদেহ দেখে-হাসিতে ফোটে ডোমফুল।
ফুল! সে তো পূজা শেষে চলে যায় ডাস্টবিনের গহ্বরে
যেভাবে মানুষের মৃত্যু হলে আশ্রয় নেয় শ্মশান কিংবা কবরে।
হায় মানুষের মন-ভেবে দেখছ কি?
তোমার মৃত্যু হলে-মৃতদেহের কী পরিণতি হয়!
১৭
বাসি উনুনের ছাইগাদায় ফুটেছে মরণফুল
এমনই ফুল জীবনে একবার ফোটায় তালিপাম
সেই মরণফুলের গন্ধে—সে অন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
এভাবে তুমিও ফোটালে তোমার নাভিতে কস্তূরী
সেই থেকে—তোমার কস্তূরীর গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যু এলো।
মৃত্যুর গন্ধে ডোমপাড়ায় ফিরে এলো জীবনের উৎসব
সেই উৎসবের সমাধিলিপির সম্মুখে দাঁড়িয়ে আমি অজস্রবার কেঁদেছি
আর ভেবেছি মৃত ও জীবিত মানুষের পার্থক্য কে নির্ণয় করতে পারে?
কিংবা যে নির্ণয় করে তার সমাধিলিপি কে লিখে রাখে?
এসকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন একজন কবি
কারণ-কবিরা জন্ম ও মৃত্যুর বাহিরে বসবাস করেন।
১৯
গন্ধের আনন্দে-গন্ধের অভিশাপে ছুটে আসে মাছি
মৃতদেহ কিংবা মলের গন্ধে মাছি-ফুলের গন্ধেও মাছি
এই মাছি ও মৌমাছি হয়ে বেঁচে রয়-মানব হৃদয়।
মৌমাছির মল চাকের ভেতর জমে জমে মোম হয়ে যায়
এসব মোম আলো হয়ে জ্বলে জীবনের অন্ধকারে
তাই ভাবি আমার কবিতা মাছি-নাকি মৌমাছি।
গভীর অন্ধকারে মোমবাতি হাতে
ঘোলা নদীর অস্পষ্ট জীবন নিয়ে বয়ে চলি—চোখের জলে।
বৃষ্টির আনন্দে ব্যাঙের মতো ডেকে উঠি প্রণয় আখ্যানে
তবুও কোথাও কেউ নেই-শুধু রাজপথে পড়ে আছে আমার মৃতদেহ।
আমার এ মৃতদেহ—আমিই আবার ডোম হয়ে কাটি
আর অনুসন্ধান করি, এই দেহের কোথায় লুকিয়েছিলো বাংলাকবিতা।
২০
তার ব্লাউজের বগলে শ্রমের গন্ধ লেগে থাকে—অবিরত
সেই গন্ধে এপাড়ার মোল্লা ওপাড়ার পুরোহিত ঘুমাতে পারে না।
যেমন—গুড়ের গন্ধে পিঁপড়ার ঘুম হারাম হয়ে যায়।
কিছু কিছু ঘুমে মানুষ কেন জাগতে পারে না
উজ নদীতে ভার্জিনিয়া উলফের ঘুম ভাঙবে কি কখনো!
ভাঙবে কি কখনো মানুষের মনে পবিত্র গ্রন্থের ঘুম।
থাক সেসব কথা। বরং বলি-দিগন্তের সূর্য কেন ঘোড়ার চোখে ঘুমায়
তাই বুঝি ঘুমের অবসাদ চিরকালীন অন্ধকার।
আজ তার ব্লাউজের বগলে শ্রমের গন্ধ নেই
শুধু মৃতদেহ থেকে সুবাসিত হচ্ছে জারুল পাতার ঘ্রাণ
সে এখন চিৎ হয়ে ঘুমিয়ে আছে অন্তর্বতী মন্দির ও মসজিদের সন্ধিস্থলে।