জুমজুয়াড়ির গান
ঘুমের ভেতর ছায়ার মিছিল প্রলাপে বিলাপে স্বপ্ন ভেঙে দেয়।
প্রচলিত জীবনের কয়েদখানায় ভাঙা স্বপ্ন—
নগরের সেলাই মেশিনে সেলাই করে অন্ধ পুরোহিত,
সেলাই করা স্বপ্ন কখনও খয়েরি
কখনো বেগুনি।
অথচ, অন্ধ জুমজুয়াড়ি জানে না—
ভাঙা স্বপ্ন কখনও সেলাই করা যায় না।
যেদিন স্বপ্নওয়ালা ফেরি করবে চোখের কর্ণিয়া
সেদিন হয়তো, অন্ধ জুমজুয়াড়ি পাচার হয়ে যাবে
এই নগরের কয়েদখানা থেকে।
জুমিয়া বান্ধবী
হীরের কুয়াশায় লেপ্টানো অনুভূতির অধিবেশন,
তীব্র আলোর উড়ন্ত শিবির দেখে—সে মুখ লুকায়
দুঃস্বপ্নের মতো বোবা অন্ধকারের পাঁজর পাড়ায়।
জীবন ভেজা ভূতভনিতায় কখনো নবজাতক নেশা
কখনো বা হীরের কুয়াশার বীজতলায় স্থির দাঁড়ায়;
জুমিয়া বান্ধবীর নরম হাততালির ধারালো ছায়ায়।
জুমপাহাড়ের গল্প
জুমসংক্রান্ত যে স্মৃতি জেগে ওঠে মনের উদগ্রীব প্রজাপতির ডানায়
সেই ডানার রঙিন ক্যানভাসের ভিতর আশ্রয় চায়—সিঃসঙ্গ জুমজুয়াড়ি
প্রতিদিন সবুজ জুমপাতার মানচিত্র ফুঁড়ে যে রোদ ভিড় করে উঠোনে
চোখ ফেরালেই হয়ে যায়—বিরহ প্রেতের ধূ-ধূ ছায়াঘেরা পথপরিক্রমা
. সেই পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শুনালে—প্রেমের পূণ্যদৈর্ঘ্য রূপকথা
. অধৈর্য্য বাতাসের মাদুরে হলুদ সুখের আত্মসমর্পণ
. বিনাশর্তে বুকের জুমভূমি রক্তাক্ত করে— যন্ত্রণার গোপন ঈর্ষায়।
যখন প্রথা ভাঙ্গার শ্লোগান দেয়—মহাকালের ভূমিজমন
ঠিক তখন বহু মৃত্যুর প্ররোচনায় পড়ে
উদগ্রীব প্রজাপতি—জুমপাহাড়ে গড়ে তুলে দুঃখের প্রজনন প্রকল্প।
জুমজুয়াড়ি
মহুয়া চাকমার বাদামীগালে ভীর করে চোখের সারল্য
হীম হাওয়ার ভাঁজে থাকে সুরেলা সকাল
কুহকী কিরণচন্দ্র কীসের মায়ায় ছেড়েছে সংসার
আধাখোলা বুকের খাঁজ থেকে যে তিলক তির—
আদিবাসীগ্রাম পেরিয়ে রক্তাক্ত করেছে বুকের জুমপাড়ার
সে কারণেই সময়শিবিরে প্রকাশ্যে জুয়াড়ির মাতলামি।
উপজাতির মনের মৌজায়—কুয়াশা কুড়ানো মং কুমারি
মমতার মমি হাতে ফেরি করে মানবতার উপপাদ্য
জাতের যাতনা মুছে গেলেই বেজে ওঠে মৈত্রিবাদ্য।
সভ্যতার পশমে মোড়ানো শাসকবাদী শুনে রাখো—
জুমপাহাড়ের চূড়ায় থাকে সবুজের সরল সাজ
আরো থাকে মিহিমিহি জুমজুয়াড়ির সুবাস;
মানুষের ভেতর মানুষে থাকে গ্রহ জয়ের নিঃশ্বাস।
মহুয়া চাকমা বলেছে সবার কানে কানে—
কবির কবিতা জুমপ্রেমী; করো না অবিশ্বাস,
এ কারণেই—
. কবির মনের মহাশূন্যে লেগেছে গোপনে
. জ্যোতির্ময় শব্দের গ্রহণসন্ন্যাস…
জুমজুয়াড়ি-০২
বৃষ্টিবিনম্র সবুজপাঠে বালিকা হারায় উড়ালিমন।
ডানাভেজা পাখির গান শুনবে বলে জেগে আছে আদিবাসীগ্রাম
চোখের তারায় ব্রজ্যপরির ফ্রকখোলা দুষ্টুআশ্রম
আর জুমপাহাড়ের চূড়ায় প্রজাপতি রঙিন বৃষ্টি বিলাস
আহা! কতো মধুর—সাঁওতাল বালিকার খোঁপাভেজা সুবাস…
কী করে ভুলে যাবো—দমির দরদ, কালো চোয়ালের মায়া;
মহিষের পিঠে বসে দেখা— জুমচাষের মিহি মিহি মৌনতা।
মুনের মুনিয়া চিনতে পারেনি—জুমফুলের গোত্রহীন সরলতা
বৃক্ষ বুঝে বৃষ্টির ভাষা—বর্ষায় হাসে বোঙ্গা
জুমপাহাড়ে জমে আছে জ্যোতির্ময় মধুচন্দ্রিমা
তাই তো, বর্ষা এলেই খুলে যায়—সাঁওতাল সাঁতারুবিদ্যার দরজা…
নোট: দমি= পাখির পালকে তৈরি মুকুট, বোঙ্গা=সাঁওতাল দেবতার নাম।