গ্রাম্যতা
উড়ে যায় ভোকাট্টা ঘুড়ি স্মরণের সীমানা পেরিয়ে…
পুরোনো অনেক কিছু মুছে যায় সংঘাতে-সংগ্রামে
কিছু তো থাকেই নামে কি বেনামে
বায়োস্কোপের পর্দায় ভেসে ওঠা কত কত মুখ
বিস্মরণের বাঁকে হারাতে হারাতে ফিরে আসে
তুলসীবেদিতে জ্বলা প্রদীপের আলোয়
. প্রসন্ন মানসীর আনত প্রণাম
উলুধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে পাড়ায় পাড়ায়…
ধ্যানস্থ সন্ধ্যায় শিমুলের সাদা চুল খুলে নিয়ে
. পালায় চৈতালি হাওয়া
শিমুল ফুলের রঙিন দিনের বিরহে
বাঁশবনের মাথায় চুপচাপ বসে থাকে বিষণ্ন কোকিল ৰ
ইচ্ছে উড়িয়ে নেয় বাউলুরি
আলো-অন্ধকার হাতে তিন পায়ে হেঁটে যায় বয়সী সময়
মার্বেল খেলে রাত করে ঘরে ফেরা
আমি যেন এক মুখচোরা অবাধ্য কিশোর
সভ্যতার রাগী চোখের সামনে খালি গায়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে…
. ক্ষমার অপেক্ষায়…
একবার হাসিমুখে বলে দাও পরম নিয়তি—
স্বপ্নের পায়ে আর পড়বে না মোহের বাঁধন
ফিরে আসবে সুন্দর সহজিয়া মন।
উড়াল
পাহাড়ের চূড়া থেকে উড়াল দিয়ে
. এখানে এলাম
. যেখানে দাঁড়িয়ে
মনে হয় পৃথিবীটা ফুটবল
অতীত থেকে কিক করেছেন এক মহা ফুটবলার
ছুটে চলছি গোলপোস্টের দিকে…
আমার সঙ্গে যে আমির বসবাস
যে আমাকে অনুসরণ করে প্রতিক্ষণ
অথবা আমিই যাকে খুঁজে যাচ্ছি রোজ
. ভালোবাসছি, কথা দিচ্ছি
আমার আমিকে কিংবা আরো কেউ আছে
যে আমার প্রতীক্ষায়
. অথবা নেই
অন্য কোথাও কোনো ঘুমের প্রহরে
জেগে উঠে কেঁদে ওঠে স্বপ্নের আবেশে…
প্রতিদিন এই সব ভেবে ভেবে উড়ি
বিপরীতে দাঁড়াই আমার
কে আমি!
কেন এই চিলেকোঠায় মধ্যরাতে আত্মসংলাপ
অধরা দেবীর পায়ে সমর্পণ!
কী হবে নামের পাশে ব্যর্থ বিশেষণ
কথা ও সুরের সুষম সঙ্গমে—
সৃষ্টির আবেশে যদি না-ই মেলে মুক্তির স্বাদ
. আত্মপ্রসাদ
ফিরিয়ে দেব যত উড়বার সাধ
ছড়িয়ে যাব আটষট্টি হাজার গ্রামে
বাড়ির পেছনে হবে পদ্মপুকুর
বাড়ির চারপাশে হবে সবুজ উদ্যান
কবিতা ফলাবে মাঠে কৃষক কবি
পাখি সব গেয়ে উঠবে অতনুর গান…
হাওর
হিজলবনের তলে সুন্দরী হাওরের জলযৌবনের গহিনতা
. আমাকে বুঝতে হবে
পবন মাঝির গানে কিশোর এই মন ছুটেছিল কোন ভাটি গাঁয়
. আমাকে খুঁজতে হবে
ধামাইল গানের তালে কোন সে শ্যামাঙ্গিনী
. আলতারাঙানো পায়ে ঘুঙুর বাজায়
. প্রাণের ওপরে
অঙ্গের বাঁকে বাঁকে কী রহস্য তার
প্লাবনে মাতাল কেন ভাটির আষাঢ়
আমাকে দেখতে হবে দামানের বেশে
. মধুপূর্ণিমারাতে নৌকাবিলাসে…
ব্যক্তিগত সংখ্যাতত্ত্ব
যদি ০’র মহিমা খুঁজে ঘুরতে থাকো…
যদি শনিচক্রে ঘুরতে থাকো আপন আবর্তে
তবে নির্ঘাত এ কোনো নম্বর দিয়ে প্রতিযোগিতার দিন নয়
ম্লান মুখ পার হয়ে উতরে যাবার দিন ছুটি…
. নিজেকেই উতরাতে হয়।
২৯ নভেম্বর জীবন থেকে মুক্তি দাও আসক্তি ২
ব্যক্তিগত সংখ্যাতত্ত্বমতে, ৯ থেকে ২ বিয়োগে সৌভাগ্যের ৭
১১তম মাস নভেম্বরে ১+১=২টি কাজ সুসম্পন্ন হলে ২৯-এর ২ ও ৯ গুণ
গুণফল ১৮ থেকে ১১ বিয়োগ, ফল হবে সৌভাগ্যের ৭
অর্থাৎ সাফল্যের ডাক…
আসক্তি ছাড়ার পর প্রবণতা আরো বেশি ঝুঁকে যাবে প্রাতিস্বিক জীবনের দিকে
বামগুলো ডানে এসে শক্তি হয়ে সমৃদ্ধ করবে
. কর্মে প্রেমে সৃষ্টিশীলতায়…
২০১১-তে অঙ্ক ৪
যোগফল ২+০+১+১=৪
সুতরাং ৪-৪=০
আবার, নভেম্বর ১১তম মাস এবং ২৯ তারিখের যোগফল ২+৯=১১
১১-১১=০
প্রিয় সিংহ, প্রবৃত্তিকে মুক্তি দাও…
খুঁজে পাবে ০ আর পূর্ণ’র মহিমা ২৯ নভেম্বর ২০১১!
আমার কবল থেকে পালাতে চাই
একটা গ্রহভর্তি মানুষের ভিড় থেকে হাত তুললাম—আমি খুনি
আমার নামে কোনো ওয়ারেন্ট নেই
একদিন সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়াবার সুযোগ হলে সোচ্চার কণ্ঠে
আমারই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেব—
আহত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সত্তাকে হত্যা করেছি!
কারাগার থেকে নয়, ফাঁসির মঞ্চ থেকে নয়
. আমার কবল থেকে পালাতে চাই!
চিঠি
আঙুল কেটে লাল চিঠি লিখেছিলাম প্রতিমার কাছে
উত্তরের আশা ফুরিয়ে এসেছে
. চিঠি লেখার দিন ছুটি
বেজে ওঠো খোল-করতাল-তবলা-খমক-বেহালা-একতারা
বেজে ওঠো বাঁশি কৃষ্ণ-আবেশে
দোতারা-এসরাজ-বেদেনির বিন-ডুগডুগি-খঞ্জনি
সশব্দ বিদ্যুতে হেসে ওঠো মেঘ
. আনন্দ আবেগ।
পলাশ ফোটার দিন ফিরে এলে ভাবি
কতটা আগুন লেগে
কতটা উষ্ণতা পেয়ে
সুগন্ধি পাহাড় বেয়ে
. নেমে যায় নদী…
প্রেমপুণ্যস্নান ভুলে
কামনার নীল পদ্ম ফুটে আছে ধ্যানে
মাঠে মাঠে শস্য বুনে
হেঁটে যাচ্ছি মহাকাল ধরে…
হৃদয় ধরছি বাজি মুক্ত বাজারে
আমি এক অরূপ পত্রকার
উর্বশীর চোখ থেকে স্বপ্ন হরণ করি
মধ্যরাতের উদ্যানে চিত হয়ে শুই
আকাশের পৃষ্ঠায় চিঠি লিখি নিজের কাছেই…
গানের ইশকুল ছুটি
পায়ের তলা থেকে মুছে গেলে রাতমগ্ন ছাদ
আকাশের মন থেকে ঘুচে গেল সুন্দরী চাঁদ
আলোর পুণ্যস্নানে কী করে সিক্ত হব বলো
রাই-জোছনার মদে মাতাল এ চোখে
. উড়ে আসে অপ্রেমের ধুলো।
শ্যামের নৌকাখানি ভেসে গেছে কামনার জলে
ভিড়েছে নিঃস্বপ্ন কোনো শ্বাপদসংকুলে
ছুটির ঘণ্টা বাজে গানের ইশকুলে।
কী হবে ধ্যানস্থ হয়ে প্রার্থনায়
. সুরসঙ্গত কবিতায়…
ছিঁড়ে নিয়ে নিঃসঙ্গ বেহালার তার
বিজ্ঞানের ছাত্রী তুমি
. পাঠ নিচ্ছ তড়িৎ পরিবাহিতার।
মুখ
চারপাশে এত এত মুখ
হাসিমুখ কান্নামুখ লাল নীল সাদা কালো মুখ
খয়েরি হলুদ সবুজ বেগুনি
গোলাপ ফুলের মতো উদ্ভিন্ন ঠোঁট
রাগী মুখ অভিমানী দুঃখী দুঃখী মুখ
হিংসুটে চটুল চপল দুষ্টু মিষ্টি মুখ
নিষ্পাপ নিরেট অভিজাত মুখ
ভাঁড় মুখ ভার মুখ আরো কত মুখ।
মুখ আর মুখোশ চলে পাশাপাশি
বুকভরা বিষ আর মুখভরা হাসি
চারপাশে মুখের মিছিল
বহুবর্ণে অভিব্যক্ত রকমারি মুখ
মুখে ভরে গেছে ফেসবুক।