প্রাতভ্রমণের গল্প
প্রাতভ্রমণে হাঁটতে হাঁটতে কতকিছু ভাবি, মাঝেমধ্যে ঘোর
লাগে, হাওয়া এসে গালে যেন এঁকে দেয় সপাট চড়ের মায়া!
পথে হাঁটে বহু জন, মেদবহুল-শীর্ণ-তন্বী আরও আরও কায়া।
কিছু চোখাচোখি প্রতিদিন, কিছু চোখাচোখি
অকস্মাৎ—কিছু পারফিউমের সুগন্ধ, কিছু উৎকট ঘামের
গন্ধ! কিছু চোখে ঘুম, কিছু চোখে মধ্যরাতের কাম, কিছু
চোখে অপার শূন্যতা! কেউ কেউ ধীর লয়ে, অতিদ্রুত কেউ,
কেউ আবার ছন্নছাড়া। পথেরও মুড থাকে, কোনোদিন
শুকনো কড়কড়া, কোনোদিন ভিজে থাকে কান্নার ঢঙে
ঝরাপাতাগুলো পথের কেশ হয়ে ওড়ে এলেমেলো বাতাসে।
সকালের হাঁটায় আমার আছে কত কথা। হাঁটি আমি
মেদের জ্বালায়। কিছু চোখাচোখি প্রতিদিন, কিছু চোখাচোখি
অকস্মাৎ—কিছু পারফিউমের সুগন্ধ, কিছু উৎকট ঘামের
গন্ধে বিগলিত-বিচলিত হই। কোনোদিন চোখে ঘুম,
কোনোদিন চোখে মধ্যরাতের কাম অথবা চোখে অপার
শূন্যতা নিয়ে! কোনোদিন ধীর লয়ে, কোনোদিন অতিদ্রুত
আবার কোনোদিন ছন্নছাড়া থাকি। পথের শুকনো কড়কড়া
মুড কিংবা ভিজে থাকা কান্নার ঢঙে মিশে যাই এশাদের
বাড়ির সামনে। ঝরাপাতাগুলো পথের কেশ হয়ে
এলেমেলো এসে ছুঁয়ে যায় এশা যেমন ছুঁত, অনেক বছর
আগে। এতসব গল্প প্রতিদিন জমে। আজ সকালে একটি
সাপ আর নেউল প্রাতভ্রমণে পাশাপাশি—আমার পাশাপাশি, হায়!
আমরা পাশাপাশি…চারপাশে কেউ নেই,
কেউ নেই…হঠাৎ রিকশাওয়ালা বিড়িতে ফুঁ দিয়ে পাশ
দিয়ে গেলে তিনজনই কেঁপে উঠি!
আঁধারে মিশে যেতে যেতে
মগ্ন দুপুর, বিষণ্ন বিকেল
এভাবেই চলে গেল পৌষ—
কুয়াশায় স্মৃতি এঁকে
মুঠো মুঠো কথা নিয়ে
এগিয়েছি কেবল সন্ধের গৃহে…
সে গৃহে কেউ নেই, কেউ নেই!
কেউ নেই ভেবে হাত বাড়াতেই
রিনিঝিনি শব্দ…
আঁধারে মিশে যেতে যেতে
হৃদয়ে কাহিনি জমে
সে যেন আসে
বহুদিন পর এঁকে দেয়
ওষ্ঠে শীতল ছোঁয়া…
যে যায় সে-ও আসে
ভালোবাসে, ভালোবাসে!
বিলীন হাসির বিস্ময়
পৌষের কোনো এক ভোরে কুয়াশা মেখে অদৃশ্য হয়েছিলে যে পথে, সেই পথে নাকি প্রতিদিন ভোরে মিহি বাতাসের রেণুতে
ভৈরবী রাগ কণ্ঠে নিয়ে কেউ একজন সাধনায় রত থাকে। যদিও আমার হৃদয়ের কোণে সাদাকালো একঝাঁক আহত
স্বপ্ন ছটফটিয়ে যায় অবিরত, তবু স্থির থাকি; তবু সেই
প্রিয়মুখের বিলীন হাসির বিস্ময়ে বুঁদ হই।
একদিন যে গোলাপের থোকা দিয়েছিলে সযতনে, কার্তুজ
হয়ে বিঁধে আজ…বিঁধে যায়…
চড়ুইয়ের মেহমান হয়ে
লকডাউনের দীর্ঘ ছুটি—
কতকিছু প্রিয় হলো—
যেমন—ঘরের বারান্দা !
বারান্দা ঘিরে জমছে স্মৃতি…
একজোড়া চড়ুই—দম্পতি ভাবেসাবে!
প্রতিদিন এসে খুনসুটি করত রেলিংয়ে বসে।
দু’ঠোঁটে করে নিয়ে আসত ঘর বানাবার সরঞ্জাম
কিছু তৃণ…কিছু খড়…
জমাতো সেসব পছন্দের জায়গায়,
ওদের হুল্লোড়, ভীষণ ভালো লাগতো
আমিও শামিল হতাম চড়ুইয়ের মেহমান হয়ে…
তিন দিন হলো, ওরা আসে না! কেমন জানি
অস্থির লাগে, পাখিরা কি মানুষ এড়াবার কৌশল নিলো?
বিনিদ্র রাতের শেষে
যে রাতে জোনাকি ঘুমায়, নক্ষত্র ভেসে যায় আড্ডাতে
চুপসে থাকে গলির মুখে থাকা সিসি ক্যামেরার ঝাঁক
সেই রাতে হৃদয়ের কোলাহল ডানা ঝাপটায় আর
ঘড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে হাঁকডাক করে যায় ঘুম!
বিনিদ্র রাত শেষে নামে অন্ধ প্রণয়, সম্মোহনের
পেছনে যে কারিগর অবিরাম হাতের তালুতে আঁকে
চাঁদের প্রতিচিত্র-সেটি ছিনিয়ে নেয় ক্ষিপ্র মাতাল!
রাতজাগা ব্যাঙটিও অবশেষে খুঁজে পায় সঙ্গিনী
রাতের হাওয়ার গন্ধ, লেগে থাকে তুমুল শহরে।
এ বাড়ি-এ মন-এ শহর মাঝেমাঝে দায়হীন থাকে!
নির্জীব ঠোঁটে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বাহুতে আগলে
রাখে গত দিনের ঝাপসা তাড়না, একান্তে-অন্তে!