এবারের বইমেলায় কবি ও সম্পাদক শামীম হোসেনের দুটি বই এসেছে। কবিতার বই ‘ডুমুরের আয়ু’ ছড়ার বই ‘গাছভাই নাচভাই’। বইমেলায় প্রকাশিত বই এবং সমকালীন সাহিত্য চর্চা নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এবারের নতুন বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
শামীম হোসেন: এবারের গ্রন্থমেলায় আমার দুটো বই বেরিয়েছে। কবিতার বই ‘ডুমুরের আয়ু’ ছড়ার বই ‘গাছভাই নাচভাই’। কবিতার বইটি প্রকাশ করেছে প্লাটফর্ম এবং ছড়ার বই বাংলার কবিতা প্রকাশন। বইয়ে আবহমান বাংলার রূপ, মানুষের প্রেম-বিরহ, সুখ-দুঃখ, রাজনীতি-আন্তর্জাতিক বিষয়াদি ধরার চেষ্টা করেছি। আমি প্রচুর ভ্রমণ করি। যাপিত জীবনের নানা অভিজ্ঞতাও আমার কবিতার বিষয় হয়ে আসে। ছড়ার বইটি শিশু-কিশোর উপযোগী। ছোটদের বিষয়-আশয় বেশি রয়েছে-ফুল-পাখি-নদী-নালা সহ বিভিন্ন ঘরানার ছড়াগুলো এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করেছি।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ : বইমেলা সম্পর্কে আপনার প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা?
শামীম হোসেন: দেখুন বইমেলা এখন শুধু বইমেলা নেই। একটা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। নতুন নতুন বই, নবীন কবি ও লেখকের পদচারণায় মুখর হয়ে আছে প্রাণের উৎসব। আমি নিজেও বইমেলায় সময় কাটাতে পছন্দ করি। অনেকের বই একসঙ্গে সংগ্রহ করি। যা সারা বছরজুড়ে পড়ি। ভালো লাগে। আমার প্রত্যাশা তো আছেই। বইমেলা বেশ গোছানো হচ্ছে মলে মনে হচ্ছে। টুকটাক যে সমস্যা নেই তা নয়।
স্টলগুলো ফাঁকা ফাঁকা জায়গায় হওয়ায় দেখে-শুনে আরামে বই কেনা যাচ্ছে। তবে মাঝে বসার জায়গা করলে ভালো হতো। শিশুদের গ্যালারিটা আরো সুন্দর করা প্রয়োজন। আারেকটু জায়গা বেশি বরাদ্দ করা যেত। শিশুদের মতো করে পরিবেশটা গোছানো হয়নি। লিটলম্যাগের স্টলগুলো মূল মেলার মধ্যে করতে পারলে ভালো হতো। বেশি সংখ্যক পাঠক পাওয়া যেত মনে হয়। এমনিতেই লিটলম্যাগের পাঠক কম। এখন তো লিটলম্যাগগুলো বইও প্রকাশ করছে। সেগুলোরও তো পাঠক প্রয়োজন না কি? মূল মেলায় স্টলগুলো হলে বেচাকেনা আরও বেশি হতো মনে হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমি লিটলম্যাগ নিয়ে আলাদা মেলার আয়োজন করতে পারে। আমি চাই লিটল ম্যাগাজিনকে অবহেলা না করে যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হোক। মনে রাখা দরকার, লিটলম্যাগই লেখক-কবিদের আঁতুড়ঘর।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সমকালীন সাহিত্য নিয়ে আপনার চিন্তা–ভাবনা কেমন?
শামীম হোসেন: সমকালীন সাহিত্যচর্চা নানা বাঁকের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার আধিক্য যেমন বেড়েছে, বেড়েছে লেখকদের আনাগোনাও। প্রচুর পাঠ করার অভ্যাস করছি। বোঝার চেষ্টা করছি বর্তমান লেখার গতি-প্রকৃতি। তবে আমি হতাশ নই। জানি নদীর স্রোত নেমে গেলে পলি জমে থাকে। আর সমকালীন সাহিত্যকে আরো নিবিড়ভাবে বোঝার জন্য অপেক্ষা তো করতেই হবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বর্তমান লেখকদের মধ্যে কাদের লেখা ভালো লাগে?
শামীম হোসেন: বর্তমান লেখক-কবিদের ভেতর অনেকের লেখা ভালো লাগে। বিস্ময় জাগে। বাংলা সাহিত্য সুন্দর একটা সময় পার করছে। হয়তো আগামীতে আমাদের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
শামীম হোসেন: ভবিষ্যতে আমি দীর্ঘ কবিতা লিখতে চাই। কয়েকটি বিষয় ঠিক করে রেখেছি। পড়ছি। জায়গাগুলো ঘুরছি। অভিজ্ঞতা বাড়লে তবেই লিখবো। কোনো লেখাকে সহজাতভাবে লিখতে আমি প্রচুর সময় ব্যয় করি। ছোটগল্প লেখার ইচ্ছে আছে। সারাজীবনে আমি একটি উপন্যাস লিখতে চাই।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্যের কোন শাখা আপনাকে বেশি টানে?
শামীম হোসেন: অনেকেই আমার কাছে গদ্য চান। আমি দিতে পারি না। গদ্যে আমার ভীতি আছে। কবিতার টান সবসময় অনুভব করি। কবিতার ভেতর দিয়ে নিজের জীবন যাপন করতে ভালো লাগে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা…
শামীম হোসেন: ১৯৯৬ কিংবা ৯৭ সালে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে মাত্র ৫০ পয়সায় একটি বই সংগ্রহ করেছিলাম। কবি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’। সেটিই আমার পড়া প্রথম কোনো কবিতার বই। বলা যায় কবিতা লেখার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে সে-বইটা কাজে লেগেছে। আমার সংগ্রহে এখনো বইটি আছে। হয়তো আরো অনেকেই নীরবে আমার লেখার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: প্রচারবিমুখ থেকে সাহিত্যচর্চার সার্থকতা কতটুকু?
শামীম হোসেন: শুনুন, সাহিত্যচর্চা নীরবেই করতে হয়। হয়তো লেখার পর প্রচারমাধ্যমের প্রয়োজন পড়ে। প্রচারের বাহুল্য লেখকের ক্ষতি করে। আমাদের চোখের সামনে তো অনেক উদাহরণ আছে। সময় তাদের বিমুখ করেনি। কেউ যদি লেখায় মগ্ন থাকে তাহলে একদিন বিকশিত হবেই।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার বই আপনাকে কেমন পুলকিত করে?
শামীম হোসেন: করে করে। পুলকিত তো করেই। নতুন লেখার অনুপ্রেরণা পাই।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার লেখালেখির সাফল্যে অন্যের ঈর্ষা আপনাকে বিব্রত করে?
শামীম হোসেন: কেউ ঈর্ষা করলে আমি তাকে ভালোবাসা জানাই। কোনোদিন বিব্রত হইনি। আমার লেখা নিয়ে আমি নীরবেই মরে যেতে চাই।