চিন্তাসূত্র: এবার আপনার কী বই বের হচ্ছে, প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিতব্য বই সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন।
শারমিন সুলতানা রীনা: এবার বই মেলায় আমার যে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে, এটির নাম বেদনার উজ্জ্বল পিঠ। প্রতিভা প্রকাশ, প্রকাশক মঈন মুরসালিন।প্রচ্ছদ সঞ্জিব রায়। বইটিতে মূলত, প্রেম-বিরহ, দেশপ্রেম, সামাজিক বৈষম্য, সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও বিদ্রোহ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
চিন্তাসূত্র: সারাবছর লেখক-প্রকাশক বই প্রকাশ না করে, এই একুশের বইমেলা এলেই প্রতিযোগিতায় নামেন। বইমেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
শারমিন সুলতানা রীনা: আসলে সারা বছর কোনো না কোনো লেখকের বই কিন্তু প্রকাশিত হচ্ছে। তারপর যেহেতু ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস, তাকে সন্মান জানাতে কর্তৃপক্ষ মেলার জন্য এ মাসকে বেছে নিয়েছে, তাই সব ধরনের কবি-লেখক ঘটা করে এ সময় বই বের করেন। লেখক-পাঠকের একটা মেল বন্ধন তৈরি হচ্ছে এখানে। যারা লেখালেখির সঙ্গে তাদের কাছে এটি উৎসব মুখর একটি মাস।
চিন্তাসূত্র: একুশের বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন?
শারমিন সুলতানা রীনা: প্রভাব তো একটা অবশ্যই পড়ছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অনেক দুর্লভ বইও এখান থেকে সংগ্রহ করা যায়। যারা সারাবছর বই পড়েন না বা খুলেও দেখেন না, তারাও এখানে আসছেন। কেউ কেউ বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আসছেন এবং কিনছেন বাচ্চার পছন্দের অথবা নিজেদের পছন্দের একটি বই। আর এটি অবশ্যই সাহিত্যে ভালো একটি প্রভাব পড়ছে।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
শারমিন সুলতানা রীনা: একুশের বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহে ভালো ভূমিকাই রাখছে বলে মনে হয়। তবে সবার বই প্রকাশকের খরচের প্রকাশিত হচ্ছে না। অনেক প্রকাশনা থেকে তরুণ লেখক-কবিরা নিজ খরচে বই বের করছেন। প্রকাশকের নিজ স্বার্থ অথবা লেখকের স্বার্থ; যা-ই হোক, তরুণ লেখক-কবিরা এই মাসটির জন্য অপেক্ষা করেন। সারাবছর তারা লিখে যান উৎসাহ-উদ্দীপনায়।
চিন্তাসূত্র: প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইয়ের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ। বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন। বইপ্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজন আছে কি না?
শারমিন সুলতানা রীনা: আমার নিজেরও একটি কবিতার বই আসছে, তাই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। সহজলভ্য হওয়ার কারণে যে কেউ বই প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছেন ঠিকই, তবে সাহিত্যের মান কতটা বাড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংখ্যা আর মান এক বিষয় নয়। সাহিত্যে যারা আমাদের আদর্শ তারাই বা আমাদের কতটুকু শেখাতে পারছেন, তারা অনেকেই এখন কমার্শিয়াল হয়ে গেছেন। নতুন নতুন বই পাচ্ছি ঠিকই, কী শিখছি অথবা যা শেখাচ্ছেন তার ভালোটুকু আমরা কতটুকু নিতে পারছি? যদি না নিতে পারি, সেটা আমাদেরও ব্যর্থতা। কারণ বড় লেখকদের ভালো বই প্রকাশিত তো হচ্ছেই। আর অভিযোগের যে বিষয়টি, তা হলো আমরা কারও ভালো দেখতে পারি না। কোনো নারী বা পুরুষ কাজের অবসরের বাকিটা সময় নষ্ট না করে অথবা কোনো খারাপ কর্মকাণ্ডে না জড়িয়ে তার প্রাণের তাগিদে যদি লেখে, তাকে উৎসাহ না দিয়ে বদনাম করার কোনো দরকার কি আছে? গ্লাস অর্ধেক শূন্য, না কি অর্ধেক পানি; এটা যে যে ভাবে নেয়।
বই প্রকাশের ক্ষেত্রে নীতিমালা কতটুকু প্রয়োজন, সেটি কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন। এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। তবে এটুকু বলবো, যেকোন লেখা থেকে কেউ যেন ভালো কিছু শিখতে পারে। কোনো ধর্ম বা জাতির প্রতি অবমাননা, কারও ব্যক্তিচরিত্রের প্রতি কটাক্ষ করা, অন্যকোনো দেশের প্রতি কটাক্ষ করা, আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে লেখাসহ এমন কিছু সেন্সেটিভ বিষয় এবং ভুল তথ্য সংবলিত কিছু নিয়ে লেখা বই মেলায় যেন প্রকাশিত না হয়; সে বিষয়ে অবশ্যই নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে। এটিই সব বিবেকবান লেখক-পাঠকের কাম্য।