এবারের বইমেলায় কবি পলিয়ার ওয়াহিদ-এর একটি ছড়ার বই এসেছে। নাম: ‘মানুষ হবো আগে’। বইমেলায় প্রকাশিত বই এবং সমকালীন সাহিত্য চর্চা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এবারের নতুন বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
পলিয়ার ওয়াহিদ: এবারের গ্রন্থমেলায় একটা কিশোর কবিতার বই বেরিয়েছে। যাকে ছড়া বললেও অত্যুক্তি হয় না। শিশুদের বই তো এখন ভূতের দখলে। শিশুদের ভূত থেকে বের করে আনার প্রতিবাদ স্বরূপ আমার এই বই। শিশুর মা-বাবা যে রকম বই খুঁজতে আসেন ঠিক সে রকম বই ‘মানুষ হবো আগে।’ ছড়ার বইটি প্রকাশ করেছে দোয়েল প্রকাশনী। বইটিতে মোট ১৪টি ছড়া আছে। মানুষ হবো আগে এই নামটি শুনেই নিশ্চয় কিছুটা আঁচ করা যায় আমার কিশোর কবিতা আদেশ-উপদেশ ও আনন্দ-শিক্ষামূলক। প্রতিটি ছড়ার সাথে আছে নান্দনিক সব স্কেচ ও মনমাতানো ছবি।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বইমেলা সম্পর্কে আপনার প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা?
পলিয়ার ওয়াহিদ: বইমেলা নিয়ে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা বলে লাভ কী? আমার অভিযোগ আছে শুধু। বইমেলা এক মাস না হয়ে ১৫ দিন হোক। সময় তিনটা থেকে না হয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হোক। কর্মজীবীরা মেলায় ঢোকার আগেই তো বন্ধ হয়ে যায়। এটা খুবই বাজে ব্যাপার। আর এসব কথা ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণকুহরে কখনো ঢুকলো না। প্রকাশগুলো সম্পাদনা পরিষদ করে বই প্রকাশ করুক। বস্তাপচা সব বই প্রকাশ না করে বাছাই বই প্রকাশ করুক। মেলার স্পেস আরও বাড়ানো হোক। লিটল ম্যাগকে উদ্যানে আনা হোক। আলাদা করে ঝামেলা বাড়ানো হয়েছে। লিটলম্যাগের নির্ধারিত ফি নেওয়ার পরেও এবার কোনো সাইনবোর্ড দেয়নি বাংলা একাডেমি। এ সাহস তারা পায় কোথায়? তাদের এই বোধোদয় হোক সেটা আমার প্রত্যাশা।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সমকালীন সাহিত্য নিয়ে আপনার চিন্তা–ভাবনা কেমন?
পলিয়ার ওয়াহিদ: আমি আশাবাদী। কারণ দিন দিন বাংলা সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যে প্রভাব সৃষ্টি করছে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বর্তমান লেখকদের মধ্যে কাদের লেখা ভালো লাগে?
পলিয়ার ওয়াহিদ: আমার বন্ধুদের লেখা আমার ভালো লাগে। এ সময়ে ভালো কবিতা ও গল্প লেখা হচ্ছে। আমাদের সময়ের তরুণরা কবিতার চিন্তা ও কাঠামোতে একটা ভাঙচুর চালাচ্ছে। তবে কবিতার শারীরিক পরিবর্তন আমার কাছে কোনো কম্মের বলে মনে হয় না। মূল কাজটা হলো চিন্তার। নূতন চিন্তা ছাড়া কোনো মৌলিক পরিবর্তন সম্ভব নয়।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
পলিয়ার ওয়াহিদ: পরিকল্পনা করে আজো আমার কিছু হয়নি। যা হবার হবে। যা ঘটার ঘটবে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সাহিত্যের কোন শাখা আপনাকে বেশি টানে?
পলিয়ার ওয়াহিদ: কবিতা, কবিতা এবং কবিতা। তবে কিশোর কবিতা বা ছড়া লিখলাম এবার। গল্পও লিখব। লিখব উপন্যাস ও নাটক। সবকিছুর জন্য অভিজ্ঞতা খুব সহায়ক। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে ছড়ি ঘোরাতে চাই।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা…
পলিয়ার ওয়াহিদ: দায়িত্ববোধ থেকেই প্রথমে লিখতে আসা। আবেগে থরথর করতে করতে লিখতে আসিনি। কারো মজার খোরাক হওয়ার জন্যও না। মানুষের কাছে আমার অনেক দায়। যখন লিখতাম না তখন কৃষি কাজ করেছি। আবার কখনো লেখা বাদ দিলে কৃষিকাজই করব। মূল কাজ হলো মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করা। সেখান থেকেই লিখি। আনন্দ বাজারে সওদা সেটা পরের কথা। এখন কিছু পাঠকরাই আমার অনুপ্রেরণা।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: প্রচারবিমুখ থেকে সাহিত্যচর্চার সার্থকতা কতটুকু?
পলিয়ার ওয়াহিদ: সত্যিকার অর্থে ভালো কিছু করতে পারলে সেটার প্রচার হবেই। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমরা কিছু সৃষ্টি করার আগেই ঢোল বাজাতে শুরু করি। সমস্যাটা এখানেই। প্রচার বিমুখ কেউ-ই না। টেকনিক্যালি শব্দটাকে ব্যবহার করেন লেখকরা। এটা সাহিত্য রাজনীতির অংশ বলে মনে করি। এখানে নিজস্ব রুচির ব্যাপার থাকে। তবে সাহিত্য নীরবঘটিত মাধ্যম। এখানে হইহুল্লোড় করার কিছু নেই। বেশি প্রচার লেখকের ক্ষতির কারণও বটে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার বই আপনাকে কেমন পুলকিত করে?
পলিয়ার ওয়াহিদ: পুলকিত তো করেই। অনেক ভালো লাগা থাকে। নিজের চিন্তাকে অন্যের চর্চায় দেখলে কার না ভালো লাগে।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: আপনার লেখালেখির সাফল্যে অন্যের ঈর্ষা আপনাকে বিব্রত করে?
পলিয়ার ওয়াহিদ: ঈর্ষা ব্যাপারটা স্বভাবজাত। কেউ প্রকাশ করে কেউ করে না। তবে মাঝে মাঝে বিব্রত যে হই না, তা নয়। আর সাফল্য একটা আপেক্ষিক বায়ু। তার মতো সে বয়ে যাক। তাতেও আমার কিছু আসে যায় না।