চিন্তাসূত্র: এবারের বইমেলায় আপনার কী কী বই আসছে? প্রকাশক কে? প্রচ্ছদ কে করেছেন? প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এবারের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের নাম ‘বাংলা সাহিত্যের একাল-সেকাল’। দশটি প্রবন্ধ নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। প্রকাশ করেছে কিংবদন্তী পাবলিকেশন। প্রচ্ছদ করেছেন চারু পিন্টু। মূল্য রাখা হয়েছে ৩০০ টাকা। পাওয়া যাবে বইমেলার ৩৭৪-৩৭৫ নম্বর স্টলে। বইটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, ফারুক মাহমুদ, কামাল চৌধুী, তপন বাগচী ও আমিনুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
চিন্তাসূত্র: সারাবছর লেখক-প্রকাশক বই প্রকাশ না করে এই একুশে বইমেলা এলেই বই প্রকাশের প্রতিযোগিতায় নামেন। মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কিভাবে দেখেন?
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বইয়ের প্রচারের এবং বিক্রির বড় একটি উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে বইমেলা। এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিকই বিদ্যমান। সারাবছর যে বই প্রকাশ হয় না, এমনটা নয়। তবে বেশিরভাগ বই প্রকাশ হয় বইমেলাকে ঘিরে। এ সময় তাড়াহুড়ার কারণে মানহীন বইও প্রকাশ হয়। এ ক্ষেত্রে লেখক-প্রকাশক উভয়েরই অবহেলা রয়েছে। লেখকরা সময়মতো পাণ্ডুলিপি দিতে পারেন না। আবার সময়মতো পাণ্ডুলিপি দিলেও প্রকাশকদের গাফিলতিতে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সারাবছর বই প্রকাশ হলে পাণ্ডুলিপি বাছাই, সম্পাদনা ও অন্য কাজে ব্যাপক সময় পাওয়া যায়। সে হিসেবে বইয়ের মান ভালো হওয়ার সুযোগ থাকে।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্যে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: সবকিছুরই ভালো এবং মন্দ দুটি দিকই থাকে। একুশে বইমেলা একটি উৎসব। উৎসবে ভালো-মন্দ বিচার করা কঠিন। এখানে সবাই অংশগ্রহণের সুযোগ পান। সবাই ঘুরতে আসেন। ইচ্ছে হলে বই কেনেন। না হলে বই কিনবেন না। তবে এই একমাস বইয়ের সঙ্গে পাঠকের যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের সম্পর্ক তৈরি হয়। সাহিত্যচর্চায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। লেখকদের অনুপ্রাণিত করে।
চিন্তাসূত্র: একুশে বইমেলা প্রকাশনা শিল্পে তরুণদের উৎসাহিত করার ব্যাপারে কী ধরনের ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: বইমেলায় তরুণদের অংশগ্রহণ বেশি থাকে। ফলে তরুণ লেখকদের বই প্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়। অনেক জনপ্রিয় তরুণ লেখকও বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশ করে থাকেন। এক বইমেলায় যত বই প্রকাশ পায় এবং বিক্রি হয়, তা সারাবছরেও হয় না। আমি বরাবরই নেতিবাচক ধারণার বিরুদ্ধে। কিছু না হওয়ার চেয়ে কিছু হওয়া ভালো। সে হিসেবে বইমেলা তরুণদেরই বেশি উৎসাহিত করে। এক সামিয়ানার নিচে অনেক বই সংগ্রহের সুযোগ তৈরি হয়। অন্তত বই সংগ্রহের ক্ষেত্রে বইমেলা ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যা তরুণদের অনেকটা সময় বাঁচিয়ে দেয়।
চিন্তাসূত্র: প্রকাশনা উপকরণের সহজলভ্যতার কারণে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই প্রকাশ করতে পারেন। এতে বছর বছর বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা। বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মান বৃদ্ধি ঘটছে না বলে অনেকেরই অভিযোগ; বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন আছে কি?
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ: এখন আর উপকরণ সহজলভ্য নয়। যে কেউ চাইলেই বই প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছেন না। তারপরও সব শিল্পেই সৌখিন কিছু লোক পাওয়া যায়। যারা লাভ-লসের হিসাব করেন না। কাজের মধ্যে আত্মতৃপ্তি খোঁজেন। বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও ক্ষতির কারণ দেখি না। পাঠকই বেছে নেবেন, কোনটি তিনি গ্রহণ করবেন। মান বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলা যায়। সেটি অবশ্যই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে নিশ্চিত করতে হবে। মানসম্মত বইও বাজারে আসছে। খুঁজে নেওয়ার দায় ও দায়িত্ব পাঠকের। আমি তো মানহীন বই কিনি না। বইপ্রেমীদের অবশ্যই মান যাচাই করার বোধ-বুদ্ধি রয়েছে। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এটা লেখক-প্রকাশকের হাতেই থাক। দেশ, ব্যক্তি বা ধর্ম বিরোধী হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তো আছেই। নীতিমালা থাকলে কোনো লেখার মাধ্যমেই বিপ্লব বা পরিবর্তন সম্ভব নয়। অতীতেও যেটা হয়নি।