তুহিন তৌহিদ । কবি।জন্ম জন্ম সিলেটের মৌলভীবাজারে। কবিতার পাশাপাশি গদ্যও লেখেন। বেশ কিছু গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর হলেও ইতিহাস, দর্শন, মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে বেশি পছন্দ করেন। তার প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা সাত। এগুলো হলো ফিনিক্স পাখির মতো (২০০৮, উৎস), প্রজাপতিঘুড়ি (২০১০, হাকালুকি), ফেলানির ডানা (২০১২, মুক্তদেশ), প্রেমের বয়ান (২০১৩, বিভাস), অডিসিউস ও অন্যান্য কবিতা (২০১৩, মুক্তদেশ), ওয়ানওয়ে রোড (২০১৪, বিভাস), আর কতো, হে গিরগিটি (২০১৭, বিভাস)বইমেলা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা নিয়ে তাঁর মুখোমুখি হয়েছেন কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ।
চিন্তাসূত্র: এবারের নতুন বই সম্পর্কে কিছু বলুন?
তুহিন তৌহিদ : ‘আর কতো, হে গিরগিটি’ আমার সপ্তম কবিতার বই। প্রচ্ছদ করেছেন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। বেরিয়েছে বিভাস থেকে। এতে একটি দীর্ঘ কবিতাসহ ৩০টি কবিতা আছে। আমার অন্য বইয়ের কবিতার মতো এগুলোর অধিকাংশই লিরিক্যাল। পাঠকের সামনে নতুন হয়ে আসার প্রয়াস এর মধ্যেও রয়েছে।
চিন্তাসূত্র: বইমেলা সম্পর্কে আপনার প্রাপ্তি এবং প্রত্যাশা?
তুহিন তৌহিদ : অমর একুশে গ্রন্থমেলা একটা উৎসব; বাঙালির প্রাণের উৎসব। এটা লেখক-লেখক, লেখক-পাঠক অথবা পাঠক-পাঠকের মিলনমেলা। এটা এখন অনেকটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ভাষার মাসের এ বই মেলার জন্য লেখকদের যেমন প্রস্তুতি তৈরি হয়, পাঠকরা একইভাবে প্রস্তুত হন। নতুন পাঠক সৃষ্টিতে এর বিকল্প নেই। সারাবছর লিখলেও আমি মেলা উপলক্ষ্যে বই করতে পছন্দ করি। এবার একটা কবিতার বই এসেছে; একটা গদ্যের বইও আসছে। এক-দু’দিনের মধ্যে চলে আসবে আশা করছি। সপ্তদশ শতকের দারি-ফারসি ভাষার এক কবির জীবন, সাহিত্য নিয়ে বইটি। ছোট বই। বড়জোর ৫৬ কি ৬৪ পৃষ্ঠার। মির্জা বেদিল নামের ওই কবির কবিতার সঙ্গে তেমন একটা পরিচয় নেই বাংলাভাষীদের। কিন্তু অসাধারণ এক কবি; অসামান্য সব কবিতা তার। এ দার্শনিক-কবিকে মধ্য এশিয়ার দু’টি দেশে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়।
চিন্তাসূত্র : সমকালীন সাহিত্য নিয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনা কেমন?
তুহিন তৌহিদ : সমকালে হৈচৈ একটু বেশিই হচ্ছে; আর এ হট্টগোলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণরা উপেক্ষিত হচ্ছেন। দলবাজি (মূলত গ্রুপবাজি) সব সময়ই ছিল; এখন একটু বেশি। এতে সময়ের সেরা কবিদের চিহ্নিত করাটা সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠছে।
চিন্তাসূত্র : সমকালীন লেখকদের মধ্যে কাদের লেখা ভালো লাগে?
তুহিন তৌহিদ : নির্দিষ্ট করে কারো নাম বলা যাচ্ছে না। সেই সংখ্যা অতি অল্প।
চিন্তাসূত্র : সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
তুহিন তৌহিদ: কোনো পরিকল্পনা নাই। লেখাটা আমার কাজ। এ কাজ আমাকে কেউ করতে বলেনি। আমি নিজেই এটা বেছে নিয়েছি, অথবা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এইদিকে চলে গেছি। হতে পারে, অর্থহীন জগৎজন্মকে অর্থপূর্ণ করার একটা চেষ্টা।
চিন্তাসূত্র: সাহিত্যেও কোন শাখা আপনাকে বেশি টানে?
তুহিন তৌহিদ: কবিতা। তবে গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাসসহ অন্য শাখাগুলোও টানে।
চিন্তাসূত্র: লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার অনুপ্রেরণা?
তুহিন তৌহিদ: এই প্রশ্নের উত্তর ওপরে দেওয়া হয়ে গেছে।
চিন্তাসূত্র: প্রচারবিমুখ থেকে সাহিত্যচর্চার সার্থকতা কতটুকু?
তুহিন তৌহিদ: কেউই প্রচারবিমুখ নয়। আমি যে সাক্ষাৎকারটি দিচ্ছি সেটাও প্রচারের অংশ। তবে প্রচারের জন্য হাহাকার থাকলে সাহিত্য হয় না।
চিন্তাসূত্র: আপনার সপ্তম বই আপনাকে কেমন পুলকিত করে?
তুহিন তৌহিদ: ভালো লাগে। একটা বই বের হলে নতুন বইয়ের জন্য নতুন করে ভাবার সুযোগ প্রশস্ত হয়; উদ্দীপ্ত হই।
চিন্তাসূত্র: আপনার লেখালেখির সাফল্যে অন্যের ঈর্ষা আপনাকে বিব্রত করে কি?
তুহিন তৌহিদ: সাহিত্যের ঈর্ষা ভালো। কিন্তু এ ঈর্ষা থেকে কেউ কেউ উদ্ভট আচরণ ও ভণ্ডামি শুরু করে। যেমন, চেনা আছে, জানা আছে, ফেসবুকে আছে, কিন্তু বললো, ‘ভাই, আপনার নামটা?’ আপনি ধরেন অর্ধেক নাম বলে উড্ডায় অন্যদের সামনে নিজের মুখ বাঁচাতে চাইবেন। কিন্তু সেই ‘নোবেলবিজয়ী’ নাছোড় সাহিত্যিককে আপনার পুরো নামটাই বলতে হবে। কথিত ‘ঘনিষ্ঠ’ কবিবন্ধু পাশে থাকলেও তিনি আপনার ন্যূনতম পরিচয় ওই ‘মহান লেখকে’র কাছে তুলে ধরার কাজটুকু করবেন না, যাতে আপনি বুঝে যান, আপনি যা লিখেছেন তা ওই লেখক পড়েন না; মানে আপনি আসলে যা লিখছেন, তা কোনো ইমপেক্ট ফেলছে না।