স্বমেহন-ভূকম্পন
ও রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কৃত্রিম এক যোনিতে পা আটকে গেল!
আমি জিজ্ঞসে করলাম, তুমি এখানে কেন?
যোনিটি তখন চিৎকার করে উঠল, আমাকে হাজারবার ধর্ষণ করা হয়েছে
আমার ভেতর পুরুষের অচরিতার্থ বাসনা আর ক্ষোভের ব্যর্থ বীর্জপাত
তারপর তারা আমাকে অস্বীকার করেছে—
কিন্তু ভেতরে খোদাই করে দিয়েছে সমূহ—পাপ আর গুপ্ত অবক্ষয়!
বাঁশি বাজাতে বাজাতে, কলমে লিখতে লিখতে তারা আমার গতজন্মের
স্মৃতিকে হত্যা করেছে—
তারপর সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে আমি এখানে এলাম
আমার ভেতরে এখন স্বমেহন-ভূকম্পন চলছে, ফিরিয়ে দেবো একে
একে সব নিষ্পেষণ, সেই সঙ্গে অজস্র শিশুর কান ফাটানো চিৎকার
শামুকের কাছ থেকে যে প্রেমিকের কথা জেনে এলাম, তার অপেক্ষায় আছি
আমাকে জলতর্পণ করো প্রেমিক…
তোমার জন্ম নদীর যোনিতেই লিখে গেলাম!
ফুল ও মোজা
জন্মদিন ও মৃত্যুদিনের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন যাই বলেই না—না দেখার এবং
না শোনার এরকম অনেক কিছু দেখি ও শুনে ফেলি আমি! মাইকফুলের
গোড়ায় ঝিঁঝিঁপোকা গলা কাঁপিয়ে ডাকে। টিকটিকির ডিম চামড়া ভেদ
করে বলে, ‘এই আশ্বিনেই টিকটিকি হয়ে বেরুব’। বেদানার রক্তিম দানাগুলি
বলে যায়, ‘এখানে কোনো অশ্রু খুঁজো না; কারণ রক্তমাংসের চিৎকারের মতোই
আমার ফেটে যাওয়া। যার কোনো সমাধান নেই!’ জন্মদিন ও মৃত্যুদিন বলেও
কিছু নেই। বরং দাঁত ওঠা ও পড়ে যাওয়া প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যে প্রান্ত হাওয়া হয়ে
ওঠে তার কথা হোক…
ফুল জানে না কে জন্ম নিল আর কে মরে গেল! মোজা জানে না কার পা
ভেতরে গেল আর কার পা বেরিয়ে পড়ল বাইরে
ফুল কি শুধু জড়িয়ে রবে গলায় গলায় আর মোজা শুধু জড়িয়ে থাকবে পা?
ফুল গলার সৌন্দর্য উসকে দাও, মোজা থেকে পা নয় নতুন পথের
উদাহরণ বেরিয়ে আসুক…
শিল্প
কাল রাতে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসাকে স্বপ্নে দেখলাম; সে শুধু হাসি আর
কান্নার ভেতরেই নেই। রাগে অগ্নিবর্ণ হয়ে শিল্পীর রং-তুলি ও রঙের
ডিব্বা সব এলোমেলো করে দিতে লাগল! লাল, সবুজ, নীল সব
একাকার করে দিতেই; অদ্ভুত একটা রঙের ধারা বয়ে যেতে লাগল
শহরের ভেতর দিয়ে…
শিল্পের ঋতুস্রাবের কাছে সমুদ্র তো কিছুই না!
মানুষ ও কলাগাছ
মানুষ অনেকটা কলাগাছের মতো, কারণ তার সবটাই প্রায় কাজে লাগে
তফাৎ একটা জায়গায়, কলাগাছের হৃদয় বলে কিছু আছে কিনা
সেটা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি—মানুষেরটা আবিষ্কৃত। সাল ও তারিখের কথা
প্রাচীন গুহাগাত্র ও চুম্বনের আকুতিতে লেখা আছে!
চোখ আর ফল দুটোরই বিনিমিয়মূল্য আছে—দুটোই দান করা যায়
কিডনি ও বাড়ালি এই দুটোরও বিনিময়মূল্য আছে—একটা প্রতিস্থাপিত এবং
অন্যটা পাকস্থলিত হয়…
কলাগাছের দেহ জ্বালানি আর মানুষের দেহ জৈবসার। শুধু সমস্যা বেঁধেছে
হৃদয় নিয়ে। হৃদযন্ত্রটাকে অনুর্বর মাটিতে পুঁতে দিলে সেখান থেকে একটা
গাছ হতে পারে, সে গাছে এসে বসতে পারে একটা নীল টুনটুনি
আর হৃদয়ের আওয়াজ ছড়িয়ে দিতে একটা টুনটুনিই যথেষ্ট!
আঁচল
পুরোটা রাস্তা কার আঁচল হয়ে বিছানো আছে, আঁচলে বেলফুলের গন্ধ
রাস্তায় তবু টায়ার-পোড়া আন্দোলন। কুশপুত্তলিকা দাহ। জ্বলে ওঠা আগুন
হঠাৎ প্রজাপতি হয়ে উড়তে থাকে এখানে। সেই আঁচলে ছাপা হয় ভোরবেলা…
আলোয় ভেসে ভেসে যাই। আকাশ খোলা শাওয়ারে ভিজে একটানা বনঘুঘু
ঘুঘুও প্রকাশিতব্য কবিতায় নতুন ক্যারেক্টার পেয়ে উড়ে যায় ওদিকেই
আঁচল নিয়ে যায় চুম্বক আকর্ষণে—আঁচলের শেষপ্রান্তে তুমি? তাঁতের শাড়ি খুলে
দেখাবে জমিন? জমিনে তোমার হাসিগুলো সুতো—বুকের রক্তগুচ্ছ এমব্রয়ডারির
কোনো জটিল নকশা! চোখের সাদা-কালোয় উজ্জ্বলতা! একে সম্মোহন বলে?
আমি শাড়ির শিল্পবোদ্ধা নই—
আঁচলের এলাকা থেকে একটা ক্ষুদ্র প্রজাপতির মতো উড়ে এসেছি শুধু…