দেবতা
ধরা যাক, খেয়ালেই দেবতা ডেকেছিলে
অমনি আমি পুজোয় চলে এলাম,
আমার জন্য প্রস্তুত হলো মণ্ডপ, জবা ফুলের চালচিত্র
সামনে তৈরি হলো মোটা লোহার বেড়া
তারপর থেকেই নিয়মিত প্রণাম পাচ্ছি
আর
যথাযোগ্য দূরত্বে দাঁড়িয়ে ফুল, ভালো-ভালো কথার মালা
শারদীয় প্রতিমার কথা ভাবি
প্রিয়দর্শিনী সরস্বতীর মুখ মনে পড়ে—
দেবতাকে পুজোয় ডাকা যায়, কামনায় নয়
শিউলীর ঘ্রাণ এসে বলে কানে-কানে
তোমাকেও নিয়ে যাবে পবিত্র বিসর্জনে
অভিমান
তোমায় মনে পড়ার ভয়
. তোমাকে ভুলিয়ে রাখে
ফুল থেকে ফুলের দূরত্বে শুক্রাণু
ফড়িংয়ের পায়ে পায়ে
অনাগত ফলের বিলুপ্তিবোধে
নিঃশ্বাসে তার ছড়িয়ে দিচ্ছে
. অভিমানের বিষ ও বাসনা
ফল থেকে ফলের দূরত্বে
অধির বেঁচে থাকা উদ্ভ্রান্তকাল
সেই কবে পুড়ে গেছে উপেক্ষার আঁচে
আজও তবু সে কথা বিনয়ে বলি—
যে ফুল ঝরে গেছে বয়সের ভারে
সে ফুল আমি জমা করে রাখি
. আমারই মনের অগোচরে—
যা কি-না তোমায় ভোলায়
. তোমাকে মনে পড়ার ভয়
বসন্তসংক্রান্তি
জানো স্বর্ণ, কিভাবে বেঁচে আছে মানুষ এখন?
কাঁদলেই মিথ্যাবাদী, হাসলে মনে হয় বিজ্ঞাপন
বসন্ত এসে ফিরে যায়, মোহময় সৌরভ মিলিয়ে যায় বাতাসে
কেউ তার কিছুই ধরে রাখে না, এমনকী কবিতা—যাকে তুমি
‘অনুভূতি’ নামে ডাকো—সে এখন রূপচর্চার বদলে
পরচর্চা আর নকল পারফিউম মেখে ঘোরে
এখানে ভালোবাসাই একমাত্র বসন্ত, যেখানে কোনো ফাল্গুন নেই, বরং
মাথার ওপর করপোরেট চোখের মতো তপ্ত সূর্য স্থির হয়ে থাকে, যেনবা
পাহাড়ে ঝুলন্ত নিঃসঙ্গ শেরপা, দড়িছেঁড়া ভয় যার সারাক্ষণ ঝুলিয়ে রাখে
ভালোবাসা এমনই এখানে, রূপের বদলে যার রুপিয়ার মূল্য বেশি
পালাক্রমে
একটি শব্দ ধর্ষিত হয়ে গেল মানুষ নয় তবু
মানুষ নয় তবু একটি শব্দ ধর্ষিত হয়ে গেল
শব্দ ধর্ষিত হয়ে গেল মানুষ নয় তবু মানুষ ধর্ষক
মানুষই সব, সব মানুষের জন্য—এই পৃথিবী, ব্রহ্মাণ্ড, এই নরক।
শব্দটি কানে বাজা মাত্রই চোখে ভেসে ওঠে একটি কুৎসিত দৃশ্যকল্প—
ছেঁড়া-খোড়া সালোয়ার কিংবা সেমিজ,
যদি বিশ্বাস না হয়, গুগল-এর সার্চ অপশনে পরিষ্কার বাংলায়
‘পালাক্রমে’ শব্দটি লিখেই দেখুন
আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি ধর্ষণের ফিরিস্তি বেরিয়ে আসবে।
…মানুষ নয় তবু একটি নিরীহ শব্দ ধর্ষিত হয়ে গেল
এই পৃথিবী, ব্রহ্মাণ্ড, নরক—সব মানুষের জন্য
নৈকট্য
কেন এত একা
মনে হয় নিজেকে,
যখন
গায়ে গা লাগিয়ে
মানুষের ভিড়
এই যে তুমি
সারাক্ষণ কাছে থাকো
সারাটা সময়
একদম কাছে
রেললাইনের মতো