বরের বাবা কনের বাবা
একদা এক রাত্রি
বরের বাবা দেখতে এলেন
খুঁটে খুঁটে পাত্রী।
‘এই যে মশাই কোথায় বসাই
কী যে খাওয়াই কেমন দশাই
এলেন রাতে কষ্ট করে’—
কনের বাবা ব্যস্ত,
চৌদ্দ জনকে করে দিলেন
একশ কাজে ন্যস্ত।
কেউ বা আনে ওজুর পানি
কেউ তোয়ালে কেউ সাবানই
কেউ বা জবাই করে খাসি
আদেশ পাওয়া মাত্র,
তালের পাখার বাতাসে কেউ
শীতল করে গাত্র।
‘কী পরিবেশ কী পরিবেশ
এই যে নিলয় এই যে নিবেশ
এমন শোভা কোথাও আহা
দেখিনি আর পূর্বে’
বলেই ভাবেন বরের বাবা
বুকটা এবার জুড়বে।
‘বিয়ে হলেই বেয়াই হবেন
আর কেন ভাই দূরে রবেন
সরে আসেন কাছে বসেন
সব কথা হোক পাক্কা’—
বরের বাবা কনের বাবার
গায়ে দিলেন ধাক্কা।
‘কই গো বেয়াই কনে দেখান
কোথায় লেখাপড়া শেখান
না-জানি ‘মা’ কেমন আমার
চাঁদের মতো ফর্সা,
আজ থেকে ওই মা-ই তো হবে
একমাত্র ভরসা।’
কনের বাবা খুঁচিয়ে দাড়ি
বলেন, ‘বেয়াইর বাড়াবাড়ি
আজব গুজব কথা বলে
কেন যে দেন লজ্জা,
মেয়ে আমার গণ্ডমূর্খ
হাড়েও নেই মজ্জা
চোখ দুটো তার ঢাকাই থাকে
কানেও তুলো দিয়ে রাখে
গায়ের রঙও কয়লা কালো
বলাই তা বাহুল্য
এই মেয়ে কি নেবেন ঘরে
বানিয়ে কারো তুল্য ?’
‘যার তুলনা নিজেই তো সে
যতই থাকুক গুণে-দোষে
এমন মেয়েই খুঁজছি আমি
সারাটা দিন-রাত্র,
আসল কথা ছেলেও আমার
খুব ভালো নয় পাত্র।
দাঁত উঁচু আর দাঁতের গোড়া
ফোলা এবং কদম জোড়া
হাঁটুর উপর থেকে কাটা
চলাফেরাও বন্ধ,
জন্ম থেকেই চোখ দুটো তার
এক্কেবারে অন্ধ।’
‘এমন কী আর ক্ষতি তাতে
হাতটা বেয়াই রাখেন হাতে
আমরা দুজন মিলেই করি
বিয়ের তারিখ ধার্য।’
‘ছেলের কী-কী দেবেন তবে
সেটাও তো বিচার্য!’
‘সেকি বেয়াই সেকি বেয়াই
কথা শুনে ডুবছে খেয়াই
কেমন করে দাবি তোলেন
অন্ধ ছেলের জন্য ?
আপনি এবার পাত্রী দ্যাখেন
অন্যখানে, অন্য।’
বরের বাবা বলেন কেশে
‘বুঝিনি এই পরিবেশে
কি থাকে আর কী থাকে না
সংসারটার হাল কী,
রাত হয়েছে গভীর, বাবা
চলি, সেলামালকি।’
কনের বাবা চেঁচিয়ে বলেন,
‘কত্তো বড় মহৎ হলেন
বেয়াই থেকে নাম কাটিয়ে
বাবা বলে যাচ্ছেন,
তবে বাপু এমন মেয়ে
কোত্থায়ও না পাচ্ছেন।’
হাটের ভিতর
হাটের ভিতর হট্টগোল—
পিটিয়ে তার চামড়া তোল
মারটা দিবি কড়া।
হাটের সবাই জেনে গেল
চোর পড়েছে ধরা।
গামছা গলায় পেঁচিয়ে তাকে
শক্ত করে বেঁধে
দুম-দুমাদুম মারছে লোকে—
চোরটা ওঠে কেঁদে।
মার দেখি মার যত পারিস—
সবার মুখে বোল,
কেউ বা বলে ন্যাড়া করে
মাথায় ঢালো ঘোল।
ছেলে-বুড়ো দাদা-নাতি
কেউ মারে চড় কেউ বা লাথি
কেউ মারে কিল ঘুষি—
হাটুরে মার দেখে আমার
মনটা মহাখুশি।
আমিও গেলাম লম্ফ দিয়ে—
‘এমন করে পিষুম,
বাপের নামটা ভুলিয়ে দেব’
মারি ঢিশুম ঢিশুম।
পিঠের ওপর ভাঙল কত
শক্ত বেতের ধামা,
মুখটা দেখেই চিনি তাকে
আ রে, আমার মামা!
থামাও থামাও— বলি যতই,
কার কথা কে রাখে ?
ততক্ষণে কয়টা ঘুষি
পড়ল আমার নাকে।
কুড়িয়ে মামার ভাঙা চশমা
লাগিয়ে দিলাম চোখে—
অনেক কষ্টে বলেন মামা,
‘বলব কী আর তোকে!
চোর ব্যাটা তো পালিয়ে গেছে
আমার পকেট মেরে,
চেঁচান শুনে আমার দিকেই
আসলো সবাই তেড়ে।’
সবার সাথে আমিও ছিলাম
মামাকে যা মারটা দিলাম
ভেবেছিলাম কে-না!
হাটের ভিতর কে কার মামা
যায় না কারো চেনা।
ট্যাবলেট
খেতে গেলে ঘিনঘিন
বুক করে চিনচিন
মাথা ঘোরে ঝিমঝিম
চোখ জ্বলে টিম টিম
যত জ্বালা পোড়া
থাক না, তার ওষুধ
আছে আনকোরা।
রগে রগে ঝিনঝিন
হাঁটা-চলা মিনমিন
স্বাস্থ্যটা টিনটিন
একেবারে ফিনফিন
দুর্বল হলে
এ ওষুধ কিনে ন্যাও
মারহাবা বলে।
জোড়া-গিরা খটখট
মাজা ভাঙে মটমট
দাঁতে দাঁতে কটকট
পেট করে ভটভট
খুশখুশে কাশি—
সব রোগ সেরে, মুখে
ফুটবেই হাসি।
হেঁটে যেতে হনহন
পায়ে ব্যথা টনটন
কান করে শনশন
পিঠে বাজে ঠনঠন
সারা গায়ে জ্বালা—
এ ওষুধ দিবে ঠিক
শান্তি নিরালা।
হেকিম তো নই আমি
কবিরাজও নই
ক্যানভাস করি বলে
মূল কথা কই।
বলা-কওয়া বক্তৃতা
শেষ ‘লিচকার’
ওষুধে ভেজাল নেই
নেই ‘মিকচার’।
এ ওষুধ খেতে হবে
গিলে নয়, চেটে
সব উপাদান আছে
প্রতি ট্যাবলেটে।
জাগায় দাঁড়িয়ে দিলে
ছোট্ট আওয়াজ
হাতে হাতে পৌঁছাবো
করবেই কাজ।
কাজ যদি না-ই করে
মূল্য রিটার্ন—
সবার সামনে আমি
কাটব দু কান।
রোগ যত নিতে হবে
ততটা প্যাকেট—
কোনো প্রতিক্রিয়া নেই
ঠিক থাকে পেট।
এ ওষুধ না কিনলে
জীবনটা ফাঁকা।
দাম প্রতি ট্যাবলেট
শুধু এক টাকা।
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি
পিঁয়াজ মরিচ কাটা
কুচিকুচি, আদা বাঁটা,
সর্ষের তেল খাঁটি,
লাগবে না ঘাঁটাঘাঁটি
কোটা হলুদের গুঁড়ি—
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি।
কৌটায় ‘মিকশ্চার’
এই নিল শিকদার
নিল শেখ মোল্লায়
গেল সব গোল্লায়
নেই তার নেই জুড়ি—
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি।
মুখরুচি মচমচ
কিনে কারো নেই ‘লস’
একজন খেলে, ঠিক
চেয়ে থেকে তার দিক
গালে লাগে সুড়সুড়ি—
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি।
রেলগাড়ি ঝমাঝম
কেউ বেশি কেউ কম
খায়, কেউ টেরে চায়
কে যে পায় কে হারায়
কে যে করে বাহাদুরি—
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি।
দৌলতদিয়া ঘাট—
দ্ইু চার ছয় আট
ক’টাকার দেব ভাই ?
আরো দেব, আরো চাই ?
না- না, বাড়বে না ভুঁড়ি—
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি।
অই, কে হোটেলে যায় ?
পচা বাসি পান্তায়
ভরা আছে সে-হোটেল
খেতে গেলে গাড়ি ‘ফেল’
ভালো নয় ডালপুরি—
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি।
খেতে যারা মজা পায়
তারা আরো বেশি খায়
ছেলে বুড়ো সব্বাই
করে শুধু খাই খাই
কেনে দ্যাখো বুড়ো-বুড়ি—
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি।
খোকা আয় খুকু আয়
চাচা-চাচী কত খায় ?
মজা বোঝে, কেনে সে-ই
আর বুঝি নেই, নেই
হলো শেষ, ধুত্তুরি—
ঝালমুড়ি ঝালমুড়ি।
মহারাজের তাজ
চলতে পথে কুড়িয়ে পেলাম
মহারাজের তাজ,
সে-তাজ মাথায় দিয়ে হলাম
ছোট্ট মহারাজ।
সিংহ মামা ছুটে এসে
সেলাম দিয়ে কয়,
আমার পিঠের আসনটাতে
বসতে কেন ভয় ?
বসুন বসুন রাজাধিরাজ
এটাই সিংহাসন,
আপনি ঠিকই জয় করবেন
প্রজাগণের মন।
সিংহাসনে বসেই আইন
করে দিলাম, রোজ
রাজার বাড়ির দাওয়ায় বসে
প্রজায় খাবে ভোজ।
মন্ত্রীদের ডেকে বলি,
ভালো না হালচাল
বস্তিগুলো উঠিয়ে প্রাসাদ
গড়েই দেবে কাল।
রাজ্যে আমার কোনো প্রজার
কষ্ট যদি হয়,
মন্ত্রীদের চাকরি যাবে
জেনো তা নিশ্চয়।
হাতিশালের হাতি এসে
উচ্চে তুলে শুঁড়
বলে, এবার রাজ্য থেকে
অভাব হবে দূর।
জয় মহারাজ, অভিবাদন
জানাই আপনাকেই,
আপনি ছাড়া গরিব প্রজার
দেখার তো কেউ নেই।
বলি আমি, কেউ গরিব আর
থাকবে নাকো ঠিক,
কেমন করে উন্নতি হয়
ভেবেছি সব দিক।
একশ কোটি রোবট এনে
দেখিয়ে দেব মাঠ,
একর প্রতি সহস্র টন
ফলাবে ধান-পাট।
হাওয়ার কলে চলবে যত
শিল্প প্রতিষ্ঠান,
কম্পিউটারে জানা যাবে
উৎপাদনের মান।
ধনী-গরিব এক হবে সব
ধন্য হবে দেশ,
কর্মগুণে উঠবে গড়ে
মধুর পরিবেশ।
মিলেমিশে থাকবে সকল
হিন্দু-মুসলমান,
মানুষ হবে একটি জাতি
বৌদ্ধ কি খ্রিস্টান।
মনের সাথে মনের ভাব আর
থাকবে ভীষণ মিল—
এমন সময় মাথার তাজই
ছোঁ মেরে নেয় চিল।
ধড়ফড়িয়ে জেগে আমি
মেলেই দেখি চোখ,
জানলা দিয়ে দিচ্ছে উঁকি
নতুন সূর্যালোক।