মেলায় আসছে কবি-সাংবাদিক রনজু রাইমের ‘অপ্রিয় বচন’। রূঢ় সত্যকে ‘অপ্রিয় সত্য’ বলাটা মূলত ব্যাজস্তুতি। ‘অপ্রিয় সত্য’র সমার্থক কবি রনজু রাইমের ‘অপ্রিয় বচন’। ব্যঞ্জনা দিতে নামকরণের ভিন্নতা। প্রবাদ-প্রবচন অল্পেই অধিক কথা বলে। ইংরেজ কবি কিটসের ‘Beauty is truth, truth beauty’ কথাটিকে মান্যতা দিলে এই বইয়ের অপ্রিয় বচনগুলো সুন্দরের পাড়া-প্রতিবেশী। মিথ্যাশ্রয়ী সমাজের মুখোশ-উন্মোচকও বটে। সহজে সত্য বলা খুব সহজ কাজ নয়। সবাই পারে না। যারা পারেন, তারা অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘যাহারা সহজেই সত্য বলিতে পারে, তাহাদের সে কী অসাধারণ ক্ষমতা! যাহারা হিসাব করিয়া পরম পরিপাট্যের সহিত সত্য রচনা করিতে থাকে, সত্য তাহাদের মুখে বাঁধিয়া যায়, তাহারা ভরসা করিয়া পরিপূর্ণ সত্য বলিতে পারে না।’ (সত্য)
বইটি সম্পর্কে কবি-সম্পাদক আবু হাসান শাহরিয়ার বলেছেন, ”রনজু রাইমের অপ্রিয় বচনগুলো রবীন্দ্রবিবৃত অসাধারণ ক্ষমতার উজ্জ্বল নমুনা। অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের প্রতিবাদ। রফিক আজাদের ভাষায় ‘সশস্ত্র সুন্দর’ও বলা যেতে পারে। জরাক্রান্ত সামাজিক বিবেককে ধাক্কা এবং শাশ্বত সুন্দরের অবক্ষয়কে ঝাঁকুনি দেবে এই বইয়ের বচনগুলো। সত্য ও সুন্দরকে দেবে সাহস। আমাদের সমাজে সত্যভাষী মানুষের অভাব প্রকট। কেউ অকপটে সত্য বললে অনেকে তা শুনতেও ভয় পায়। তাতে, মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। সেদিক থেকে দেখলেও রনজু রাইমের ‘অপ্রিয় বচন’ একটি ব্যত্যয়ী সৃষ্টি। সমকালীন অসঙ্গতির নান্দনিক প্রতিবেদন। বইটির বহুলপ্রচার কামনা করি। আমার বিশ্বাস, অমর একুশে বইমেলা’১৮কে ঋদ্ধ করবে বইটি।”
হামীম কামরুল হক লিখেছেন, ‘‘কবিতা মনশোধনের অবিকল্প সাবান।/একথা জানে সেইজন যিনি কাব্যবান।’ বা ‘বাংলাদেশের ঘরে ঘরে চাই সাংস্কৃতিক দাওয়াত।/ কেননা ধর্ম আর রাজনীতি এখন করছে বাজিমাত!’-এমন অনেক প্রবচন লিখে দিনের পর দিন দৃষ্টি কেড়েছিলেন রনজু রাইম। এতে উঠে এসেছে সমকালের তীক্ষ্ণ তীব্র ধারালো বাস্তবতাগুলো যা অনেকেরই আঁতে ঘা লাগবে। বিশেষ করে বিচিত্র রকমের ভাণ্ডামি, ইতরামিতে সয়লাব এদেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগৎ যে অংশটুকু সেখানটায় তিনি নির্মমভাবে সত্য ও বাস্তবতার চেহারা দেখে নিয়েছেন, দেখিয়েদিয়েছে।। কখনো গদ্যের মাত্রায়, কখনো ছন্দে বাজিয়ে কাব্যময়তা দিয়ে মর্মভেদী হয়েছে প্রতিটি শব্দের তীর। কেবল সমকালই নয়, তাঁর অনেক কথাই চিরদিনের কথা হয়ে গেছে। হয়ে গেছে আধুনিক চিন্তা ও মানসের কঠিনতম সত্য উচ্চারণ। ‘বিবেক’ নামের যে-ব্যাপারটি হারিয়ে যেতে বসেছে, রনজুর ‘অপ্রিয় বচন’-এর ভেতরে দিয়ে পাঠক ফিরে পাবেন সেই বিবেকী বিদ্রোহের পরম্পরা যা থেকে আদতে কোনো মানুষ সরে যেতে পারে না। এখানে সত্য কেবল উচ্চারিতই হয়নি, নতুন করে উৎপাদিতও হয়েছে। রনজু রাইমের ‘অপ্রিয় বচন’ একবার পড়ে রেখে দেওয়ার বই নয়, বার বার ফিরে ফিরে পড়ার বই।”