মেলায় এলো বিধান রিবেরুর দুটি বই। একটি সেনেগালের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার উসমান সেমবেনের শিল্পকর্ম নিয়ে ‘উসমান সেমবেনের চলচ্চিত্র হালা’, অন্যটি ‘অনুভূতিতে আঘাতের রাজনীতি ও অন্যান্য’।
উসমান সেমবেন ও তাঁর ছবিনিয়ে বই
সেনেগালের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার উসমান সেমবেন ও তাঁর চলচ্চিত্র নিয়ে প্রথম বারের মত বাংলায় ভাষায় বই প্রকাশ হয়েছে। বিধান রিবেরু রচিত বইটির নাম ‘উসমান সেমবেনের চলচ্চিত্র হালা’। কথাপ্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বইতে উসমান সেমবেনের জীবনী ছাড়াও তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘হালা’ নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রবন্ধের অনুবাদ রয়েছে, রয়েছে উসমান সেমবেনের সাক্ষাৎকার। এছাড়া আফ্রিকার চলচ্চিত্রের ইতিহাস নিয়েও রয়েছে একটি রচনা। সবমিলিয়ে বইটি চলচ্চিত্র প্রেমীদের আফ্রিকার চলচ্চিত্র, সেখানে উসমান সেমবেনের ভূমিকা ও তাঁর চলচ্চিত্র ‘হালা’ রউপর যথাযথ ধারণার জন্ম দেবে।
উসমান সেমবেনকে (১৯২৩-২০০৭) সম্বোধন করা হয় আধুনিক আফ্রিকার সিনেমার জনক হিসেবে। এত বড় উপাধি দিয়েও তার সামগ্রিক কাজকে ধরা অসম্ভব। তিনি উপন্যাস রচনা করেছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন এবং সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার, তিনি সারা জীবন গণমানুষের রাজনীতিতে আস্থা রেখেছেন। সেমবেন সব কাজ দিয়েই বলা যায় রাজনৈতিক লড়াইটা করেছেন, শ্রমিক সংগঠন করার সময়, আবার শিল্প সৃষ্টির সময়েও তিনি নিজের রাজনৈতিক ভাবাদর্শ থেকে সরে যাননি। কারণ শিল্পকে রাজনীতির হাতিয়ার বলেই মনে করতেন তিনি, নয়ত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গণমানুষের কাছে পৌঁছানোর চিন্তা তাকে পেয়ে বসত না।
সেমবেনের লড়াইটা ছিল দুর্নীতি, ঔপনিবেশিকতাবাদ ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ের এক পর্যায়ে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি, কিন্তু খ্যাতির মোহ তাকে পথভ্রষ্ট করেনি। সেমবেন কখনো প্রলুব্ধ হননি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণে, কখনো ভাবেননি প্যারিসে বসেই শিল্পচর্চা করতে হবে, বরং সারা জীবন থেকেছেন জন্মভূমি সেনেগালে। সেখানে তিনি আমৃত্যু শ্রমিক, নিষ্পেষিত ও শোষিত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, এর আগে দীর্ঘদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার প্রয়াণের পর নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও আফ্রিকা পাঠ বিভাগের অধ্যাপক মানথিয়া দিয়াবারা নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সেমবেন সত্যিকার অর্থেই আফ্রিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্রকার। পরবর্তী চলচ্চিত্র নির্মাতারা তার জন্য একটু চাপের মধ্যেই পড়বে বৈকি।’
অনুভূতিতে আঘাতের রাজনীতি ও অন্যান্য
দশকের পর দশক ধরে অনুভূতিতে আঘাতের কথা বলে রাজনীতিতে যেভাবে ধর্মের ব্যবহার হয়ে আসছে সেটি বিধান রিবেরু তাঁর ‘শাহবাগ: রাজনীতি ধর্মচেতনা’ বইতে সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। এ বছর তাঁর লেখা নতুনবই ‘অনুভূতিতে আঘাতের রাজনীতি ও অন্যান্য’তে সেই একই রাজনীতিরকথা উঠে এসেছে বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে। শুধুদেশনয়, বিদেশেও সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিশ্লেষণধর্মী লেখা সংকলিত হয়েছে এই বইতে। বাদ যায়নি শহরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনও।
বইটি সম্পর্কে লেখক বিধান রিবেরু বলেন, ‘আমি সমাজের এক জনসংবদেনশীল মানুষ হিসেবে সমাজে যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। নিজের মত করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। আর বলার চেষ্টা করেছি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ যদি থাকে, সর্বত্র, তাহলে অন্য কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পারবে না।’ বইটির প্রকাশক ঐতিহ্য।